সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আন্তর্জাতিক রাজনীতি - ফিলিস্তিন


ফিলিস্তিন ইস্যু হলো প্রকৃত মানুষ চেনার কষ্টিপাথর। যারা মুখে ইসলামের বড় বড় কথা বলে কিন্তু ফিলিস্তিন ইস্যু এলে চুপ করে যায়, তাদেরকে চিনে নেবার প্রকৃত সময় এখন। আর এরাই হলো ইহুদীবাদীদের দালাল, কিংবা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সাহায্য-সমর্থনকারী। খুঁজে দেখুন কোথায় আজ কাতারের আশ্রয়ে থাকা ইউসুফ আল কারযাভি? যিনি ফিলিস্তিনীদের বন্ধু হিজবুল্লাহকে ‘হিজবুশ-শয়তান’ আখ্যা দিয়েছিলেন? নিপীড়িত ফিলিস্তিনী সুন্নি মুসলিমদের সর্বোচ্চ সাহায্যকারী শিয়া মুসলিমদেরকে যিনি ‘বিভ্রান্ত’ আখ্যা দিয়েছিলেন। যিনি সিরিয়ার তাকফিরি সন্ত্রাসীদের সাথে মিলে তথাকথিত "জিহাদ” ফরজ বলে ফতোয়া জারি করেছিলেন। কোথায় আজ সেই ইউসুফ আল কারযাভি? আজকের গাজায় ইসরাইলী বর্বর গণহত্যার বিপরীতে তো তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না! কেন ইসরাইলের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দিতে গিয়ে এসব দরবারী আলেমের কণ্ঠ বুঁজে আসে?

Peace TV নাম দিয়ে টিভি চ্যানেল করে ইসলাম প্রচার করে বেড়ানো বিখ্যাত জাকির নায়েক, যিনি কিনা ইয়াজিদকে ‘জান্নাতি’ বলে প্রচার করেন, তিনিইবা কেন ইসরাইলের বিরুদ্ধে কিছু বলছেন না? ইরানের বাইরে দুনিয়ার আর সব আলেমরা কি গর্তে লুকিয়েছেন? আর কেউ কোনো কথা বলছেন না কেন? অথচ এরাই সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তানসহ অন্যান্য স্থানে তাকফিরি সন্ত্রাসীদের পক্ষে নানান ফতোয়া জারি করেছিল।

আজকে বর্বর ইসরাইলী হামলার শিকার মজলুম গাজাবাসীর সহায়তায় এগিয়ে এসেছে কেবল ইরান, সিরিয়া, আর লেবাননের হিজবুল্লাহ। তারাই হামাসকে অস্ত্র ও প্রযুক্তিসহ নানাবিধ সাহায্য সহযোগিতা করে আসছে। আর কেউ না। আরব বিশ্বের আর কোনো দেশ নয়। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেছিলেন, "৩৫ বছর যাবৎ আমরা ফিলিস্তিনীদের সাহায্য করে আসছি, তারা কি শিয়া?” শিয়া-সুন্নি বিভেদ নিয়ে উচ্চকণ্ঠ "সুন্নি” নামধারীরা আজকে কেন সুন্নি ভাইদের সাহায্যে এগিয়ে আসছে না? কেন সুন্নি ভাইদের সাহায্যে কেবল ইরানি শিয়ারা-ই এগিয়ে আসছে? মানুষের কি চোখ খুলবে না?

তুরস্কের এরদোগান মুখে ইসরাইলবিরোধী বড় বড় কথা বলছে, অথচ খোঁজ নিয়ে দেখুন তুরস্কেই ন্যাটোর সামরিক ঘাঁটি বসিয়ে রেখেছে, ইসরাইলের সাথে সবরকম কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে এবং এরদোগানের আমলে ইসরাইলের সাথে তুরস্কের রেকর্ড-ব্রেকিং পরিমাণ বাণিজ্য হয়েছে।

বাংলাদেশের শেখ হাসিনার ‘মদিনা সনদ’ এর মতই এরদোগানের মুখের কথা, কিন্তু কাজের বেলায় ঠিকই মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। ফিলিস্তিনের কষ্টিপাথরে এভাবে মানুষ যাচাই করে নিন। মুনাফিক চিনুন আর খাঁটি মুসলমান চিনুন। চিন্তা করে দেখুন, শিয়া-সুন্নি বিভেদ উস্কে দিয়ে মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত রাখার মাধ্যমে কারা ফায়দা লুটছে।

ভেবে দেখুন! কারা জিহাদের নাম করে মিলিট্যান্ট গ্রুপ তৈরি করে মুসলমানদের বিরুদ্ধেই লাগিয়ে দিচ্ছে, অথচ ইসরাইলের বিরুদ্ধে তারা কখনো একটি গুলিও ছুঁড়ছে না। তাকিয়ে দেখুন শিয়া-সুন্নি ঐক্যের কথা কারা বলে বেড়াচ্ছে, আর কিভাবে করে বিগত ৩৫ বছর যাবত এই ইরান শুধু কথায় নয়, কাজে প্রমাণ করে দেখিয়েছে যে, গোটা মুসলিম উম্মাহ এক জাতি এবং শিয়া-সুন্নি ভাই-ভাই, এবং ফিলিস্তিনী ভাইদের সাহায্য করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য ফরজ।

ইরাক-আফগানিস্তান-সিরিয়া ইত্যাদি অতি সাম্প্রতিক ইস্যু। মুসলিম বিশ্বের ক্যান্সার ইসরাইলের ইতিহাস অনেক পুরনো, আমাদের মজলুম ফিলিস্তিনী ভাইদের অসহায় আর্তনাদও অর্ধশতাব্দীর পুরনো। চোখ মেলে দেখুন, কারা মুসলিম উম্মাহ’র এই দীর্ঘদিনের যন্ত্রণা লাঘব করার চেষ্টা করছে, আর কারা সেটাকে জেনে-শুনে এড়িয়ে গিয়ে সিরিয়া কিংবা ইরাকের সাম্প্রতিক ইস্যু নিয়ে মাতামাতি করছে।

চিন্তা করে দেখুন ফিলিস্তিনকে এড়িয়ে গিয়ে এই সিলেক্টিভ জিহাদ কাদের স্বার্থে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে মানুষ চিনে নিন, দেশ চিনে নিন, শাসক চিনে নিন। কাতার, আরব-আমিরাত, বাহরাইন, সৌদি-আরবসহ আরব বিশ্বের নিশ্চুপ দেশগুলোর শাসকদের সম্পর্কে প্রকৃত ধারণা লাভ করুন : এরা অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের দালাল।

সেইসাথে কারা সত্যিকার অর্থে মজলুম ফিলিস্তিনীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, তা-ও তাকিয়ে দেখুন : ইরান, সিরিয়া, হিজবুল্লাহ – এরাই মুসলিম উম্মাহর প্রকৃত বন্ধু, এরাই হামাসকে সহায়তা করে আসছে, এরাই মজলুম ফিলিস্তিনীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে আমাদের করণীয় এটুকুই: ভ্রান্তির পর্দা উন্মোচন করে সত্যকে জানা ও মানুষকে জানানো। এভাবে করে যখন গোটা বিশ্বের সকল মুসলিম মধ্যপ্রাচ্য আর আরবের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে প্রকৃত ধারণা লাভ করবে, তখনই আর মুসলিম বিশ্বকে বিভক্ত করে রাখা যাবে না। আমরা এক উম্মাহ হয়ে এক নেতার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে ইসরাইলকে মোকাবিলা করব ইনশাআল্লাহ।

.............................................................

ফিলিস্তিন ইস্যুতে মানুষ চিনে নিন।
কোথায় কাতারের আমীরের আঁচলে আশ্রয় নেয়া ইউসুফ আল কারযাভি? অন্ততঃ মুনাফিক এরদোগানের মত কিছু বড় বড় কথা বললেও পারতো। না না, তা বলবে কেনো? কাতারের আমীর যে কিছুই বলছে না! তবে দরবারি আলেম মুখ খুলবে কী করে!

এবার তাকিয়ে দেখুন, এই কারযাভি যেই হিজবুল্লাহকে হিজবুশ-শয়তান বলেছিলো, যেই ইরানের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলো, যেই সিরিয়ার সন্ত্রাসীদের সাথে তথাকথিত "জিহাদে" যোগ দেবার ফতোয়া জারি করেছিলো, ফিলিস্তিনীদের তারাই সাহায্য করছে!
আর কেউ না। ইরান, লেবাননের হিজবুল্লাহ, আর বাশার আল আসাদের সিরিয়া। ইরানের দৃঢ় অবস্থান ও কৌশল ছাড়া আজকে সিরিয়াও টিকতো না, থাকতো না লেবাননের হিজবুল্লাহ, কিংবা ফিলিস্তিনের হামাস। তাকিয়ে দেখুন, ইতিহাস ঘেঁটে দেখুন বিপ্লবের পর থেকে গত ৩৫ বছর যাবৎ ইরান, এই শিয়াদের ইরান কিভাবে সুন্নি ফিলিস্তিনিদেরকে সর্বোচ্চ সহায়তা দিয়ে আসছে।

আর তাকিয়ে দেখুন সিরিয়া আর ইরাকের তথাকথিত "জিহাদীরা" ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে কোন গর্তে লুকিয়েছে। আর দরবারি আলেম কারযাভিই বা কোথায় পালিয়েছে?

সত্য জানতে হলে আর কিছুই লাগে না, কেবল দরকার প্রেজুডিস-মুক্ত হৃদয়। কারণ সত্য চারিদিকে প্রকাশ্য, সত্য সর্বদা প্রকাশিত ও সুস্পষ্ট। মানুষের অন্তরের রোগ-ই মানুষকে সত্য দেখতে ও গ্রহণ করতে দেয় না।

অবশ্য ফিলিস্তিন ইস্যু পার হয়ে যাবার পরও বেশিরভাগ মানুষ তাদের সেই প্রেজুডিস নিয়েই বাড়ি ফিরবে। আবারও কারযাভি, জাকির নায়েক, এসব দরবারিদের কথায় মুগ্ধ হবে, প্রচার করে বেড়াবে। আবার গাজার শহীদদের লাশ দেখে কাঁদবেও বটে!

যুক্তি বিবর্জিত মন হলো আবেগ আর প্রেজুডিসের ভাণ্ডার। সবচে বেশি আবেগ আর প্রেজুডিস যুক্তি বিবর্জিত অন্তরগুলোতেই পাবেন।

.....................................................

::ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে করণীয়::

কিছুদিন হলো ইসরায়েল আবারো গাজা উপত্যকায় হামলা চালানো শুরু করেছে, এবং শতাধিক মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। ইন্টারনেটের কল্যাণে এসব ছবি এখন মানুষের ফেইসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে। শুধু মুসলমান কেনো, যে কেউ, যদি মানুষ হয়ে থাকে, তাকে এসব দৃশ্য আবেগতাড়িত করবে নিঃসন্দেহে। কিন্তু এই দৃশ্য নতুন নয়। যারা আজকে বারবার অসংখ্য লাশ আর ধ্বংসস্তুপের ছবি শেয়ার করছেন, তাদের জানা দরকার যে, ফিলিস্তিন এভাবে, ঠিক এই একইভাবে আক্রান্ত হয়ে আসছে যুগের পর যুগ। আমার মনে আছে ছোটবেলায় আব্বুর কাছে এসব ছবির প্রিন্ট কপি দেখতাম, যেটা পরে বুঝতে পেরেছি যে ফিলিস্তিনের ছবি। এই ঘটনা নতুন নয়। এবং আল্লাহ না করুন, হয়তো কয়েক মাস পর আবারো একই দৃশ্য আমাদের দেখতে হবে। আমার অনুরোধ, ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে আপনার করণীয়কে ফেইসবুকের প্রোফাইল ফোটো-কাভার ফোটো চেইঞ্জ এবং লাশ ও ধ্বংসস্তুপের ছবি শেয়ার করার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবেন না। বরং ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে সচেতন হোন, অন্যকে সচেতন করুন। ফিলিস্তিন-কেন্দ্রিক মধ্যপ্রাচ্যের ধর্মীয় ও ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও তা নিয়ে শত্রুদের ষড়যন্ত্র সুস্পষ্টরূপে তুলে ধরুন। যখন গোটা দুনিয়ার সকল মুসলমানের কাছে তাদের ষড়যন্ত্রগুলো উন্মোচিত হয়ে যাবে, তখনই আমাদের বিজয় আসবে।

ফিলিস্তিনের সাথে অনেক, অনেক কিছুই জড়িত। অনেক দেশ, অনেক গ্রুপ, অনেক নাম, অনেক ব্যক্তি। এগুলো সম্পর্কে এক-দুইটা পোস্ট লিখে শেষ করা যাবে না। কিন্তু অন্ততঃ এগুলো সম্পর্কে সম্যক স্বচ্ছ ধারণা লাভের চেষ্টা করুন। একটু কষ্ট করুন। ফিলিস্তিনী বাবা-মা-ভাই-বোনদের প্রতি দায়িত্বকে কেবল অশ্রুপাত ও ছবি শেয়ারিং এর মধ্যে সীমিত করবেন না। জানার চেষ্টা করুন :

১. ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
২. ইরানের ইসলামী বিপ্লবের ইতিহাস
৩. লেবাননের হিজবুল্লাহর ইতিহাস
৪. ফিলিস্তিনের হামাসের ইতিহাস
৫. সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও বর্তমান সৌদি সরকার
৬. মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে সিরিয়ার ভূমিকা ও নৈতিক অবস্থান
৭. তথাকথিত খেলাফত বাস্তবায়নকারী মুজাহিদীন গ্রুপ আল কায়েদা, ISIL, ISIS, Al-Nusra, Al-Sham এর ইতিহাস, এবং কেনো অর্ধশতাব্দীর অধিক সময়ে মুসলিম বিশ্বের বুকে জেগে থাকা ক্ষতকে সারাবার জন্য এরা কখনোই কোনো উদ্যোগ নেয়নি, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি গুলিও ছোঁড়েনি।
৮. জাতিসংঘ, OIC, আরব লীগ ইত্যাদির ইতিহাস ও কর্মকাণ্ড
৯. ইসরায়েলী আক্রমণের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের হামাস যে প্রতিরোধ করছে, তার অস্ত্রের যোগান কোথা থেকে আসছে, কোন দেশ কী অস্ত্র দিচ্ছে, কতটুকু হোমমেইড অস্ত্র -- ইত্যাদি সব তথ্য মানুষের কাছে পরিষ্কার এবং ফেইসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে। ইরান, লেবানন, সিরিয়া, লিবিয়া থেকে অস্ত্র যাচ্ছে সেখানে। ইসলামী ইরান বরাবরই ফিলিস্তিনের পক্ষে সোচ্চার ছিলো, এবং প্রতিরোধ যোদ্ধা গ্রুপ প্রতিষ্ঠা, ট্রেনিং ইত্যাদিতে সহায়তা করেছে, এখনও অস্ত্র সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিনীদের। হিজবুল্লাহ ও সিরিয়ার ভূমিকাও আপনাদের জানা।
১০. এবার সর্বশেষ জানার চেষ্টা করুন : মুসলিম বিশ্বের বুকে এই দীর্ঘকালীন ক্ষত সারানোর জন্য তথাকথিত মুজাহিদীন গ্রুপসমূহ (আল কায়েদা, আন-নূসরা, আইএসআইএল, ইত্যাদি) কেনো কখনোই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়নি, কোনো শব্দ করেনি, বরং ইরানের সীমান্ত দেশগুলোতে, অর্থাৎ কখনো সিরিয়ায়, কখনো ইরাকে, কখনো আফগানিস্তানে ও কখনো পাকিস্তানে -- এসব জায়গায় সন্ত্রাস করে বেড়াচ্ছে ? জানার চেষ্টা করুন তাদের অস্ত্র সহায়তা, তাদের ট্রেনিং আসছে কোথা থেকে ? কোন দেশ থেকে ? সেই দেশ মুসলমানদের পক্ষে না বিপক্ষে ?

In the age of information, ignorance is a choice. অতএব, উদাসীন হয়ে এই বিষয়গুলোকে এড়িয়ে যাবেন না, এবং ফিলিস্তিন ইস্যুকে ফেইসবুকের ছবি-স্ট্যাটাসে সীমাবদ্ধ করে ফেলবেন না। সঠিক তথ্য জানার চেষ্টা করুন, জানানোর চেষ্টা করুন। এটাই আমাদের করণীয়। আর তা না করে যদি কেবল অশ্রুপাত করি, তবে অশ্রুপাত তো লাখো-কোটি মুসলিম গত অর্ধ শতাব্দী যাবৎ করেই আসছে।

এমন যেনো না হয় যে, আজকের "Pray for Gaza", "Save Palestine" ইত্যাদি কথাসম্বলিত প্রোফাইল ফোটো চেইঞ্জ করার সাথে সাথে ফিলিস্তিন আপনার মাথা থেকে মুছে যায়, এবং পরবর্তী বিশ্বকাপের সময় আপনার প্রোফাইল পিকচার ও আপনার চিন্তা-চেতনা দখল করে নেয় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা কিংবা জার্মানি। আর ফিলিস্তিন ও ইরান কেন্দ্রিক মধ্যপ্রাচ্য ও আরবের ধর্মীয় ও ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং শত্রুর নানারূপী ষড়যন্ত্র আপনার কাছে অজানা-ই রয়ে যায়। এমন যেনো না হয়। কখনোই না হয়।

ফিলিস্তিন আমাদের অন্তরে চির-জাগরুক থাকুক।

...................................................................................

প্রেক্ষাপট-১> কখনো দেখিনি, শুনিনি যে আল-কায়েদা, আল-নুসরা, আই এস আই এল; এরা ইসরায়েল এর বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছে। কোনো রকম প্রতিরোধী যুদ্ধ এদের সাথে ইসরায়েল এর কখনোই হয়নি। কখনোই না।

প্রেক্ষাপট-২> ছোটো বড় অনেক গুলো যুদ্ধ হয়ে গেছে ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহ'র মধ্যে, বিভিন্ন সময় ইসরায়েলী আগ্রাসন রোধ করতে গিয়ে। এরমধ্যে ১৯৯৭ সালে ইসরায়েলের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে হিজবুল্লাহ'র বর্তমান সেক্রেটারি হাসান নাসরুল্লাহ'র নিজের বড় ছেলে 'হাদি নাসরুল্লাহ' শহীদ হন।

প্রেক্ষাপট-৩> গত ক'দিন যাবৎ ইসরায়েল নতুন করে গাজা'য় নির্মম হত্যাকান্ড শুরু করেছে, যার বিরুদ্ধে কথিত জিহাদী গ্রুপ AL-Qaeda, ISIL, ISIS, Al-Nusra, Al-Sham 'টুঁ' শব্দটি পর্যন্ত করেনি।

প্রেক্ষাপট-৪> সিরিয়ার প্রস্তুতকৃৎ এবং আগেই সরবরাহকৃত 'এম-৩০২, ১৫০কিঃমিঃ রেঞ্জ এর রকেট দ্বারা 'হামাস' এর পাল্টা হামলায় ইসরায়েল যখন ভীত-সন্ত্রস্ত (কারন তাদের পরমানু অস্ত্র ভান্ডার, হামাস ও হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় আছে বলে অনেকেই মনে করেন) এবং একই সময়ে যখন ইরান ও হিজবুল্লাহ ঘোষনা দিয়েছে তারা 'হামাস' এর প্রতিরোধী যুদ্ধ, তথা ইসরায়েল এর উপর পাল্টা রকেট/ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সহ সবধরনের প্রতিরোধী কার্যকলাপকে সম্পূর্ন সমর্থন করে; তখুনি-----

---- প্রেক্ষাপট-৫> 'ISIL' হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছে। 'আয়েসা' নামের একটি টিভি সংবাদ সংস্থায় 'আই এস আই এল' এর ভিডিও বার্তায় হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে তাদের এই ঘোষনা প্রকাশ করা হয়।

প্রেক্ষাপট-৬> তেল আবিব(ইসরায়েল) ইউনিভার্সিটির এক রিপোর্ট এ বলা হয়েছে, "সউদী আরব হচ্ছে ইসরায়েল এর শেষ ভরসা"।

প্রেক্ষাপট-৭> জঙ্গি দলগুলোর বেশীর ভাগই সউদী অর্থে চলে। এবং এদের সবার একটা জায়গায় মিল রয়েছে। তা হলো, এরা ইসরায়েল এর বিরুদ্ধে কখনো টুঁ শব্দটি করেনা, জিহাদ তো দুরের কথা।

প্রেক্ষাপট-৮> জাতিসংঘ, আরব লীগ এবং 'ও আই সি'র প্রতি ইসরায়েল এর গাজা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দ্রুত অফিশিয়াল ব্যাবস্থা নেয়ার জন্য ইরানের আহবান।

প্রেক্ষাপট-৯> জাতিসংঘ তো "আমাদের" নয়, কিন্তু যারা "আমাদের" তাদের ঘুম এখনো ভাঙছে না।

প্রেক্ষাপট-১০> "আরব দেশ গুলো অর্থ এবং অস্ত্র সিরিয়ায় সন্ত্রাসী দের জন্য পাঠায়, কিন্তু একটা সিঙ্গেল গুলিও ফিলিস্তিনে, গাজা'য় পাঠায়না।" -- সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ, হিজবুল্লাহ মহাসচিব।

প্রেক্ষাপট-১১> ওহাবি/সউদী প্রতিষ্ঠা হয়েছে তাকফির করে করে মুসলমানদের মধ্যে সবসময় হানাহানি, মারামারি লাগিয়ে রাখার জন্য যাতে এই জাতি শুধু দুর্বল হয় এবং 'বৃহত্তর ইসরায়েল' প্রতিষ্ঠা করার পথ সুগম হয়।

প্রেক্ষাপট-১২> "ফিলিস্তিনীরা কি শিয়া, যাদেরকে আমরা গত ৩৫ বছর যাবৎ সাহায্য করে আসছি? অন্য কোন দেশ, কোন সরকার ফিলিস্তিনীদের প্রতি এমন সাহায্য করেছে?" ---আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ আলী খামনেয়ী, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা।

প্রেক্ষাপট-১৩> কেবল অস্ত্রই নয়, ইরান শুধুমাত্র ১৯৯৩ থেকে ২০০৬ এর মধ্যে প্রতি বছর ৩০ মিলিয়ন ইউ এস ডলার সাহায্য দিয়েছে হামাস/ফিলিস্তিন কে। ২০০৬ এর পর সাহায্যের হার আরো বেড়েছে।
.......................................................

Rocket & Missile list of Hamas
Model & Range :

Heavy Mortar : 9.7 km [Homemade]

Qassam : 17.7 km [Homemade]

Grade rocket : 20 km [ supplier : Iran]

Katyusha : 20.4 km [supplier : Hizbollah]

Upgraded rocket : 48 km [Supplier : Iran]

Fajr-5 : 75 km [supplier :Iran]

M-302 : 150 km [Supplier : Syria]

WS-1E : 40km [Suplier: Lybia]

..............................................

ন্যাটো সামরিক জোটভুক্ত দেশ তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রজব তাইয়্যেব এরদোগানকে যারা আগে থেকে চিনতেন না, তারা একে ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিচার করে মুনাফিক হিসেবে চিনে রাখুন।
একদিকে ন্যাটো জোটভুক্ত হয়ে আছে আর সিরিয়ার সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় সাহায্য দিচ্ছে, আরেকদিকে ফিলিস্তিন ইস্যুতে পপুলারিটি পাবার জন্য বক্তব্য-সর্বস্ব রাজনীতি করে বেড়াচ্ছে।
এই লোকটি মিশরের আসমা বেলতাগির মৃত্যুতে মিডিয়ার সামনে চোখের জলও ফেলেছিলো। এসব মুনাফিকদের উপর আল্লাহর শাস্তি নেমে আসুক।

....................................................

যখন আমার চারপাশের মুসলমানেরা ব্রাজিল-জার্মানির ফুটবল ম্যাচ নিয়ে উত্তেজনায় ফেটে পড়ছে, তখন ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলায় শহীদদের স্বজনেরা চিৎকার করে কাঁদছে।
বাংলাদেশে এমন দিনও কি দেখতে হবে যে জালিমের গুলিতে শহীদ আপন ভাইকে কবর দিয়ে এসে অপর ভাই জার্মানির গোল দেখে উল্লাসে ফেটে পড়বে, আরেক ভাই ব্রাজিলের পরাজয়ের দুঃখে কাঁদবে?

অবশ্য আজকে ফিলিস্তিনের শহীদ ভাইদেরকে যারা পর করে দিয়ে ফুটবল নিয়ে উত্তেজনায় ফেটে পড়ছে, তাদের পক্ষে মায়ের পেটের ভাইকে কবর দিয়ে এসেও খেলা দেখা সম্ভব। তাদের পক্ষে আরো অনেক কিছুই সম্ভব।

যে অন্তর টিভিতে ফুটবল ম্যাচ দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়ে, অথচ একই টিভিতে ফিলিস্তিনী মুসলমানদের উপর সংঘটিত ম্যাসাকার দেখে ব্যথাতুর হয়ে পড়ে না, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয় না, চোখ অশ্রুসজল করে না, সে অন্তরের উপর আল্লাহর সার্বভৌমত্ব নেমে আসুক।
যে বিশ্বকাপ ফুটবল মুসলিম জাতির হৃদয়কে সাময়িকভাবে নেশাগ্রস্ত করে তোলে, ফিলিস্তিনকে ভুলিয়ে দেয়, সরিয়ে দেয় আলোচনার টেবিল থেকে, ফেইসবুক ওয়াল থেকে, সেই বিশ্বকাপ ফুটবল আর নিছক বিনোদন থাকে না। তা হয়ে যায় মুসলিম জাতির উপর শয়তানের হাতিয়ার। আর ফুটবল বিশ্বকাপ দিয়ে, ক্রিকেটের নেশা দিয়ে মানুষকে মোহগ্রস্ত করে রেখে শয়তান তার কাজে নেমে পড়ে।

মুসলমানদের ঘোর কাটুক। তারা ভুলে না যাক যে, তারা দুনিয়াতে হক প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নিয়ে এসেছে, খেলার মোহে নেশাগ্রস্ত থেকে ফিলিস্তিনকে ভুলে যাবার জন্য নয়।
ঐশী দয়া নেমে আসুক, ঐশী দয়া নেমে আসুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

টাকার ইতিহাস, মানি মেকানিজম ও ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মহা জুলুম

ভূমিকা: জালিমের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম  (মহররম: ইনফো সিরিজ এর শেষ পোস্ট ছিল এটা। মূল সিরিজটি পড়ে আসুন ) জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাস হলো মহররম মাস। জালিমের মুখোশ উন্মোচনের মাস মহররম। জুলুমের কূটকৌশল উন্মোচনের মাস মহররম। আধুনিক সেকুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লেজিসলেশান (সংসদ), আর্মড ফোর্সেস (আর্মি) ও জুডিশিয়ারি (আদালত) হলো এক মহা জুলুমের ছদ্মবেশী তিন যন্ত্র, যারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করে জুলুম টিকিয়ে রাখার জন্য। তারচেয়েও বড় জালিম হলো big corporations: বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, যারা তাবৎ দুনিয়াকে দাস বানিয়ে রেখেছে। আর এই দাসত্বের শৃঙ্খলে তারা আমাদেরকে আবদ্ধ করেছে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে: টাকা আমাদের শ্রমকে ধারণ করে, অথচ সেই টাকার মূল্য আপ-ডাউন করায় অন্যরা -- ব্যাংক ব্যবসায়ীরা! টাকা আমাদের শ্রমকে সঞ্চয় করার মাধ্যম, অথচ সেই টাকা আমরা প্রিন্ট করি না, প্রিন্ট করে (ব্যাংকের আড়ালে) কিছু ব্যবসায়ী! সেই টাকার মান কমে যাওয়া (বা বেড়ে যাওয়া) আমরা নির্ধারণ করি না -- নির্ধারণ করে ব্যাঙ্ক (ব্যবসায়ীরা)! ইমাম হুসাইনের (আ.) প্রতিবাদী চেতনাকে ধারণ করব, শোকাহত হ

ধর্মব্যবসা: মুসলমানদের হাতে ইসলাম ধ্বংসের অতীত-বর্তমান (১)

ভূমিকা যদিও পলিটিকাল-রিলিজিয়াস ইস্যুতে নিশ্ছিদ্র আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করে আলোচনা করার অভ্যাস আমার, কিন্তু এখানে বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরে আর্গুমেন্ট করার প্রথমতঃ ইচ্ছা নেই, দ্বিতীয়তঃ সময় ও সুযোগ নেই। আমি যা সত্য বলে জানি, তা সংক্ষেপে তুলে ধরছি। যারা আমার উপর আস্থা রাখেন তাদের জন্য এই লেখাটি সোর্স অব ইনফরমেশান, উন্মুক্ত হৃদয়ের মানুষদের জন্য সত্য অনুসন্ধানের নতুন কিছু টপিক, আর প্রেজুডিসড ধর্মান্ধ রোগগ্রস্ত অন্তরের জন্য রোগ বৃদ্ধির উছিলা। শেষ পর্যন্ত আর্গুমেন্ট ও ডায়লগের দুয়ার উন্মুক্ত রাখার পক্ষপাতী আমি, কিন্তু সেই আর্গুমেন্ট অবশ্যই সত্য উন্মোচনের নিয়তে হওয়া উচিত, নিজের দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাস ও ধ্যান ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করবার উদ্দেশ্যে নয়। মক্কা-মদীনা: মুহাম্মদ (সা.) থেকে আলে-সৌদ (৬২৯-১৯২৪) এদেশের অধিকাংশ মানুষ মক্কা-মদীনার ইতিহাস কেবল এতটুকু জানেন যে, মুহাম্মদ (সা.) মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করেন। কিন্তু প্রায় চৌদ্দশ’ বছর আগে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র থেকে আজকের রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবের ইতিহাস কম মানুষই জানেন। প

পিস টিভি, জাকির নায়েক ও এজিদ প্রসঙ্গ

সম্প্রতি গুলশান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। আমি তখন দিল্লীতে ছিলাম। দেশে ফিরে শুনি পিস টিভি ব্যান করা হয়েছে বাংলাদেশে, এবং তার আগে ইন্ডিয়াতে। আমার বাসায় টিভি নেই, এবং আমি জাকির নায়েকের লেকচার শুনিও না। কিংবা পিস টিভিতে যারা লেকচার দেন, বাংলা কিংবা ইংলিশ -- কোনোটাই শুনি না; প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া আমার ইসলামের বুঝ জাকির নায়েকসহ পিস টিভি ও তার বক্তাদেরকে ইন জেনারেল আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। Peace TV বন্ধ হওয়ায় এদেশে বিকৃত ইসলাম প্রসারের গতি কমলো -- এটাই আমার মনে হয়েছে। একইসাথে আমি এটাও মনে করি যে, যেই অভিযোগ পিস টিভিকে ব্যান করা হয়েছে, তা নিছক অজুহাত। জাকির নায়েক কখনো জঙ্গীবাদকে উস্কে দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। কিংবা পিস টিভির লেকচার শুনে শুনে ISIS জঙ্গীরা সন্ত্রাসী হয়েছে -- এটা নিতান্তই হাস্যকর কথা। ISIS এর ধর্মতাত্ত্বিক বেইজ সম্পর্কে মোটেও ধারণা নেই, এমন লোকের পক্ষেই কেবল ISIS এর জন্য জাকির নায়েককে দোষ দেয়া সম্ভব। একইসাথে আমি এ বিষয়েও সচেতন যে, পিস টিভি বন্ধ করা হয়েছে আমাদের সরকারের রেগুলার “ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ