সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কুরআন ও আহলে বাইত

১.https://www.facebook.com/masud.alam.nure/posts/1438282309628569
সূরা শুরার ২৩ নং আয়াতে আল্লাহপাক বলেন,
"বলুন, আমি এ(ই কুরআনে)র বিনিময়ে আমার নিকটাত্মীয়ের প্রতি ভালোবাসা ছাড়া আর কিছু চাই না।"
অতএব, কুরআনের বিনিময় মূল্য হলো রাসুল (সা.) এর নিকটাত্মীয়দেরকে ভালোবাসা। এই মূল্য পরিশোধ না করে কুরআন নামক গাইড বই (হেদায়েত - পথনির্দেশিকা) ব্যবহার করা উচিত হবে না। যদি কেউ তা করে, তবে সেটা হয়ে যাবে চুরি করা।
চুরি করা গরু দিয়ে কুরবানি হয় না,
ডাকাতির টাকায় হজ্জ্ব করলে তা কবুল হয় না,
চুরির টাকা দিয়ে যাকাত দিলে তা কবুল হয় না --
এমতাবস্থায় এটা কিভাবে সম্ভব যে, কুরআনকে চুরি করে তারপর কুরআনভিত্তিক আমল করলে তা গ্রহণ হবে? যারা রাসুলের (সা.) নিকটাত্মীয়দেরকে মহব্বত করে না, তারা কুরআন চোর। কুরআনের বিনিময় মূল্য তারা দেয়নি। দোকান থেকে এক বাক্স চকলেট এনে তার যদি মূল্য পরিশোধ না করেন, তবে ঐ চকলেট খাওয়া আপনার জন্য হারাম তো বটেই, বরং আল্লাহর অভিশাপে পেট খারাপও হতে পারে।
ঠিক তেমনি মুসলিম জাতির ইতিহাসে যারা রাসুল (সা.) এর নিকটাত্মীয়দেরকে ভালোবাসেনি, তারা যতই কুরআনভিত্তিক আমল করুক না কেন, তা আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। এসব ব্যক্তিদের জন্য বরং কুরআন হবে পথভ্রষ্ট হবার উছিলা। ISIS-ও এদের ভিতর থেকেই বের হবে।
২.
প্রশ্ন হলো, রাসুল (সা.) এর এই নিকটাত্মীয় কারা?
রাসুল (সা.) এর রক্তের আত্মীয়দের মাঝে কেউ যদি জালিম হয়ে থাকে, তবে তাকে ভালোবাসা নিশ্চয়ই কুরআনের বিনিময় মূল্য হতে পারে না। কেননা, বিনিময় মানেই হচ্ছে, দাঁড়িপাল্লার এক পাল্লায় যা রাখা হবে, অপর পাল্লার জিনিসের সাথে তার ওজন/মর্যাদা/গুরুত্ব সমান হবে। এমতাবস্থায় এটা কিভাবে সম্ভব যে, কুরআন এক পাল্লায় থাকবে, আর অপর পাল্লায় বিন্দুমাত্র হলেও গুনাহগার কেউ থাকবে?
না, তা হতে পারে না। কুরআন একটি বিশুদ্ধ গ্রন্থ। তার সমান ওজনের জিনিসকেও অবশ্যই বিশুদ্ধ হতে হবে, এটাই বিচারবুদ্ধির দাবী।
(রাসুলের (সা.) বংশের শত্রুরা এই আয়াতের ভুল অনুবাদ করে থাকে যে, আত্মীয়দের মাঝে ভালোবাসা। কিংবা, আত্মীয়তাজনিত সৌহার্দ্য। যার একটিও সঠিক নয়।)
৩.
রাসুল (সা.) এর রক্তের সম্পর্কের মাঝে নিষ্পাপ কারা, এটা আমাদের জানতে হবে।
সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,
"হে আহলে বাইত! আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূতপবিত্র রাখতে।"
আর এই আহলে বাইত কারা? সহীহ তিরমিযিসহ আরো বিভিন্ন হাদীসের সূত্রে জানা যায় যে, রাসুল (সা.) বলেছেন, আলী-ফাতেমা-হাসান-হুসাইন হলো এই আহলে বাইত।
এক্ষেত্রেও রাসুলের (সা.) বংশের শত্রুরা মিথ্যাচার করে থাকে। তারা বলে, আহলে বাইত মানে ঘরের মানুষ। আর রাসুল (সা.) এর ঘরের মানুষ হলেন তাঁর স্ত্রীগণ। অতএব, এখানে রাসুল (সা.) এর স্ত্রীগণকে বুঝানো হয়েছে।
কিন্তু আরবী ভাষারীতি অনুযায়ী female-majority গ্রুপের ক্ষেত্রে কুন্না ও male-majority গ্রুপের ক্ষেত্রে কুম সর্বনাম ব্যবহৃত হয়। একই আয়াতে (৩৩:৩৩) যখন রাসুল (সা.) এর স্ত্রীগণের জন্য গৃহে অবস্থানের আদেশ জারি করা হয়েছে, সেখানে বুয়ুতিকুন্না (তোমাদের গৃহসমূহ) বলা হয়েছে। লক্ষ্য করুন, সেখানে কুন্না ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু যখন আহলে বাইতের পবিত্রতার কথা বলা হলো, তখন আনকুম (তোমাদের থেকে) বলা হয়েছে। লক্ষ্য করুন, হঠাত করেই সেখানে কুম সর্বনাম ব্যবহৃত হয়েছে। এর কারণ হলো, এই বাক্যে আহলে বাইত বলতে যাদেরকে বুঝানো হয়েছে, তারা male-majority (আলী-হাসান-হুসাইন - ৩ জন পুরুষ, ফাতেমা - ১ জন নারী)।
আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহপাক শয়তানের শড়যন্ত্র থেকে সত্যান্বেষী নিরপেক্ষ মনকে হেফাজত করবেনই, ইনশাআল্লাহ।
৪.
উপরোক্ত ১,২ ও ৩ নং পয়েন্টের ভিত্তিতে বলা যায় যে, আহলে বাইত তথা আলী-ফাতেমা-হাসান-হুসাইনকে ভালোবাসা হলো কুরআনের বিনিময়। যারা এই চার নিষ্পাপ ব্যক্তিকে ভালোবাসবে, তারাই কুরআনের মূল্য পরিশোধকারী। কুরআন তাদের জন্যেই হেদায়েত গ্রন্থ। তাদেরই কুরআনভিত্তিক আমল যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ময়দানে তোলা হবে। আর বাকীরা, যারা আহলে বাইতকে ভালোবাসেনি, ভালোবাসেনা, যারা কুরআন চোর, তাদের যত আমলই থাকুক না কেন, যত বড় মাদানী আর শায়খই হোক না কেন, তা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ময়দানেই তোলা হবে না। কেননা, চুরি করা জিনিসের উপর ইবাদত কবুল হয় না।
(অনেকে বলেন, আল্লাহপাক তো বলেছেন পবিত্র রাখতে 'চান', তিনি পবিত্র রাখবেনই, তাতো বলেননি। এই যুক্তিও গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা, আমভাবে আল্লাহপাক সকল মানবের জন্যেই কল্যাণেচ্ছা করেন। তার মাঝে খাসভাবে কেন আহলে বাইতের কথা বলা হলো? এইখানে আম ও খাস এর বিশেষ আলোচনা আছে। এছাড়াও ব্যক্তির স্বাধীনতা ও কর্তৃত্বকে আল্লাহপাক রহিত করেন না, সে সংক্রান্ত আলোচনাও আছে। সংক্ষিপ্ত রাখার স্বার্থে তা থেকে বিরত থাকলাম।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

টাকার ইতিহাস, মানি মেকানিজম ও ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মহা জুলুম

ভূমিকা: জালিমের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম  (মহররম: ইনফো সিরিজ এর শেষ পোস্ট ছিল এটা। মূল সিরিজটি পড়ে আসুন ) জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাস হলো মহররম মাস। জালিমের মুখোশ উন্মোচনের মাস মহররম। জুলুমের কূটকৌশল উন্মোচনের মাস মহররম। আধুনিক সেকুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লেজিসলেশান (সংসদ), আর্মড ফোর্সেস (আর্মি) ও জুডিশিয়ারি (আদালত) হলো এক মহা জুলুমের ছদ্মবেশী তিন যন্ত্র, যারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করে জুলুম টিকিয়ে রাখার জন্য। তারচেয়েও বড় জালিম হলো big corporations: বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, যারা তাবৎ দুনিয়াকে দাস বানিয়ে রেখেছে। আর এই দাসত্বের শৃঙ্খলে তারা আমাদেরকে আবদ্ধ করেছে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে: টাকা আমাদের শ্রমকে ধারণ করে, অথচ সেই টাকার মূল্য আপ-ডাউন করায় অন্যরা -- ব্যাংক ব্যবসায়ীরা! টাকা আমাদের শ্রমকে সঞ্চয় করার মাধ্যম, অথচ সেই টাকা আমরা প্রিন্ট করি না, প্রিন্ট করে (ব্যাংকের আড়ালে) কিছু ব্যবসায়ী! সেই টাকার মান কমে যাওয়া (বা বেড়ে যাওয়া) আমরা নির্ধারণ করি না -- নির্ধারণ করে ব্যাঙ্ক (ব্যবসায়ীরা)! ইমাম হুসাইনের (আ.) প্রতিবাদী চেতনাকে ধারণ করব, শোকাহত হ

ধর্মব্যবসা: মুসলমানদের হাতে ইসলাম ধ্বংসের অতীত-বর্তমান (১)

ভূমিকা যদিও পলিটিকাল-রিলিজিয়াস ইস্যুতে নিশ্ছিদ্র আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করে আলোচনা করার অভ্যাস আমার, কিন্তু এখানে বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরে আর্গুমেন্ট করার প্রথমতঃ ইচ্ছা নেই, দ্বিতীয়তঃ সময় ও সুযোগ নেই। আমি যা সত্য বলে জানি, তা সংক্ষেপে তুলে ধরছি। যারা আমার উপর আস্থা রাখেন তাদের জন্য এই লেখাটি সোর্স অব ইনফরমেশান, উন্মুক্ত হৃদয়ের মানুষদের জন্য সত্য অনুসন্ধানের নতুন কিছু টপিক, আর প্রেজুডিসড ধর্মান্ধ রোগগ্রস্ত অন্তরের জন্য রোগ বৃদ্ধির উছিলা। শেষ পর্যন্ত আর্গুমেন্ট ও ডায়লগের দুয়ার উন্মুক্ত রাখার পক্ষপাতী আমি, কিন্তু সেই আর্গুমেন্ট অবশ্যই সত্য উন্মোচনের নিয়তে হওয়া উচিত, নিজের দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাস ও ধ্যান ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করবার উদ্দেশ্যে নয়। মক্কা-মদীনা: মুহাম্মদ (সা.) থেকে আলে-সৌদ (৬২৯-১৯২৪) এদেশের অধিকাংশ মানুষ মক্কা-মদীনার ইতিহাস কেবল এতটুকু জানেন যে, মুহাম্মদ (সা.) মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করেন। কিন্তু প্রায় চৌদ্দশ’ বছর আগে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র থেকে আজকের রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবের ইতিহাস কম মানুষই জানেন। প

পিস টিভি, জাকির নায়েক ও এজিদ প্রসঙ্গ

সম্প্রতি গুলশান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। আমি তখন দিল্লীতে ছিলাম। দেশে ফিরে শুনি পিস টিভি ব্যান করা হয়েছে বাংলাদেশে, এবং তার আগে ইন্ডিয়াতে। আমার বাসায় টিভি নেই, এবং আমি জাকির নায়েকের লেকচার শুনিও না। কিংবা পিস টিভিতে যারা লেকচার দেন, বাংলা কিংবা ইংলিশ -- কোনোটাই শুনি না; প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া আমার ইসলামের বুঝ জাকির নায়েকসহ পিস টিভি ও তার বক্তাদেরকে ইন জেনারেল আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। Peace TV বন্ধ হওয়ায় এদেশে বিকৃত ইসলাম প্রসারের গতি কমলো -- এটাই আমার মনে হয়েছে। একইসাথে আমি এটাও মনে করি যে, যেই অভিযোগ পিস টিভিকে ব্যান করা হয়েছে, তা নিছক অজুহাত। জাকির নায়েক কখনো জঙ্গীবাদকে উস্কে দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। কিংবা পিস টিভির লেকচার শুনে শুনে ISIS জঙ্গীরা সন্ত্রাসী হয়েছে -- এটা নিতান্তই হাস্যকর কথা। ISIS এর ধর্মতাত্ত্বিক বেইজ সম্পর্কে মোটেও ধারণা নেই, এমন লোকের পক্ষেই কেবল ISIS এর জন্য জাকির নায়েককে দোষ দেয়া সম্ভব। একইসাথে আমি এ বিষয়েও সচেতন যে, পিস টিভি বন্ধ করা হয়েছে আমাদের সরকারের রেগুলার “ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ