সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

এরদোয়ানের তুরস্ক: আবেগ বনাম বাস্তবতা

গত ১৫ই জুলাই তুরস্কে একটি “৬ ঘন্টার ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান” ঘটে গেল। তার উত্তেজনায় আবেগাপ্লুত ধর্মপ্রেমী মানুষেরা নানান কথা লিখছেন অনলাইনে। ভোররাতে ফজর হবার আগেই সব মসজিদ থেকে আজান দিয়ে মানুষকে রাস্তায় নেমে আসতে বলা হয়েছে, আর এরদোয়ান সমর্থকেরা আল্লাহু আকবার শ্লোগান দিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছেন, সেইসাথে এরদোয়ান মিডিয়াতে কান্না করেছেন -- ব্যস, আর কী লাগে! এতেই তা হয়ে গিয়েছে “ইসলামী বিপ্লব” এবং এরদোয়ান হয়েছেন “মহান ইসলামী খলিফা”।


এরদোয়ান কে? তার বেড়ে ওঠা কিভাবে? রাজনীতিতে প্রবেশ কিভাবে? তার রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাস কী? তার রাজনৈতিক গুরু নাজমুদ্দিন এরবাকানেই বা ইতিহাস কী? গুরুর ইসলামী দল ছেড়ে সেকুলার একেপি গঠন কেনইবা করলেন এরদোয়ান? শিষ্যের ব্যাপারে গুরুর মন্তব্য কী ছিল? সবচেয়ে বড় কথা, বিগত ১৪ বছরের শাসনামলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এরদোয়ানের কর্মকাণ্ড কী ছিল?
এরদোয়ানকে মহান মুসলিম নেতা বলার আগে এসবের উত্তর জানা থাকা দরকার। কিংবা তুরস্কের সেনা অভ্যুত্থান দমন দেখে ধর্মীয় আবেগে আপ্লুত হবার আগে এরদোয়ানের ইতিহাসটা একটু জানা দরকার। কেবল এরদোয়ানের ফজরের আজান দেয়া, আর নানান “ইসলামী কথা” শুনে সিদ্ধান্তে আসা উচিত নয়।


রেশমা উদ্ধারের সময় এমনকি বাংলাদেশ আর্মিও আল্লাহু আকবার শ্লোগান দিয়েছিল। তারমানে এই না যে বাংলাদেশ আর্মি হঠাৎ করে কাজকর্মে ইসলামিক আর্মি হয়ে গিয়েছে কিংবা বাংলাদেশের নেত্রী কুরআনের আইন বাস্তবায়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। রেশমা নাটকের পর অনেকের কাছেই এটা পরিষ্কার যে, “আল্লাহ আকবার” জিনিসটা মানুষের সেন্টিমেন্ট গ্রো করতে খুব কাজে লাগে। ধর্মব্যবসা যাকে বলে আরকি।


একটি আনাড়ি সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে, যেকোনো বিশ্লেষক তা স্বীকার করবেন। সাধারণতঃ সেনা অভ্যুত্থানে প্রথমেই প্রেসিডেন্টসহ যে ব্যক্তিদের আটক করা হয় ও যে স্থাপনাগুলোর দখল নেয়া হয়, তুরস্কের সাম্প্রতিক অভ্যুত্থানটি তেমন ছিল না। যাহোক, সেনা অভ্যুত্থান এরদোগানের ইচ্ছায়ই হোক কি অনিচ্ছায়ই হোক, এটাকে তিনি সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করেছেন: বরাবরের মত ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট ব্যবহার করেছেন, এবং নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে বিরোধীদের উপর চড়াও হয়েছেন। লিস্ট রেডিই ছিল, তিনি সম্ভবতঃ কেবল অপেক্ষা করছিলেন সেনা অভ্যুত্থানের। পরবর্তী ৪৮ ঘন্টার ভিতরে প্রায় ৩,০০০ বিচারককে বরখাস্ত করে বন্দী করার আদেশ দিয়েছেন তিনি। ৫০,০০০ সরকারী কর্মচারীকে সাসপেন্ড করেছেন। ১৫,০০০ শিক্ষককেও সাসপেন্ড করেছেন, ২১,০০০ শিক্ষকের লাইসেন্স বাতিল করেছেন। সকল ইউনিভার্সিটির ডিনকে চাকরিচ্যুত করেছেন (মোট ১৫৭৭ জন)। এদের সবার উপরেই তিনি চড়াও হয়েছে “এরদোয়ান-বিরোধী নেতা গুলেন” এর সাথে জড়িত থাকার বা সমর্থন করার অভিযোগে। নিরেট স্বৈরাচারের মতন তোয়াক্কা করেননি কোনো আইন আদালতের। সোশাল মিডিয়ায় এরদোয়ানকে ইনসাল্ট করায় দুইজনকে অ্যারেস্ট করা হয়েছে। অতীতেও তিনি একাজ করেছেন। ২৪টা রেডিও-টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। ছয় ঘন্টার অভ্যুত্থান “নিয়ন্ত্রণে এনেই” এরদোয়ান খুশিতে বলে ফেলেছেন, “এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত, সব জায়গায় শুদ্ধি অভিযান চালানোর সুযোগ এসেছে।”


আমার মনে পড়ছে ২০১৩-১৪ সালের কথা। বাংলাদেশে বেশকিছু ইভেন্টে নাটকীয়ভাবে অনেকগুলো টিভি চ্যানেল বন্ধ হয়ে গেল, বন্ধ হয়ে গেল পত্রিকা -- আদালতের কোনোরূপ আদেশ ছাড়াই। এমনকি জামাত-শিবিরের প্রতিবেশী হবার দোষেও মানুষ অ্যারেস্ট হতো -- এতটাই গণগ্রেফতার চলেছিল। ইসলাম সংশ্লিষ্টতা পেলেই অ্যারেস্ট করা হতো তাকে -- হোক সে ইসলাম সরকারের জন্য ক্ষতিকর কী ভালো। সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান বিনা বিচারে বন্দী… আরো কত মানুষ...। আমি বুঝি না, সেই জামাত-শিবিরই কিভাবে এরদোয়ানের মত এত বড় স্বৈরশাসকের সমর্থক যে, তারা একে “মহান ইসলামী নেতা” বলে উত্তেজনায় কেঁদে দিচ্ছে! আর কেউ যদি এরদোয়ানের অপকর্মগুলি তুলে ধরছে, তাকে গালি দিয়ে হেনস্থা করে শেষ করে দিচ্ছে! আমিতো দেখতে পাচ্ছি, জামাত-শিবিরের প্রতি শাহবাগীরা যে অযৌক্তিক অসভ্য আচরণ করেছিলো, এরদোয়ান বিরোধীদের উপর জামাত-শিবির ঠিক একই মেন্টালিটি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। শাহবাগীদের মোকাবিলায় তারা খুবই যৌক্তিক মানুষ: তথ্যভিত্তিক-ইতিহাসভিত্তিক কথা বলে ইন্টারনেটে বন্যা বইয়ে দিয়েছে -- অথচ এখন যখন এরদোয়ানের কর্মকাণ্ডের তথ্যভিত্তিক যৌক্তিক সমালোচনা করা হচ্ছে, তখন তারা ঠিক শাহবাগীদের মত অযৌক্তিক অসভ্য আচরণ করছে। এরা যখন জুলুমের শিকার হয় তখন মায়াকান্না কাঁদে, কিন্তু সুযোগ পেলে এরাই বড় জালিম হয়ে ওঠে! এরদোয়ানের মত বড় জালিমের সমর্থনে তারা নিজেদের ভদ্রতা, ইসলামী আদব-আখলাক্ব সব হারিয়ে ফেলেছে! আল্লাহ না করুন এরদোয়ান সমর্থকেরা যদি এদেশে কখনো ক্ষমতায় আসে, তবে ইসলামের শত্রুরা নয়, বরং আমাদেরকে সাইলেন্ট করবে এরাই -- “ইসলামপন্থীরা”!


লেখায় চিন্তাশীল মানুষদের জন্য কিছু বাস্তব তথ্য রেখে যেতে চাই। তার আগে একটু ভূমিকা:


১৪ বছরের শাসনকালে এরদোয়ান  ইসলামের জন্য পজিটিভ যে কাজগুলি করেছেন, শুধু সেগুলির কারণেই তাকে অত্যন্ত পছন্দ করা যেত (কেননা তুরস্কের torn ব্যাকগ্রাউন্ডে এটুকু করাই খুব কঠিন), কিন্তু তিনি যখন আবার ইসলামবিরোধী কাজও করেন, তখন বিষয়টা অন্যরকম হয়ে দাঁড়ায়। তখন বোঝা যায় যে, তিনি ইসলামকে কেবল নিজ স্বার্থে ব্যবহার করেছেন ও করছেন। অবশ্য শত শত বছরের মুসলিম ইতিহাসে নানান “খলিফা” একাজই করে এসেছে এবং মুসলিম জাতিকে বোকা বানিয়েছে। তাদের “ইসলামের খেদমত” দেখে সাধারণ জনগণ খুশি থেকেছে; একদিকে জনগণকে খুশি রেখে অপরদিকে তারা নিজেদের বাদশাহী ও ক্ষমতার লোভ চরিতার্থ করেছে। এরদোয়ানও যে তেমন একজন ব্যক্তি, সেটা উনার “ইসলামিক” ও “অনিসলামিক” কর্মকাণ্ডগুলোকে পাশাপাশি আনলে বোঝা যায়। অবশ্য যারা আগে থেকেই তাকে মহান ইসলামী নেতা ভেবে আবেগাপ্লুত হয়ে আছে, তারা এরদোয়ানের শত ইসলামবিরোধী কাজকেও সিম্পলি “হেকমত” লেবেল দিয়ে জাস্টিফাই করে দেবে। সে ভিন্ন কথা। এতদসত্ত্বেও লিখছি, কেননা ইনফরমেশান হাইওয়েতে সঠিক তথ্য রেখে যাওয়াটা দায়িত্ব। যারা লেখায় অসংস্কৃত (uncultured) আচরণ করে, তারাই একমাত্র পাঠক না, এবং তাদের রিঅ্যাকশনই একমাত্র রেসপন্স না। অনেক সত্যানুসন্ধানী নিরপেক্ষ মানুষ আছেন, যারা নীরবে সবকিছু দেখেন, শোনেন, পড়েন, অতঃপর যাচাই করে সত্যটুকু গ্রহণ করেন। এভাবে সত্যের সংস্পর্শে অনেক অজানা অচেনা মানুষের মাঝে নীরব বিপ্লব ঘটে যায়, যা আমরা জানতেও পারি না। সত্য প্রকাশের সাফল্য এখানেই। ঘনিষ্ঠ পরিচিতদের বাইরে সেই অজানা পাঠকদের জন্যও আমার এটুকু লেখা।


যাহোক, এরদোয়ান ইসলামবিরোধীও নন, ইসলামপন্থীও নন। বরং তিনি একজন ক্ষমতালোভী স্বৈরশাসক, যিনি ইসলামকে তার ক্ষমতার স্বার্থে ব্যবহার করেন। এরদোয়ানের এককালের গুরু এবং তুরস্কের ইসলামী নেতা নাজমুদ্দিন এরবাকান বলেছিলেন, "এই তাইয়্যেব মানুষ হ! এমন এক রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করছিস যেটা দিয়ে শুধু প্রবেশই করা যায় বের হওয়া যায় না।‘’ আর এরদোয়ান বলেছিলেন, ‘’আমি আজ থেকে আমার পূর্বের পোশাকটি (ইসলামী আন্দোলনের পোশাক) খুলে ফেললাম।’’


এই এরদোয়ান স্কার্ফের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার কথা নির্বাচনী ইশতেহারে রেখেছিলেন, কেননা সেটা করলে পপুলারিটি বাড়বে (যদিও পরে সংবিধানে তা বাস্তবায়ন হয়নি)। মিশরের আসমা বেলতাগির জন্য টিভিতে কাঁদলে পপুলারিটি বাড়বে, তাই তিনি কেঁদেছেন। আজান দিলে ভিডিও পাবলিশ হলে পপুলারিটি বাড়বে, তাই সেটা করেছেন। ইসরাইলের বিরুদ্ধে গরম গরম কথা বললে পপুলারিটি বাড়বে, তাই তিনি ইসরাইলকে খুনী, ইত্যাদি বহু কিছু বলেছেন। ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলেছেন তিনি সেই একই উদ্দেশ্যে -- পপুলারিটি বৃদ্ধি। কিন্তু এসব শুধুই কথা। এসব “ইসলামী আবেগ” তিনি বাইরে দেখান কেবলই পপুলারিটি বৃদ্ধির জন্য। হ্যাঁ, এই কথা আজকে বলতাম না, কিন্তু তিনি নিজেই কাজে প্রমাণ করে দিয়েছেন, ইসলামের জন্য উনার “যাকিছু অবদান”, তার সবই হলো শুধু কথা। আর কাজে যা হয়েছে তার সবটাই হয়েছে উনার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য, আর সেজন্যে ইসলাম ও মুসলিমদের শত ক্ষতির দিকে ঠেলে দিয়েছেন তিনি।
যদিও একে পার্টি বরাবরই সেকুলার ছিল, এবং কখনো বলেওনি যে “আগে ক্ষমতায় গিয়ে পরে কুরআনের সংবিধান কায়েম করবে” (যেটা জামাত-শিবির বলে থাকে), তবুও এদেশে এরদোয়ান সমর্থকেরা কিভাবে যেন এরদোয়ানের মনের কথা জানেন, এবং এরদোয়ানের সকল ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডকে “হেকমত” বলে জাস্টিফাই করেন এভাবে যে: এগুলো কৌশল, পরে এরদোয়ান ঠিকই কুরআনের সংবিধান কায়েম করবেন। কী অদ্ভুত স্বপ্নের দেশে এদের বসবাস!


তারা কি দেখে না যে, কাজের বেলায় তিনি তার প্রস্তাবিত ভিশন ২০২৩ এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। আর সেখানে শুরুতেই যে লক্ষ্য আছে তা হলো: “২০২৩ সালের মধ্যে EU (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) এর সদস্যপদ পাবার সকল শর্ত পূরণ করা।” কেন ইইউ মেম্বারশিপ পাবার এই আগ্রহ? আর কিছুই না, অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশে পরিণত হওয়া। আর সে লক্ষ্য পূরণের জন্য ক্ষমতায় আসার এক বছরের মাথায় মৃত্যুদণ্ডকে স্থায়ীভাবে রহিত করা হলো তুরস্কের সংবিধানে। কুরআনের সংবিধানের দিকে এগোচ্ছেন এরদোয়ান? মৃতুদণ্ডকে অমানবিক হিসেবে নিষিদ্ধ করা কি কুরআনের সংবিধানের দিকে আগানো, নাকি তাগুতের সংবিধানের দিকে আগানো?
এরদোয়ান সমর্থকেরা নানাভাবে যুক্তি দেন যে, কামাল আতাতুর্কের রেখে যাওয়া সেকুলার সংবিধান ও সেকুলার রাষ্ট্রে ইসলামী আইন হুট করে আনা যায় না, তাই এরদোয়ান ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছেন। মৃত্যুদণ্ড তো কুরআনের বিধান, যা তুরস্কের সেকুলার কামাল আতাতুর্কও বাদ দেননি। এরদোয়ান সেটা নিষিদ্ধ করে কি কুরআনের আইনের দিকে এগিয়ে গেলেন?


“ইউরোপিয়ান কনভেনশন অন হিউম্যান রাইটস” মানতে গিয়ে তিনি সমকামিতাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন, “সমকামী অধিকার” দিয়েছেন -- এটা কি কুরআনের আইনের দিকে যাওয়া? নাকি তাগুতের দিকে যাওয়া? মানুষ কি বোঝে না? এরদোয়ান ভক্ত আবেগাপ্লুত ইসলামিস্টরা কি বোঝে না যে, “ইউরোপিয়ান হিউম্যান রাইটস” মানতে গেলে ইসলামের অনেক বিধানকেই ছেড়ে দিতে হবে? ওদের “হিউম্যান রাইটস” আর আমাদের আল্লাহ প্রদত্ত অধিকারগুলো এক নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক?


নাকি এরদোয়ান ইইউতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রথমে অর্থনৈতিকভাবে তুরস্ককে শক্তিশালী করবেন, তারপর ইইউ থেকে বের হয়ে ইসলামী সংবিধান কায়েম করবেন? নাকি এরদোয়ানের তুরস্ককে ধরে রাখতে ইইউ এর সংবিধান বদলে সেখানে কুরআনের আইন অন্তর্ভুক্ত হবে?


একটা একটা করে কুরআনের আইন ছেড়ে খ্রিষ্টানদের সংঘ ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঘোষিত “সংবিধান” ও “মানবাধিকার” বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন এরদোয়ান। মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ করেছেন, সমকামীদের অধিকার দিয়েছেন, এবং ২০২৩ সালের মধ্যে বাকিগুলো পুরা করবেন। ইইউ এর সদস্য দেশ হিসেবে ইসলামের ঠিক কোন কোন ভাইটাল জায়গায় তুরস্ককে ছাড় দিতে হবে, সেটারও কি তালিকা দিতে হবে এখন?


ইসলামী নেতা নাজমুদ্দিন এরবাকান তাঁর এই পথভ্রষ্ট শিষ্য “ইসলামী আন্দোলনের পোষাক খুলে ফেলা” এরদোয়ানের দিকেই ইঙ্গিত করে উনার দাওয়াম বইয়ে লিখেছিলেন:
“তুমি নামাজে চল্লিবার বলছ, "হে আল্লাহ আপনি আমাদেরকে ইয়াহুদি নাসারাদের পথে পরিচালিত করবেন না।" নামাজ শেষ করেই সালাম ফিরিয়ে বলছ, "আমি তুরস্ককে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্ন্তভুক্ত করব, আমেরিকা ইসরাইলের সাথে কৌশলগত মিত্র হবো।" ১১শ' বছর যে সভ্যতা পৃথিবীর বুকে হক্ব এবং আদলের প্রতিনিধিত্ব করেছে, সে সভ্যতাকে ছেড়ে তুমি যাচ্ছ বাতিলের পেছনে? কী আর্শ্চয! তুমি নামাজে আল্লাহকে কথা দিচ্ছ আর সালাম ফিরিয়েই তুমি কী করছ?
হে মুসলমান, তুমি কী বলেছ এই ব্যাপারে তুমি কি জানো?”


তিনি আরও ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন:
“Zionism হলো একটি কুমিরের মত। এই কুমিরের উপরের চোয়াল হলো আমেরিকা আর নিচের চোয়াল হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন।...
তুরস্ককে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্ন্তভুক্ত করার অর্থই হলো ৪০ কোটি খ্রিষ্টান জনসংখ্যার একটি ইউনিয়নে সাড়ে সাত কোটি মুসলিম জনসংখ্যাবিশিষ্ট তুরস্ককে নিয়ে একটি প্রদেশ হিসেবে অংশীদার করা, তাদের আজ্ঞাবহ করা, তাদের সাথে নিজেদেরকেও এক দেশের অধিবাসী হিসেবে মনে করা।
অর্থনৈতিক সুবিধার আড়ালে অনেক ভয়াবহ একটি বিষয় হলো এটি। ক্রুসেডের মাধ্যমে তারা যেটা অর্জন করতে পারেনি, সেটা তারা এর মাধ্যমে অর্জন করবে। তুরস্ককে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রদেশ বানানোর পূর্বে তুরস্ক তার স্বাধীনতাকে বিকিয়ে দেবে। এরপর তারা যেই সিদ্ধান্তই গ্রহণ করুক না কেন, তুরস্ক একটি প্রদেশ হিসেবে জ্বী-হ্যাঁ বলবে। কোনো শক্তিই আমাদের হাতে থাকবে না, আমাদের বড় বড় সকল সম্পদগুলোই থাকবে তাদের নিয়ন্ত্রণে। আমরা হব তাদের সেবাদাস আর আজ্ঞাবহ গোলাম।”


তারা কি দেখে না যায়নবাদী ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের সাথে অতি ঘনিষ্ঠতার পুরস্কারস্বরূপ তিনি একদিকে “ইহুদি-আমেরিকান শান্তি পুরস্কার” গ্রহণ করেছেন, আবার ইলেকশানের আগ দিয়ে কঠোর ইসরাইলবিরোধী কথা ও গাজার পক্ষে কথা বলেছেন। তারপর নির্বাচিত হয়ে গেলে আবার ফিরেছেন ইসরাইলের সাথে পুরনো বন্ধুত্বে। ইনফরমেশানের এই যুগে এটাও কি অজানা যে, নির্বাচিত হবার পর ২০০৫ সালে বিশাল প্রতিনিধিদল নিয়ে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলে ভিজিট করেছেন তিনি, সামরিক-ব্যবসায়িক চুক্তি করেছেন, এবং ইসলামী ইরানের নিন্দাগান গেয়ে এসেছেন?


তারা কি দেখে না ২০০৬ সালে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের প্রেসিডেন্টকে তুরস্কের পার্লামেন্টে এনে বক্তৃতা দিতে দিয়েছেন এরদোয়ান, এর সে বলে গেছে: “আমেরিকা, সিরিয়া, ফিলিস্তিন এবং ইসরাইলের মাঝে তুরস্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী দেশ।” একইসাথে ইসরাইল বলেছে, তুরস্কের সাথে তাদের সম্পর্ক চমৎকার!
এই এরদোয়ান ২০০৭ সালে আবারও ইহুদী প্রেসিডেন্টকে উনার পার্লামেন্টে নিয়ে এসেছিলেন!


২০১০ এ গাজার ফ্রিডম ফ্লোটিলায় ইসরাইলী হামলার পর ইসরাইলের বিরুদ্ধে কথা না বলে এরদোয়ানের উপায় ছিল না, কেননা তাহলে পপুলারিটিতে ধস নামতো। অতএব, তিনি তা করেছেন। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ন্যুনতম পর্যায়ে নেমে আসা সত্ত্বেও ইহুদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী এহুদ বারাক বলেছিলো, সময়ের সাথে সম্পর্ক আবার ঠিক হয়ে যাবে। একবছর পর জাতিসংঘের সাধারণ সভায় পিতা বারাক ওবামা এরদোয়ানকে বলে দিলেন, বাবা, ইসরাইলের সাথে ঝগড়া মিটিয়ে নিও।


বরাবরের মত বাকওয়াজ এরদোয়ান ইসরাইলকে শিশু হত্যাকারী, গণহত্যাকারী সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইত্যাদি বললেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আবার বললেন, “ইসরাইলকে তুরস্কের দরকার।” তুরস্কে সন্ত্রাসী হামলায় দুইজন ইহুদি মারা যাওয়ায় চিঠি লিখে “গভীর দুঃখ” প্রকাশ করলেন। তারপর আবারও কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা হলো এই ২০১৬ সালে। এরদোয়ান ভক্তদের মুখে শুনি, সেটা নাকি গাজাকে সাহায্য করার জন্যই! তা সেই চুক্তিতে কী আছে দেখুন:
১. গাজা ফ্রিডম ফ্লোটিলার শহীদগণকে হত্যার দায়ে ইসরাইলকে অভিযুক্ত করে দায়ের করা মামলা তুরস্ক তুলে নেবে (শহীদের রক্তের সাথে বেইমানী)
২. ইসরাইলের মাধ্যমে ইসরাইলের ভূমির উপর দিয়ে ইসরাইলী ব্যবস্থাপনায় গাজায় সাহায্য পাঠাবে তুরস্ক, তাও আবার যদি ইসরাইল সেটাকে “নিরাপদ মনে করে” (?! অর্থাৎ, হে প্রভু ইসরাইল, তুমি গাজাবাসীদের নিয়মিত ভিত্তিত হত্যা করতে থাকো। আর আমি ওদেরকে একটু একটু খাদ্য-বস্ত্র সাহায্য দেব। একদিকে আমি খাওয়াবো, আরেকদিকে তুমি গুলি করবে, ওকে?)। (আচ্ছা, আমি বুঝি না, কিভাবে “খলিফা এরদোয়ানের” আবেগাপ্লুত সমর্থকেরা এটা নিজেদেরকে বিশ্বাস করায় যে, ইসরাইল চুক্তি মানবে এবং গাজায় পৌঁছে যাবে তুর্কি সাহায্য?!)
এবং এমন আরো কয়েকটি লোক দেখানো চুক্তি! যার বাস্তবে কোনোই মূল্য নেই।


এদিকে সেইযে ২০০৫ সালে গিয়ে ব্যবসায়িক আর সামরিক চুক্তিগুলি করে এসেছিলেন এরদোয়ান, তা কিন্তু চলছে পুরোদমে। বছর বছর উভয় দেশের বাণিজ্য ২০-৩০-৪০ পার্সেন্ট করে বাড়ছে।
ইসরাইল যে দুনিয়ার বুকে আজো টিকে আছে তাদের নানান পণ্য বিক্রি করে এবং সামরিক অস্ত্র বিক্রি করে, তা কে না জানে! আর এরদোয়ানের তুরস্ক ইহুদি পণ্য কেনার দৌড়ে ষষ্ঠ হয়েছে, খলিফার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে হয়ত বলা যায় না, প্রথমও হয়ে যেতে পারে!
এদিকে সামরিক ইন্টেলিজেন্স বিনিময়সহ দিপাক্ষিক মহড়া, ট্রেনিং, অস্ত্র কেনাবেচা ইত্যাদি তো আছে! তুরস্ক ইসরাইল থেকে কেনে কোটি কোটি টাকার সমরাস্ত্র। আর ইসরাইল তুরস্ক থেকে বানিয়ে নেয় জামা-জুতো। আহ! কী মধুর ইসলামিক সম্পর্ক!


ইরাক-আফগানিস্তান-বসনিয়া-হার্জেগোভিনাসহ বহু দেশের লাখো মুসলমানদের রক্ত যেই ন্যাটোর হাতে, সেই ন্যাটোর মেম্বার তুরস্ক, এবং ন্যাটো জোট থেকে বের হবার কোনো ইচ্ছা এরদোয়ানের নেই। একদিক দিয়ে ন্যাটোর মেম্বার হয়ে বসে আছেন, আরেকদিক দিয়ে তাগুতি সংবিধান সম্বলিত ইইউ এর মেম্বার হবার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। আল্লাহ বলেছেন মৃত্যুদণ্ড বৈধ, তিনি বলছেন অবৈধ। আল্লাহ বলছেন সমকামিতা অবৈধ, তিনি বলছেন বৈধ। মহান ইসলামী নেতা, ইসলামী খলিফা, না?


২০১১ সাল থেকে তুরস্কের মাটিতে কি এরদোয়ান (হবু) ISIS সন্ত্রাসীদের থাকা-খাওয়া ট্রেনিঙের ব্যবস্থা করেননি? তুরস্কের মাটিতে আমেরিকার লালিত এই “ইসলামী জঙ্গীরা” বড় হয়েছে, ট্রেনিং নিয়েছে, তারপর সিরিয়াতে প্রবেশ করেছে মুসলমানের রক্ত হাত রাঙাতে। আকাশ থেকে লাফিয়ে তো পড়েনি! একটু ম্যাপের দিকে তাকান, আর কতকাল কেবল ইসলামী আবেগের উপর ভর করে চোখ বুঁজে থাকবেন!
সিরিয়াতে বেড়ে ওঠা ভয়ানক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ISIS এর পালক পিতা কি এরদোয়ান নন? এই দায় কি তিনি কিছুতে এড়াতে পারবেন? ISIS এর দখল করা তেলকূপ থেকে পানির দামে তেল কিনেছেন তিনি, এভাবে ISIS আরো শক্তিশালী হয়েছে। ঠিক যেভাবে ইসরাইলের কাছ থেকে কিনেছেন কোটি কোটি ডলারের পণ্য আর অস্ত্র, শক্তিশালী করেছেন ইসরাইলের অর্থনীতিকে। যা দিয়ে গাজায় মরছে আমাদের ভাই-বোন, বাবা-মা!


আর আজকে যখন উইকিলিকস একেপি-র হাজার হাজার ইমেইল প্রকাশ করার ঘোষণা দেয়, তখন তুরস্কের ভিতরে উইকিলিকস ব্লক করে দিয়ে, উইকিলিকসের সার্ভারের ddos হামলা চালিয়ে উইকিলিকসের মুখ বন্ধ করে দিতে চায়! অবশ্য বিরোধী পক্ষের মুখ বন্ধ করার নীতি এরদোয়ানের বহু পুরনো। ফেইসবুকে উনাকে ইনসাল্ট করা হলে গ্রেফতার করা হয়, উনার অপছন্দ হলেই টিভি-রেডিও-পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায়। (বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের সাথে মিল পেলে তা নিতান্ত কাকতালীয়। এইরূপ এরদোয়ানকে ভালোবাসলে জামাত-শিবিরসহ এরদোয়ান সমর্থক সবারই উচিত বর্তমান সরকারকে ইসলামী আবেগ সহকারে ভালোবাসা! কেননা মদীনা সনদে চলছে দেশ। (ঠিক যেভাবে সমকামিতাকে বৈধতা দিয়ে, কুরআনের আইন মৃত্যুদণ্ডকে নিষিদ্ধ করে ইসলামী বিপ্লব হচ্ছে তুরস্কে, মহান খলিফা এরদোয়ানের নেতৃত্বে!))


কেউ কেউ উনাকে এযুগে ওমর, ইত্যাদি পর্যন্ত বলে বসছেন। জানিনা খলিফা হযরত ওমর কখনো “খলিফার প্রাসাদ” বানিয়েছিলেন কিনা, তবে কোর্ট অর্ডারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রিজার্ভ ফরেস্টে অবৈধভাবে শ্বেত প্রাসাদ নির্মান করেছেন এরদোয়ান, যার ব্যয় সাড়ে ৬১ কোটি ডলার। গোল্লায় যাক বিশ্বের না খেয়ে থাকা মুসলমানেরা আর বইয়ের ভাঁজে পড়ে থাক খলিফা ওমরের সাদাসিধা জীবনের ইতিহাস -- আমাদের খলিফার দরকার হাজার কামরার শ্বেত প্রাসাদ, আমরা নাহয় মুখের বুলিতে তাকে বানিয়ে দেব খলিফা ওমর!


এ-ই কি ইসলাম, এ-ই কি রাসুলের দেখানো পথ?


(ইহুদী-নাসারাদের সাথে এরদোয়ানের দহরম মহরমের বহুত ছবি আছে, ছবি আছে মেয়েদের সাথে “ইসলামী” এই নেতার হ্যান্ডশেক করার, “পানীয়” পান করার, বেপর্দা গায়িকাদেরকে পাশে নিয়ে বসে “ইফতার” করার। আমি জানি এসব ছবি অতি সহজে মানুষকে প্রভাবিত করে। কিন্তু আমি চাই আবেগ নয়, বরং তথ্যভিত্তিক যুক্তির মাধ্যমে মানুষের কাছে সত্যটি পৌঁছে যাক।)


জনপ্রিয়তা পাবার জন্য মুখে ইসরাইলকে খুনী বলা, আর তলে তলে বাণিজ্যিক-সামরিক সম্পর্ক শনৈঃ শনৈঃ বৃদ্ধি করা, নির্বাচনের আগে স্কার্ফসহ নানান ইস্যুতে ইসলামের বুলি আউড়ানো আর কাজের বেলায় খ্রিষ্টনদের সংঘ EU এর মেম্বার হতে সমকামিতাকে বৈধ করা, মৃত্যুদণ্ডকে নিষিদ্ধ করা, বাংলাদেশে নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের পরে রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে নিয়ে জামাত-শিবিরের অন্ধ ভক্তি কিনে নেয়া, অপরদিকে সিরিয়াসহ দুনিয়াব্যাপী ছড়িয়ে পড়া সন্ত্রাসী সংগঠন ISIS-কে লালন পালন করে বড় করে তোলা, কুর্দিদের উপরে নির্যাতন চালানো আর কিছু হলেই ন্যাটোর কোলে দৌড়ে গিয়ে ওঠা -- আর ক্যামেরায় এসে এজিদের মত চোখের জল ফেলা -- আর কত, আর কত?


এ-ই কি ইসলাম! জানি, এতকিছু জানার পরও এরদোয়ানের অন্ধ ভক্তিতে আবেগাপ্লুত ধর্মপ্রাণ মানুষেরা ফ্যালাসি করবেন, গালমন্দ করবেন, কিংবা বড়জোর সব যুক্তি একহাতে ঠেলে সরিয়ে বলবেন: “ইহা হেকমত”। কিন্তু আপনারা কি নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে বলতে পারবেন, হে আল্লাহ, এরদোয়ান সমকামিতাকে বৈধ করেছে, মৃত্যুদণ্ডকে নিষিদ্ধ করেছে, মুসলিম হত্যাকারী ইহুদীদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বন্ধুত্ব করেছে -- তুমি এগুলো পছন্দ করো! বলতে পারবেন? আল্লাহর কাছে আপনারা কী বলেন নামাজে দাঁড়িয়ে? আমার জানতে ইচ্ছা করে!


আরো অনেক কথা বলা যেত, কিন্তু আজ এটুকুই থাক। তুরস্কের জনগণকে ভালো রাখতে পারার কারণে এরদোয়ান সেখানে জনপ্রিয় হলেও, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তিনি কেবল ইসলাম ও মুসলমানদের ক্ষতিবৃদ্ধিই করে চলেছেন। এরদোয়ানের এহেন মুনাফেকি প্রসঙ্গে নাজমুদ্দিন এরবাকান সরাসরি বলেননি, বলেছিলেন ইঙ্গিতে, কিন্তু আজকে বেঁচে থাকলে তিনি হয়ত সরাসরিই বলতেন, এবং আমরাও তেমনটা মনে করি। এমন ধুরন্ধর ধর্মব্যবসায়ী স্বৈরাচারের হাত থেকে আল্লাহ এই পৃথিবীকে আর সহজ-সরল সাদাসিধা মুসলমানদেরকে হেফাজত করুন, এটাই কামনা।


নূরে আলম

জুলাই ২৪, ২০১৬।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

টাকার ইতিহাস, মানি মেকানিজম ও ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মহা জুলুম

ভূমিকা: জালিমের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম  (মহররম: ইনফো সিরিজ এর শেষ পোস্ট ছিল এটা। মূল সিরিজটি পড়ে আসুন ) জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাস হলো মহররম মাস। জালিমের মুখোশ উন্মোচনের মাস মহররম। জুলুমের কূটকৌশল উন্মোচনের মাস মহররম। আধুনিক সেকুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লেজিসলেশান (সংসদ), আর্মড ফোর্সেস (আর্মি) ও জুডিশিয়ারি (আদালত) হলো এক মহা জুলুমের ছদ্মবেশী তিন যন্ত্র, যারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করে জুলুম টিকিয়ে রাখার জন্য। তারচেয়েও বড় জালিম হলো big corporations: বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, যারা তাবৎ দুনিয়াকে দাস বানিয়ে রেখেছে। আর এই দাসত্বের শৃঙ্খলে তারা আমাদেরকে আবদ্ধ করেছে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে: টাকা আমাদের শ্রমকে ধারণ করে, অথচ সেই টাকার মূল্য আপ-ডাউন করায় অন্যরা -- ব্যাংক ব্যবসায়ীরা! টাকা আমাদের শ্রমকে সঞ্চয় করার মাধ্যম, অথচ সেই টাকা আমরা প্রিন্ট করি না, প্রিন্ট করে (ব্যাংকের আড়ালে) কিছু ব্যবসায়ী! সেই টাকার মান কমে যাওয়া (বা বেড়ে যাওয়া) আমরা নির্ধারণ করি না -- নির্ধারণ করে ব্যাঙ্ক (ব্যবসায়ীরা)! ইমাম হুসাইনের (আ.) প্রতিবাদী চেতনাকে ধারণ করব, শোকাহত হ

ধর্মব্যবসা: মুসলমানদের হাতে ইসলাম ধ্বংসের অতীত-বর্তমান (১)

ভূমিকা যদিও পলিটিকাল-রিলিজিয়াস ইস্যুতে নিশ্ছিদ্র আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করে আলোচনা করার অভ্যাস আমার, কিন্তু এখানে বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরে আর্গুমেন্ট করার প্রথমতঃ ইচ্ছা নেই, দ্বিতীয়তঃ সময় ও সুযোগ নেই। আমি যা সত্য বলে জানি, তা সংক্ষেপে তুলে ধরছি। যারা আমার উপর আস্থা রাখেন তাদের জন্য এই লেখাটি সোর্স অব ইনফরমেশান, উন্মুক্ত হৃদয়ের মানুষদের জন্য সত্য অনুসন্ধানের নতুন কিছু টপিক, আর প্রেজুডিসড ধর্মান্ধ রোগগ্রস্ত অন্তরের জন্য রোগ বৃদ্ধির উছিলা। শেষ পর্যন্ত আর্গুমেন্ট ও ডায়লগের দুয়ার উন্মুক্ত রাখার পক্ষপাতী আমি, কিন্তু সেই আর্গুমেন্ট অবশ্যই সত্য উন্মোচনের নিয়তে হওয়া উচিত, নিজের দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাস ও ধ্যান ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করবার উদ্দেশ্যে নয়। মক্কা-মদীনা: মুহাম্মদ (সা.) থেকে আলে-সৌদ (৬২৯-১৯২৪) এদেশের অধিকাংশ মানুষ মক্কা-মদীনার ইতিহাস কেবল এতটুকু জানেন যে, মুহাম্মদ (সা.) মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করেন। কিন্তু প্রায় চৌদ্দশ’ বছর আগে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র থেকে আজকের রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবের ইতিহাস কম মানুষই জানেন। প

পিস টিভি, জাকির নায়েক ও এজিদ প্রসঙ্গ

সম্প্রতি গুলশান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। আমি তখন দিল্লীতে ছিলাম। দেশে ফিরে শুনি পিস টিভি ব্যান করা হয়েছে বাংলাদেশে, এবং তার আগে ইন্ডিয়াতে। আমার বাসায় টিভি নেই, এবং আমি জাকির নায়েকের লেকচার শুনিও না। কিংবা পিস টিভিতে যারা লেকচার দেন, বাংলা কিংবা ইংলিশ -- কোনোটাই শুনি না; প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া আমার ইসলামের বুঝ জাকির নায়েকসহ পিস টিভি ও তার বক্তাদেরকে ইন জেনারেল আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। Peace TV বন্ধ হওয়ায় এদেশে বিকৃত ইসলাম প্রসারের গতি কমলো -- এটাই আমার মনে হয়েছে। একইসাথে আমি এটাও মনে করি যে, যেই অভিযোগ পিস টিভিকে ব্যান করা হয়েছে, তা নিছক অজুহাত। জাকির নায়েক কখনো জঙ্গীবাদকে উস্কে দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। কিংবা পিস টিভির লেকচার শুনে শুনে ISIS জঙ্গীরা সন্ত্রাসী হয়েছে -- এটা নিতান্তই হাস্যকর কথা। ISIS এর ধর্মতাত্ত্বিক বেইজ সম্পর্কে মোটেও ধারণা নেই, এমন লোকের পক্ষেই কেবল ISIS এর জন্য জাকির নায়েককে দোষ দেয়া সম্ভব। একইসাথে আমি এ বিষয়েও সচেতন যে, পিস টিভি বন্ধ করা হয়েছে আমাদের সরকারের রেগুলার “ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ