১. বিগত কয়েকদিন যাবৎ দেশে কোটাবিরোধী আন্দোলন চলছে। আন্দোলনরত ছাত্রদের
উপর সরকার কিভাবে পুলিশ লেলিয়ে দিচ্ছে, তা-ও সবাই জানেন। কিন্তু প্রশ্ন
হলো, ছাত্রদেরকে কেন এই আন্দোলন করতে হবে?
২. দুই হাজার সরকারী চাকরির জন্য কম্পিটিশান করছে চার লাখ ছাত্র। এই চার লাখ ছাত্রের সবাই HSC পাশের পর বিসিএস দেবার স্বপ্ন দেখে নাই। তারা স্বপ্ন দেখেছে ডাক্তার, এঞ্জিনিয়ার, ইকোনমিস্ট ইত্যাদি হবার। সেজন্যে তারা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিযোগিতা করেছে। কিন্তু পছন্দের সাবজেক্টে চান্স না পেয়ে হয়ত চান্স পেয়েছে ফরেস্ট্রিতে।
৩. এখান থেকেই সমস্যাটা শুরু। যার কেমিস্ট্রিতে আগ্রহ ছিল, পরীক্ষায় সামনের দিকে চান্স না পাবার কারণে তাকে হয়ত পড়তে হচ্ছে সংস্কৃত ভাষা নিয়ে। কেউবা আবার নিতান্তই অনাগ্রহ সত্ত্বেও কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ছে। এরকম লাখ লাখ ছাত্রের উদাহরণ বাংলাদেশের ইউনিভার্সিটিগুলোতে ছড়িয়ে আছে।
৪. যে ডাক্তার হতে চায়নি, সে পাশ করে ডাক্তারি করলে রোগীর কী অবস্থা হবে? তেমনই আমাদের দেশের প্রতিটা সেক্টরের অবস্থা। HSC পাশের পর সরকারী ইউনিভার্সিটিতে চান্স পাবার জন্য অমানুষিক পরিশ্রম, তারপর পছন্দের সাবজেক্টে চান্স না পাওয়া, ভালো না লাগা সত্ত্বেও জোর করে পড়া, তারপর কোনোমতে পাশ করতে করতে ততদিনে ছাত্রের মন যাঁতাকলে পিষে শেষ হয়ে গেছে। প্রাণরস, প্রাণোচ্ছলতা আর নাই।
৫. তারপর সবচে' বড় সমস্যা হলো, ইউনিভার্সিটিগুলো যতজন কেমিস্ট বের করছে, মার্কেটের ডিমান্ড তার তুলনায় খুবই কম। কিংবা প্রতি বছর যতজন সিএসই পাশ করে বের হচ্ছে, মার্কেটের ডিমান্ড তার থেকে অনেক কম। অর্থাৎ, ইউনিভার্সিটিগুলোর সাথে ইন্ডাস্ট্রির কানেকশান নাই। অথচ এই ইউনিভার্সিটি সিস্টেম যেই ইউরোপ-আমেরিকা থেকে আমদানী করা, তারা কিন্তু ঠিকই কোম্পানির ডিমান্ড অনুযায়ী ভার্সিটিতে ছাত্রসংখ্যা কম-বৃদ্ধি করে, কিংবা নতুন সাবজেক্ট চালু করে।
৬. ফলশ্রুতিতে, একজন ছাত্র এমন স্কিল তৈরী করছে, যা খাটানোর জায়গা তার নেই। বছরে যদি ৫০ হাজার কম্পিউটার এঞ্জিনিয়ার তৈরী করে দেয় ইউনিভার্সিটিগুলো, সেক্ষেত্রে ৫০ হাজার জব ভ্যাকান্সি কিন্তু নেই, কিংবা পোস্ট তৈরী হচ্ছে না। আর এসব ছাত্রের অধিকাংশই হয়ত কম্পিউটার এঞ্জিনিয়ার হতে চায়নি। অতএব, তারা সার্টিফিকেটের জন্য পড়েছে, যোগ্যতা অর্জনের আগ্রহ নিয়ে নয়। এমতাবস্থায়, কী আর করা -- বিসিএস!
৭. বিসিএস পরীক্ষার বাংলা, ইংরেজি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি, ইতিহাস ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হয়। একজন HSC পাশ ছাত্র ২ বছর টানা বিসিএস প্রিপারেশান নিলে, আর সংস্কৃত কিংবা ফিশারিজ বা ফরেস্ট্রি থেকে অনার্স পাশ করা ছাত্রও ২ বছর প্রিপারেশান নিলে -- দুইজন পরীক্ষায় সমান রেজাল্টই করবে। মাঝখান দিয়ে চার বছর অনার্স করাটাই লস। কোনোই কাজে আসলো না।
৮. কোটা যদি সরকার আজকে উঠিয়েও দেয়, তবুও দেখুন, বছরে ২ হাজার সিটের জন্য ৪ লাখ মানুষ পরীক্ষা দেয়। বাকী ৩ লাখ ৯৮ হাজার মানুষ কী করবে? না খেয়ে থাকবে?
পত্রিকায় দেখলাম, দেশে বেকার সংখ্যা ২৬ লাখ। উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি। অর্থাৎ, এই 'শিক্ষা' বা 'উচ্চশিক্ষা' কর্মমুখী নয়। সার্টিফিকেট অর্জন করে "আমি ওমুক পাশ, তমুক পাশ" বলার জন্য। যা দিয়ে দুই পয়সা কামাই-ও হয় না। কেবল বিয়ের বাজারে কাজে লাগে। তবে সেক্ষেত্রে কামাইটাও থাকতে হয়।
৯. অতএব, আমাদের ইউনিভার্সিটিগুলো যা ট্রেনিং দিচ্ছে, যা শিক্ষা দিচ্ছে, তা কার্যকরী কিছু না। ছাত্রদের জীবিকার পথে কাজেই আসছে না বলা চলে। অথচ ইউনিভার্সিটিতে ছাত্ররা ভর্তি হয়ই এই আশায় যে, পাশ করে ভালো উপার্জন করবে। সদ্য HSC পাশ ছাত্র তো এতকিছু বোঝে না। বুঝতে পারে অকেজো একটা সার্টিফিকেট অর্জন করার পর জব সেক্টরে ঢুকতে গিয়ে।
১০. এমতাবস্থায় গার্ডিয়ানদের উচিত সন্তানকে এসব অকার্যকর ব্যাচেলরস ডিগ্রি অর্জনে না পাঠানো। শুধুমাত্র "পরের মুখে ঝাল" ঠিকমত করতে গিয়ে সন্তানকে সরকারীতে সংস্কৃত, পালি, মৎবিদ্যা হ্যান ত্যান সাবজেক্টে হলেও পড়াতে হবে, যেন বলা যায় "আমার ছেলে ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ে/ ঢাবি থেকে অনার্স মাস্টার্স করেছে" -- এই বেলুনের মত মানসম্মান বাদ দিতে হবে। একজন সিএনজিচালক মাসে ইনকাম করে ৪০,০০০ টাকা, আর আপনার সন্তানকে লাখ টাকা ব্যায় করে অনার্স মাস্টার্স পাশ করানোর পর সে ইনকাম শুরু করে ১০,০০০ টাকা দিয়ে। তারপর ৪০,০০০ টাকা স্যালারিতে যেতে যেতে চার চার বছর লেগে যায় আরো, তাও সেটা সবার ক্ষেত্রে না, সফটওয়্যার এঞ্জিনিয়ারিং ফিল্ডে হয়ত। তারপর দুইদিন পরপর চাকরি হারানোর আশঙ্কা তো আছেই। আপনার ইনভেস্টমেন্টের ৪-৫লাখ টাকা উঠে আসতে আসতে দেখেন, ঐ HSC-র বয়সে যে ছেলেটা সিএনজি চালাতে শুরু করেছিলো, ও এতদিনে গাড়ি কিনে ফেলেছে, বাড়ির কাজেও হাত দিয়েছে।
এটা অবাস্তব কথা না। আমি নিজে জানি, আমার চেনা এমন লোক আছে। ২০১১ সালে দেখসি ভেলপুরি মামা মাসে ৪০,০০০ টাকা কামাতো, দুই বউ পালতো, ঢাকায় দুইটা জমি, একটাতে বাড়িও শুরু করেছিলো।
১১. আমাদের ছাত্রদের, এবং দেশের সকলেরই অর্থনীতি বোঝা উচিত। ১০০ বছর আগেও প্রায় সকল গৃহস্থের নিজস্ব কৃষি ছিল। তারপর মানুষ কৃষি ছেড়ে শহরমুখী হতে শুরু করেছে। অথচ শহরগুলো সেই অনুপাতে কর্মসংস্থান দিতে পারছে না। আর এখন মান সম্মানের বেলুনের কারণে এই মানুষেরা গ্রামে ফিরে চাষবাস করে জীবিকা নির্বাহ-ও করতে পারছে না। ফলশ্রুতিতে দুর্ভাগ্যজনক অবস্থায় পতিত হচ্ছে শহরমুখী মানুষ, বিশেষ করে এই ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা। ওদিকে কৃষির মত বেসিক খাতগুলো কিন্তু বড় বড় ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টরা মনোপলি খেলছে, দখলে নিয়ে ফেলেছে। কৃষকেরা তাদের হাতেও বন্দী। কৃষকের কাস্টমার শহরের মানুষ, মাঝখানে ব্যবসায়ীরা। এরা কৃষককেও শোষণ করে, ফলে সে-ও খেয়ে না খেয়ে থাকছে, ওদিকে ইউনিভার্সিটি থেকে লাড্ডু সার্টিফিকেইট নিয়ে বেকার বসে থাকা ছেলেটাও না খেয়ে থাকছে। বাধ্য হয়ে বিসিএস এর জন্য লড়ছে, কোনোমতে যদি একটা সরকারী চাকরি পাওয়া যায়।
আমরা অর্থনীতি বুঝি না, বুঝতেও চাই না।
১২. যারা আজকে কোটাবিরোধী 'ন্যায্য' আন্দোলন করছেন, তারাই একসময় সরকারী চাকুরিজীবি হবেন। কিন্তু তারা যে তখন ন্যায়পরায়ণ থাকবেন, ঘুষ খাবেন না, শুধুমাত্র ১৭ হাজার টাকা বেতন দিয়ে সংসার চালাবেন -- তা কি আপনার মনে হয়?
...............................................................................................
সরকার কোটা উঠিয়ে দিক।
বেকার সমস্যার সমাধান হবে না।
৭% শিক্ষা কর আরোপ না করুক।
তাতেও বেকার সমস্যার সমাধান হবে না।
আমাদের শুধু নিজের স্বার্থে আঘাত লাগলে ন্যায়বান হয়ে না উঠে অন্যান্য সময়েও ন্যায়বান হতে হবে, এবং সমস্যার গভীরে তলিয়ে চিন্তা করতে হবে। ছাত্ররা আজকে যে আন্দোলন করছে, অনুরূপ আন্দোলন বড় বড় রাষ্ট্রীয় জুলুমের বিরুদ্ধে হলে তখন আজকের আন্দোলন দেখে ভালো লাগত। মনে হত, হ্যাঁ, ন্যায়বান মানুষেরা -- এরাই সরকারী কর্মচারী হবে, জনগণের খাদেম হবে -- সুদ ঘুষ দুর্নীতি কমে যাবে। দেশটা সুখে থাকবে।
কিন্তু তা আমি দেখতে পাই না। কোটাবিরোধী আন্দোলন সফল হলে আমি দেখতে পাই -- ঐ চার লাখ থেকে ২ হাজারই চাকুরী পাবে। এবং তারপর বাকী গল্প আগের মত চলবে। দেশটা সুখে থাকবে না। ২ হাজার বিসিএস ক্যাডার সুখে থাকবে।
আগেও থাকত।
২. দুই হাজার সরকারী চাকরির জন্য কম্পিটিশান করছে চার লাখ ছাত্র। এই চার লাখ ছাত্রের সবাই HSC পাশের পর বিসিএস দেবার স্বপ্ন দেখে নাই। তারা স্বপ্ন দেখেছে ডাক্তার, এঞ্জিনিয়ার, ইকোনমিস্ট ইত্যাদি হবার। সেজন্যে তারা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিযোগিতা করেছে। কিন্তু পছন্দের সাবজেক্টে চান্স না পেয়ে হয়ত চান্স পেয়েছে ফরেস্ট্রিতে।
৩. এখান থেকেই সমস্যাটা শুরু। যার কেমিস্ট্রিতে আগ্রহ ছিল, পরীক্ষায় সামনের দিকে চান্স না পাবার কারণে তাকে হয়ত পড়তে হচ্ছে সংস্কৃত ভাষা নিয়ে। কেউবা আবার নিতান্তই অনাগ্রহ সত্ত্বেও কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ছে। এরকম লাখ লাখ ছাত্রের উদাহরণ বাংলাদেশের ইউনিভার্সিটিগুলোতে ছড়িয়ে আছে।
৪. যে ডাক্তার হতে চায়নি, সে পাশ করে ডাক্তারি করলে রোগীর কী অবস্থা হবে? তেমনই আমাদের দেশের প্রতিটা সেক্টরের অবস্থা। HSC পাশের পর সরকারী ইউনিভার্সিটিতে চান্স পাবার জন্য অমানুষিক পরিশ্রম, তারপর পছন্দের সাবজেক্টে চান্স না পাওয়া, ভালো না লাগা সত্ত্বেও জোর করে পড়া, তারপর কোনোমতে পাশ করতে করতে ততদিনে ছাত্রের মন যাঁতাকলে পিষে শেষ হয়ে গেছে। প্রাণরস, প্রাণোচ্ছলতা আর নাই।
৫. তারপর সবচে' বড় সমস্যা হলো, ইউনিভার্সিটিগুলো যতজন কেমিস্ট বের করছে, মার্কেটের ডিমান্ড তার তুলনায় খুবই কম। কিংবা প্রতি বছর যতজন সিএসই পাশ করে বের হচ্ছে, মার্কেটের ডিমান্ড তার থেকে অনেক কম। অর্থাৎ, ইউনিভার্সিটিগুলোর সাথে ইন্ডাস্ট্রির কানেকশান নাই। অথচ এই ইউনিভার্সিটি সিস্টেম যেই ইউরোপ-আমেরিকা থেকে আমদানী করা, তারা কিন্তু ঠিকই কোম্পানির ডিমান্ড অনুযায়ী ভার্সিটিতে ছাত্রসংখ্যা কম-বৃদ্ধি করে, কিংবা নতুন সাবজেক্ট চালু করে।
৬. ফলশ্রুতিতে, একজন ছাত্র এমন স্কিল তৈরী করছে, যা খাটানোর জায়গা তার নেই। বছরে যদি ৫০ হাজার কম্পিউটার এঞ্জিনিয়ার তৈরী করে দেয় ইউনিভার্সিটিগুলো, সেক্ষেত্রে ৫০ হাজার জব ভ্যাকান্সি কিন্তু নেই, কিংবা পোস্ট তৈরী হচ্ছে না। আর এসব ছাত্রের অধিকাংশই হয়ত কম্পিউটার এঞ্জিনিয়ার হতে চায়নি। অতএব, তারা সার্টিফিকেটের জন্য পড়েছে, যোগ্যতা অর্জনের আগ্রহ নিয়ে নয়। এমতাবস্থায়, কী আর করা -- বিসিএস!
৭. বিসিএস পরীক্ষার বাংলা, ইংরেজি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি, ইতিহাস ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হয়। একজন HSC পাশ ছাত্র ২ বছর টানা বিসিএস প্রিপারেশান নিলে, আর সংস্কৃত কিংবা ফিশারিজ বা ফরেস্ট্রি থেকে অনার্স পাশ করা ছাত্রও ২ বছর প্রিপারেশান নিলে -- দুইজন পরীক্ষায় সমান রেজাল্টই করবে। মাঝখান দিয়ে চার বছর অনার্স করাটাই লস। কোনোই কাজে আসলো না।
৮. কোটা যদি সরকার আজকে উঠিয়েও দেয়, তবুও দেখুন, বছরে ২ হাজার সিটের জন্য ৪ লাখ মানুষ পরীক্ষা দেয়। বাকী ৩ লাখ ৯৮ হাজার মানুষ কী করবে? না খেয়ে থাকবে?
পত্রিকায় দেখলাম, দেশে বেকার সংখ্যা ২৬ লাখ। উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি। অর্থাৎ, এই 'শিক্ষা' বা 'উচ্চশিক্ষা' কর্মমুখী নয়। সার্টিফিকেট অর্জন করে "আমি ওমুক পাশ, তমুক পাশ" বলার জন্য। যা দিয়ে দুই পয়সা কামাই-ও হয় না। কেবল বিয়ের বাজারে কাজে লাগে। তবে সেক্ষেত্রে কামাইটাও থাকতে হয়।
৯. অতএব, আমাদের ইউনিভার্সিটিগুলো যা ট্রেনিং দিচ্ছে, যা শিক্ষা দিচ্ছে, তা কার্যকরী কিছু না। ছাত্রদের জীবিকার পথে কাজেই আসছে না বলা চলে। অথচ ইউনিভার্সিটিতে ছাত্ররা ভর্তি হয়ই এই আশায় যে, পাশ করে ভালো উপার্জন করবে। সদ্য HSC পাশ ছাত্র তো এতকিছু বোঝে না। বুঝতে পারে অকেজো একটা সার্টিফিকেট অর্জন করার পর জব সেক্টরে ঢুকতে গিয়ে।
১০. এমতাবস্থায় গার্ডিয়ানদের উচিত সন্তানকে এসব অকার্যকর ব্যাচেলরস ডিগ্রি অর্জনে না পাঠানো। শুধুমাত্র "পরের মুখে ঝাল" ঠিকমত করতে গিয়ে সন্তানকে সরকারীতে সংস্কৃত, পালি, মৎবিদ্যা হ্যান ত্যান সাবজেক্টে হলেও পড়াতে হবে, যেন বলা যায় "আমার ছেলে ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ে/ ঢাবি থেকে অনার্স মাস্টার্স করেছে" -- এই বেলুনের মত মানসম্মান বাদ দিতে হবে। একজন সিএনজিচালক মাসে ইনকাম করে ৪০,০০০ টাকা, আর আপনার সন্তানকে লাখ টাকা ব্যায় করে অনার্স মাস্টার্স পাশ করানোর পর সে ইনকাম শুরু করে ১০,০০০ টাকা দিয়ে। তারপর ৪০,০০০ টাকা স্যালারিতে যেতে যেতে চার চার বছর লেগে যায় আরো, তাও সেটা সবার ক্ষেত্রে না, সফটওয়্যার এঞ্জিনিয়ারিং ফিল্ডে হয়ত। তারপর দুইদিন পরপর চাকরি হারানোর আশঙ্কা তো আছেই। আপনার ইনভেস্টমেন্টের ৪-৫লাখ টাকা উঠে আসতে আসতে দেখেন, ঐ HSC-র বয়সে যে ছেলেটা সিএনজি চালাতে শুরু করেছিলো, ও এতদিনে গাড়ি কিনে ফেলেছে, বাড়ির কাজেও হাত দিয়েছে।
এটা অবাস্তব কথা না। আমি নিজে জানি, আমার চেনা এমন লোক আছে। ২০১১ সালে দেখসি ভেলপুরি মামা মাসে ৪০,০০০ টাকা কামাতো, দুই বউ পালতো, ঢাকায় দুইটা জমি, একটাতে বাড়িও শুরু করেছিলো।
১১. আমাদের ছাত্রদের, এবং দেশের সকলেরই অর্থনীতি বোঝা উচিত। ১০০ বছর আগেও প্রায় সকল গৃহস্থের নিজস্ব কৃষি ছিল। তারপর মানুষ কৃষি ছেড়ে শহরমুখী হতে শুরু করেছে। অথচ শহরগুলো সেই অনুপাতে কর্মসংস্থান দিতে পারছে না। আর এখন মান সম্মানের বেলুনের কারণে এই মানুষেরা গ্রামে ফিরে চাষবাস করে জীবিকা নির্বাহ-ও করতে পারছে না। ফলশ্রুতিতে দুর্ভাগ্যজনক অবস্থায় পতিত হচ্ছে শহরমুখী মানুষ, বিশেষ করে এই ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা। ওদিকে কৃষির মত বেসিক খাতগুলো কিন্তু বড় বড় ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টরা মনোপলি খেলছে, দখলে নিয়ে ফেলেছে। কৃষকেরা তাদের হাতেও বন্দী। কৃষকের কাস্টমার শহরের মানুষ, মাঝখানে ব্যবসায়ীরা। এরা কৃষককেও শোষণ করে, ফলে সে-ও খেয়ে না খেয়ে থাকছে, ওদিকে ইউনিভার্সিটি থেকে লাড্ডু সার্টিফিকেইট নিয়ে বেকার বসে থাকা ছেলেটাও না খেয়ে থাকছে। বাধ্য হয়ে বিসিএস এর জন্য লড়ছে, কোনোমতে যদি একটা সরকারী চাকরি পাওয়া যায়।
আমরা অর্থনীতি বুঝি না, বুঝতেও চাই না।
১২. যারা আজকে কোটাবিরোধী 'ন্যায্য' আন্দোলন করছেন, তারাই একসময় সরকারী চাকুরিজীবি হবেন। কিন্তু তারা যে তখন ন্যায়পরায়ণ থাকবেন, ঘুষ খাবেন না, শুধুমাত্র ১৭ হাজার টাকা বেতন দিয়ে সংসার চালাবেন -- তা কি আপনার মনে হয়?
...............................................................................................
সরকার কোটা উঠিয়ে দিক।
বেকার সমস্যার সমাধান হবে না।
৭% শিক্ষা কর আরোপ না করুক।
তাতেও বেকার সমস্যার সমাধান হবে না।
আমাদের শুধু নিজের স্বার্থে আঘাত লাগলে ন্যায়বান হয়ে না উঠে অন্যান্য সময়েও ন্যায়বান হতে হবে, এবং সমস্যার গভীরে তলিয়ে চিন্তা করতে হবে। ছাত্ররা আজকে যে আন্দোলন করছে, অনুরূপ আন্দোলন বড় বড় রাষ্ট্রীয় জুলুমের বিরুদ্ধে হলে তখন আজকের আন্দোলন দেখে ভালো লাগত। মনে হত, হ্যাঁ, ন্যায়বান মানুষেরা -- এরাই সরকারী কর্মচারী হবে, জনগণের খাদেম হবে -- সুদ ঘুষ দুর্নীতি কমে যাবে। দেশটা সুখে থাকবে।
কিন্তু তা আমি দেখতে পাই না। কোটাবিরোধী আন্দোলন সফল হলে আমি দেখতে পাই -- ঐ চার লাখ থেকে ২ হাজারই চাকুরী পাবে। এবং তারপর বাকী গল্প আগের মত চলবে। দেশটা সুখে থাকবে না। ২ হাজার বিসিএস ক্যাডার সুখে থাকবে।
আগেও থাকত।
নূরে আলম
মার্চ ৯, ২০১৮
তালিন, এস্তোনিয়া
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন