সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইসলাম -- কুরবানি, ইমামত

আল্লাহ তায়ালা ইব্রাহিম (আ.) এর বেশ কয়েকটি পরীক্ষা নেন, যার মাঝে "পুত্র ইসমাইল (আ.) কে কুরবানি" করার ঘটনাটিকে প্রতি বছর আমরা স্মরণ করি।
এই কুরবানির ঈদ থেকে কেউ এমন শিক্ষা গ্রহণ করেন যে, "বনের পশুর পাশাপাশি সাথে মনের পশুকেও কুরবানি করতে হবে" -- অথচ যদিও ইব্রাহিম (আ.) এর জন্য এটা "মনের পশু কুরবানি" ছিল না। তবুও, এটাকে কেন্দ্র করে কেউ যদি প্রতি কুরবানির ঈদে আত্মশুদ্ধি ও আত্মত্যাগের শিক্ষা নিতে চায় তো সেটা অবশ্যই ভালো।
আবার কেউ এমন শিক্ষাও গ্রহণ করতে পারেন যে, ইব্রাহিম (আ.) বনের পশুও নয়, মনের পশুও নয়, কুরবানি করেছিলেন মায়া। কেননা, ইব্রাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.) -- দুইজনই ছিলেন নিষ্পাপ। পিতা-পুত্রের নিষ্পাপ বিশুদ্ধ ভালোবাসার এক মায়াময় সম্পর্ক ছিল তাঁদের মাঝে। সেই "প্রিয়বস্তুকে" ইব্রাহিম (আ.) কুরবানি করেছেন, তাহলে আল্লাহর পথে চলতে গিয়ে আমাদের প্রিয়বস্তু, প্রিয়ব্যক্তিদের যদি ছেড়ে যেতেও হয়, তবে যেন আমরা তা করতে পারি -- এটাই হয়ত কুরবানির শিক্ষা!
আবার আরেকটি চিন্তা করার বিষয় এটাও হতে পারে যে, পরপর অনেকগুলি পরীক্ষায় ইব্রাহিম (আ.) উত্তীর্ণ হয়েছিলেন, পুত্রকে কুরবানি করা যার অন্যতম। ইব্রাহিম (আ.) যখন সবগুলি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন, তখন পুরস্কারস্বরূপ তাঁকে আল্লাহপাক মানবজাতির ইমাম মনোনীত করেছিলেন, এবং ওয়াদা করেছিলেন যে, ভবিষ্যতে আল্লাহর পক্ষ থেকে যত ইমাম মনোনীত হবে, তাঁরা সবাই ইব্রাহীম (আ.) এর বংশেরই হবে, তবে শর্ত এই যে, তারা নিষ্পাপ হবেন, অর্থাৎ জালিম হবেন না। তাহলে, একজন existing নবীকে যখন "ইমাম" মনোনীত করা হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে, তখন নবুওয়্যাতের দায়িত্ব থেকে সেই "ইমামতের" দায়িত্ব নিশ্চয়ই ভিন্ন কিছু। অতএব, ধর্মতত্ত্বের ছাত্রদের জন্য এখানে নবুওয়্যাত ও ইমামতের পার্থক্য নিয়ে চিন্তা করার বিষয় রয়েছে।
নবুওয়্যাত যেমন আল্লাহর পক্ষ থেকে, ইমামতও তেমনি আল্লাহর পক্ষ থেকেই। যুগে যুগে আল্লাহপাক নবী ও ইমাম উভয়ই মনোনীত করেছেন মানবজাতির হেদায়েতের জন্য। শেষনবী মুহাম্মদ (সা.) যেমন আমাদের জন্য হেদায়েত, তেমনি মাসুম ইমামগণও (আ.) আমাদের জন্য হেদায়েত।
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ, ওয়া আলে মুহাম্মাদ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

টাকার ইতিহাস, মানি মেকানিজম ও ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মহা জুলুম

ভূমিকা: জালিমের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম  (মহররম: ইনফো সিরিজ এর শেষ পোস্ট ছিল এটা। মূল সিরিজটি পড়ে আসুন ) জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাস হলো মহররম মাস। জালিমের মুখোশ উন্মোচনের মাস মহররম। জুলুমের কূটকৌশল উন্মোচনের মাস মহররম। আধুনিক সেকুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লেজিসলেশান (সংসদ), আর্মড ফোর্সেস (আর্মি) ও জুডিশিয়ারি (আদালত) হলো এক মহা জুলুমের ছদ্মবেশী তিন যন্ত্র, যারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করে জুলুম টিকিয়ে রাখার জন্য। তারচেয়েও বড় জালিম হলো big corporations: বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, যারা তাবৎ দুনিয়াকে দাস বানিয়ে রেখেছে। আর এই দাসত্বের শৃঙ্খলে তারা আমাদেরকে আবদ্ধ করেছে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে: টাকা আমাদের শ্রমকে ধারণ করে, অথচ সেই টাকার মূল্য আপ-ডাউন করায় অন্যরা -- ব্যাংক ব্যবসায়ীরা! টাকা আমাদের শ্রমকে সঞ্চয় করার মাধ্যম, অথচ সেই টাকা আমরা প্রিন্ট করি না, প্রিন্ট করে (ব্যাংকের আড়ালে) কিছু ব্যবসায়ী! সেই টাকার মান কমে যাওয়া (বা বেড়ে যাওয়া) আমরা নির্ধারণ করি না -- নির্ধারণ করে ব্যাঙ্ক (ব্যবসায়ীরা)! ইমাম হুসাইনের (আ.) প্রতিবাদী চেতনাকে ধারণ করব, শোকাহত হ

ধর্মব্যবসা: মুসলমানদের হাতে ইসলাম ধ্বংসের অতীত-বর্তমান (১)

ভূমিকা যদিও পলিটিকাল-রিলিজিয়াস ইস্যুতে নিশ্ছিদ্র আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করে আলোচনা করার অভ্যাস আমার, কিন্তু এখানে বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরে আর্গুমেন্ট করার প্রথমতঃ ইচ্ছা নেই, দ্বিতীয়তঃ সময় ও সুযোগ নেই। আমি যা সত্য বলে জানি, তা সংক্ষেপে তুলে ধরছি। যারা আমার উপর আস্থা রাখেন তাদের জন্য এই লেখাটি সোর্স অব ইনফরমেশান, উন্মুক্ত হৃদয়ের মানুষদের জন্য সত্য অনুসন্ধানের নতুন কিছু টপিক, আর প্রেজুডিসড ধর্মান্ধ রোগগ্রস্ত অন্তরের জন্য রোগ বৃদ্ধির উছিলা। শেষ পর্যন্ত আর্গুমেন্ট ও ডায়লগের দুয়ার উন্মুক্ত রাখার পক্ষপাতী আমি, কিন্তু সেই আর্গুমেন্ট অবশ্যই সত্য উন্মোচনের নিয়তে হওয়া উচিত, নিজের দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাস ও ধ্যান ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করবার উদ্দেশ্যে নয়। মক্কা-মদীনা: মুহাম্মদ (সা.) থেকে আলে-সৌদ (৬২৯-১৯২৪) এদেশের অধিকাংশ মানুষ মক্কা-মদীনার ইতিহাস কেবল এতটুকু জানেন যে, মুহাম্মদ (সা.) মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করেন। কিন্তু প্রায় চৌদ্দশ’ বছর আগে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র থেকে আজকের রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবের ইতিহাস কম মানুষই জানেন। প

পিস টিভি, জাকির নায়েক ও এজিদ প্রসঙ্গ

সম্প্রতি গুলশান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। আমি তখন দিল্লীতে ছিলাম। দেশে ফিরে শুনি পিস টিভি ব্যান করা হয়েছে বাংলাদেশে, এবং তার আগে ইন্ডিয়াতে। আমার বাসায় টিভি নেই, এবং আমি জাকির নায়েকের লেকচার শুনিও না। কিংবা পিস টিভিতে যারা লেকচার দেন, বাংলা কিংবা ইংলিশ -- কোনোটাই শুনি না; প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া আমার ইসলামের বুঝ জাকির নায়েকসহ পিস টিভি ও তার বক্তাদেরকে ইন জেনারেল আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। Peace TV বন্ধ হওয়ায় এদেশে বিকৃত ইসলাম প্রসারের গতি কমলো -- এটাই আমার মনে হয়েছে। একইসাথে আমি এটাও মনে করি যে, যেই অভিযোগ পিস টিভিকে ব্যান করা হয়েছে, তা নিছক অজুহাত। জাকির নায়েক কখনো জঙ্গীবাদকে উস্কে দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। কিংবা পিস টিভির লেকচার শুনে শুনে ISIS জঙ্গীরা সন্ত্রাসী হয়েছে -- এটা নিতান্তই হাস্যকর কথা। ISIS এর ধর্মতাত্ত্বিক বেইজ সম্পর্কে মোটেও ধারণা নেই, এমন লোকের পক্ষেই কেবল ISIS এর জন্য জাকির নায়েককে দোষ দেয়া সম্ভব। একইসাথে আমি এ বিষয়েও সচেতন যে, পিস টিভি বন্ধ করা হয়েছে আমাদের সরকারের রেগুলার “ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ