সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কেন এরদোয়ান মুনাফিক?

এরদোয়ানের শাসনামলে (২০০৩-২০১৮) গৃহীত তুর্কি-ইজরাইল সম্পর্ক:

২০০৫ সালে ইজরাইলে গিয়ে তুর্কি-ইজরাইল সামরিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ইজরাইলকে প্রস্তাব এরদোয়ান। "ইরানের পারমাণবিক গবেষণা শুধু ইজরাইলের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্য হুমকি" -- এই উক্তিও করেন (যদিও ইজরাইলের ৪০০+ পারমাণবিক বোমা আছে, কিন্তু ইরান মেডিকেল সায়েন্স ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পরমাণু সমৃদ্ধ করলে সেটাকে বিশ্বের জন্য হুমকি মনে করেন এরদোয়ান। ইজরাইলের ৪০০+ পারমানবিক বোমাকে বিশ্বের জন্য হুমকি মনে করেন না!)


নভেম্বর, ২০০৭ সালে ইজরাইলী প্রধানমন্ত্রী শিমন পেরেজ তুর্কি সংসদে বক্তব্য দেন।

২০১০ সালে (এরদোয়ানের উদ্যোগে নয়, বরং) তুর্কি বেসরকারী সংস্থার উদ্যোগে "গাজা ফ্রিডম ফ্লোটিলা" জাহাজ ফিলিস্তিন অভিমুখে রওনা হয় সাহায্য নিয়ে। সেখানে ইজরাইলী সৈন্যরা হামলা করে ৯ জন তুর্কি নাগরিককে শহীদ করে। এই নিয়ে তুর্কি-ইজরাইল কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হলে ২০১৬ সালে সেটা আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়। ইজরাইলের সাথে এরদোয়ান নিম্নোক্ত চুক্তি করেন:

১. গাজা ফ্রিডম ফ্লোটিলার শহীদগণকে হত্যার দায়ে ইসরাইলকে অভিযুক্ত করে দায়ের করা মামলা তুরস্ক তুলে নেবে, ২০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে (শহীদের রক্তের সাথে বেইমানী)
২. ইসরাইলের মাধ্যমে ইসরাইলের ভূমির উপর দিয়ে ইসরাইলী ব্যবস্থাপনায় গাজায় সাহায্য পাঠাবে তুরস্ক, তাও আবার যদি ইসরাইল সেটাকে “নিরাপদ মনে করে” (?! অর্থাৎ, হে প্রভু ইসরাইল, তুমি গাজাবাসীদের নিয়মিত ভিত্তিত হত্যা করতে থাকো। আর আমি ওদেরকে একটু একটু খাদ্য-বস্ত্র সাহায্য দেব। একদিকে আমি খাওয়াবো, আরেকদিকে তুমি গুলি করবে, ওকে?)। (আচ্ছা, আমি বুঝি না, কিভাবে “খলিফা এরদোয়ানের” আবেগাপ্লুত সমর্থকেরা এটা নিজেদেরকে বিশ্বাস করায় যে, ইসরাইল চুক্তি মানবে এবং গাজায় পৌঁছে যাবে তুর্কি সাহায্য?!)
__________________________________________________________
এরদোয়ানের শাসনামলে তুর্কি-ইজরাইল বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি:
২০১০-২০১১, তুর্কি-ইজরাইল বাণিজ্য ১.৫৯ বিলিয়ন ডলার থেকে ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত। কিন্তু সেটা কেমন বাণিজ্য? তুরস্কে ইজরাইলী আমদানী বৃদ্ধি ৩৯%, পক্ষান্তরে ইজরাইলে তুর্কি রপ্তানী বৃদ্ধি মাত্র ১৬%।
ইজরাইলী পণ্য কেনার দৌড়ে তুরস্কে বিশ্বে ৬ষ্ঠ রাষ্ট্র। ইজরাইল থেকে সমরাস্ত্র কেনে তুরস্ক, আর সেইসাথে ইজরাইলী সৈন্যদের জন্য জামা ও জুতা বানিয়ে দেয়।
____________________________________________________________
এরদোয়ানের শাসনামলে তুর্কি-ইজরাইল সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি:

২০০৭ সালে ইজরাইলী স্যাটেলাইট ও মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম ক্রয়ের চুক্তি করে এরদোয়ান।
উভয় দেশের জল, স্থল ও আকাশপথে "মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স বিনিময়" এর চুক্তি।
তুর্কি যুদ্ধবিমান ও ট্যাংক এর টেকনোলজি আপগ্রেড করে দিয়েছে ইজরাইল (মুসলমানদের বিজয়ের স্বার্থে, তাই না??)
ইজরাইলী বিমান বাহিনী তুরস্কের কনিয়াতে সামরিক ট্রেনিং প্র্যাকটিস করবে।
____________________________________________________________
ইজরাইলের বিপদে পাশে এরদোয়ান:
২০১০ সালে ইজরাইলে দাবানল (জঙ্গলে আগুন) লাগলে সবার আগে এরদোয়ান স্পেশাল বিমান পাঠান আগুন নিভানোর জন্য।
২০১৬ সালে ইস্তাম্বুলে ISIS এর বোমা হামলায় দুইজন ইজরাইলী নাগরিক মারা গেলে চিঠি লিখে গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন এরদোয়ান।

কিন্তু....

https://en.wikipedia.org/wiki/Israel%E2%80%93Turkey_relations

_____________________________________________________________

কিন্তু এরদোয়ানই একমাত্র মুসলিম লিডার, যে বুক ফুলিয়ে ইজরাইলের বিরুদ্ধে অনেক গর্জন ও হুংকার করে থাকে। যেহেতু উনার কথা ও কাজের মধ্যে ১০০% মিল,

অতএব, সবাই এরদোয়ানের পক্ষে আওয়াজ তুলুন, নামাজে দোয়া করুন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

টাকার ইতিহাস, মানি মেকানিজম ও ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মহা জুলুম

ভূমিকা: জালিমের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম  (মহররম: ইনফো সিরিজ এর শেষ পোস্ট ছিল এটা। মূল সিরিজটি পড়ে আসুন ) জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাস হলো মহররম মাস। জালিমের মুখোশ উন্মোচনের মাস মহররম। জুলুমের কূটকৌশল উন্মোচনের মাস মহররম। আধুনিক সেকুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লেজিসলেশান (সংসদ), আর্মড ফোর্সেস (আর্মি) ও জুডিশিয়ারি (আদালত) হলো এক মহা জুলুমের ছদ্মবেশী তিন যন্ত্র, যারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করে জুলুম টিকিয়ে রাখার জন্য। তারচেয়েও বড় জালিম হলো big corporations: বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, যারা তাবৎ দুনিয়াকে দাস বানিয়ে রেখেছে। আর এই দাসত্বের শৃঙ্খলে তারা আমাদেরকে আবদ্ধ করেছে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে: টাকা আমাদের শ্রমকে ধারণ করে, অথচ সেই টাকার মূল্য আপ-ডাউন করায় অন্যরা -- ব্যাংক ব্যবসায়ীরা! টাকা আমাদের শ্রমকে সঞ্চয় করার মাধ্যম, অথচ সেই টাকা আমরা প্রিন্ট করি না, প্রিন্ট করে (ব্যাংকের আড়ালে) কিছু ব্যবসায়ী! সেই টাকার মান কমে যাওয়া (বা বেড়ে যাওয়া) আমরা নির্ধারণ করি না -- নির্ধারণ করে ব্যাঙ্ক (ব্যবসায়ীরা)! ইমাম হুসাইনের (আ.) প্রতিবাদী চেতনাকে ধারণ করব, শোকাহত হ

ধর্মব্যবসা: মুসলমানদের হাতে ইসলাম ধ্বংসের অতীত-বর্তমান (১)

ভূমিকা যদিও পলিটিকাল-রিলিজিয়াস ইস্যুতে নিশ্ছিদ্র আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করে আলোচনা করার অভ্যাস আমার, কিন্তু এখানে বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরে আর্গুমেন্ট করার প্রথমতঃ ইচ্ছা নেই, দ্বিতীয়তঃ সময় ও সুযোগ নেই। আমি যা সত্য বলে জানি, তা সংক্ষেপে তুলে ধরছি। যারা আমার উপর আস্থা রাখেন তাদের জন্য এই লেখাটি সোর্স অব ইনফরমেশান, উন্মুক্ত হৃদয়ের মানুষদের জন্য সত্য অনুসন্ধানের নতুন কিছু টপিক, আর প্রেজুডিসড ধর্মান্ধ রোগগ্রস্ত অন্তরের জন্য রোগ বৃদ্ধির উছিলা। শেষ পর্যন্ত আর্গুমেন্ট ও ডায়লগের দুয়ার উন্মুক্ত রাখার পক্ষপাতী আমি, কিন্তু সেই আর্গুমেন্ট অবশ্যই সত্য উন্মোচনের নিয়তে হওয়া উচিত, নিজের দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাস ও ধ্যান ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করবার উদ্দেশ্যে নয়। মক্কা-মদীনা: মুহাম্মদ (সা.) থেকে আলে-সৌদ (৬২৯-১৯২৪) এদেশের অধিকাংশ মানুষ মক্কা-মদীনার ইতিহাস কেবল এতটুকু জানেন যে, মুহাম্মদ (সা.) মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করেন। কিন্তু প্রায় চৌদ্দশ’ বছর আগে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র থেকে আজকের রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবের ইতিহাস কম মানুষই জানেন। প

পিস টিভি, জাকির নায়েক ও এজিদ প্রসঙ্গ

সম্প্রতি গুলশান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। আমি তখন দিল্লীতে ছিলাম। দেশে ফিরে শুনি পিস টিভি ব্যান করা হয়েছে বাংলাদেশে, এবং তার আগে ইন্ডিয়াতে। আমার বাসায় টিভি নেই, এবং আমি জাকির নায়েকের লেকচার শুনিও না। কিংবা পিস টিভিতে যারা লেকচার দেন, বাংলা কিংবা ইংলিশ -- কোনোটাই শুনি না; প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া আমার ইসলামের বুঝ জাকির নায়েকসহ পিস টিভি ও তার বক্তাদেরকে ইন জেনারেল আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। Peace TV বন্ধ হওয়ায় এদেশে বিকৃত ইসলাম প্রসারের গতি কমলো -- এটাই আমার মনে হয়েছে। একইসাথে আমি এটাও মনে করি যে, যেই অভিযোগ পিস টিভিকে ব্যান করা হয়েছে, তা নিছক অজুহাত। জাকির নায়েক কখনো জঙ্গীবাদকে উস্কে দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। কিংবা পিস টিভির লেকচার শুনে শুনে ISIS জঙ্গীরা সন্ত্রাসী হয়েছে -- এটা নিতান্তই হাস্যকর কথা। ISIS এর ধর্মতাত্ত্বিক বেইজ সম্পর্কে মোটেও ধারণা নেই, এমন লোকের পক্ষেই কেবল ISIS এর জন্য জাকির নায়েককে দোষ দেয়া সম্ভব। একইসাথে আমি এ বিষয়েও সচেতন যে, পিস টিভি বন্ধ করা হয়েছে আমাদের সরকারের রেগুলার “ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ