সাজ্জাদের কাছে শুনলাম, বইমেলায় প্যারাডক্সিকাল সাজিদ নামের একটা বই নাকি খুব পপুলার হয়েছে। সে বইয়ে ইসলামের পক্ষে নাস্তিক্যবাদের যুক্তিখণ্ডন করা হয়েছে। টাইম ট্র্যাভেল ইত্যাদি বিষয়ে বইটার কিছু অংশ পড়লাম অনলাইনে। সহজ-সরল উপস্থাপনা। পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছিলো জাফর ইকবালের বই পড়ছি! কিন্তু লেখার লাইনে লাইনে যেন জাফর ইকবাল টাইপ লোকদেরকে চপেটাঘাত করছে। মজা পেলাম তাই।
:D

নাস্তিকরা ইসলাম, কুরআন-হাদীসকে অবৈজ্ঞানিক প্রমাণ করার চেষ্টা করে। বিপরীতে আমরা লেগে পড়ি ইসলামকে বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ করতে: আধুনিক বিজ্ঞানের নানান বিষয়কে কুরআনের আয়াতে খুঁজে বের করি। তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়ালো? "বিজ্ঞান" হলো আলটিমেট মানদণ্ড, আর বিজ্ঞানীরা হলো সেই মানদণ্ডের God.
আমাদের মুসলমানদের মধ্যে খুব খারাপ ব্যাপার যেটা ঘটেছে তা হলো, আমাদের মনের ভিতর মানদণ্ড হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে "বিজ্ঞান"। তাও আবার কোন বিজ্ঞান? নাস্তিক-ইসলামবিরোধীদের বিজ্ঞান। "আইনস্টাইনের থিয়োরীর সাথে কুরআনের থিয়োরী মিলে গেছে! অতএব আল্লাহ আছে। যাক বাবা, ইসলামের শেকড়টা পোক্ত হলো।" - মনের অজান্তে এমন এক অবস্থা দাঁড়িয়ে গেছে! যেন আইনস্টাইন কখনো ভুল হতে পারে না! যেন "বিজ্ঞানীরা" কখনো ভুল হতে পারে না! যেন বিজ্ঞানীরা নির্ভুল এক God, আর সেই গডের মুখনিঃসৃত বাণীর সাথে আমাদের ১৪০০ বছর আগের কিতাব মিলিয়ে আমরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচি: যাকগে, আমাদের ধর্মটা "বিজ্ঞানসম্মত"।
এই হীনমন্যতা থেকে কবে আমরা উঠে আসব!
:(
এই হীনমন্যতা থেকে কবে আমরা উঠে আসব!

বিজ্ঞান, ইসলাম, বিজ্ঞানসম্মত ইসলাম - এইসব থেকে আমাদের বের হয়ে আসা উচিত। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে নাস্তিকদের (আপাতঃ) যৌক্তিক যুক্তির বিপরীতে ইসলামকে অসহায় যুক্তিহীন দেখলে তার উপর আস্থা কমে যাবেই। কেননা, আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টিগতভাবেই যুক্তিবোধসম্পন্ন প্রাণী হিসেবে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, কোনো অযৌক্তিক বিষয় সে মন থেকে গ্রহণ করতে পারে না। সেক্ষেত্রে নাস্তিকদের সমসাময়িক (অপ)যুক্তির জবাব আলেমদের দিয়ে যেতেই হবে - কিন্তু সেটা কেবল একটি অংশ: ইসলামের / মানবের ইন্টেলেকচুয়াল সাইড।
একইসাথে ইসলাম মানুষের আত্মিক-আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়েও কাজ করে। সেটা ভুলে গেলে চলবে না।
একইসাথে ইসলাম মানুষের আত্মিক-আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়েও কাজ করে। সেটা ভুলে গেলে চলবে না।
ডারউইনের থিয়োরী আসার পর নাস্তিকরা সেটাকে খোদাবিরোধীতার যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করলো। কিন্তু এর আগে কি নাস্তিক ছিলো না? অবশ্যই ছিলো। তারা ভিন্ন কোনো যুক্তি ব্যবহার করতো। তারও আগে? আরও ভিন্ন কোনো যুক্তি! এগুলো আসবে - যাবে, আলেমগণও সেগুলির যৌক্তিক মোকাবিলা করবেন। কিন্তু পাশাপাশি তারা মানুষের আত্মাকে আধ্যাত্মিক শক্তিকে সুদৃঢ় করবেন - এমনটাই তো হওয়ার কথা ছিলো! সমস্যা হলো, আমাদের অধিকাংশের মাঝে ইসলাম কেবল বাহ্যিক কিছু আচার-অনুষ্ঠানের বিষয়। ফলে আমরা ইসলামের ব্যাপারে না ইন্টেলেকচুয়ালি আশ্বস্ত, আর না ইসলামের কাছ থেকে আধ্যাত্মিক সুধা পান করে পরিতৃপ্ত। তাই আমরা মুসলিম ছেলেমেয়ে হয়েও নাস্তিকদের (অপ)যুক্তিকে মুষড়ে পড়তে হয়, আবার নানারকম ব্যক্তিগত কষ্টে দিনের পর দিন নীরবে কাতরাতে হয় - কেননা ইসলামকে আমরা হৃদয় প্রশান্তকারী সুধা হিসেবে পাইনি কোনোদিন!
আজকে যারা নাস্তিক্যবাদের যুক্তিখণ্ডনের বই সোৎসাহে পড়ছেন, একদিন তারাই হয়ত খোদাপ্রেমের দুয়ারে কড়া নাড়বেন - এই ভাবনা থেকে আমি নীরব দর্শক হয়ে রই!
কত শত সহস্র তৃষিত মানুষ সেই দুয়ারের পানে চেয়ে পথ চলেছে দিনের পর দিন, তারপর শ্রান্ত পায়ে শুষ্ক ঠোঁটে মাটির 'পর পড়ে গেছে! হয়ত একদিন কোনো এক সাকী এসে সেই দুয়ারে কড়া নেড়ে তৃষ্ণার পানীয় নিয়ে আসবে, আর মৃতপ্রায় মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে তুলবে! জীবনের সেই শ্রেষ্ঠ সুখকর মুহুর্তে আমি মারা যাবো, এ-ই কেবল ভাবনা।
কত শত সহস্র তৃষিত মানুষ সেই দুয়ারের পানে চেয়ে পথ চলেছে দিনের পর দিন, তারপর শ্রান্ত পায়ে শুষ্ক ঠোঁটে মাটির 'পর পড়ে গেছে! হয়ত একদিন কোনো এক সাকী এসে সেই দুয়ারে কড়া নেড়ে তৃষ্ণার পানীয় নিয়ে আসবে, আর মৃতপ্রায় মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে তুলবে! জীবনের সেই শ্রেষ্ঠ সুখকর মুহুর্তে আমি মারা যাবো, এ-ই কেবল ভাবনা।
নূরে আলম
মার্চ ২, ২০১৭।
মার্চ ২, ২০১৭।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন