বর্তমান সময়ের ইসলাম সংক্রান্ত সমস্যার উপর সংক্ষিপ্ত আলোকপাত -- ৯. সেক্যুলার গণতান্ত্রিক পন্থায় ইসলাম কায়েম প্রসঙ্গে
সেক্যুলার
ডেমোক্রেসির ইতিহাস খুবই
নতুন, মাত্র
চারশো বছরের। ওয়েস্টফালিয়া
ট্রিটির মাধ্যমে ধর্ম ও
রাষ্ট্রকে পৃথক করার কাজ শুরু
হয়েছিলো, এবং
এরপর যখন পশ্চিমারা ও ইউরোপিয়ানরা
বিশ্বে আধিপত্যশীল হয়ে গেলো,
তখন ইসলামপন্থীরা
তাদের কাউন্টার করার জন্য
তাদেরই পন্থা গ্রহণ করলো।
তারাও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল
গঠন করলো, যার
মাধ্যমে নির্বাচনে অংশগ্রহণ
করে সংসদের যাবার চেষ্টা করা
হলো। অথচ দ্বীন হিসেবে ইসলামের
পরিপূর্ণতার উপর যারা আস্থাশীল,
তারা না
দ্বীনের প্রচারের জন্য দল
কনসেপ্টকে গ্রহণ করবে,
কারণ রাসূলুল্লাহ
(সা.)
তা করেননি,
আর না তারা
রাষ্ট্রে ইসলাম কায়েমের জন্য
দলের মাধ্যমে নির্বাচনে
অংশগ্রহণ করবে, কারণ
রাসূলুল্লাহ (সা.)
তা করেননি।
এমনকি যদি এসব কাজে সাময়িক
ভালো ফলাফল দেখা যায়ও,
তবুও দ্বীন
ইসলামের পরিপূর্ণতার উপর
আস্থাশীল ব্যক্তি এই যুক্তিতে
এসব কাজকে পরিহার করবে যে,
নবী কর্তৃক
বাস্তবায়িত ইসলামের কর্মপন্থা
সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে
নির্ধারিত, আর
আল্লাহর জ্ঞানকে অতিক্রম করে
নতুন কোনো কনসেপ্ট ব্যবহার
করে তাঁরই ধর্ম ইসলামের কাজ
করাটা বড় ধরণের ধৃষ্টতা ও
বোকামি।
আর
সেই কাজ করতে গিয়ে প্রতিটা
ইসলামী দলের ইতিহাসেই অনেক
সুস্পষ্ট ভুল হয়েছে,
এখনও হচ্ছে,
এবং নিশ্চিতভাবে
বলা যায় যে, ভবিষ্যতেও
হবে। অতি সম্প্রতি দেখলাম
রনি এমপি জামায়াত-শিবিরের
বিরুদ্ধে একটা আর্টিকেল লিখেছে
(২রা
জানুয়ারি, সম্ভবতঃ
বাংলাদেশ প্রতিদিনে)।
প্রথম থেকেই রনি এমপি জামাতের
নেতাদের সাথে জেলে ঘনিষ্ঠতার
সুযোগ নিয়ে আবেগী লেখা লিখে
জামায়াত-শিবিরের
মাঝে নিজের গ্রহণযোগ্যতা
তৈরীর অপচেষ্টা চালিয়ে আসছিলো।
এরপর যখন জামায়াত-শিবিরের
ছেলেরা নিজেরাই তাকে নিজেদের
মাঝে একটা প্ল্যাটফর্মে তুলে
দিলো, তখন
সে final blow দিলো।
রাজনীতির স্বার্থেই রনি এমপির
বিরোধিতা তারা করেনি,
যখন সে পক্ষে
লিখেছে। অথচ জামায়াত নেতাদের
প্রশংসা করে লেখা রনি এমপির
প্রথম আর্টিকেল পাবলিশ হবার
পরে একজন প্রকৃত ধর্মীয় নেতৃত্ব
হলে জনগণকে সচেতন করে দিতেন
যে, দেখো,
এই লোক
ধুরন্ধর, সে
তোমাদর মাঝে গ্রহণযোগ্যতা
সৃষ্টির চেষ্টা করছে,
সে কিন্তু
আসলে আমাদের পক্ষের লোক নয়।
কিন্তু
রাজনীতির কারণেই সেই কাজ করতে
পারেনি। শফিক রেহমানের কথাই
বলি। এই লোকটি ইসলামের বড়
ধরণের শত্রু, বাংলাদেশে
বহু আগে থেকেই সে পশ্চিমা
নোংরা সংস্কৃতির importer।
কিন্তু সে বিএনপি-জামায়াত
জোটের রাজনৈতিক বিবেচনায়
বন্ধু। এখন জামায়াত-শিবির
"ইসলামী"
দল হলেও শফিক
রেহমানের মত লোকের গ্রহণযোগ্যতা
তাদের মাঝে তৈরী হয়ে গেলো;
ধর্মীয় কারণে
নয়, রাজনৈতিক
কারণে। একারণেই জামায়াত
শিবিরের কোনো নেতাই কখনো শফিক
রেহমানের ব্যাপারে জনগণকে
সচেতন করেনি যে, এই
লোকটি নোংরা অপসংস্কৃতির
importer, এর
ব্যাপারে সাবধান থাকুন। অথচ
শফিক রেহমানের import করা
এসব অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে
তখন তারা কিছু করতেও পারবে
না, যখন
২০ দলীয় জোট ক্ষমতায় যাবে,
আর শফিক
রেহমান থাকবেন খালেদা জিয়ার
অন্যতম উপদেষ্টা।
সেক্যুলার
ডেমোক্রেসিতে রাজনীতির
স্বার্থে অনেক কিছুই করতে
হয়। ইসলামে ধর্ম ও রাজনীতি
পৃথক নয়, জামায়াত-শিবিরই
সেটা বলে থাকে, কিন্তু
(সেক্যুলার)
"রাজনীতির
স্বার্থে” ইসলাম বিসর্জন
দেয়াটাও ইসলামে নেই।
একবার
দেখলাম হরতালে, সেটা
সম্ভবত কোনো যুদ্ধাপরাধ মামলার
রায়ের প্রতিক্রিয়ার হরতাল,
সেই হরতালে
অ্যামেরিকান এম্ব্যাসির গাড়ি
ভাংচুর হলো। সাথে সাথে জামায়াতের
পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করে
বিবৃতি দেয়া হলো। সেক্যুলার
রাজনীতির ময়দানে নামলে মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রকে প্রভু মানতেই
হবে, তাদের
গাড়ি ভাঙলে দুঃখ প্রকাশ করতেই
হবে। অথচ যদিও সেটার কোনো
প্রমাণ ছিলো না! আর
এখন জনগণের অসংখ্য গাড়ি ভাংচুর,
জ্বালাও
পোড়াও করলেও দুঃখ প্রকাশ করা
হয় না! এগুলি
তো ইসলাম নয়!
কট্টর
ইসলামবিদ্বেষী হিন্দু নেতা
নরেন্দ্র মোদী নির্বাচিত
হবার পর জামায়াতের পক্ষ থেকে
সবার আগে অভিনন্দন জানানো
হলো। অথচ জামায়াত তখন এমনকি
বিরোধী দলও নয়, সংসদে
তাদের কোনো আসনও নেই যে,
diplomatic obligation হিসেবে
কাজটি করতে হবে। কিন্তু "ভবিষ্যত
রাজনীতির স্বার্থে"
কট্টর
ইসলামবিদ্বেষী মুসলিম হত্যাকারী
হিন্দু নেতাকেও অভিনন্দন
জানানো জায়েজ। কারণ এটা "দলের
স্বার্থে”, আর
দল ইসলামের স্বার্থে।
প্রথমতঃ,
সেক্যুলার
ডেমোক্রেসির যে মানদণ্ড
পশ্চিমা বিশ্ব সেট করেছে,
তা ইসলামের
মানদণ্ড নয়। দ্বিতীয়তঃ,
দল পদ্ধতি
হলো ইসলাম প্রচার-প্রসারের
যে মূল কনসেপ্ট, তা
থেকে এক প্রকার বিচ্যুতি।
এরপর এই দলীয় স্বার্থে ও
নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায়
যাওয়ার রাজনীতির স্বার্থে
এত বেশি বিষয়ে ছাড় দিতে হয় ও
হয়েছে যে, তা
সুস্পষ্ট ইসলামের লঙ্ঘন।
শুরুতে ১ ডিগ্রি বাঁকা একটি
পথকে প্রথমে সিরাতুল মুস্তাকিমের
থেকে আলাদা বলে মনে হয় না,
কিন্তু সেই
পথ যখন অনেক দূর এগিয়ে যায়,
এক ডিগ্রি
হেলানো ভিত্তির উপর যখন ১০০
তলা বাড়ি তৈরী করা হয়,
তখন সেই হেলে
পড়া বাড়ি স্পষ্ট দেখা যায়,
সেই পথ যে
সিরাতুল মুস্তাকিম থেকে কতটা
দূরে, তা
সুস্পষ্ট হয়ে যায়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন