সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জালালুদ্দিন রুমি

আমি কি তোমায় বলিনি
আমাকে ত্যাগ কোরো না, কারণ আমিই তোমার একমাত্র বন্ধু
আমিই প্রাণের উৎস।
এমনকি যদি তুমি রাগ করে হাজার বছরের জন্যও দূরে সরে যাও
তবু তুমি আমার কাছেই ফিরে আসবে, কারণ আমিই তোমার লক্ষ্য, আমাতেই তোমার সমাপ্তি।

আমি কি তোমায় বলিনি
এই রঙিন দুনিয়ার মায়ায় জড়িও না
কারণ একমাত্র আমিই মানুষের জীবন রাঙাই।

আমি কি বলিনি
তুমি এক মাছ, শুষ্ক ডাঙায় যেও না
কারণ আমিই গভীর সমুদ্র।

আমি কি বলিনি
পাখির মত করে জালে আটকা পড়ো না
কারণ আমিই তোমার ডানা, আলোর উৎস।

আমি কি বলিনি
তারা যেনো তোমার মনকে বদলে না দেয়, তোমায় বরফ করে না তোলে
কারণ আমিই আগুন, আমিই উষ্ণতা।

আমি কি বলিনি
তারা তোমায় পথভ্রষ্ট করবে, এবং ভুলিয়ে দেবে যে
আমিই সকল গুণের ঝর্ণাধারা।

আমি কি তোমায় বলিনি
আমার কাজকে প্রশ্ন কোরো না
কারণ সবকিছু নিয়মমাফিক চলছে -- আমিই স্রষ্টা।

আমি কি বলিনি
তোমার হৃদয় তোমায় বাড়ি ফিরিয়ে আনবে
কারণ সে জানে, আমিই তোমার প্রভু।

...................................

"তুমি মনে করো তুমি বেঁচে আছো কারণ তুমি বাতাসে দম নিচ্ছো ? লজ্জা তোমার জন্য যে তুমি এত সীমিতভাবে বেঁচে আছো !
ভালোবাসাহীন থেকোনা কখনো, তাহলে আর নিজেকে মৃত মনে হবে না। ভালোবাসার মাঝে মারা যেও, আর চিরকাল বেঁচে থেকো।"
-- রুমি।
........................................

(মৃত্যুর রাতে ছেলেকে উদ্দেশ্য করে রুমির লেখা কবিতা)
"মৃত্যুশয্যায়"
-- রুমি

যাও, বালিশে মাথা রেখে বিশ্রাম করো, আমাকে একা ফেলে যাও;
এই ভগ্ন, বেদনার্ত রাতের অভিযাত্রিককে ত্যাগ করো,
(যে) একা, কষ্টের স্রোত যাকে ভোর পর্যন্ত পীড়িত করে।
যদি চাও, এসো, আমায় ক্ষমা করো,
যদি চাও চলে যাও, আমায় ত্যাগ করো।
আমার থেকে পালাও, পাছে তুমি না আবার দুঃখে পতিত হও :
আরামের পথ বেছে নাও, বেদনার পথকে ছেড়ে যাও।
দুঃখের কিনারে একা আমি, এই অশ্রুস্রোত আমার --
এই আঁখিজলে ঘুরিয়েছি শত পানিকল !

আমার প্রেমিক, সে আমায় হত্যা করেছে, পাষাণ-সম হৃদয়,
(অথচ) কেউ সাহস করে বলে না -- এর রক্তমূল্য কোথায় !
কারণ কারো কাছে দায়বদ্ধতা নেই সুন্দরের মালিকের;
বিবর্ণ প্রেমিক, বরং তুমিই অপেক্ষা করো, সহ্য করো, আনুগত্য করো।
মৃত্যু ছাড়া এই ব্যথার উপশম নেই,
তবে কেনো আমি বলবো -- "এ ব্যথা দূর করো" ?

গতরাতে এক স্বপ্নে আমি দেখলাম,
ভালোবাসার উদ্যানে এক বৃদ্ধ ব্যক্তি,
তার হাতের ইশারায় আমাকে তার পাশে ডাকছে, বলছে -- "এসো !"
এই পথে ভালোবাসা হলো পান্নার ন্যায়,
যদি কোনো ভয় এসে পথ আগলে দাঁড়ায়,
তবে সে একাই শত ভয়কে করে জয়।
আমি হারাচ্ছি আমায় !

...................................................................
রাতের অভিযাত্রিক = যে স্রষ্টার অনন্ত সান্নিধ্যে মিলিত হবার জন্যে মৃত্যুদুয়ার পেরোনোর যাত্রা শুরু করেছে।
আমার প্রেমিক, পাষাণ-সম হৃদয়, সুন্দরের মালিক = খোদা।
বিবর্ণ প্রেমিক = খোদা প্রেমিক।
মৃত্যু ছাড়া এই ব্যথার উপশম নেই = স্রষ্টার পরম সান্নিধ্য হতে বঞ্চিত থাকার ব্যথা।
আমি হারাচ্ছি আমায় = স্রষ্টার পবিত্র সান্নিধ্যে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছি।


.....................................

Silence is the language of God,
all else is poor translation.
-- Rumi.


Silence is the language of God :
স্রষ্টা মানুষের সাথে নীরবতার মাধ্যমেই কথা বলেন... নীরবতা হলো খোদার ভাষা... আর খোদার ভাষার চেয়ে উত্তম ভাষা (যোগাযোগের মাধ্যম) আর কী হতে পারে !

all else is poor translation :
মানুষের মুখের ভাষা অনেক সীমিত। স্রষ্টার যে অনুভুতি মানুষ অন্তরে ধারণ করতে পারে, ধারণ করে, সেটা কখনোই পরিপূর্ণভাবে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। একারণে আধ্যাত্মিক বিষয়াবলিকে খুব কমই পরিপূর্ণভাবে ভাষায় প্রকাশ করা যায়। কারণ সে অনুভুতিগুলি এমনই, যার কাছে ভাষা পরাজিত হয়েছে। অর্থাৎ, স্রষ্টার ভাষাকে অন্য যেকোনো কিছুতেই প্রকাশ করতে যান না কেনো, সবই যেনো এক দুর্বল অনুবাদ।

মানুষের সাথে মানুষের ভাবের আদান-প্রদানের ক্ষেত্রেও কথাটি অনেকাংশে প্রযোজ্য। নীরবতার মাধ্যমে যে অনুভুতির আদান-প্রদান হয়, তার কাছে অনেকসময় শ্রেষ্ঠ ভাষাও পরাজিত হয়।

................................................

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

টাকার ইতিহাস, মানি মেকানিজম ও ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মহা জুলুম

ভূমিকা: জালিমের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম  (মহররম: ইনফো সিরিজ এর শেষ পোস্ট ছিল এটা। মূল সিরিজটি পড়ে আসুন ) জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাস হলো মহররম মাস। জালিমের মুখোশ উন্মোচনের মাস মহররম। জুলুমের কূটকৌশল উন্মোচনের মাস মহররম। আধুনিক সেকুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লেজিসলেশান (সংসদ), আর্মড ফোর্সেস (আর্মি) ও জুডিশিয়ারি (আদালত) হলো এক মহা জুলুমের ছদ্মবেশী তিন যন্ত্র, যারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করে জুলুম টিকিয়ে রাখার জন্য। তারচেয়েও বড় জালিম হলো big corporations: বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, যারা তাবৎ দুনিয়াকে দাস বানিয়ে রেখেছে। আর এই দাসত্বের শৃঙ্খলে তারা আমাদেরকে আবদ্ধ করেছে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে: টাকা আমাদের শ্রমকে ধারণ করে, অথচ সেই টাকার মূল্য আপ-ডাউন করায় অন্যরা -- ব্যাংক ব্যবসায়ীরা! টাকা আমাদের শ্রমকে সঞ্চয় করার মাধ্যম, অথচ সেই টাকা আমরা প্রিন্ট করি না, প্রিন্ট করে (ব্যাংকের আড়ালে) কিছু ব্যবসায়ী! সেই টাকার মান কমে যাওয়া (বা বেড়ে যাওয়া) আমরা নির্ধারণ করি না -- নির্ধারণ করে ব্যাঙ্ক (ব্যবসায়ীরা)! ইমাম হুসাইনের (আ.) প্রতিবাদী চেতনাকে ধারণ করব, শোকাহত হ

ধর্মব্যবসা: মুসলমানদের হাতে ইসলাম ধ্বংসের অতীত-বর্তমান (১)

ভূমিকা যদিও পলিটিকাল-রিলিজিয়াস ইস্যুতে নিশ্ছিদ্র আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করে আলোচনা করার অভ্যাস আমার, কিন্তু এখানে বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরে আর্গুমেন্ট করার প্রথমতঃ ইচ্ছা নেই, দ্বিতীয়তঃ সময় ও সুযোগ নেই। আমি যা সত্য বলে জানি, তা সংক্ষেপে তুলে ধরছি। যারা আমার উপর আস্থা রাখেন তাদের জন্য এই লেখাটি সোর্স অব ইনফরমেশান, উন্মুক্ত হৃদয়ের মানুষদের জন্য সত্য অনুসন্ধানের নতুন কিছু টপিক, আর প্রেজুডিসড ধর্মান্ধ রোগগ্রস্ত অন্তরের জন্য রোগ বৃদ্ধির উছিলা। শেষ পর্যন্ত আর্গুমেন্ট ও ডায়লগের দুয়ার উন্মুক্ত রাখার পক্ষপাতী আমি, কিন্তু সেই আর্গুমেন্ট অবশ্যই সত্য উন্মোচনের নিয়তে হওয়া উচিত, নিজের দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাস ও ধ্যান ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করবার উদ্দেশ্যে নয়। মক্কা-মদীনা: মুহাম্মদ (সা.) থেকে আলে-সৌদ (৬২৯-১৯২৪) এদেশের অধিকাংশ মানুষ মক্কা-মদীনার ইতিহাস কেবল এতটুকু জানেন যে, মুহাম্মদ (সা.) মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করেন। কিন্তু প্রায় চৌদ্দশ’ বছর আগে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র থেকে আজকের রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবের ইতিহাস কম মানুষই জানেন। প

পিস টিভি, জাকির নায়েক ও এজিদ প্রসঙ্গ

সম্প্রতি গুলশান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। আমি তখন দিল্লীতে ছিলাম। দেশে ফিরে শুনি পিস টিভি ব্যান করা হয়েছে বাংলাদেশে, এবং তার আগে ইন্ডিয়াতে। আমার বাসায় টিভি নেই, এবং আমি জাকির নায়েকের লেকচার শুনিও না। কিংবা পিস টিভিতে যারা লেকচার দেন, বাংলা কিংবা ইংলিশ -- কোনোটাই শুনি না; প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া আমার ইসলামের বুঝ জাকির নায়েকসহ পিস টিভি ও তার বক্তাদেরকে ইন জেনারেল আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। Peace TV বন্ধ হওয়ায় এদেশে বিকৃত ইসলাম প্রসারের গতি কমলো -- এটাই আমার মনে হয়েছে। একইসাথে আমি এটাও মনে করি যে, যেই অভিযোগ পিস টিভিকে ব্যান করা হয়েছে, তা নিছক অজুহাত। জাকির নায়েক কখনো জঙ্গীবাদকে উস্কে দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। কিংবা পিস টিভির লেকচার শুনে শুনে ISIS জঙ্গীরা সন্ত্রাসী হয়েছে -- এটা নিতান্তই হাস্যকর কথা। ISIS এর ধর্মতাত্ত্বিক বেইজ সম্পর্কে মোটেও ধারণা নেই, এমন লোকের পক্ষেই কেবল ISIS এর জন্য জাকির নায়েককে দোষ দেয়া সম্ভব। একইসাথে আমি এ বিষয়েও সচেতন যে, পিস টিভি বন্ধ করা হয়েছে আমাদের সরকারের রেগুলার “ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ