সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পথিকের গল্প

তারপর… পথ চলতে চলতে...। ক্লান্ত পথিক থামে। এতক্ষণে পানি পাওয়া গিয়েছে। দীর্ঘ পথ হেঁটে পিপাসার্ত, শ্রান্ত সে। সেই কবে বাড়ি ছেড়েছে মনে পড়ে না। বাড়ির কোনো স্মৃতিও নেই তার। শুধু জানে, দুই যুগ হলো বাড়ি ছেড়ে এসেছে সে। দীর্ঘ দিন পথ হেঁটেছে সে, পথিমধ্যে বাণিজ্য করেছে হরেক রকম জিনিসের। সেসব আছে তার কাঁধের ঐ বড়সড় ঝুলিতে। পথিকের সারা জীবনের উপার্জন।

ঝুলিটা খুব সাবধানে পাশেই নামিয়ে রাখে পথিক। হাঁটু গেড়ে বসে হ্রদের পানিতে নিজের ছায়া দেখে। তারপর প্রাণভরে পানি খেয়ে নেয়। হাত-মুখ ধুয়ে রুমালটা বের করে তাই দিয়ে মোছে। তারপর সেখানেই বসে উদাস দৃষ্টিতে ঝুলির দিকে তাকিয়ে থাকে। বড়সড় এক ঝুলি। তার সারা জীবনের উপার্জন।

কথার জাদুকর সে। কথা বিকিয়ে বেড়ানোই তার কাজ, আর ঝুলির উপার্জন সব ঐ জাদু দেখিয়েই পাওয়া। গল্প, গান, কবিতা আর কথার জাদুতে মানুষকে মুগ্ধ করে সে। কত রকমের কথা ! নিত্য নতুন কথা। অথবা হয়তো পুরনো কোনো কথা, কিন্তু জাদুুর ছোঁয়ায় প্রতিবারেই তাতে নতুনত্ব আসে। লোকে মুগ্ধ হয়ে শোনে। পথিকের ঝুলি ভরে ওঠে। প্রতিটা দিনের শেষে দর্শক বাড়ি ফিরলে কথার জাদুকর পথিক তার ঝুলি কাঁধে নিয়ে যাত্রা করে। আবার শুরু হয় পথচলা। এমনি করে দীর্ঘ পথ হেঁটে এসেছে সে।

কোনোদিন জাদুতে মন ছিলো না, দর্শক উঠে গেছে চলে ! কোনোদিন হয়তো গল্পটা পুরনো ঠেকেছে, কেউ কেউ বলে উঠেছে : “পুরনো তত্ত্ব।” আবার কোনোদিন পসার জমেছে ভালো, হরেক রকম মানুষ এসে দাঁড়িয়ে গেছে, মুগ্ধ হয়ে শুনেছে কথার জাদু। এমনি করে পথিকের উপার্জন। আর কেউবা দূর থেকে জাদু দেখেছে বহুকাল। তারপর দিনের শেষে সন্ধ্যা নামলে যখন একাকী পথিক উদাস দৃষ্টিতে অশ্রুসজল হয়েছে, তখন পাশে এসে বসেছে। মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছে : “আমি তোমার জাদুতে মুগ্ধ হয়েছি। বিনিময়ে আমার দেবার কিছু নেই, তাই আমার নিজেকেই দিয়ে দিলাম। আমি তোমার হলাম ! তুমি আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।” তারপর পথিকের চেহারায় এঁকে দিয়েছে ভালোবাসার চিহ্ন ! আজীবন কথার জাদুতে অপরকে মায়ায় জড়ানো পথিক তখন নিজেই মায়ায় জড়িয়ে পড়ে, মুগ্ধ হয় ভালোবাসার জাদুতে। তারপর শুরু হয় তাদের পথচলা।

এমনি করে পথিকের পথচলা ! শত মানুষকে কথার জাদুতে মুগ্ধ করে, আবার কখনোবা নিজেই কারো জাদুতে মায়ায় পড়ে যায়। তখন এরা সবাই হয়ে ওঠে পথিকের উপার্জন। উত্থান পতনের এইসব দিন পার করে শ্রান্ত পথিক আজ এক হ্রদের পাড়ে এসে বসেছে, দু-দণ্ড বিশ্রাম নেবে বলে। আর উদাসভাবে তাকিয়ে আছে তার ঝুলির দিকে : প্রাপ্তি আর হারানোর হিসেব বের করার চেষ্টা করছে মনে মনে।
……………………………………………..
উদাস পথিক শূন্যে তাকিয়ে থাকে বহুক্ষণ। চোখের কোণে সমুদ্র খেলা করে ! শূন্য দৃষ্টিতে ঘোর লাগে। নাকি এ-ও এক ঘুম ? অদ্ভুত এক বাহন -- তাকে বর্ণনা করা যায় না, কেবল যেদিকে তাকানো যায় সবকিছু আলোকিত সাদা : সামনে এসে দাঁড়ায়। সেই বাহন তাকে বাড়ি নিয়ে যায়। যাযাবর পথিকের বাড়ি ! দুই যুগ আগে যে বাড়ি সে ছেড়ে এসেছিলো, সেই বাড়ি; যার স্মৃতি সে ভুলে গিয়েছিলো। সেইখানে এক হ্রদের পাড়ে নিয়ে উপস্থিত করে তাকে। কোথাও কেউ নেই। দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত জমিন, সুবিশাল হ্রদ, আর গাছ। আর পাখি !

হ্রদের পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকে সে। একদম শান্ত সে হ্রদের পানি। সেখানে হ্রদের পানিতে ঢেউ তোলা বাতাসের প্রবাহ নেই, কিন্তু সুশীতল স্পর্শ আছে : সুরভিত সে বাতাস দেহমনকে চাঙা করে। সেখানে পাখিদের উড়াউড়ি আছে, কিন্তু কলকাকলি নেই। তবুও হ্রদের পাড়ে দাঁড়িয়ে চোখ বুঁজলে শোনা যায় পাখিদের গান : যেনো সরাসরি হৃদয়ের ভিতর গাইছে তারা! এইখানে গাছের শাখাগুলি নুয়ে আসে, পাতাগুলি দোল খায় এদিক-ওদিক। কিন্তু না -- বাতাসে নয়, তারা নিজেরাই শাখাগুলিকে নুইয়ে দিয়েছে, আর পাতাগুলিকে দোলাচ্ছে ডানে আর বামে ! সূর্যের মতন একমুখী আলো নেই, কিন্তু বাতাসটাই যেনো আলোকিত এখানে। পাখি, গাছ, হ্রদের স্বচ্ছ টলটলে পানি -- সব যেনো নিজেই আলো হবার কাছাকাছি। কী স্নিগ্ধ সে আলো !

পথিকের অনভ্যস্ত চোখ আলোর উৎস খোঁজে। আজীবন উৎসের সন্ধান করেছে সে। আজ তাই উৎসবিহীন আলো তাকে অশান্ত করে তুলেছে। উৎস থাকবে কী করে, এযে স্বয়ং আলো !
অশান্ত দৃষ্টি ছুটে বেড়ায় এদিক ওদিক। দৃষ্টি ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসে। পথিক আজ আলোর মাঝে এসে পড়েছে। দৃষ্টি ক্লান্ত হলে অবশেষে চোখ বুঁজলো সে। হৃদয়ের মাঝে কে যেনো নিঃশব্দে বলে গেলো : “এবার তাকাও !”

আরেকটু এগুতে গাছের ছায়ায় চমৎকার সব আসন পাতা, রাজ সিংহাসন যেনো। না, তার চেয়েও সুন্দর। সেখানে -- মানুষ ! ঐতো মানুষ বসে রয়েছে। কেউবা আবার দাঁড়িয়ে : দুইজন, তিনজনে। তারাও যেনো আর একটু হলেই আলো হয়ে যাবে ! নির্জন এই এলাকায় মানুষ দেখে আনন্দিত হয়ে ওঠে পথিক। দৌড়ে গিয়ে একবারে অনেকটা কথা বলে ফেলতে চায় যেনো, জিজ্ঞাসাগুলি সব ছুঁড়ে দিতে চায়। কিন্তু পা থমকে যায়, কণ্ঠ আড়ষ্ট হয়ে আসে। এত শান্ত ওরা, এত সৌম্য যে তাদের কাছে দৌড়ে যাওয়া যায় না। আর কিছু জিজ্ঞাসা করা -- সেতো আরো বেমানান। পথিক ধীরপায়ে এগিয়ে যায়। মানুষগুলো যেমনি বসে ছিলো, তেমনিই থাকে। কেউবা আবার দাঁড়িয়ে ! সাহস করে তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় পথিক। তারা শুধু চোখ তুলে তাকায়। বড় বড় স্নিগ্ধ, প্রশান্ত দৃষ্টির চোখ। সে দৃষ্টিতে পথিকের পা থমকে যায়, কণ্ঠ আড়ষ্ঠ হয়ে যায়, চোখ বুঁজে আসে। তখন তারা সবাই মিলে একটি কণ্ঠস্বর হয়ে বলে : “শান্ত হও !” বুকের মাঝখানটিতে যেনো শোনা যায় সেই কথা।

পানির তেষ্টায় ছটফট করে ওঠে পথিক। একটু পানির জন্য চিৎকার করে উঠতে মন চায়, কিন্তু একদম শান্ত সে হ্রদের পানি, মৃদু শব্দেও যেনো তাতে আলোড়ন সৃষ্টি হবে, আর গোটা জগতটা দুলে উঠবে তাতে। ভীত, সতর্ক পথিক এগিয়ে যাবার চেষ্টা করে হ্রদের দিকে, কিন্তু পা থমকে যায়, হাত জড় হয়ে আসে, চোখ বুঁজে আসে। বুকের মধ্যে কে যেনো বলে দিয়ে যায় : “না, এখনও না।”
………………………………………………….
সেই অদ্ভুত বাহন তাকে ফিরিয়ে দিয়ে গেছে। ফিরিয়ে দিয়ে গেছে তার ঝুলির পাশে, হ্রদের পাড়ে। কিন্তু সেইসাথে দিয়ে গেছে নতুন এক স্বপ্ন। বাড়ির স্বপ্ন। বাড়ি ফেরার স্বপ্ন...।

পথিক আবার যাত্রা শুরু করে। পথিক জানে, তাকে এখানেই ফিরে আসতে হবে। ফিরে আসতেই হবে ! একদিন সে ফিরে আসবে। যেইদিন সে শ্রবণের বোঝা ত্যাগ করতে পারবে, দৃষ্টির বোঝা ঝেড়ে ফেলবে, ত্যাগ করবে কথার জগতকে, অশান্ত হৃদয়কে পূর্ণ করবে রিক্ততায়, যেইদিন সূর্যটাকে ছাড়াই সে হবে আলোকিত, সেইদিন সে শুনবে সত্যিকারের সুর, দেখবে ক্লান্তিহীন সৌন্দর্যকে, বলবে অভূতপূর্ব সব কথা, আর হৃদয়কে পূর্ণ করবে প্রশান্তিতে !
পথিক সেইদিন শান্ত হবে !

পথিক ফিরে আসে। হায়, পথিক ফিরে আসে ! বাড়ি ফিরবার ব্যাকুলতা বুকে বাজে। সে একদিন বাড়ি ফিরবে, ফিরতেই হবে। সে শুনবে, সে দেখবে, সে বলবে -- সে প্রশান্ত হবে ! কিন্তু পথিক জানে, যতদিন সে চোখ মেলে দেখবে, ততদিন চোখ বুঁজে দেখতে শিখবে না ! যতদিন কান পেতে শুনবে, ততদিন নৈঃশব্দের কোলাহল শুনতে পাবে না। যতদিন ভাষার জগতে কথার জাদুতে মেতে থাকবে, ততদিন হৃদয়ের জগতে কথা বলতে শিখবে না। যতদিন আপন হৃদয়ের তৃপ্তি খুঁজবে, ততদিন প্রশান্ত হতে পারবে না !

এরপর দীর্ঘ পথের নতুন এক যাত্রা শুরু হয় পথিকের। দৃষ্টির বোঝা, শ্রবণের বোঝা আর কথার জাদু ত্যাগ করবার যাত্রা, রিক্ত হবার যাত্রা। সৌন্দর্য নিয়ে যারা এসেছিলো, পথিকের দৃষ্টিতে তারা বিবর্ণ হয়ে আসে। বাদ্যযন্ত্রের সুর আর কথামালা নিয়ে যে গায়ক আর বাদক দল এসেছিলো, তারা মূল্য না পেয়ে চলে যায়। যারা গল্প শুনতে আসত, বারংবার অনুরোধ-প্রত্যাখ্যাত হয়ে তারাও চলে যায়। কথার জাদুতে মুগ্ধ হয়ে এসে যারা ভালোবেসেছিল, হায়, তারাও আজ চলে যায় ! চলে যায় ওয়াদা ভঙ্গ করে। হৃদয়ের শেকড় উৎপাটন করে রক্ত ঝরিয়ে, রিক্ত করে ! চলে যায় নতুন কাউকে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলবার ওয়াদা করতে।

কিন্তু এসবই যে ছিলো পথিকের উপার্জন, পথিকের জগত। কথার জাদুকরের জগত ! রিক্ততার বেদনা বড় বেশি। মূল্যহীন এ জীবনের উপার্জন, এই সৌন্দর্য, এই কথা, এই সুর আর যত কথার জাদু। কিন্তু মন যে মানে না ! হৃদয় যে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে থাকতে চায় ! ক্ষুদ্র হৃদয়ের পুরোটা শূন্য হলে হাহাকার বড় বেশি বাজে। সে ধ্বনির প্রতিধ্বনিতে অলিন্দ্য-নিলয় ফেটে পড়বে যেনো। সত্যিই বড় কঠিন এ যাত্রা ! যখন যাত্রাপথের বাঁকে বাঁকে চোখ-তৃপ্তকারী সৌন্দর্য ছড়ানো, ক্ষণে ক্ষণে মোহাচ্ছন্নকারী কথা আর সুর ভেসে আসে কানে, কথার জাদুতে মুগ্ধ হবার জন্য উৎসুক চোখ হৃদয়কে বিনিময় সাধে -- তখন বাড়ির কথা ভুলে এক ছুটে সব কুড়িয়ে নিতে মন চায় !
তবুও পথিক পথ চলে। মায়ায় জড়িয়ে ভালোবাসার স্বাদ নেবার পর হৃদয়ের রক্তক্ষরণে সম্বিত ফিরে এলে নতুন করে যাত্রা শুরু করে। আবার… আবার… পুনর্বার !
…………………………………………………….
ক্লান্ত পথিক নতুন করে যাত্রা শুরু করেছে। হ্রদের জলে বিসর্জন দিয়েছে তার যত উপার্জন। এইবারটি একাকী সে। নিঃসঙ্গ তার যাত্রা ! নির্বাক, নিশ্চুপ। হয়তো একদিন সে বাড়ি পৌঁছবে। নৈঃশব্দের কোলাহলে চোখ বুঁজে ক্লান্তিহীন সৌন্দর্যে মুগ্ধ হবে। হৃদয়ের জগতে কথা বলতে শিখবে। সুবাসিত বাতাসে হ্রদের পাড়ে দাঁড়িয়ে বুকভরে দম নেবে, তারপর এক আঁজলা পানি পান করে নবজীবন লাভ করবে ! একদিন পথিক পারবে ! সে পারবে !
সেই একদিনের প্রত্যাশায় পথিকের নবযাত্রা...।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

টাকার ইতিহাস, মানি মেকানিজম ও ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মহা জুলুম

ভূমিকা: জালিমের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম  (মহররম: ইনফো সিরিজ এর শেষ পোস্ট ছিল এটা। মূল সিরিজটি পড়ে আসুন ) জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাস হলো মহররম মাস। জালিমের মুখোশ উন্মোচনের মাস মহররম। জুলুমের কূটকৌশল উন্মোচনের মাস মহররম। আধুনিক সেকুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লেজিসলেশান (সংসদ), আর্মড ফোর্সেস (আর্মি) ও জুডিশিয়ারি (আদালত) হলো এক মহা জুলুমের ছদ্মবেশী তিন যন্ত্র, যারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করে জুলুম টিকিয়ে রাখার জন্য। তারচেয়েও বড় জালিম হলো big corporations: বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, যারা তাবৎ দুনিয়াকে দাস বানিয়ে রেখেছে। আর এই দাসত্বের শৃঙ্খলে তারা আমাদেরকে আবদ্ধ করেছে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে: টাকা আমাদের শ্রমকে ধারণ করে, অথচ সেই টাকার মূল্য আপ-ডাউন করায় অন্যরা -- ব্যাংক ব্যবসায়ীরা! টাকা আমাদের শ্রমকে সঞ্চয় করার মাধ্যম, অথচ সেই টাকা আমরা প্রিন্ট করি না, প্রিন্ট করে (ব্যাংকের আড়ালে) কিছু ব্যবসায়ী! সেই টাকার মান কমে যাওয়া (বা বেড়ে যাওয়া) আমরা নির্ধারণ করি না -- নির্ধারণ করে ব্যাঙ্ক (ব্যবসায়ীরা)! ইমাম হুসাইনের (আ.) প্রতিবাদী চেতনাকে ধারণ করব, শোকাহত হ

ধর্মব্যবসা: মুসলমানদের হাতে ইসলাম ধ্বংসের অতীত-বর্তমান (১)

ভূমিকা যদিও পলিটিকাল-রিলিজিয়াস ইস্যুতে নিশ্ছিদ্র আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করে আলোচনা করার অভ্যাস আমার, কিন্তু এখানে বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরে আর্গুমেন্ট করার প্রথমতঃ ইচ্ছা নেই, দ্বিতীয়তঃ সময় ও সুযোগ নেই। আমি যা সত্য বলে জানি, তা সংক্ষেপে তুলে ধরছি। যারা আমার উপর আস্থা রাখেন তাদের জন্য এই লেখাটি সোর্স অব ইনফরমেশান, উন্মুক্ত হৃদয়ের মানুষদের জন্য সত্য অনুসন্ধানের নতুন কিছু টপিক, আর প্রেজুডিসড ধর্মান্ধ রোগগ্রস্ত অন্তরের জন্য রোগ বৃদ্ধির উছিলা। শেষ পর্যন্ত আর্গুমেন্ট ও ডায়লগের দুয়ার উন্মুক্ত রাখার পক্ষপাতী আমি, কিন্তু সেই আর্গুমেন্ট অবশ্যই সত্য উন্মোচনের নিয়তে হওয়া উচিত, নিজের দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাস ও ধ্যান ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করবার উদ্দেশ্যে নয়। মক্কা-মদীনা: মুহাম্মদ (সা.) থেকে আলে-সৌদ (৬২৯-১৯২৪) এদেশের অধিকাংশ মানুষ মক্কা-মদীনার ইতিহাস কেবল এতটুকু জানেন যে, মুহাম্মদ (সা.) মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করেন। কিন্তু প্রায় চৌদ্দশ’ বছর আগে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র থেকে আজকের রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবের ইতিহাস কম মানুষই জানেন। প

পিস টিভি, জাকির নায়েক ও এজিদ প্রসঙ্গ

সম্প্রতি গুলশান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। আমি তখন দিল্লীতে ছিলাম। দেশে ফিরে শুনি পিস টিভি ব্যান করা হয়েছে বাংলাদেশে, এবং তার আগে ইন্ডিয়াতে। আমার বাসায় টিভি নেই, এবং আমি জাকির নায়েকের লেকচার শুনিও না। কিংবা পিস টিভিতে যারা লেকচার দেন, বাংলা কিংবা ইংলিশ -- কোনোটাই শুনি না; প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া আমার ইসলামের বুঝ জাকির নায়েকসহ পিস টিভি ও তার বক্তাদেরকে ইন জেনারেল আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। Peace TV বন্ধ হওয়ায় এদেশে বিকৃত ইসলাম প্রসারের গতি কমলো -- এটাই আমার মনে হয়েছে। একইসাথে আমি এটাও মনে করি যে, যেই অভিযোগ পিস টিভিকে ব্যান করা হয়েছে, তা নিছক অজুহাত। জাকির নায়েক কখনো জঙ্গীবাদকে উস্কে দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। কিংবা পিস টিভির লেকচার শুনে শুনে ISIS জঙ্গীরা সন্ত্রাসী হয়েছে -- এটা নিতান্তই হাস্যকর কথা। ISIS এর ধর্মতাত্ত্বিক বেইজ সম্পর্কে মোটেও ধারণা নেই, এমন লোকের পক্ষেই কেবল ISIS এর জন্য জাকির নায়েককে দোষ দেয়া সম্ভব। একইসাথে আমি এ বিষয়েও সচেতন যে, পিস টিভি বন্ধ করা হয়েছে আমাদের সরকারের রেগুলার “ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ