সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

টুকরাচিন্তা - শঙ্খচিলের বাসা

তারিক আর সাইফুদ্দিন দুই নাম্বারে নেমে গেলো। রিকশা এগুতে লাগলো। চিন্তার জগতে আর কিছুকে ঢুকতে দিতে চাই না। রাস্তার ক্ষণস্থায়ী মেমোরিকেও নয়। তাই আমি কোনোকিছুর দিকে নজর না দেবার উদ্দেশ্যে দৃষ্টির লেভেলটাকে উপরে উঠিয়ে দিলাম। সেখানে আকাশ।
আকাশ। ল্যাম্পপোস্ট। গাছ। তারপর আবার আকাশ। সেখানে আজকে অদ্ভুত দৃশ্য দেখেছি। কেউ কি কখনো শঙ্খচিলকে বাসা বানানোর জন্য খড় নিয়ে যেতে দেখেছেন ? আমি আজকে সেই দৃশ্য দেখেছি। বেশ নিচু দিয়ে উড়ে যাচ্ছিলো পাখিটা ! শঙ্খচিল, কিংবা বাজপাখি, যা-ই বলুন না কেনো ওটাকে। আমার কাছে শঙ্খচিল।
আকাশের অনেক উঁচুতে পাখা না ঝাপটিয়ে দীর্ঘক্ষণ ডানাদুটি মেলে উড়ে বেড়ানো যেকোনো পাখিই আমার কাছে শঙ্খচিল। জীবননান্দের শঙ্খচিলের উপমাটা আমার ভালো লেগেছে, কিন্তু সেটাতে আমি একটু বেহেশতের রঙ লাগিয়ে নিয়েছি। তারপর সেটা হয়ে গিয়েছে এক অদ্ভুত সন্ন্যাসী, সাধু, কিংবা সূফি ! আর আমি হয়েছি গৃহী। আমি জমিনের সাথে মিশে আছি। আকাশে আসলে কোনো স্থানই নেই ! কী আর করা। তাই শঙ্খচিল দেখতে তাকে বন্দী করেছি। সাত আসমানের 'পার বসবাস যে শঙ্খচিলের, তাকে যদি মর্ত্যের মায়ায় বন্দী করা যায়, তবে সেটা বড় জুলুম ! কিন্তু সেই জুলুম না করে পারি না। মুগ্ধ হয়ে দেখি। মায়ার খাঁচায় বন্দী করে।
চিড়িয়াখানায় দেখেছিলাম একবার। খাঁচায় বন্দী শঙ্খচিল। সেই ব্ন্দী অবস্থায়ও তার তীক্ষ্ম দৃষ্টি। আমি খুব কাছ থেকে ছবি নিয়েছিলাম। সেই দৃষ্টি দেখলে ভয় লাগে। সবাই-ই ভয় পায়। কিন্তু আরো কাছে গেলে হয়তো ভয় দূর হয়ে যাবে। ঐ রাজকীয় পালকের নিচে সে-ও হয়তো সাধারণ এক পাখি। যার সংসার আছে। আর দশটা পাখির মতন সবই আছে। সারাদিন সবচেয়ে উঁচু আকাশটায় উড়ে বেড়ানোর পর দিনশেষে সে-ও নীড়ে ফেরে। সেখানে কেউ তার জন্য অপেক্ষা করে। সেখানে মায়া আছে, মমতা আছে। খুব সহজ, কিন্তু শান্তিপূর্ণ জীবন আছে। আমার মত মানুষ যখন বাড়ির ছাদ থেকে কিংবা চলন্ত রিকশা থেকে মুগ্ধ হয়ে তাকে দেখে, তখন আসলে বাড়ির ওপারের বাড়ি কিংবা রাস্তার ওপারের রাস্তা থেকে আরো কোনো মুগ্ধ চোখ তাকে দেখছে। ফিনিক্সের মতন ? যারা পাঁচশো বছর পরপর দুনিয়াতে আসে, শুধু মানুষকে মুগ্ধ করার জন্যই ? তারপর বিশাল বড় ওক গাছে বাসা বাঁধে। দারুচিনির ছাল দিয়ে বানানো বাসা। ক'জনের সৌভাগ্য হয় অত কাছ থেকে সেই পাখিকে দেখা ? কিংবা তার অশ্রু ? যে অশ্রু ক্ষত সারিয়ে তোলে ? তারপর সময় হলে সে উড়ে চলে যায়। নখরের আঁচড়ে রেখে যায় তার শেষ চিহ্ন।
এগুলো সব হেঁয়ালিপূর্ণ কথা। ভদ্রতা করে পড়তে আসা মানুষদের উপর এ-ও এক জুলুম। পুরোটা পড়বে, কিন্তু কিছুই বুঝবে না। সবাই যার যার মত করে কিছু একটা ভেবে নিয়ে চলে যাবে। অথচ সত্যিকার শঙ্খচিলের গল্পটিই আর বলা হয়ে উঠবে না, যাকে আমি দেখেছিলাম !
দুনিয়াতে প্রতিনিয়ত এমন অনেক গল্প রচিত হয়, নীরবতাই যার একমাত্র লেখনী। আর যখন সেই গল্পের লেখক-পাঠক দুটো মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে আসে, দুজনেই কখনো লেখক, আবার কখনো পাঠক হয়ে ওঠে -- তখন -- তখন দুনিয়ার আর সব মানুষ অনন্য এক গল্প থেকে বঞ্চিত হয়।
কোনো কথার জাদুকরের সাধ্য নেই সে গল্প লেখার।
নভেম্বর ১১, ২০১৪।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

টাকার ইতিহাস, মানি মেকানিজম ও ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মহা জুলুম

ভূমিকা: জালিমের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম  (মহররম: ইনফো সিরিজ এর শেষ পোস্ট ছিল এটা। মূল সিরিজটি পড়ে আসুন ) জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাস হলো মহররম মাস। জালিমের মুখোশ উন্মোচনের মাস মহররম। জুলুমের কূটকৌশল উন্মোচনের মাস মহররম। আধুনিক সেকুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লেজিসলেশান (সংসদ), আর্মড ফোর্সেস (আর্মি) ও জুডিশিয়ারি (আদালত) হলো এক মহা জুলুমের ছদ্মবেশী তিন যন্ত্র, যারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করে জুলুম টিকিয়ে রাখার জন্য। তারচেয়েও বড় জালিম হলো big corporations: বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, যারা তাবৎ দুনিয়াকে দাস বানিয়ে রেখেছে। আর এই দাসত্বের শৃঙ্খলে তারা আমাদেরকে আবদ্ধ করেছে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে: টাকা আমাদের শ্রমকে ধারণ করে, অথচ সেই টাকার মূল্য আপ-ডাউন করায় অন্যরা -- ব্যাংক ব্যবসায়ীরা! টাকা আমাদের শ্রমকে সঞ্চয় করার মাধ্যম, অথচ সেই টাকা আমরা প্রিন্ট করি না, প্রিন্ট করে (ব্যাংকের আড়ালে) কিছু ব্যবসায়ী! সেই টাকার মান কমে যাওয়া (বা বেড়ে যাওয়া) আমরা নির্ধারণ করি না -- নির্ধারণ করে ব্যাঙ্ক (ব্যবসায়ীরা)! ইমাম হুসাইনের (আ.) প্রতিবাদী চেতনাকে ধারণ করব, শোকাহত হ

ধর্মব্যবসা: মুসলমানদের হাতে ইসলাম ধ্বংসের অতীত-বর্তমান (১)

ভূমিকা যদিও পলিটিকাল-রিলিজিয়াস ইস্যুতে নিশ্ছিদ্র আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করে আলোচনা করার অভ্যাস আমার, কিন্তু এখানে বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরে আর্গুমেন্ট করার প্রথমতঃ ইচ্ছা নেই, দ্বিতীয়তঃ সময় ও সুযোগ নেই। আমি যা সত্য বলে জানি, তা সংক্ষেপে তুলে ধরছি। যারা আমার উপর আস্থা রাখেন তাদের জন্য এই লেখাটি সোর্স অব ইনফরমেশান, উন্মুক্ত হৃদয়ের মানুষদের জন্য সত্য অনুসন্ধানের নতুন কিছু টপিক, আর প্রেজুডিসড ধর্মান্ধ রোগগ্রস্ত অন্তরের জন্য রোগ বৃদ্ধির উছিলা। শেষ পর্যন্ত আর্গুমেন্ট ও ডায়লগের দুয়ার উন্মুক্ত রাখার পক্ষপাতী আমি, কিন্তু সেই আর্গুমেন্ট অবশ্যই সত্য উন্মোচনের নিয়তে হওয়া উচিত, নিজের দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাস ও ধ্যান ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করবার উদ্দেশ্যে নয়। মক্কা-মদীনা: মুহাম্মদ (সা.) থেকে আলে-সৌদ (৬২৯-১৯২৪) এদেশের অধিকাংশ মানুষ মক্কা-মদীনার ইতিহাস কেবল এতটুকু জানেন যে, মুহাম্মদ (সা.) মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করেন। কিন্তু প্রায় চৌদ্দশ’ বছর আগে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র থেকে আজকের রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবের ইতিহাস কম মানুষই জানেন। প

পিস টিভি, জাকির নায়েক ও এজিদ প্রসঙ্গ

সম্প্রতি গুলশান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। আমি তখন দিল্লীতে ছিলাম। দেশে ফিরে শুনি পিস টিভি ব্যান করা হয়েছে বাংলাদেশে, এবং তার আগে ইন্ডিয়াতে। আমার বাসায় টিভি নেই, এবং আমি জাকির নায়েকের লেকচার শুনিও না। কিংবা পিস টিভিতে যারা লেকচার দেন, বাংলা কিংবা ইংলিশ -- কোনোটাই শুনি না; প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া আমার ইসলামের বুঝ জাকির নায়েকসহ পিস টিভি ও তার বক্তাদেরকে ইন জেনারেল আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। Peace TV বন্ধ হওয়ায় এদেশে বিকৃত ইসলাম প্রসারের গতি কমলো -- এটাই আমার মনে হয়েছে। একইসাথে আমি এটাও মনে করি যে, যেই অভিযোগ পিস টিভিকে ব্যান করা হয়েছে, তা নিছক অজুহাত। জাকির নায়েক কখনো জঙ্গীবাদকে উস্কে দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। কিংবা পিস টিভির লেকচার শুনে শুনে ISIS জঙ্গীরা সন্ত্রাসী হয়েছে -- এটা নিতান্তই হাস্যকর কথা। ISIS এর ধর্মতাত্ত্বিক বেইজ সম্পর্কে মোটেও ধারণা নেই, এমন লোকের পক্ষেই কেবল ISIS এর জন্য জাকির নায়েককে দোষ দেয়া সম্ভব। একইসাথে আমি এ বিষয়েও সচেতন যে, পিস টিভি বন্ধ করা হয়েছে আমাদের সরকারের রেগুলার “ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ