সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইলেকশান ভাবনা, ২০১৮

১.
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক ভিডিও বক্তব্যে বলেছেন, "আপনি যাকে ভালো মনে করবেন, তাকেই ভোট দিন, তবু ভোটকেন্দ্রে যান, ভোট দিন।" এটা পলিটিকালি ম্যাচিউরড একটি বক্তব্য। তবে আমি সেই দিনটির আশা করি, যেদিন এই ম্যাচিউরিটিকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে তারা বলবেন, "মার্কা নয়, ব্যক্তি বিবেচনা করে ভোট দিন।"

২. বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক স্ট্রাকচারটাই একটা স্বৈরতান্ত্রিক স্ট্রাকচার। এক ব্যক্তি (হাসিনা/ খালেদা) ডিসাইড করেন ৩০০ আসনে কাদের মধ্য থেকে এমপি আসবে, মন্ত্রী কারা হবে, প্রেসিডেন্ট কে হবে, সশস্ত্র তিন বাহিনীর প্রধান কারা হবে, পুলিশের প্রধান কে হবে, বিচার বিভাগের প্রধান কে হবে, এবং … সংসদ নেতা কে হবে (হাসিনা / খালেদা)। লীগ-দল রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে তাকিয়ে দেখেন: একটি ব্যক্তি কার্যতঃ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে/ করে। আর এরকম স্বৈরতান্ত্রিক সিস্টেমে কে দেশ শাসন করবে, তাই নিয়েই ৫ বছর পরপর উত্তেজনা তৈরী হচ্ছে।

একটি 'স্বৈরতান্ত্রিক স্ট্রাকচারে' যদি ভালো লোক বসে, তাহলে ক্ষতি নেই খুব বেশি, কিন্তু যদি কোনো খারাপ লোকের হাতে পড়ে, তাহলে সে এই স্বৈরতান্ত্রিক স্ট্রাকচারের রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে জনগণের নাভিশ্বাস তুলে ফেলবে। বিগত দশ বছরের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনে জনগণের নাভিশ্বাস উঠে গেছে; তাই স্বাভাবিকভাবেই মানুষ মুক্তি চাইছে; অতএব এবারে আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় না-ও আসতে পারে। কিন্তু তারপর অবশ্যই দেশের এই 'দলীয় রাজনীতির স্বৈরতান্ত্রিক স্ট্রাকচারকে' সাংবিধানিকভাবেই বদলাতে হবে। এটা করতে না পারলে ভবিষ্যতে আবারও স্বৈরশাসকের শাসন জেঁকে বসতে পারে।

৩.
বিগত বারো বছরের কথা চিন্তা করলে অনেক কিছুই চোখে ভাসে:
লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ মেরে লাশের উপর নাচ,
৫৭ জন সেনা অফিসারের লাশ,
শাহবাগ নাটক ও নাস্তিকদের উত্থান,
'বিশ্বজিতের লাল শার্ট',
শাপলা চত্বর,
নিরপরাধ মানুষদের বিচারিক হত্যাকাণ্ড,
টিভি-পত্রিকা অফিস সিলগালা, মাহমুদুর রহমান গ্রেফতার,
নিয়মিত গুম-খুন,
ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা,
কিশোর ছেলের চোখ উপড়ে নেয়া,
সাতক্ষীরায় গুলিতে ঝাঁঝরা বাড়িঘর, পুড়িয়ে দেয়া গবাদিপশু,
হাতুড়ি দিয়ে মানুষ পেটানো, স্কুল বাচ্চাদের উপর জুলুম…
ব্যাঙ্কগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট… আরো, আরো অনেক কিছু…

৪.
সবরকম জালিমের হাত থেকে আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন।
বাংলাদেশ, মিয়ানমার, কাশ্মিরে,
ইয়েমেন, সৌদি আরব, বাহরাইনে,
ইরাক, সিরিয়া, ফিলিস্তিনে,
নাইজেরিয়া, লিবিয়া, মিশরে…

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

টাকার ইতিহাস, মানি মেকানিজম ও ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মহা জুলুম

ভূমিকা: জালিমের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম  (মহররম: ইনফো সিরিজ এর শেষ পোস্ট ছিল এটা। মূল সিরিজটি পড়ে আসুন ) জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাস হলো মহররম মাস। জালিমের মুখোশ উন্মোচনের মাস মহররম। জুলুমের কূটকৌশল উন্মোচনের মাস মহররম। আধুনিক সেকুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লেজিসলেশান (সংসদ), আর্মড ফোর্সেস (আর্মি) ও জুডিশিয়ারি (আদালত) হলো এক মহা জুলুমের ছদ্মবেশী তিন যন্ত্র, যারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করে জুলুম টিকিয়ে রাখার জন্য। তারচেয়েও বড় জালিম হলো big corporations: বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, যারা তাবৎ দুনিয়াকে দাস বানিয়ে রেখেছে। আর এই দাসত্বের শৃঙ্খলে তারা আমাদেরকে আবদ্ধ করেছে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে: টাকা আমাদের শ্রমকে ধারণ করে, অথচ সেই টাকার মূল্য আপ-ডাউন করায় অন্যরা -- ব্যাংক ব্যবসায়ীরা! টাকা আমাদের শ্রমকে সঞ্চয় করার মাধ্যম, অথচ সেই টাকা আমরা প্রিন্ট করি না, প্রিন্ট করে (ব্যাংকের আড়ালে) কিছু ব্যবসায়ী! সেই টাকার মান কমে যাওয়া (বা বেড়ে যাওয়া) আমরা নির্ধারণ করি না -- নির্ধারণ করে ব্যাঙ্ক (ব্যবসায়ীরা)! ইমাম হুসাইনের (আ.) প্রতিবাদী চেতনাকে ধারণ করব, শোকাহত হ

ধর্মব্যবসা: মুসলমানদের হাতে ইসলাম ধ্বংসের অতীত-বর্তমান (১)

ভূমিকা যদিও পলিটিকাল-রিলিজিয়াস ইস্যুতে নিশ্ছিদ্র আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করে আলোচনা করার অভ্যাস আমার, কিন্তু এখানে বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরে আর্গুমেন্ট করার প্রথমতঃ ইচ্ছা নেই, দ্বিতীয়তঃ সময় ও সুযোগ নেই। আমি যা সত্য বলে জানি, তা সংক্ষেপে তুলে ধরছি। যারা আমার উপর আস্থা রাখেন তাদের জন্য এই লেখাটি সোর্স অব ইনফরমেশান, উন্মুক্ত হৃদয়ের মানুষদের জন্য সত্য অনুসন্ধানের নতুন কিছু টপিক, আর প্রেজুডিসড ধর্মান্ধ রোগগ্রস্ত অন্তরের জন্য রোগ বৃদ্ধির উছিলা। শেষ পর্যন্ত আর্গুমেন্ট ও ডায়লগের দুয়ার উন্মুক্ত রাখার পক্ষপাতী আমি, কিন্তু সেই আর্গুমেন্ট অবশ্যই সত্য উন্মোচনের নিয়তে হওয়া উচিত, নিজের দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাস ও ধ্যান ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করবার উদ্দেশ্যে নয়। মক্কা-মদীনা: মুহাম্মদ (সা.) থেকে আলে-সৌদ (৬২৯-১৯২৪) এদেশের অধিকাংশ মানুষ মক্কা-মদীনার ইতিহাস কেবল এতটুকু জানেন যে, মুহাম্মদ (সা.) মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করেন। কিন্তু প্রায় চৌদ্দশ’ বছর আগে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র থেকে আজকের রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবের ইতিহাস কম মানুষই জানেন। প

পিস টিভি, জাকির নায়েক ও এজিদ প্রসঙ্গ

সম্প্রতি গুলশান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। আমি তখন দিল্লীতে ছিলাম। দেশে ফিরে শুনি পিস টিভি ব্যান করা হয়েছে বাংলাদেশে, এবং তার আগে ইন্ডিয়াতে। আমার বাসায় টিভি নেই, এবং আমি জাকির নায়েকের লেকচার শুনিও না। কিংবা পিস টিভিতে যারা লেকচার দেন, বাংলা কিংবা ইংলিশ -- কোনোটাই শুনি না; প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া আমার ইসলামের বুঝ জাকির নায়েকসহ পিস টিভি ও তার বক্তাদেরকে ইন জেনারেল আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। Peace TV বন্ধ হওয়ায় এদেশে বিকৃত ইসলাম প্রসারের গতি কমলো -- এটাই আমার মনে হয়েছে। একইসাথে আমি এটাও মনে করি যে, যেই অভিযোগ পিস টিভিকে ব্যান করা হয়েছে, তা নিছক অজুহাত। জাকির নায়েক কখনো জঙ্গীবাদকে উস্কে দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। কিংবা পিস টিভির লেকচার শুনে শুনে ISIS জঙ্গীরা সন্ত্রাসী হয়েছে -- এটা নিতান্তই হাস্যকর কথা। ISIS এর ধর্মতাত্ত্বিক বেইজ সম্পর্কে মোটেও ধারণা নেই, এমন লোকের পক্ষেই কেবল ISIS এর জন্য জাকির নায়েককে দোষ দেয়া সম্ভব। একইসাথে আমি এ বিষয়েও সচেতন যে, পিস টিভি বন্ধ করা হয়েছে আমাদের সরকারের রেগুলার “ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ