সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ধর্মব্যবসা: মুসলমানদের হাতে ইসলাম ধ্বংসের অতীত-বর্তমান (১)

ভূমিকা

যদিও পলিটিকাল-রিলিজিয়াস ইস্যুতে নিশ্ছিদ্র আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করে আলোচনা করার অভ্যাস আমার, কিন্তু এখানে বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরে আর্গুমেন্ট করার প্রথমতঃ ইচ্ছা নেই, দ্বিতীয়তঃ সময় ও সুযোগ নেই। আমি যা সত্য বলে জানি, তা সংক্ষেপে তুলে ধরছি। যারা আমার উপর আস্থা রাখেন তাদের জন্য এই লেখাটি সোর্স অব ইনফরমেশান, উন্মুক্ত হৃদয়ের মানুষদের জন্য সত্য অনুসন্ধানের নতুন কিছু টপিক, আর প্রেজুডিসড ধর্মান্ধ রোগগ্রস্ত অন্তরের জন্য রোগ বৃদ্ধির উছিলা।
শেষ পর্যন্ত আর্গুমেন্ট ও ডায়লগের দুয়ার উন্মুক্ত রাখার পক্ষপাতী আমি, কিন্তু সেই আর্গুমেন্ট অবশ্যই সত্য উন্মোচনের নিয়তে হওয়া উচিত, নিজের দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাস ও ধ্যান ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করবার উদ্দেশ্যে নয়।

মক্কা-মদীনা: মুহাম্মদ (সা.) থেকে আলে-সৌদ (৬২৯-১৯২৪)

এদেশের অধিকাংশ মানুষ মক্কা-মদীনার ইতিহাস কেবল এতটুকু জানেন যে, মুহাম্মদ (সা.) মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করেন। কিন্তু প্রায় চৌদ্দশ’ বছর আগে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র থেকে আজকের রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবের ইতিহাস কম মানুষই জানেন। পবিত্র মক্কা ও মদীনা -- যেখানে মুহাম্মদ (সা.) এর হাতে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ন্যায়বিচারের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো, সেটা যে আজ আলে সৌদের বর্বর রাজতন্ত্রের জালে বন্দী, তা ক’জন জানে? বেশিরভাগ মানুষই জানে না, কারন তাদের জানতে দেয়া হয় না; আর যারাও বা জানে, তাদের অধিকাংশই চুপ করে থাকে, কারণ তারা সৌদি আরবের প্রচারিত বিকৃত ইসলামের ধারক-বাহক। তেলের টাকায় এদেশের সাধারণ মানুষের মাঝে সৌদি আরবের ব্যাপারে এমন আবেগ সৃষ্টি করা হয়েছে যে, “সৌদি আরব” বলতেই মানুষ বোঝে মক্কা-মদীনা-কাবা, আর সৌদি আরবের যেকোনো ধরণের বিরোধিতা করা মানেই মক্কা-মদীনা, এমনকি ইসলামের বিরোধিতা করা!

মুহাম্মদ (সা.)

৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মদ (সা.) বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করেন। এভাবে, মদীনায় প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র মক্কা পর্যন্ত বর্ধিত হলো। মক্কা-মদীনা ইসলামী শাসনের অধীনে এলো।

প্রথম চার খলিফা

মুহাম্মদ (সা.) তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত দশ বছর ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। এরপর যথাক্রমে হযরত আবু বকর ৩ বছর, হযরত ওমর ১০ বছর, হযরত উসমান ১২ বছর ও হযরত আলী ৫ বছর সেই রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। ইতিমধ্যে মুহাম্মদ (সা.) এর রেখে যাওয়া রাষ্ট্রের সীমানা বর্ধিত হয়েছে: “অস্ত্রের মুখে সাম্রাজ্য বিস্তারের” যে অভিযান হযরত আবু বকর শুরু করেছিলেন, তা হযরত ওমর ও হযরত উসমান বজায় রেখেছিলেন।

উমাইয়্যা শাসন থেকে রাজতান্ত্রিক সৌদি আরব প্রতিষ্ঠা

৬৬১ খ্রিষ্টাব্দে চতুর্থ খলিফা হযরত আলীর শাহাদাতের পর ইসলামের ইতিহাস পাশাপাশি দুটি ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হতে শুরু করে, যা আজো বিদ্যমান। একটি ধারায় মুয়াবিয়া ও তার পরে ইয়াজিদের হাত ধরে উমাইয়্যা বংশের রাজতান্ত্রিক জুলুমের শাসন শুরু হয়। পরবর্তী একশ বছর উমাইয়্যা শাসন, তারপর প্রায় পাঁচশ বছর আব্বাসী শাসন এবং পাশাপাশি ফাতেমী শাসন ও আইয়ুবী শাসন চলে আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে, এবং হেজাজ (মক্কা, মদীনা ও সংলগ্ন কিছু অঞ্চল) এদের দখলে ছিল। এরপর প্রায় তিনশ বছর মামলুক সাম্রাজ্য ও তারপর প্রায় চারশ বছর ওসমানী খেলাফতের অধীনে ছিল মুহাম্মদ (সা.) এর স্মৃতিবিজড়িত পবিত্রভূমি, মক্কা ও মদিনা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ওসমানী খেলাফতের পতন হলে হেজাজ ও সংলগ্ন অঞ্চলকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ কূটচালের খেলা শুরু হয় এবং ব্রিটেনের সমর্থন ও সহযোগিতায় আজ থেকে প্রায় ৯০ বছর আগে ইবনে সৌদ যে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন, ১৯৩২ সালে তাকে আলে সৌদের নামানুসারে “সৌদি আরব” নামকরণ করা হয়।
যে গোত্রপ্রীতি ও দলবাজিকে মুহাম্মদ (সা.) ইসলামের মহান নীতির মাধ্যমে বন্ধ করে গিয়েছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর আরবের লোকেরা সেই গোত্রপ্রীতিকেই জাগিয়ে তোলে এবং তারই প্রতিফলন দেখা যায় উমাইয়্যা থেকে শুরু করে পরবর্তী সাম্রাজ্যগুলোতে, যার সর্বশেষটা আলে-সৌদ পর্যন্ত এসে ঠেকেছে। হযরত আলীর শাহাদাতের পর প্রকৃত ইসলামী শাসন আরবে আজ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত হয়নি, যা হয়েছে তার অধিকাংশই প্রকাশ্য স্বৈরতন্ত্র, কিংবা ইসলামের মুখোশ ব্যবহার করে রাজতন্ত্র।

মজলুম আহলে বাইত থেকে ইসলামী ইরান প্রতিষ্ঠা

হযরত আলীর শাহাদাতের পর ইসলামের ইতিহাস যে দুটি ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হয়, তার অপর ধারাটি মজলুম আহলে বাইত ও তার ইমামগণের ইতিহাস, যার মাঝে কারবালার ইতিহাস সবচেয়ে বেশি মর্মান্তিক এবং সবারই জানা। হযরত আলী, ইমাম হাসান, ইমাম হোসেনসহ ইমাম হোসেনের বংশধারায় আগত বাকি নয় ইমাম -- এই বারো ইমামের মাঝে দ্বাদশ ইমাম, ইমাম মাহদী ছাড়া বাকি এগারোজনই শহীদ হন, এবং খাঁটি মুহাম্মদী ইসলামকে ধরে রাখা ও প্রচারের স্বার্থে জুলুমের মুখে এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে দেশান্তরী হন। হযরত আলী থেকে শুরু করে এই বারো ইমাম এবং তাঁদের অনুসারীগণ ইতিহাসের প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত জুলুমের শিকার হয়ে আসছেন; এবং এই জুলুমের প্রায় পুরোটাই মুসলিম নামধারীদের হাতে সংঘটিত হয়েছে ও হচ্ছে।
হযরত আলীর শাহাদাতের পর একদিকে ইসলামের নাম ব্যবহার করে স্বৈরাচারী রাজতান্ত্রিক শাসকেরা বিকৃত ইসলাম প্রচারের ধারা শুরু করেছিলো, যা আজো অব্যাহত আছে, অপরদিকে তেমনি আহলে বাইতের মজলুম ইমামগণ ও তাঁদের অনুসারীরা খাঁটি মুহাম্মদী ইসলামের আলোকে সংরক্ষণ করতে গিয়ে নির্যাতনের মুখে বারবার দেশান্তরী হয়েছেন, শহীদ হয়েছেন, যা আজো অব্যাহত আছে।
ইসলামের ইতিহাসের এই দ্বিতীয় ধারাটি বরাবরই মজলুম ছিলো, এবং কখনোই কোনো অঞ্চলে শাসনক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে কারবালায় ইমাম হুসাইন (আ.) এর শাহাদাতের প্রায় তেরশ’ বছর পর ১৯৭৯ সালে ইরানে আহলে বাইতের অনুসারী আলেমগণ ইমাম খোমেনীর (র.) নেতৃত্বে বিপ্লবের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। অর্থাৎ, হযরত আলীর শাহাদাতের পর ইসলামের ইতিহাসের এই দ্বিতীয় ধারাটি প্রথমবারের মত পূর্ণ রাষ্ট্রীয় শক্তি লাভ করলো। একইসাথে খাঁটি মুহাম্মদী ইসলামকে শেষ করার উদ্দেশ্যে মুয়াবিয়া-ইয়াজিদের ধারার বিকৃত ইসলামের ধারক-বাহকেরা সৌদি আরবের প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ব্যাপকতর প্রচার-প্রপাগাণ্ডা শুরু করলো; যার ফলাফল হিসেবে চারিদিকে এখন অ্যান্টি ইরান ও অ্যান্টি শিয়া কথাবার্তা শোনা যায়, এমনকি এ-ও শোনা যায় যে, ইরান নাকি কাবা দখল করতে চায়। অথচ ইঙ্গ-মার্কিন দাস আলে সৌদ-ই যে বরং শত বছর ধরে কাবা দখল করে আছে, সে কথা কেউ মুখেও আনছে না।

সৌদি আরবের যে ইতিহাস কখনো বলা হয় না

(মিনা ট্র্যাজেডি, ইয়েমেনে আগ্রাসন ও আলে সৌদের ইতিহাস শিরোনামে গত ২৭শে সেপ্টেম্বর যে আর্টিকেল লিখেছিলাম, সেখান থেকে নিচের অংশটুকু তুলে ধরছি। লেখাটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।)
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেন ছিল ওসমানী খিলাফতের বিরুদ্ধে। ওসমানী খিলাফতকে খণ্ডিত করে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে হিজাজের শাসক শরিফ হোসাইনকে খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে উস্কানি দেয় ব্রিটেন। ইরান ও আফগানিস্তান ছাড়া গোটা আরব তখন তুর্কি খিলাফতের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯১৬ সালে নিজেকে আরবের সুলতান বলে ঘোষণা করেন শরিফ হোসাইন। ১৯১৮ সালে ওসমানীরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে হেরে যায়। কিন্তু ব্রিটেন একইসাথে নজদ অঞ্চলের আবদুল আজিজ বিন সৌদকেও ইন্ধন দিয়ে যাচ্ছিলো। ১৯২৪ সালে ব্রিটেন তার এক সেবাদাস শরিফ হোসাইনের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে অপর সেবাদাস আবদুল আজিজ বিন সৌদকে হেজাজের ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করে। ১৯২৭ সালে "জেদ্দা চুক্তিতে” আবদুল আজিজ আল সৌদ ব্রিটেনকে এই মর্মে দাসখত লিখে দেয় যে, সে অত্র অঞ্চলে ব্রিটেনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোথাও যুদ্ধ পরিচালনা করবে না, বিনিময়ে ব্রিটেন তার সাম্রাজ্যকে স্বীকৃতি দেবে। ১৯০২ সাল থেকে আরবের একটু একটু করে দখল করতে শুরু করা আবদুল আজিজ বিন সৌদ ১৯৩২ সালে তার সাম্রাজ্য বৃদ্ধি সমাপ্ত করে, এবং হিজাজসহ দখলীকৃত সংলগ্ন অঞ্চলের নাম পরিবর্তন করে তার নিজ বংশের নামে "সৌদি আরব” নাম রাখে। এভাবেই মুসলিম জাতির পবিত্র আবেগের স্থান হিজাজ (মক্কা ও মদীনা) ব্রিটিশ প্রভাবের অধীন হয়ে গেল। এটাই হলো বর্তমান সৌদি আরবের রাজনৈতিক ইতিহাস। আর ধর্মীয় দিক থেকে আবদুল আজিজ বিন সৌদ ওয়াহাবী মতবাদকে তার দখলীকৃত এলাকার (বর্তমান সৌদি আরবের) মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দেয়।
এরপর বিগত প্রায় একশত বছর ধরে ব্রিটিশ মার্কিন সেবাদাস এই আলে সৌদ তেলের টাকায় বিশ্বব্যাপী তাকফিরি ওহাবী ইসলামের প্রচার করেছে যা সুন্নি মাযহাবগুলোকে ক্রমশঃ গ্রাস করছে। ১৯১৭ সালের "ব্যালফোর ঘোষণায়” আবদুল আজিজ বিন সৌদ এর কাছ থেকে ব্রিটেন লিখিত সম্মতি আদায় করে যে, ফিলিস্তিন দখল করে ব্রিটেন যদি ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে, তবে তাতে সে আপত্তি জানাবে না। পরবর্তীতে ১৯২৪ সালে এই আবদুল আজিজ বিন সৌদকেই তারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করে। ১৯৪৮ সালে প্রত্যক্ষ ব্রিটিশ সহযোগীতায় ফিলিস্তিন দখল করে জন্ম হয় যায়নবাদী ইসরাইলের।
সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল আজিজ বিন সৌদ ব্রিটেনকে যে দাসখত লিখে দিয়েছিলেন, তা ছিল এই:
“আমি বাদশাহ আবদুল আজিজ ইবনে আবদুর রহমান – ফয়সলের বংশধর ও সৌদের বংশধর – হাজারবার স্বীকার করছি ও জেনেশুনে বলছি যে, মহান ব্রিটিশ সরকারের প্রতিনিধি স্যার কুকাস-এর সামনে স্বীকারোক্তি করছি এই মর্মে যে, গরিব ইহুদিদেরকে বা অন্য কাউকে ব্রিটিশ সরকার যদি ‘ফিলিস্তিন’ দান করে দেন তাহলে এতে আমার কোনো ধরনের আপত্তি নেই। বস্তুতঃ আমি কিয়ামত পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকারের অভিমতের বাইরে যাব না।” (নাসিরুস সাইদ প্রণীত ‘আলে সৌদের ইতিহাস’)
কেন সৌদি গ্র্যান্ড মুফতি ইসরাইলের বিরুদ্ধে মিছিল করা হারাম ফতোয়া দেন, কিংবা তাকফিরি ISIS কেন শুধু মুসলমানদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করে যাচ্ছে, অথচ জুলুমবাজ ইসরাইলের বিরুদ্ধে একটি গুলিও ছুঁড়ছে না, তা বুঝতে হলে এই ইতিহাসটি কাজে লাগবে। ১৯৮৭ সালে ফিলিস্তিনের পক্ষে আর ইসরাইল-আমেরিকার বিপক্ষে শ্লোগান দেয়া হাজীদের কেন তারা হত্যা করেছিল, তা বুঝতে হলেও এই ইতিহাস জানতে হবে।
ইসরাইল প্রতিষ্ঠায় পরোক্ষ সহযোগিতা করা, আল্লাহর মেহমান সম্মানিত হাজীদের ক্রেন ফেলে হত্যা করা, গুলি করে হত্যা করা, রাস্তা বন্ধ করে পদপিষ্ট করে করে হত্যা করা, রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করায় আয়াতুল্লাহ নিমরকে হত্যা করা, আমেরিকা, মিশর, কাতার, কুয়েত, সংযুক্ত আরব-আমিরাতকে নিয়ে মাসের পর মাস ইয়েমেনে বোমা হামলা করে নিরপরাধ নারী-শিশু হত্যা করা, ইসলামী বিধি বিধানের তোয়াক্কা না করে নিষিদ্ধ মাসে যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে মানুষ হত্যা করে যাওয়া, অগুনতি রক্ষিতাকে নিয়ে আলে-সৌদের অস্বাভাবিক বিকৃত যৌনাচার ও ভোগবিলাস -- আলে সৌদের “ইসলামী” কর্মকাণ্ডের কি আরো তালিকা করতে হবে? এই তালিকা শুরু করলে তো শেষ হবে না। তবু যদি আলে সৌদের দালাল ধর্মান্ধদের বিবেক একটু খুলত!

“ইসলামপন্থীদের” নীরবতা

মদীনা ইউনিভার্সিটি, সৌদি পেট্রোডলার, জাকির নায়েকের বিশাল এস্টাবলিশমেন্ট এবং সর্বোপরি ইন্টারনেটের কল্যাণে ইসলামের নানান বিষয় চারিদিকে ভেসে বেড়াচ্ছে। শরীয়া, হাদীস, তাফসির, ইসলামের বিভিন্ন ইতিহাস, অতীত-বর্তমান রাজনীতি -- সব, সব। কিন্তু সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠার ইতিহাসটাই কেবল কেউ উচ্চারণ করে না! আমি অনেক দেখেছি। এদেশের ইসলামপন্থী লোকজন, বিভিন্ন গ্রুপ, দল -- এরা জেনেশুনে ইচ্ছাকৃতভাবে সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার ইতিহাস চেপে যায়। কারণ এদের অধিকাংশকেই সৌদি আরব টাকা দিয়ে কিনে রেখেছে।
কেবল সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার ইতিহাস জানাটাই এই সিদ্ধান্তে আসার জন্য যথেষ্ট যে, সৌদি আরবের পৃষ্ঠপোষকতায় যে ইসলাম প্রচার হয়, তা প্রকৃত ইসলাম নয়, তা বিকৃত ইসলাম; অতএব প্রকৃত ইসলাম আমাদের খুঁজে নিতে হবে। বর্তমান সৌদি সরকার সরাসরি আমেরিকা-ব্রিটেন-ইসরাইলের সেবাদাস। মুসলমানদের প্রথম কিবলা আল-আকসাকে ইসরাইল সরাসরি দখল করে রেখেছে, আর দ্বিতীয় কিবলা কাবাকে দখল করে রেখেছে পরোক্ষভাবে, আলে সৌদের মাধ্যমে। আল-আকসা মুক্ত করার চেয়ে মক্কা-মদীনাকে আলে সৌদের হাত থেকে মুক্ত করা কোনো অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
এতকিছু জেনে বুঝেও আমাদের দেশের ইসলামপন্থীরা নীরব কেন? জামায়াত-শিবির, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন, আল্লামা শফি, হাটহাজারী মাদ্রাসা, যত কওমী মাদ্রাসা, যত আলিয়া মাদ্রাসা, যত ইসলামী চ্যানেল, পিস টিভি -- কই, কোথাও তো কেউ একথা বলছে না। উমাইয়্যা শাসন, আব্বাসী-ওসমানী খেলাফত -- এতকিছুর ইতিহাস পড়াচ্ছে, আলোচনা করছে, কখনোতো ব্যালফোর ঘোষণা আর জেদ্দা চুক্তির নাম উচ্চারণ করছে না! কখনোতো বলছে না ব্রিটেনের সহায়তায় সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার ইতিহাস! অথচ (আল্লাহ না দিলেও) তারা ইসলামের ঠিকাদারী নিয়ে নিয়েছেন! ইসলামের প্রচার-প্রসার ও আলোচনা করার দায়িত্ব নিজে থেকে কাঁধে তুলে নিয়েছেন, এবং তারপর জেনেশুনে সৌদি আরবের নোংরা ইতিহাস গোপন করছেন। যাহোক, কেন তারা একাজ করছেন, এই নিয়ে পরের পর্বে আলোচনা করব, তবে তার আগে সৌদি তেলের টাকায় বিশ্বব্যাপী প্রচারিত ওহাবী ইসলাম, শিয়া-সুন্নি পার্থক্য ও ইরানের ইসলামী বিপ্লবসহ কয়েকটি বিষয়ের উপর একইভাবে সংক্ষেপে কিছু কথা বলব, ইনশাআল্লাহ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

টাকার ইতিহাস, মানি মেকানিজম ও ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মহা জুলুম

ভূমিকা: জালিমের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম  (মহররম: ইনফো সিরিজ এর শেষ পোস্ট ছিল এটা। মূল সিরিজটি পড়ে আসুন ) জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাস হলো মহররম মাস। জালিমের মুখোশ উন্মোচনের মাস মহররম। জুলুমের কূটকৌশল উন্মোচনের মাস মহররম। আধুনিক সেকুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লেজিসলেশান (সংসদ), আর্মড ফোর্সেস (আর্মি) ও জুডিশিয়ারি (আদালত) হলো এক মহা জুলুমের ছদ্মবেশী তিন যন্ত্র, যারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করে জুলুম টিকিয়ে রাখার জন্য। তারচেয়েও বড় জালিম হলো big corporations: বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, যারা তাবৎ দুনিয়াকে দাস বানিয়ে রেখেছে। আর এই দাসত্বের শৃঙ্খলে তারা আমাদেরকে আবদ্ধ করেছে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে: টাকা আমাদের শ্রমকে ধারণ করে, অথচ সেই টাকার মূল্য আপ-ডাউন করায় অন্যরা -- ব্যাংক ব্যবসায়ীরা! টাকা আমাদের শ্রমকে সঞ্চয় করার মাধ্যম, অথচ সেই টাকা আমরা প্রিন্ট করি না, প্রিন্ট করে (ব্যাংকের আড়ালে) কিছু ব্যবসায়ী! সেই টাকার মান কমে যাওয়া (বা বেড়ে যাওয়া) আমরা নির্ধারণ করি না -- নির্ধারণ করে ব্যাঙ্ক (ব্যবসায়ীরা)! ইমাম হুসাইনের (আ.) প্রতিবাদী চেতনাকে ধারণ করব, শোকাহত হ

পিস টিভি, জাকির নায়েক ও এজিদ প্রসঙ্গ

সম্প্রতি গুলশান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। আমি তখন দিল্লীতে ছিলাম। দেশে ফিরে শুনি পিস টিভি ব্যান করা হয়েছে বাংলাদেশে, এবং তার আগে ইন্ডিয়াতে। আমার বাসায় টিভি নেই, এবং আমি জাকির নায়েকের লেকচার শুনিও না। কিংবা পিস টিভিতে যারা লেকচার দেন, বাংলা কিংবা ইংলিশ -- কোনোটাই শুনি না; প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া আমার ইসলামের বুঝ জাকির নায়েকসহ পিস টিভি ও তার বক্তাদেরকে ইন জেনারেল আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। Peace TV বন্ধ হওয়ায় এদেশে বিকৃত ইসলাম প্রসারের গতি কমলো -- এটাই আমার মনে হয়েছে। একইসাথে আমি এটাও মনে করি যে, যেই অভিযোগ পিস টিভিকে ব্যান করা হয়েছে, তা নিছক অজুহাত। জাকির নায়েক কখনো জঙ্গীবাদকে উস্কে দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। কিংবা পিস টিভির লেকচার শুনে শুনে ISIS জঙ্গীরা সন্ত্রাসী হয়েছে -- এটা নিতান্তই হাস্যকর কথা। ISIS এর ধর্মতাত্ত্বিক বেইজ সম্পর্কে মোটেও ধারণা নেই, এমন লোকের পক্ষেই কেবল ISIS এর জন্য জাকির নায়েককে দোষ দেয়া সম্ভব। একইসাথে আমি এ বিষয়েও সচেতন যে, পিস টিভি বন্ধ করা হয়েছে আমাদের সরকারের রেগুলার “ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ