সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সংখ্যালঘুদের উপর জুলুম

১. আল জাজিরা টিভি VR চ্যানেল চালু করেছে। সেই চ্যানেলে আজমীর শরীফে ইফতারের ভিডিও পাবলিশ করেছে। খাজা মইনুদ্দিন চিশতীর মাজার সেখানে। টপ কমেন্টস এর সবগুলোতেই আমাদের "মুসলিম" ভাইয়েরা লিখেছেন: মাজার হলো শিরক, বিদআত, এগুলোর কোনো স্থানই ইসলামে নাই।
হতাশ হয়ে ভাবছি: হায়রে ইসলামের শত্রুরা! তোরা হৃদয়ের ধর্মের অনুসারীদেরকে আজ প্রেমের বিপরীতে নিয়ে গেলি!
তারপরই নিচের দিকে একটা কমেন্ট পেলাম, একজন লিখেছে যে সুফিজমই প্রকৃত ইসলাম।
তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আসলাম।
২. ইস্তানবুল শহর, তুরস্ক। এক মেয়ে মিনি স্কার্ট পরে বাসে উঠেছে। তার পিছনের সিট এক ছেলে, দাড়ি আছে। মেয়েটিকে বলছে, তোমার লজ্জা করে না?
পরে বাস থামলে নামার সময় মেয়েটির গালে চড় মেরে দরজার দিকে এগিয়ে গেল; মেয়েটি উঠে এসে ছেলেটাকে ধরল, ছেলেটা মেয়েটাকে ধাক্বা দিয়ে বাসের ভিতরে ফেলে দিয়ে নেমে গেল।
পুলিশ তাকে অ্যারেস্ট করেও "তদন্ত চলছে" বলে ছেড়ে দিয়েছে। অথচ বিনা বিচারেই গুলেন সাপোর্টার ৩৮ হাজার নেতাকর্মীকে জেলে ভরতে পারে এরদোয়ান, সেজন্যে ৩৮ হাজার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীকে বের করে দেয়, সেটা আবার তার প্রধানমন্ত্রী লাইভ টিভিতে স্বীকারও করে। আর এই এরদোয়ানকে মুসলিম জাহানের খলিফা হিসেবে প্রচার করতে ব্যস্ত অনেকে।
ভাবছি, ছেলেটাই বা কী ইসলাম শিখেছে। সেইসাথে মিলাচ্ছি আজমীর শরীফের সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করা মুসলমানদেরকে। ইসলামের নামে কী শেখানো হয়?
৩. গতদিনের নিউজ ছিল সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফকে পদচ্যুত করে বাদশা সালমান নিজের ছেলেকে ক্রাউন প্রিন্স করেছে। কার্যতঃ সে-ই এখন সৌদি আরবের বাদশা। এবং ধারণা ও আশা পোষণ করেছিলাম যে, সে-ই হতে যাচ্ছে শেষ সৌদি বাদশা।
আজকের নিউজ হলো, ইজরাইলী ইন্টেলিজেন্স মিনিস্টার ইজরাইলে "সাদর আমন্ত্রণ" জানিয়েছেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স বিন সালমানকে। একইসাথে বাদশাহ সালমানের উদ্দেশ্যে বলেছেন যে, সৌদি আরব যেন ইজরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সৌদি আরবে ইনভাইট করে। উদ্দেশ্য: উভয় দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন।
একইসাথে এ-ও বলেছে যে, আরব বিশ্ব বুঝতে পারছে যে, ইজরাইল তাদের শত্রু নয়। বরং ইরানের বিরুদ্ধে ও ইসলামী সন্ত্রাস মোকাবিলায় তারা একত্রে কাজ করতে পারবে।
মুসলমানদের "ঘরের শত্রু বিভীষণকে" চিনতে কি আরো বাকী আছে?
৪. আমেরিকায় এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ, এক কৃষ্ণাঙ্গকে গুলি করে মেরেছে "কালো" হবার অপরাধে। এবং যথারীতি আদালত তাকে "মাথায় সমস্যার" কথা বলে ছেড়ে দিয়েছে। গাড়িতে যখন ড্রাইভিং সিটে থাকা ফিল্যান্ডোকে পুলিশ শ্যুট করে, তখন পাশের সিটে থাকা তার গার্লফ্রেন্ড ফেইসবুকে লাইভ করেছিল। পিছনের সিটে চার বছর বয়সী ছেলে ছিল।
আমেরিকায় "ম্যাস শ্যুটিং" আর "স্কুল শ্যুটিং" খুব পরিচিত দুইটা টার্ম। ম্যাস শ্যুটিং হলো, কোনো গ্যাদারিঙে এসে এলোপাতাড়ি গুলি ছু্ঁড়ে মানুষ মারা। এদের বেশিরভাগই মানসিকভাবে বিকৃত লোকজন। আর স্কুল শ্যুটিং হলো এই কাজটাই স্কুলের বাচ্চাদের উপর করা। অনেকসময় ক্লাস ওয়ান-টু'র বাচ্চা বাবার রিভলবার এনে একাজ করেছে।
২০১৫ সালে আমেরিকায় ১৩ হাজার+ মানুষ মারা গেছে এমনসব গুলিতে। প্রতি ১ লাখে ৩ জন মানুষ গুলিতে মারা যাচ্ছে।
৩২ কোটি মানুষের দেশে ৩০ কোটি লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র - জনগণের হাতে!
আমেরিকায় যাবেন? স্বপ্নের আমেরিকা, তাই না?
৫. ব্রিটেনের গ্রেনফেল টাওয়ারে ৫০০+ মানুষের বাস ছিল। আগুন লেগে প্রায় সবাই-ই মারা গেছে। কিন্তু সরকার স্বীকার করছে না। কেবল আমাদের রানা প্লাজা ধ্বসে গেলেই তোমরা বিশ্ব মিডিয়া হুমড়ি খেয়ে পড়ো, আজকে বিবিসি সিএনএন যাও না, গ্রেনফেল নিয়ে একইভাবে রিপোর্ট করো?
৬. জাফর ইকবাল ক'দিন আগেই লিখেছিল, একটা দেশের মানুষ ভাল আছে কিনা জানতে সেদেশের সংখ্যালঘুদেরকে জিজ্ঞাসা করতে হয়। তারা ভাল না থাকলে পদ্মা সেতু দিয়ে কী হবে - এদেশের হিন্দু আর সাঁওতালরা নাকি নির্যাতিত। এক ইসলামবিদ্বেষী ভ্যানচাপা দিয়ে ১ জন মুসলমানকে মেরেছে লন্ডনের ফিনসবেরি পার্ক মসজিদের সামনে। এখন জাফর ইকবাল কি লিখবে: "মন খারাপ করে ভাবছিলাম, ব্রিটেনের মুসলমানরা ভাল নাই"? কিংবা আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গরা? কিংবা আমেরিকায় মুসলিমেরা, যখন গত রোববার আমেরিকায় ১৭ বছর বয়সী হিজাবী মুসলিম মেয়েকে বেইসবল ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে ইসলামবিদ্বেষী এক শ্বেতাঙ্গ?
…………………………………………………………………………
একদিন হয়ত পৃথিবীটা শান্ত হবে। মুসলিম মেজরিটি হবে সবগুলো দেশ। মুসলমানদের উপর এই জুলুম আর থাকবে না।
তখন কি আমাদের উপরে একইভাবে চড়াও হবে মাজার-বিরোধী ওহাবী সালাফিরা?
হয়তবা!

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

টাকার ইতিহাস, মানি মেকানিজম ও ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মহা জুলুম

ভূমিকা: জালিমের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম  (মহররম: ইনফো সিরিজ এর শেষ পোস্ট ছিল এটা। মূল সিরিজটি পড়ে আসুন ) জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাস হলো মহররম মাস। জালিমের মুখোশ উন্মোচনের মাস মহররম। জুলুমের কূটকৌশল উন্মোচনের মাস মহররম। আধুনিক সেকুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লেজিসলেশান (সংসদ), আর্মড ফোর্সেস (আর্মি) ও জুডিশিয়ারি (আদালত) হলো এক মহা জুলুমের ছদ্মবেশী তিন যন্ত্র, যারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করে জুলুম টিকিয়ে রাখার জন্য। তারচেয়েও বড় জালিম হলো big corporations: বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, যারা তাবৎ দুনিয়াকে দাস বানিয়ে রেখেছে। আর এই দাসত্বের শৃঙ্খলে তারা আমাদেরকে আবদ্ধ করেছে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে: টাকা আমাদের শ্রমকে ধারণ করে, অথচ সেই টাকার মূল্য আপ-ডাউন করায় অন্যরা -- ব্যাংক ব্যবসায়ীরা! টাকা আমাদের শ্রমকে সঞ্চয় করার মাধ্যম, অথচ সেই টাকা আমরা প্রিন্ট করি না, প্রিন্ট করে (ব্যাংকের আড়ালে) কিছু ব্যবসায়ী! সেই টাকার মান কমে যাওয়া (বা বেড়ে যাওয়া) আমরা নির্ধারণ করি না -- নির্ধারণ করে ব্যাঙ্ক (ব্যবসায়ীরা)! ইমাম হুসাইনের (আ.) প্রতিবাদী চেতনাকে ধারণ করব, শোকাহত হ

ধর্মব্যবসা: মুসলমানদের হাতে ইসলাম ধ্বংসের অতীত-বর্তমান (১)

ভূমিকা যদিও পলিটিকাল-রিলিজিয়াস ইস্যুতে নিশ্ছিদ্র আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করে আলোচনা করার অভ্যাস আমার, কিন্তু এখানে বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরে আর্গুমেন্ট করার প্রথমতঃ ইচ্ছা নেই, দ্বিতীয়তঃ সময় ও সুযোগ নেই। আমি যা সত্য বলে জানি, তা সংক্ষেপে তুলে ধরছি। যারা আমার উপর আস্থা রাখেন তাদের জন্য এই লেখাটি সোর্স অব ইনফরমেশান, উন্মুক্ত হৃদয়ের মানুষদের জন্য সত্য অনুসন্ধানের নতুন কিছু টপিক, আর প্রেজুডিসড ধর্মান্ধ রোগগ্রস্ত অন্তরের জন্য রোগ বৃদ্ধির উছিলা। শেষ পর্যন্ত আর্গুমেন্ট ও ডায়লগের দুয়ার উন্মুক্ত রাখার পক্ষপাতী আমি, কিন্তু সেই আর্গুমেন্ট অবশ্যই সত্য উন্মোচনের নিয়তে হওয়া উচিত, নিজের দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাস ও ধ্যান ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করবার উদ্দেশ্যে নয়। মক্কা-মদীনা: মুহাম্মদ (সা.) থেকে আলে-সৌদ (৬২৯-১৯২৪) এদেশের অধিকাংশ মানুষ মক্কা-মদীনার ইতিহাস কেবল এতটুকু জানেন যে, মুহাম্মদ (সা.) মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করেন। কিন্তু প্রায় চৌদ্দশ’ বছর আগে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র থেকে আজকের রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবের ইতিহাস কম মানুষই জানেন। প

পিস টিভি, জাকির নায়েক ও এজিদ প্রসঙ্গ

সম্প্রতি গুলশান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। আমি তখন দিল্লীতে ছিলাম। দেশে ফিরে শুনি পিস টিভি ব্যান করা হয়েছে বাংলাদেশে, এবং তার আগে ইন্ডিয়াতে। আমার বাসায় টিভি নেই, এবং আমি জাকির নায়েকের লেকচার শুনিও না। কিংবা পিস টিভিতে যারা লেকচার দেন, বাংলা কিংবা ইংলিশ -- কোনোটাই শুনি না; প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া আমার ইসলামের বুঝ জাকির নায়েকসহ পিস টিভি ও তার বক্তাদেরকে ইন জেনারেল আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। Peace TV বন্ধ হওয়ায় এদেশে বিকৃত ইসলাম প্রসারের গতি কমলো -- এটাই আমার মনে হয়েছে। একইসাথে আমি এটাও মনে করি যে, যেই অভিযোগ পিস টিভিকে ব্যান করা হয়েছে, তা নিছক অজুহাত। জাকির নায়েক কখনো জঙ্গীবাদকে উস্কে দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। কিংবা পিস টিভির লেকচার শুনে শুনে ISIS জঙ্গীরা সন্ত্রাসী হয়েছে -- এটা নিতান্তই হাস্যকর কথা। ISIS এর ধর্মতাত্ত্বিক বেইজ সম্পর্কে মোটেও ধারণা নেই, এমন লোকের পক্ষেই কেবল ISIS এর জন্য জাকির নায়েককে দোষ দেয়া সম্ভব। একইসাথে আমি এ বিষয়েও সচেতন যে, পিস টিভি বন্ধ করা হয়েছে আমাদের সরকারের রেগুলার “ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ