সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভারতে মুসলিম যুবককে পিটিয়ে হত্যা প্রসঙ্গে

. ভারতে মুসলিম যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেছে একদল উগ্র হিন্দু।
. কিছুদিন আগে নিউজিল্যান্ডে ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে মুসল্লিদেরকে গুলি করে হত্যা করেছে এক উগ্র খ্রিষ্টান।
. উগ্র ইহুদিরা ফিলিস্তিনে মুসলমানদের হত্যা করে চলেছে নিয়মিত ভিত্তিতে।
. উগ্র একদল মুসলমান জোরে আমিন বলাকে কেন্দ্র করে মাথা ফাটিয়ে মেরে ফেলেছে অপর মুসল্লিকে, বাংলাদেশে।
. উগ্র আরেকদল মুসলমান গুলি করে হত্যা করেছে অপর মুসলমানদেরকে, শুধুমাত্র ভিন্ন মাযহাবের অনুসারী হবার কারণে।

. উগ্র ছাত্রলীগ কর্মীরা 'শিবির' ভেবে কুপিয়ে হত্যা করেছিল বিশ্বজিতকে।
. লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে শিবিরকর্মীদের হত্যা করে লাশের উপর উঠে নেচেছিল তারা।
আমাদের বুঝতে হবে যে, উগ্রতা মানুষের একটি রোগ, যা প্রবৃত্তি থেকে উৎসরিত। এই রোগ যার ভিতরে আছে, সে বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে এই রোগের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। সেটা জমিজমা, রাজনীতি কিংবা ধর্মকে কেন্দ্র করে প্রকাশ পেতে পারে। এবং তারা এটাই চায় যে, আমরা তাদের 'উগ্রতা' রোগটা না দেখে 'উগ্রতার কাভার' দেখব এবং তা নিয়ে মাতামাতি করব। তারা চায় আমরা তাদের 'উগ্রতা' রোগটাকে না দেখে দেখব 'হিন্দু ধর্ম', 'ইহুদি ধর্ম', কিংবা আহলে হাদীস, ওহাবী-সালাফি, শিয়া-সুন্নি এইসব; কিংবা 'স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তি' আর 'শিবির', ভারত আর পাকিস্তান। এইভাবে তারা বিভিন্ন ধর্মকে পরস্পর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে চায়। তারা চায় মুসলানদের উপর নির্যাতন করতে করতে মুসলমানদের চোখেও উগ্রতার চশমা পরিয়ে দিতে: "হিন্দু দেখলেই ঘৃণা করো, হিন্দু মানেই খারাপ।" কিংবা শিবির/ লীগ দেখলেই ঘৃণা করো, ওরা খারাপ। এর মাধ্যমে মূলতঃ তাদের উগ্রতারই প্রসার ঘটে।
কিন্তু আমরা তা হতে দেব না। আমরা অবশ্যই উগ্রতাকে ভালোবাসা ও দয়া দ্বারা মোকাবিলা করব এবং এভাবেই তাদেরকে প্রশমিত করব। শারীরিকভাবে পাল্টা জবাব / যুদ্ধ কেবল সর্বশেষ পন্থা হিসেবে থাকবে: কেবলমাত্র গায়ের উপর এসে পড়া আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য: fight in self defense.
কুরআনে আছে যে, মুসলমানদেরকে যুদ্ধ ও শান্তি উভয় অবস্থাতেই সর্বোচ্চ যুদ্ধপ্রস্তুতিতে থাকতে হবে, যেন ইসলাম, মুসলমান ও আল্লাহর শত্রুরা ভয় পায় ও উগ্রতা থেকে বিরত থাকে। একইসাথে এটাও আছে যে: "মন্দের জবাবে তা-ই বলো/ করো, যা অধিকতর উত্তম, তখন দেখবে যে তোমার শত্রু, সে-ও হয়ে গেছে এমন, যেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু।"
অতএব, বাহ্যিক শক্তি-সামর্থ্যের উপরে দাঁড়িয়ে বুক পেতে দিয়ে উগ্রতাকে মোকাবিলা করে প্রশমিত করা: এটাই হতে হবে আমাদের কর্মপন্থা। উগ্রদের হাতে থাকা হিন্দু-মুসলিম, শিয়া-সুন্নি, ভারত-পাকিস্তান, লীগ-শিবির ইত্যাদি চশমা তারা আমাদের চোখে তুলে দিতে চায়। কিন্তু আমরা তা হতে দেব না। আমরা অবশ্যই উগ্রতাকে ভালোবাসা ও দয়া দ্বারা মোকাবিলা করব এবং এভাবেই তাদেরকে প্রশমিত করব।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

টাকার ইতিহাস, মানি মেকানিজম ও ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মহা জুলুম

ভূমিকা: জালিমের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম  (মহররম: ইনফো সিরিজ এর শেষ পোস্ট ছিল এটা। মূল সিরিজটি পড়ে আসুন ) জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাস হলো মহররম মাস। জালিমের মুখোশ উন্মোচনের মাস মহররম। জুলুমের কূটকৌশল উন্মোচনের মাস মহররম। আধুনিক সেকুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লেজিসলেশান (সংসদ), আর্মড ফোর্সেস (আর্মি) ও জুডিশিয়ারি (আদালত) হলো এক মহা জুলুমের ছদ্মবেশী তিন যন্ত্র, যারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করে জুলুম টিকিয়ে রাখার জন্য। তারচেয়েও বড় জালিম হলো big corporations: বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, যারা তাবৎ দুনিয়াকে দাস বানিয়ে রেখেছে। আর এই দাসত্বের শৃঙ্খলে তারা আমাদেরকে আবদ্ধ করেছে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে: টাকা আমাদের শ্রমকে ধারণ করে, অথচ সেই টাকার মূল্য আপ-ডাউন করায় অন্যরা -- ব্যাংক ব্যবসায়ীরা! টাকা আমাদের শ্রমকে সঞ্চয় করার মাধ্যম, অথচ সেই টাকা আমরা প্রিন্ট করি না, প্রিন্ট করে (ব্যাংকের আড়ালে) কিছু ব্যবসায়ী! সেই টাকার মান কমে যাওয়া (বা বেড়ে যাওয়া) আমরা নির্ধারণ করি না -- নির্ধারণ করে ব্যাঙ্ক (ব্যবসায়ীরা)! ইমাম হুসাইনের (আ.) প্রতিবাদী চেতনাকে ধারণ করব, শোকাহত হ

ধর্মব্যবসা: মুসলমানদের হাতে ইসলাম ধ্বংসের অতীত-বর্তমান (১)

ভূমিকা যদিও পলিটিকাল-রিলিজিয়াস ইস্যুতে নিশ্ছিদ্র আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করে আলোচনা করার অভ্যাস আমার, কিন্তু এখানে বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরে আর্গুমেন্ট করার প্রথমতঃ ইচ্ছা নেই, দ্বিতীয়তঃ সময় ও সুযোগ নেই। আমি যা সত্য বলে জানি, তা সংক্ষেপে তুলে ধরছি। যারা আমার উপর আস্থা রাখেন তাদের জন্য এই লেখাটি সোর্স অব ইনফরমেশান, উন্মুক্ত হৃদয়ের মানুষদের জন্য সত্য অনুসন্ধানের নতুন কিছু টপিক, আর প্রেজুডিসড ধর্মান্ধ রোগগ্রস্ত অন্তরের জন্য রোগ বৃদ্ধির উছিলা। শেষ পর্যন্ত আর্গুমেন্ট ও ডায়লগের দুয়ার উন্মুক্ত রাখার পক্ষপাতী আমি, কিন্তু সেই আর্গুমেন্ট অবশ্যই সত্য উন্মোচনের নিয়তে হওয়া উচিত, নিজের দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাস ও ধ্যান ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করবার উদ্দেশ্যে নয়। মক্কা-মদীনা: মুহাম্মদ (সা.) থেকে আলে-সৌদ (৬২৯-১৯২৪) এদেশের অধিকাংশ মানুষ মক্কা-মদীনার ইতিহাস কেবল এতটুকু জানেন যে, মুহাম্মদ (সা.) মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করেন। কিন্তু প্রায় চৌদ্দশ’ বছর আগে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র থেকে আজকের রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবের ইতিহাস কম মানুষই জানেন। প

পিস টিভি, জাকির নায়েক ও এজিদ প্রসঙ্গ

সম্প্রতি গুলশান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। আমি তখন দিল্লীতে ছিলাম। দেশে ফিরে শুনি পিস টিভি ব্যান করা হয়েছে বাংলাদেশে, এবং তার আগে ইন্ডিয়াতে। আমার বাসায় টিভি নেই, এবং আমি জাকির নায়েকের লেকচার শুনিও না। কিংবা পিস টিভিতে যারা লেকচার দেন, বাংলা কিংবা ইংলিশ -- কোনোটাই শুনি না; প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া আমার ইসলামের বুঝ জাকির নায়েকসহ পিস টিভি ও তার বক্তাদেরকে ইন জেনারেল আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। Peace TV বন্ধ হওয়ায় এদেশে বিকৃত ইসলাম প্রসারের গতি কমলো -- এটাই আমার মনে হয়েছে। একইসাথে আমি এটাও মনে করি যে, যেই অভিযোগ পিস টিভিকে ব্যান করা হয়েছে, তা নিছক অজুহাত। জাকির নায়েক কখনো জঙ্গীবাদকে উস্কে দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। কিংবা পিস টিভির লেকচার শুনে শুনে ISIS জঙ্গীরা সন্ত্রাসী হয়েছে -- এটা নিতান্তই হাস্যকর কথা। ISIS এর ধর্মতাত্ত্বিক বেইজ সম্পর্কে মোটেও ধারণা নেই, এমন লোকের পক্ষেই কেবল ISIS এর জন্য জাকির নায়েককে দোষ দেয়া সম্ভব। একইসাথে আমি এ বিষয়েও সচেতন যে, পিস টিভি বন্ধ করা হয়েছে আমাদের সরকারের রেগুলার “ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ