সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মহররম: ইনফো সিরিজ

মহররম মাসকে ইসলামের সত্য ইতিহাস জানা ও জ্ঞানচর্চার মাস হিসেবে গ্রহণ করা প্রয়োজন।
কারবালার অনুপ্রেরণা মানুষের হৃদয় থেকে মুছে দিতে হাজার বছর ধরে কম ষড়যন্ত্র করা হয়নি। আফসোসের সাথে বলতে হয়, এসকল ষড়যন্ত্রের সবটাই আমাদের মুসলমানদের in-house ষড়যন্ত্র। আমাদের মুসলমানদের হাত দিয়েই কারবালার শিক্ষাকে ম্লান করার ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টা চলে আসছে।
কিন্তু মনে রাখবেন যে, ৩০ হাজার সৈন্যের বিপরীতে মাত্র ৭২ জন সঙ্গী সাথী নিয়ে ইমাম হুসাইন (আ.) শহীদ হয়ে গেলেও প্রকৃত বিজয়ী তিনিই। তিনি ইসলামকে জিন্দা করে দিয়ে গেছেন।
এজিদীরা বরাবরই সংখ্যায় বেশি ছিল, শক্তিশালী ছিল। আজও আছে। কিন্তু জানবেন যে, আপনি যদি হুসাইন (আ.) ও তাঁর সেই ৭২ জনের সাথী হয়ে যান, তবে আপনার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাও খোদায়ী শক্তি লাভ করবে, ইনশাআল্লাহ।
অতএব, যত অল্পই হোক না কেন, মহররম মাসকে কারবালার শিক্ষা জাগ্রত করতে ব্যবহার করুন। ইসলামের প্রকৃত ইতিহাস মানুষকে জানান। খাঁটি মোহাম্মদী ইসলামের সাথে মানুষকে পরিচয় করিয়ে দিন। মহররম মাসের প্রতিটা দিনকে এই কাজে ব্যয় করুন।
………………………………………………………………………………
মহররম মাস উপলক্ষ্যে আগামী দিনগুলোতে কিছু ছোট ছোট পোস্ট দেব ইনশাআল্লাহ, এবং সেগুলোর লিঙ্ক এই পোস্টে আপডেট করব, #মহররম_পোস্ট হ্যাশট্যাগ দিয়ে।
আশা করি সবাই নিজের বুঝ মোতাবেক প্রচেষ্টা চালাবেন, ইনশাআল্লাহ।

**এজিদের পিতা মুয়াবিয়ার সম্পর্কে কোরআন**


কুরআনে সূরা সাজদার ২৯ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
"বলুন, (মক্কা) বিজয়ের দিনে কাফেরদের ঈমান তাদের কোন কাজে আসবে না এবং তাদেরকে অবকাশ ও দেয়া হবে না।" (সূরা সাজদা, ৩২:২৯)
আর এই ইতিহাস অনেকেরই জানা যে, রাসুল (সা.) যখন মক্কা বিজয় করেন, তখন গোয়েন্দাগিরি করতে এসে ধরা পড়ার পর কালেমা পাঠ করে মুসলমান হয়েছিল মুয়াবিয়া।
আল্লাহপাক কোরানে জানিয়ে দিলেন যে, মুয়াবিয়ার ঈমান কবুল হয়নি, কারণ বিজয়ের দিনে ঈমান আনলে তা কাজে আসবে না।
এই মুয়াবিয়া-ই রাসুলের (সা.) নাতি ইমাম হাসান (আ.) এর সাথে চুক্তিভঙ্গ করেছিল,
ইমাম হাসানকে (আ.) বিষপ্রয়োগে হত্যা করেছিল,
তার লম্পট কুলাঙ্গার ছেলে এজিদকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো, এবং --
সকল মসজিদের মিম্বর থেকে হযরত আলী (আ.) ও তাঁর বংশকে গালি দেওয়া বাধ্যতামূলক করেছিল।
এবার আপনিই সিদ্ধান্ত নিন যে--
রাসুলের (সা.) প্রখ্যাত সাহাবীকে (হযরত আলীকে) যে শুধু গালিই দিত না, বরং রাষ্ট্রীয় আদেশ দিয়ে সকল মসজিদ থেকে গালি দেওয়াতো,
জান্নাতের যুবকদের এক সর্দারকে হত্যা করেছিলো ও অপর সন্তানের হত্যাকারীকে ক্ষমতায় বসিয়ে গিয়েছিল,
এবং রাসুুলের (সা.) বংশকে যে গালি দিত, এবং সকলকে দিয়ে মিম্বর থেকে রাসুলের (সা.) বংশকে গালি দেওয়াতো--
এবং সর্বোপরি, যার ঈমানই কবুল হয়নি বলে আল্লাহপাক কোরআনে ঘোষণা দিয়েছেন (৪২:২৩)--
আপনিই সিদ্ধান্ত নিন, তাকে আপনি জান্নাতি বলবেন, নামের শেষে রাদিয়াল্লাহ আনহু লাগাবেন,
"নাকি রাসুলের (সা.) শত্রু আমারও শত্রু" -- এই ভেবে তাকে অভিশাপ দেবেন?
#মহররম_পোস্ট - ১

**সমকালীন এজিদ সমর্থক আলেম**


জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠা করেন মওলানা মওদুদী (১৯০৩-১৯৭৯)। তিনি এজিদকে লানত দেওয়া বৈধ মনে করতেন। এবং এজিদের পিতা মুয়াবিয়া-ই যে রাজতন্ত্র শুরু করে এবং বহু মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে, এগুলি তিনি তার "খেলাফত ও রাজতন্ত্র" বইয়ে লিখে গেছেন। এজিদের কুকর্মগুলো তিনি এই বইয়ে ফাঁস করেছেন, এবং প্রচুর প্রসিদ্ধ ইতিহাস গ্রন্থ ও "সহীহ হাদীসের" রেফারেন্স দিয়েছেন (স্ক্রিনশটগুলো দেখুন)।
কিন্তু আফসোস!
উনারই প্রতিষ্ঠা করা দল জামায়াতে ইসলামীর সর্বোচ্চ পর্যায়ের একজন সদস্য,
"মওলানা মওদুদী রিসার্চ একাডেমীর" মহাপরিচালক,
যিনি কিনা ৫০টির অধিক ইসলামী বই লিখেছেন,
এবং কুরআনের বাংলা অনুবাদও করেছেন --
তিনি আলে সৌদের টাকা খেয়ে এজিদের পক্ষে সাফাই গাইছেন।
গত ৩০ জুলাই, ২০১৫ তারিখে উনার সেই নির্লজ্জ পোস্টের পুরোটা যদি পড়তে চান (উনি পোস্টটিকে public থেকে friends only করে দিয়েছেন), তাহলে এই লিঙ্কে গিয়ে স্ক্রিনশটটি দেখুন: https://goo.gl/5t3c1T (১৩৯ টা কমেন্টের অধিকাংশই উনাকে ছিঃছিঃ করেছে, এবং আরো প্রচুর তথ্য-প্রমাণ সেখানে দিয়েছে মানুষজন।)
উনি লিখেছেন, এজিদ ছিলেন মুসলিম জাহানের মহান খলিফা ও ইমাম। (?!!!)
এবং একজন বিখ্যাত সাহাবীর পুত্র। (?!!!)
...............................................................................................
আমি এর থেকে বেশি কিছু বলব না। কেবল বলি যে, মওলানা মওদুদীর নাম ব্যবহার করে এইসব দরবারী আলেমরা ধর্মব্যবসা করে যাচ্ছে, এবং সেটা উনার চিন্তাধারার বিপরীতে গিয়েই। যখন উনাকে কমেন্টে মওলানা মওদুদীর বইয়ের স্ক্রিনশট দিলাম, তখন উনি দেখেও দেখেন না!
স্ক্রিনশট - ১: এজিদকে মহান খলিফা ও ইমাম দাবী করে আবদুস শহীদ নাসিমের রেফারেন্সবিহীন সেই পোস্ট।
স্ক্রিনশট ২-৫: মওলানা মওদুদীর "খিলাফত ও রাজতন্ত্র" বইয়ের স্ক্রিনশট, যেখানে তিনি এজিদের তিনটি জঘন্য কুকর্ম ফাঁস করেছেন, এবং এজিদকে রাদিয়াল্লাহ আনহু বলার বিরোধিতা করেছেন, এবং বলেছেন যে, এজিদকে লানত দেওয়া বৈধ। আরো বলেছেন যে, বড় বড় সুন্নী আলেম এজিদকে লানত দিয়েছেন ও দিতেন। সুন্নী চার মাযহাবের ইমামের মাঝে একজন ইমাম এজিদকে লানত দিতেন।
স্ক্রিনশট - ৬: এজিদের জন্য জাকির নায়েকের দোয়া (এই নিয়ে পরে বিস্তারিত পোস্ট দিব, ইনশাআল্লাহ পোস্ট আর্কাইভ লিঙ্কে থাকবে)।
...............................................................................................
(আবদুস শহীদ নাসিমের ভাষায় "বিখ্যাত সাহাবী" মুয়াবিয়ার যে আসলে ঈমানই ছিল না, কুরআনে আল্লাহ সেটা নিয়ে আয়াতও নাযিল করেছেন, এ বিষয়ে এর আগে পোস্ট দিয়েছিলাম। নিচে পোস্ট আর্কাইভ লিঙ্কে গেলে সেই পোস্ট পাবেন।)
#মহররম_পোস্ট - ২

 

**গণীমতের মাল নিয়ে নাস্তিকদের প্রশ্নের উপযুক্ত জবাব, যা আমাদের ভালো লাগে না।**


প্রশ্নটা হলো, যুদ্ধ করেই হোক, বা যুদ্ধ ছাড়াই হোক, যেভাবেই হোক -- মুসলমান যদি গণীমত পায়, অর্থাৎ ধনসম্পদের অধিকারী হয় -- তাহলে সেটার ২০% হলো আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও তাঁর নিকটাত্মীয়, এতিম, মিসকিন ও মুসাফিরদের জন্য। (সূরা আনফাল: ৪১ ও সূরা হাশর, ৬-৭)
এতিম, মিসকিন ও মুসাফিরদের জন্য - এটা খুবই ভালো কথা।
আল্লাহর জন্য মানে হলো ইসলামের পথে ব্যয় করা। এটাও ভালো কথা।
কিন্তু রাসুল (সা.) ও তাঁর নিকটাত্মীয়ের জন্য ফিক্সড অংশ থাকবে কেন?
এখন কোনো নাস্তিক যদি বলে: "মুহাম্মদ এমন একটা ধর্ম বানিয়েছে যে, সে ও তার বংশধররা আজীবন বসে বসে খেতে পারবে : যুদ্ধ করবে অন্যরা, ধনী হবে অন্যরা, কিন্তু তার ২০% তারা হস্তগত করবে বিনা পরিশ্রমেই -- বাহ! কত্ত সুন্দর সিস্টমে।"
এটার কী জবাব দেব আমরা? আসলেইতো, চিন্তা করে দেখুন। কষ্ট করে যুদ্ধ করলো সৈন্যরা, আর যুদ্ধে জিতে যত ধনসম্পদ পেলো, তার ২০% যাবে রাসুল (সা.) ও তার নিকটাত্মীয়ের কাছে! এমনকি আপনি যদি মাটি খুঁড়ে তেল, গ্যাস, স্বর্ণ, হীরা ইত্যাদি পান, কিংবা সমুদ্র থেকে মণিমুক্তা সংগ্রহ করেন -- সেটারও ২০% চলে যাবে রাসুল (সা.) ও তাঁর নিকটাত্মীয়ের কাছে! এমনকি রাসুলের (সা.) মৃত্যুর পরেও তার বংশকে আজীবন দিয়ে যেতে হবে! এটাই শিয়া-সুন্নী উভয় ধারার ফিকাহের মত!
শুধুমাত্র রাসুলের (সা.) বংশ বলেই তারা আমাদের ধনসম্পদের পার্সেন্টেজ নিতে থাকবে বিনা পরিশ্রমে -- এটা কেমন বিচার? পরিশ্রম করবো আমরা, আর নিয়ে যাবে তারা? এটা কি জমিদারী খাজনা সিস্টেম? রাজতন্ত্র?
যেখানে আবার রাসুল (সা.)-ই বলে গেছেন যে, আরব-অনারব কোনো পার্থক্য নেই, তাক্বওয়া-ই একমাত্র মানদণ্ড?
ইত্যাদি আরো কত প্রশ্নই না করা যায়!
হ্যাঁ, এটার একমাত্র, এবং একমাত্র উত্তর এটাই হয় যে --
"শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.) পূর্ণাঙ্গ ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেছেন, এবং তিনি ছিলেন সেই রাষ্ট্রের নেতা। আর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজন ট্যাক্স। যাকাত যেমন একটি ইসলামিক ট্যাক্স, তেমনি খুমস (২০%)-ও হলো একটি ইসলামিক ট্যাক্স।"
আর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য ট্যাক্স সিস্টেমকে অস্বীকার করবে, এমন কোন নাস্তিক পৃথিবীতে নাই। অতএব, নাস্তিকদের মুখ বন্ধ।
কিন্তু এরপর তারা আরেকটি প্রশ্ন করতে পারে। সেটা হলো: "তাহলে কেন এভাবে বলা হলো না যে, পাঁচ ভাগের এক ভাগ হলো ইসলামী রাষ্ট্রের ট্যাক্স? কেন বলা হলো "রাসুল ও তার নিকটাত্মীয়ের" জন্য????"
আর এই প্রশ্নের উত্তরটাতে নাস্তিকদের মুখ তো বন্ধ হবেই, কিন্তু আমাদের অনেকের কাছে আবার সেটা তিতা লাগবে, পছন্দ হবে না।
হ্যাঁ, এই প্রশ্নেরও একমাত্র এবং একমাত্র উত্তর এটাই যে:
ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান হবেন মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পরে তাঁর বংশধরগণ। আর এই ট্যাক্স কিভাবে কোথায় ব্যয় করবেন, সেটা আল্লাহপাক তাদের বিবেচনায় ছেড়ে দিয়েছেন। একারণেই আল্লাহপাক এই ২০% কে ব্যক্তির (অর্থাৎ রাসুল (সা.) ও তাঁর নিকটাত্মীয়ের) হাতে দিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানের (অর্থাৎ ইসলামী রাষ্ট্রের) নামে নয়।
কুরআনের ৮:৪১ ও ৫৯:৬-৭ আয়াতের উপর আরো অনেক আলোচনা করা যায়, কিন্তু আর বড় করলাম না। কেবল এতটুকুই বলতে চাই যে, কুরআনের যেখানেই পাতা উল্টাবেন, এমনসব আয়াত চোখে পড়বে -- যদি ইখলাসের দৃষ্টিতে কুরআনের পাতা উল্টান -- এমনসব আয়াত চোখে পড়বে, যেখানে জানবেন যে, মুসলিম জাতির নেতৃত্ব রাসুলের (সা.) পবিত্র বংশকেই দেয়া হয়েছে। আফসোস! রাসুল (সা.) এর মৃত্যুর পরেই মুসলিম উম্মাহ সেসব ভুলে গেল, ভুল ব্যক্তিকে খলিফা মেনে নিলো, এবং তারপর থেকে কেবল নবী-বংশকে জুলুমই করে গেল।
কতই না সৌভাগ্যবান ছিলাম আমরা মুসলিম জাতি -- যাদের জন্য স্বয়ং আল্লাহ ইমাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন! অথচ আফসোস, আমাদের সেই নেতাদেরকে, সেই নবী-বংশকে, সেই ইমামগণকে আমরা মুসলমানরাই নিজহাতে হত্যা করেছি, ষড়যন্ত্র করে নেতৃত্ব থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছি। আর তারপর সেইসব ঘাতক আর ষড়যন্ত্রকারীদেরকে বলছি - রাদিয়াল্লাহু আনহু?
আফসোস!
..................................................................................................
সূরা আনফাল এর ৪১ নাম্বার আয়াত:
"আর জেনে রাখো যে, যাকিছু তোমরা গণিমত হিসেবে পাবে, তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ হলো - আল্লাহর জন্য, রাসুলের জন্য, তাঁর নিকটাত্মীয়দের জন্য, এতীম, মিসকিন ও মুসাফিরদের জন্য...।"
সূরা হাশর এর ৬-৭ আয়াত:
"আল্লাহ তাদের থেকে তাঁর রাসুলকে যে ধন-সম্পদ দিয়েছেন, সেজন্যে তোমরা ঘোড়ায় কিংবা উটে চড়ে যুদ্ধ করোনি, কিন্তু আল্লাহ যার ওপর ইচ্ছা তাঁর রাসুলগণকে প্রাধান্য দান করেন। আল্লাহ সবকিছুর উপর শক্তিমান। আল্লাহ জনপদবাসীদের থেকে তাঁর রাসুলকে যা দিয়েছেন, তা আল্লাহর জন্য, রাসুলের জন্য, তাঁর নিকটাত্মীয়দের জন্য, এতীম, মিসকিন ও মুসাফিরদের জন্য...।"
..................................................................................................
#মহররম_পোস্ট - ৩


**জাকির নায়েক: এজিদের সমর্থক**


আপনারা অনেকেই জানেন যে, পিস টিভির ধর্মীয় বক্তা জাকির নায়েক এজিদের নামের উপর রাদিয়াল্লাহ আনহু পড়েছে। এর আগে জামায়াতে ইসলামীর এজিদ সমর্থক আলেম আবদুস শহীদ নাসিমের পোস্টের স্ক্রিনশট দিয়েছিলাম, নিচে পোস্ট আর্কাইভ লিঙ্কে গেলে পাবেন। সেখানে তিনি এজিদকে "মুসলিম জাহানের মহান খলিফা, মুসলমানদের ইমাম ও খ্যাতনামা তাবেয়ী" বলে প্রশংসা করেছেন। আর জাকির নায়েক তো এজিদের জন্য দোয়া-ই করে।
এই দোয়ার পুরস্কারস্বরূপ এযুগের এজিদ সৌদি বাদশা সালমান তাকে ২০১৫ সালে পুরস্কৃত করে "এজিদী ইসলামের সর্বোচ্চ খাদেম" হিসেবে। শুধু তা-ই নয়, পরবর্তীতে তাকে সৌদি আরবের নাগরিকত্ব-ও দেয়। আর সৌদি নাগরিক শেইখ নিমরকে ২০১৬ সালে হত্যা করে এই অপরাধে যে, তিনি এজিদী রাজতন্ত্রের বিরোধী ছিলেন, এবং ইমাম হুসাইনের (আ.) প্রেমিক ছিলেন, হুসাইনী ইসলামের খাদেম ছিলেন।
এই মহররম মাসে জাকির নায়েক, আবদুস শহীদ নাসিম, কাবার ইমাম শেইখ সুদাইস, সৌদি বাদশাহ সালমানের মত যত এজিদ সমর্থক আছে -- তাদের মুখোশ উন্মোচন করে দিন। এটাও ইমাম হুসাইনেরই (আ.) খেদমত, ইনশাআল্লাহ।
কেননা, কারবালার ময়দানে ইমাম হুসাইন (আ.) কোনো কাফিরের সাথে যুদ্ধ করেননি, কাফিরদের হাত থেকে ইসলামকে রক্ষা করেননি। বরং মুসলিম নামধারী মুখোশধারী মুনাফিকদের সাথে লড়াই করে তিনি ইসলামকে বাঁচিয়ে দিয়ে গেছেন। খাঁটি মুহাম্মদী ইসলামের পতাকা উড্ডীন করতে গিয়ে নিজের সর্বস্ব নিঃশেষ করে শহীদ হয়েছেন। সেই কারবালার ময়দানে আজকে আমরা থাকলে আমাদের যেমন ঈমানী দায়িত্ব হতো ইমাম হুসাইনের (আ.) পক্ষ অবলম্বন করা, এবং এজিদীদের কঠোর বিরোধিতা করা -- আজকেও তেমনি আমাদের দায়িত্ব এজিদী আলেমদের মুখোশ উন্মোচন করে দেয়া, তাদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা, এবং সকল এজিদী শাসকের বিপরীতে আমাদের কণ্ঠস্বরকে উঁচু রাখা। মনে রাখবেন, এজিদীরা অস্ত্রকে ভয় পায় না, তারা ভয় পায় "হায় হোসেন" আওয়াজকে।
"প্রতিটা জমিনই কারবালা, প্রতিটা দিনই আশুরা।"
..................................................................................................
(রেফারেন্সসমূহ)
এজিদের জন্য জাকির নায়েকের দোয়া: https://www.youtube.com/watch?v=1mMQbR_48IU
অভিযোগের বিরুদ্ধে জাকির নায়েকের জবাব: https://www.youtube.com/watch?v=c0VPkULVCC8
জাকির নায়েকের মিথ্যাচারের প্রতিবাদে শেইখ তাহির উল কাদরির জবাব: https://www.youtube.com/watch?v=rqE33JbZB8k
..................................................................................................
"কুরআনে কম সে কম ২৫টা আয়াতে উছিলা হারাম করা হয়েছে" - জাকির নায়েক।
অথচ আল্লাহপাক কুরআনে আদেশ করেছেন উছিলা সন্ধান করতে:
"হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর, তাঁর দিকে উছিলা সন্ধান করো..।" (সূরা মায়েদা, ৫:৩৫)
জাকির নায়েকের বক্তব্য: https://www.youtube.com/watch?v=IhMmlHPJXwE
আলেমদের সাথে আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি ও চার বছর পরেও সেই তথাকথির ২৫টি আয়াত দিতে না পারা: https://www.youtube.com/watch?v=z4v7NEA5DTs
শেইখ তাহির উল ক্বাদরির বক্তব্য: https://www.youtube.com/watch?v=FmajNw9dpMk
এছাড়াও, কুরআনে সূরা নিসার ৬৪ নং আয়াতেও আল্লাহ তায়ালা উপদেশ দিচ্ছেন যে, মুমিনগণ যেন তওবা করার ক্ষেত্রে মুহাম্মদ (সা.)-কে উছিলা করেন।
..................................................................................................
#মহররম_পোস্ট - ৪

**কুরআনে নবীর শোক পালনের দৃষ্টান্ত**

 

প্রতিবছর মহররম মাস আসলেই মুসলমানদের একাংশকে ইমাম হুসাইনের (আ.) জন্য শোক পালন করতে দেখা যায়। অপরদিকে একদল লোক ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে এই শোক পালনকে হারাম, বিদআত ইত্যাদি বলে তাদেরকে বাতিল, কাফির, ইহুদি ইত্যাদি আখ্যা দিতে। আমি হাদীস আনছি না, কারণ সব হাদীস সবাই মানে না, কিন্তু অন্ততঃ কুরআনকে তো সবাই মানে। আর এই কুরআনে দেখুন শোক প্রকাশ নিয়ে কী আছে।
সূরা ইউসুফ-এ বর্ণিত আছে যে, পুত্র ইউসুফের শোকে কান্না করতে করতে পিতা ইয়াকুব (আ.) অন্ধ হয়ে যান (১২:৮৪)। ইয়াকুব (আ.) কিভাবে শোক পালন করতেন, তার বর্ণনা কুরআনে সরাসরি না থাকলেও সেটা বোঝা যায় ইউসুফ (আ.) এর সেই সৎভাইদের মন্তব্যে: "আপনিতো মরণাপন্ন হবার আগ পর্যন্ত ইউসুফের শোক থামাবেন না মনে হচ্ছে!" (১২:৮৫)
তারমানে ইয়াকুব (আ.) এতটাই শোকাহত ছিলেন যে, তাতে তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছিলেন, যা দেখে ঐ ছেলেরা মনে করেছিলো যে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইউসুফের শোক ভুলতে পারবেন না ইয়াকুব (আ.)!
শোক প্রকাশের ভাষা:
শোকাহত ইয়াকুব (আ.) পুত্র ইউসুফের জন্য শোক করেছেন এইভাবে: "হায় ইউসুফ!" (১২:৮৪)
এবং এসমস্ত কাজের একটিকেও আল্লাহ তায়ালা মন্দ বলেননি, তিরস্কার করেননি, অগ্রহণযোগ্য বলেননি।
ইয়াকুব (আ.) যদি "হায় ইউসুফ" বলতে পারেন, তবে আমরা কেন "হায় হোসেন" বলতে পারবো না!
ইয়াকুব (আ.) যদি বছরের পর বছর পুত্র ইউসুফের জন্য শোক করেন, তবে আমরা কেন যুগযুগ ধরে হুসাইনের জন্য মাতম করতে পারবো না?
হ্যাঁ, এটা খুবই স্বাভাবিক যে, ইউসুফ (আ.) এর হিংসুক সৎভাইদের কাছে এই শোক অর্থহীন। তাইতো তারা বলেছিলো যে, আপনিতো ইউসুফকে মোটেও ভুলতে পারছেন না, ওর জন্য শোক করতে করতে নিজেকে শেষ করবেন নাকি?
আজকে যারা ইমাম হুসাইনের (আ.) জন্য শোক পালন করার বিরোধিতা করছে, তাদের কথার স্টাইলের সাথে মিল পান?
যদি না পান, তাহলে সেই সৎভাইদের আরো দুয়েকটা বাক্য তুলে ধরি।
তারা গিয়ে ইয়াকুব (আ.)-কে বলেছিলো, ইউসুফকে আমাদের সাথে যেতে দিন, ও খেলা করবে, আমরাতো ওর শুভাকাঙ্খী!
"আমরাও তো হযরত হুসাইন (রা.)-কে ভালোবাসি।" কিংবা-- "আমরাও আহলে বাইতকে কম ভালোবাসি না" -- মিল পান? মিল পান, এজিদপন্থী মুসলমানদের সাথে?
তবুও যদি মিল না পান, তাহলে সেই সৎভাইদের আরেকটু কথা শুনুন।
"আমাদের তো কোনো দোষ নাই, সব দোষ ঐ বাঘের, ইউসুফ বেচারা বাঘের কবলে পড়েছিলো।" - বলেছিলো সৎভাইয়েরা।
"এজিদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর তো কোনো দোষ নাই, সব দোষ ইবনে যিয়াদের...।" মিল পান? মুসলিম উম্মার প্রতি সৎভাইয়ের মত আচরণ করছে কারা, চিনতে পারছেন?
এবং সেই বাঘের কাহিনী ইয়াকুব (আ.)-কে বিশ্বাস করানোর জন্য তারা ইউসুফের জামায় কৃত্রিম রক্ত লাগিয়ে এনেছিলো।
ঠিক যেভাবে এজিদী আলেমরা "উমাইয়্যা হাদীস কারখানা" থেকে বিভিন্ন ইতিহাস তৈরী করে এনেছে, বিভিন্ন হাদীস তৈরী করে এনেছে যে, "শোক করা হারাম", ইত্যাদি। তারপর সেগুলির নাম দিয়েছে সহীহ কিতাব!
মিল পান?
......................................................................................................
এভাবে করে সূরা ইউসুফের প্রতিটা আয়াতে যেন ইউসুফ (আ.) এর সৎভাই নয়, যেন মুসলিম উম্মাহর সৎভাইদের মুখোশই উন্মোচন করা হয়েছে। শুধু একটু এজিদপন্থীদের কথার স্টাইলের সাথে মিলিয়ে দেখুন। তাদের কর্মের সাথে মিলিয়ে দেখুন।
......................................................................................................
আল্লাহ তায়ালা কুরআনের বিনিময় হিসেবে যাদেরকে ভালোবাসা ফরজ করে দিয়েছেন, ইমাম হুসাইন (আ.) তাদের একজন (সূরা শুরা, ৪২:২৩)।
যারা তাঁকে ভালো না বাসবে, তারা কুরআনের মূল্য পরিশোধ করেনি। অতএব, তাদের কুরআনভিত্তিক সব আমল - নামাজ, রোজা, ইত্যাদি কবুল হবে কিভাবে?
"আমরাও হুসাইন (রা.)-কে কম ভালোবাসি না" -- তাদের মুখের এই কথা যে শুধুই লোক দেখানো, সেটা বোঝা যায় যখন তারা এজিদকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করে।
ঠিক যেভাবে ঐ সৎভাইরা নিজেদেরকে নির্দোষ দাবী করছিলো, আবার বলেছিলো যে তারা ইউসুফের শুভাকাঙ্খী!
হায় ইউসুফ!
হায় হোসেন!
..................................................................................................
#মহররম_পোস্ট - ৫

**শহীদ আয়াতুল্লাহ নিমর: ইয়াজিদী আলে সৌদের বিরুদ্ধে এক বজ্রকণ্ঠ**


গত ২রা জানুয়ারি, ২০১৬ আয়াতুল্লাহ নিমর আল-নিমরকে শহীদ করে জালিম আল-সৌদ সরকার। কারণ আর কিছুই না -- তিনি এই জুলুমবাজ রাজতন্ত্রের বিরোধী ছিলেন। তিনি আল্লাহ, তাঁর রাসুল (সা.) ও তাঁর আহলে বাইতের আনুগত্য করতেন। জালিম শাসককে মেনে নেননি তিনি। তিনি হুসাইনের (আ.) প্রেমিক ছিলেন। আর তাইতো তাকে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে হত্যা করলো সৌদি বাদশা সালমান।
আর তার মাত্র ১ বছর আগেই জাকির নায়েককে "ইসলামের খেদমতের পুরস্কার" প্রদান করলো। কোন জাকির নায়েক? যেই জাকির নায়েক কারবালার লড়াইকে ক্ষমতার লড়াই বলে। আর ইমাম হুসাইন (আ.) এর হত্যাকারী এজিদকে বলে - রাদিয়াল্লাহ আনহু!
একজন নিমরের বজ্রকণ্ঠে তাদের বাদশাহীর ভিত নড়ে গিয়েছিলো! ভিডিওতে উনার সেসব বক্তব্যের কিছু অংশ আছে। বাঁচলে এভাবেই বাঁচার উচিত - মর্যাদা নিয়ে বাঁচা। সিংহের মত বাঁচা। এজিদকে রাদিয়াল্লাহ আনহু বলে ছুঁচোর ন্যায় দরবারী আলেম হয়ে নয়!
ভিডিওটিতে বাংলা সাবটাইটেল আছে। আর যারা ভিডিও দেখতে পারছেন না, তাদের জন্য শহীদ আয়াতুল্লাহ নিমরের কিছু বক্তব্য তুলে দিলাম:
"সহিংসতা দিয়ে নয়, বরং আমাদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞার বলে, আমাদের ঈমানের বলে, আমাদের দৃঢ়তার বলে
তোমাদের শক্তি পরাজিত হবে।"
"তোমাদের জুলুম প্রতিহত করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা আমাদের আছে, এবং আমরা আত্মসমর্পন করবো না।
সর্বোচ্চ তোমরা আমাদের হত্যা করতে পারো, আর আমরা আল্লাহর রাহে শাহাদাতকে স্বাগতম জানাই।
মারা গেলে মানুষের জীবন শেষ হয় না,
বরং আসল জীবন শুরু হয় মৃত্যুর পর।
হয় আমরা এই মাটিতে স্বাধীন মানুষ হিসেবে বাঁচবো,
নতুবা মৃত্যুকে বরণ করবো আর মুত্তাকী হিসেবে এই মাটির কবরে যাব।
এছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই।"
"আমরা আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও তার আহলে বাইতের আনুগত্য করি - ব্যস।
আমরা কোনো শাসকের কাছে মাথা নত করি না। কক্ষনো না।
কোনো শাসক - সে যে-ই হোক না কেন, আমাদের উপর তাদের কোনো কর্তৃত্ব নাই।
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কারো নেতৃত্বের বৈধতা দেয় না।
নেতৃত্বের বৈধতা আসে আল্লাহর থেকে।
(বৈধ) নেতৃত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে, আর তিনি কোনো জালিমকে নেতৃত্ব দেন না।"
"আমরা অন্য দেশ বা শাসকের আনুগত্য করি না, আমরা এই দেশেরও আনুগত্য করি না।
এই দেশ? যে রাষ্ট্র কিনা আমার উপর জুলুম করে?
যে রাষ্ট্র আমার সম্পদ হরণ করে, আমার রক্ত ঝরায়, এবং আমার মর্যাদা নষ্ট করে?
দেশ মানে কী? এই রাষ্ট্র? শাসক গোষ্ঠী? এই মাটি?
আমি জানি না দেশ মানে কী। আনুগত্য শুধুমাত্র আল্লাহর - ব্যস!
আমরা আগেও ঘোষণা করেছি, আবারো বলছি যে, আমাদের আনুগত্য শুধু আল্লাহর প্রতি, আলে সৌদের প্রতি না।
আমাদের আনুগত্য আল্লাহর প্রতি, এই দেশের প্রতি না।
আমাদের আনুগত্য আল্লাহর প্রতি, কোনো বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতি না।
আমাদের আনুগত্য আল্লাহর প্রতি, এবং তিনি যাদেরকে কর্তৃত্ব দেন, তাদের প্রতি। ব্যস।"
..................................................................................................
#মহররম_পোস্ট - ৬


 **আশুরা : ভালোবাসা ও যুক্তিতর্ক**


আজ ১০ই মহররম (আশুরা)। কারবালার প্রান্তরে দুশ্চরিত্র জালিম শাসক ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার সেনাবাহিনীর হাতে ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর ৭২ জন সাথীর শাহাদাত দিবস। কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনা সবারই কমবেশি জানা আছে, এবং এ বিষয়ে ইন্টারনেটে প্রচুর লেখা রয়েছে, যা সার্চ করলেই পাওয়া যাবে। তাই সেই ঘটনার উপর আলোকপাত করছি না। কিন্তু ইয়াজিদপন্থীদের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে যারা জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে কারবালার মহিমাকে খাটো করার জন্য নানারূপ কথা বলছেন, বিশেষত এই দিনে শোক পালনের বিরোধিতা করছেন, ইন্টারনেটে তাদের নানামুখী অপপ্রচার ও হৃদয়হীন বাক্যের সয়লাব দেখে কিছু কথা লেখা নিতান্তই প্রয়োজন হয়ে পড়লো।

সহজ দৃষ্টিকোণ : কারবালার ঘটনা স্মরণ করে এইদিনে একদল মানুষ শোক প্রকাশ করছে। আরেকদল শোক প্রকাশকারীদের শোক পালনের বিরোধিতা করছে এবং এইদিনে ইসলামের ইতিহাসে আরো কী কী গুরুত্বপূর্ণ ও আনন্দের ঘটনা ঘটেছিলো, তা প্রচার করছে।

একটু ভিন্ন কথা থেকে আসি। নাস্তিকদের দৃষ্টিতে মুসলমানদের অনেক কর্মকাণ্ডই অর্থহীন ও অযৌক্তিক বলে মনে হয়। যেমন : "কবে কোথায় ১৪০০ বছর আগে মুহাম্মদ নামে এক ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটেছিলো, আর এখন তার জন্যে মুসলমানরা নিজের জান দিয়ে দিচ্ছে, দুনিয়ার আনন্দ ত্যাগ করে শুধু শুধু কষ্ট করছে।" কিংবা "কোনোদিন চোখে দেখে নাই, কিন্তু লোকের মুখে শুনে শুনে 'আল্লাহর' আদেশ মানতে গিয়ে জীবনের কত স্বাদ-আহ্লাদ থেকে শুধু শুধু নিজেকে বঞ্চিত করছে। এমনকি 'জিহাদ' করতে গিয়ে জান পর্যন্ত দিয়ে দিচ্ছে !"
সত্যিই, একজন নাস্তিক, যে কিনা আল্লাহকে চেনে না, যে কিনা নবীজি মুহাম্মদ (সা.)কে ভালোবাসে না, সে কী করে বুঝবে একজন মুসলিমের হৃদয়ে কতখানি ব্যথা জাগে, যখন মুহাম্মদের (সা.) নামে কেউ কটুক্তি করে ! যে আল্লাহকে চেনে না, সে কী করে অনুভব করবে খোদার আদেশে জীবন বিলিয়ে দেবার ব্যাকুলতা !

এবার ইয়াকুব (আ.) এর কথা বলি। তাঁর পুত্র ইউসুফ (আ.)কে সৎভাইয়েরা কুপের মধ্যে ফেলে দিয়ে এসে পিতাকে বললো যে ইউসুফকে বন্য জন্তু খেয়ে ফেলেছে। সেদিন থেকে ইয়াকুব (আ.) প্রতিদিন তাঁর পুত্রের জন্য কান্না করতে করতে, দুঃখে ও শোকে অন্ধপ্রায় হয়ে যান। সৎভাইদের কাছে নিশ্চয়ই সেটা খুব অযৌক্তিক ছিলো : এভাবে করে হারানো সন্তানের জন্য শোক করতে করতে অন্ধ হয়ে যাওয়া। কারণ ইউসুফ (আ.)কে তাঁর পিতা নবী ইয়াকুব (আ.) যেভাবে ভালোবাসতেন, ঈর্ষাপরায়ণ সৎভাইয়েরা সেভাবে ভালোবাসত না। পিতা তাঁর সন্তানকে যেভাবে চিনতেন, যেই দৃষ্টিতে দেখতেন, সৎভাইয়েরা সেভাবে চিনত না, সেই দৃষ্টিতে দেখত না। সুতরাং, ইউসুফ (আ.) এর জন্য ঈর্ষাপরায়ণ গুনাহগার সৎভাইদের হৃদয়ে কষ্টের অনুভূতি জেগে ওঠেনি। নবী ইয়াকুব (আ.) এর এই কান্নার মর্ম কিভাবে বুঝবে সেই সৎভাইয়েরা ?

পিতা ইমাম হুসাইন (আ.) এর জন্য তাঁর পুত্র ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.) এত বেশি কান্না করতেন যে, তার সাথে কেবল ইয়াকুব (আ.) এর অশ্রুপাতেরই তুলনা চলে। তিনি এরপর মৃত্যু পর্যন্ত দিনের বেলা রোজা ও রাতের বেলা ইবাদত বন্দেগীতে পার করেছিলেন। কারবালার প্রান্তরে সংঘটিত নিষ্ঠুরতার স্মরণে তিনি এত বেশি কাঁদতেন যে সেই অশ্রুতে তাঁর দাড়ি ভিজে যেত, খাবারে মিশে যেত সেই অশ্রু।
কতটা ব্যথা, আর হাহাকার থেকে এই কান্না, সেটা কি বুঝবে ইয়াজিদি ইসলামের অনুসারীরা ? বরং একথা শুনে হয়তো তাদের পাষাণ হৃদয় উল্টো প্রশ্ন করবে : " তাহলে কি ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.) নিষিদ্ধ দিনগুলোতেও রোজা রাখতেন ?" কিংবা "সারারাত জেগে ইবাদত বন্দেগী করলে আর সারাদিন রোজা থাকলে ঘুমাতো কখন ?" ইত্যাদি...।

..........................................................................................

কারবালার প্রান্তরে ইমাম হুসাইন (আ.)কে তাঁর ৭২ জন সঙ্গীসহ নিষ্ঠুরভাবে শহীদ করা হয়েছিলো। পিপাসার পানি বন্ধ করে দিয়েছিলো ইয়াজিদি বাহিনী। তৃষ্ণার্ত ইমামকে হত্যা করা হয়েছে নির্মমভাবে। গলায় তীর মেরে হত্যা করা হয়েছে পিপাসার্ত ছোট্ট শিশুকে। ইমামের পবিত্র দেহের উপর ছুটিয়ে দেয়া হয়েছে ঘোড়া...। কর্তিত মস্তক নিয়ে যাওয়া হয়েছে জাহান্নামী ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার দরবারে। লাঞ্ছিত করা হয়েছে ইমাম পরিবারের নারী ও শিশুদের...।

কারবালার প্রান্তরের ঘটনা কেবল এটুকুই নয়। ইমাম হুসাইন (আ.) ও কারবালা যেনো এক দীর্ঘ উপন্যাসের ক্ল্যাইম্যাক্স, যেখানে এসে মুমিন মুসলিমের হৃদয় ভেঙে যায়, চোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে, অনুপ্রেরণা আসে শাহাদাতের, সন্ধান মেলে আলোর। এমন এক উপন্যাস, যার শুরু মুহাম্মদ (সা.) এর জন্মের সময়ে, এবং যে উপন্যাসের শেষ গল্পটি রচিত হবে বহুল প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদী (আ.) এর আগমনের মাধ্যমে।

এই উপন্যাসটিই হলো প্রতিটি মুসলিমের জন্য সিরাতুল মুস্তাকিম, অথবা আল্লাহর রজ্জু (৩:১০৩)। যে রজ্জুর শুরুতে আছে ঐশী কিতাব আল কুরআন, এবং যে রজ্জুর বাকিটুকু রচিত হয়েছে আল্লাহর রাসূল (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের (আ.) মাধ্যমে (৩৩:৩৩)। যে রজ্জু আঁকড়ে ধরার কথা নবীজি (সা.) তাঁর বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে বলে গিয়েছেন (হাদীসে সাকালাইন)।

ইমাম হুসাইন (আ.) হলেন সেই পবিত্র আহলে বাইতের (আ.) অন্যতম ইমাম, যে আহলে বাইত (আ.) কখনো কুরআন থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না বলে আল্লাহ রাসূল (সা.) বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে ঘোষণা দিয়ে গিয়েছিলেন। অতএব,
যে মুসলিমেরা রাসূল (সা.) এর মুখের এই নিশ্চয়তায় আস্থা রাখতে পারে না,
যারা কুরআনে ঘোষিত আহলে বাইতের পবিত্রতার উপরে আস্থা রাখতে পারে না (৩৩:৩৩),
আল্লাহ রাসূল (সা.) যা তাঁর নবুওয়্যাতের বিনিময়ে মুমিনদের নিকট দাবী করেছেন (৪২:২৩), যারা সেই ভালোবাসা পোষণ করে না আহলে বাইতের (আ.) প্রতি,
যারা কুরআনের ব্যাখ্যা ও রাসূলের (সা.) সুন্নাহ আহলে বাইতের (আ.) কাছ থেকে গ্রহণ করে না;

বরং যারা আহলে বাইতের (আ.) নিষ্পাপ ইমামগণের (আ.) দোষত্রুটি অনুসন্ধান করে,
যারা জেনে বা না জেনে আহলে বাইতের (আ.) শত্রুদের পক্ষ অবলম্বন করে,
যারা নামাজে আলে মুহাম্মাদের (সা.) উপর দরুদ প্রেরণ করে ও কাজের বেলায় বিরুদ্ধাচরণ করে,
যারা ইমাম হুসাইন (আ.) এর নামের সাথে 'ইমাম' শব্দটা উচ্চারণ করে কিন্তু যাদের অন্তর তাঁর আনুগত্য স্বীকার করেনি,
যারা আহলে বাইতের (আ.) গুরুত্ব ও পবিত্রতার নিশ্চয়তা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েও আহলে বাইতের (আ.) সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে না ও ইমামগণকে (আ.) চেনার চেষ্টা করে না;

তারা ইসলামের ব্যাপারে যত নিষ্ঠাবানই হোক না কেনো, দুঃখজনকভাবে সেই নিষ্ঠা সহকারেই তারা ভুল পথে হাঁটবে এবং নিষ্ঠার সাথেই না জেনে ইসলামের ক্ষতি করে যাবে। তারা যেনো আল্লাহর হাতে মীযান উঠবার আগেই নিজেদের শুধরে নেন এবং ইসলামের প্রকৃত পথ অনুসরণ করে বৃহত্তর মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠা করেন, সেই দোয়াই করি।

আর যেসব পাষাণ হৃদয় এই শোকের দিনে আনন্দের উৎস খুঁজছে, শোকের বিপরীতে নানান মাসলা মাসায়েল আবিষ্কার করছে কিংবা হাজির করছে নানান ইতিহাস, তাদেরকে তাদের মতই থাকতে দিন। তারা যদি ইমাম হুসাইন (আ.) এর প্রতি ইউসুফ (আ.) এর সৎভাইদের মত মনোভাব পোষণ করে, তবে যতই তারা নামাজে আলে মুহাম্মদের (সা.) উপর দরুদ প্রেরণ করুক না কেনো, সেই দরুদ ঐ সৎভাইদের লোকদেখানো কর্মকাণ্ডেই পরিণত হবে। যতদিন না তাদের এই পাষাণ হৃদয় গলবে, এবং যতদিন না তারা ইমাম হুসাইন (আ.)কে প্রকৃত অর্থে চিনতে পারবে ও ভালোবাসতে পারবে, ততদিন পর্যন্ত আশুরার দিনে তারা এমন আচরণই করে যাবে। এবং ততদিন পর্যন্ত ইয়াকুব (আ.) ও ইউসুফ (আ.) এর মধ্যকার সেই ভালোবাসা তারা অনুধাবন করতে পারবে না, যেই ভালোবাসার অশ্রুপাত চোখকে অন্ধ করে দেয় ! ততদিন পর্যন্ত তারা ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.) এর কান্নার মর্ম বুঝবে না। ততদিন পর্যন্ত পবিত্র ইমামগণের (আ.) সাথে তাদের ভালোবাসার সম্পর্কের সূচনা হবে না। ততদিন পর্যন্ত আহলে বাইতের ইমামগণ (আ.) তাদের কাছে কেবলই কিতাবে বন্দী কিছু ইতিহাস কিংবা বিতর্কের বিষয়বস্তু হয়ে রইবে, ভালোবাসার বস্তু নয়।

অতএব, এই পবিত্র ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত পাষাণ হৃদয় মানুষদের প্রতি রুক্ষ হবেন না। বরং স্বর্গীয় ভালোবাসা-বঞ্চিত এই মানুষগুলির জন্যে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন, যেনো তারা সকল পিছুটান ও প্রেজুডিস মুক্ত হয়ে সত্যের কাছে পরিপূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করার দৃঢ়তা পায়। তারা যেনো সন্ধান পায় সেই আলোর, যে আলো স্রষ্টার সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। তাদের হৃদয় যেনো খুঁজে পায় ভালোবাসা : ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াবী ভালোবাসা নয়, ঐশী ভালোবাসা।

আল্লাহ যেনো আমাদের সেইসব মুসলিম ভাইদের হৃদয়কে এই ভালোবাসার পথ দেখান। এই আলোর পথে তারা যেনো হন আমাদের সহযাত্রী, সহযোদ্ধা, পথপ্রদর্শক। কাউকে বাদ দিয়ে নয়, কাউকে ফেলে নয়, বরং দুনিয়ার সকল মুসলিম যেনো এক উম্মাহ, এক দেহ, এক প্রাণ, এক আত্মা হয়ে খোদার আরশের নিচে শেষবিচারের দিনে আশ্রয় নিতে পারি, আশুরা হোক সেই স্বর্গীয় স্বপ্ন বাস্তবায়নের নবঃ সূচনা।
আমিন।

http://nure-alam.blogspot.com/2014/11/blog-post.html
..................................................................................................
#মহররম_পোস্ট - ৭



  **কারবালা: শাহাদাতের অনুপ্রেরণা**


মুসলিম সৈন্যদের তো এমনই হওয়া উচিত! কারবালার শোকগাথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ছে!
১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লব সংঘটিত হয়, এবং তার পরের বছরই ইউরোপ-আমেরিকার সমর্থনে ইসলামী ইরানে হামলা করে ইরাকের স্বৈরশাসক সাদ্দাম। এই নবগঠিত ইসলামী রাষ্ট্রটিকে ধ্বংস করার জন্য আরব বিশ্বও সাদ্দামকে সহায়তা করে।
আন্তর্জাতিক অবরোধ চলছে, বিশ্ববাজার থেকে অস্ত্রও কিনতে পারছে না। সবকিছু ফুরিয়ে আসছে... কিন্তু ফুরায় না তাদের মনোবল। গোটা জাতি যেন ইসলামী রাষ্ট্রের মর্যাদা রক্ষায় জীবন দিতে প্রস্তুত!
ভিডিওতে দেখেন প্রতিটা অপারেশানের আগে কিভাবে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে, বিদায় জানাচ্ছে!
হেলমেটের উপরে লেখা আল্লাহর নাম। ইমাম খোমেনীর আহবানে স্রোতের মত করে ছুটে গিয়েছিলো ইরানি জাতি, ৮ বছর যুদ্ধ করেছে জালিম সাদ্দামের বাহিনীর সাথে।
অপারেশানে যাবার আগে কুরআনে চুমু খেয়ে যাত্রা করছে।
যোদ্ধা সন্তানের সাথে রাস্তায় নেমে এসেছেন আগাগোড়া চাদরে মোড়া বৃদ্ধ মা!
হুসাইনের (আ.) শোকই এই জাতিকে এতটা দৃঢ় মনোবল দিয়েছে, যা দ্বারা বিশ্বের বুকে একমাত্র ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে সেটাকে টিকিয়ে রেখেছে তারা।
..................................................................................................
#মহররম_পোস্ট - ৮

**হুসাইনের (আ.) উপর দরুদ ছাড়া নামাজ হয় না**


হায় মুসলমান!
নামাজে দিনে পাঁচবার যার উপর দরুদ পড়ে,
প্রতি জুমার খুতবায় যাকে জান্নাতের যুবকদের সর্দার বলে ঘোষণা করে,
সেই হুসাইনের শাহাদাতে ব্যথিত তো হয়ই না, উল্টা তার শাহাদাতের শোককে শিয়াদের কোলে গছিয়ে দিয়ে শিয়া বিদ্বেষের আড়ালে নবী ও নবী বংশের প্রতি বিদ্বেষ চরিতার্থ করে!
নামাজতো এজিদের সৈন্যরাও পড়েছিলো!
..................................................................................................
#মহররম_পোস্ট - ৯


**কারবালার কষ্টিপাথরে যাচাই করে মুসলমান চিনে নিন**


কারবালা গোটা দুনিয়াকে দুইভাগে ভাগ করে দিয়ে গেছে: জালিম, আর মজলুম।
আপনিই সিদ্ধান্ত নিন, আপনি কোনদিকে আছেন আর কোনদিকে থাকবেন।
একইসাথে দুইরকম নামাজীকে চিনিয়ে দিয়ে গেছে:
এক. যারা নামাজে মুহাম্মদ (সা.) ও আলে মুহাম্মদের (সা.) উপর দরুদ পড়ে, কিন্তু নামাজ থেকে উঠেই মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর বংশের সাথে শত্রুতা করে,
দুই. যারা নামাজে মুহাম্মদ (সা.) ও আলে মুহাম্মদের (সা.) উপর দরুদ পড়ে, এবং নামাজ থেকে উঠেও কাঁদে; যারা বলে: "প্রতিটা দিনই আশুরা, প্রতিটা ময়দানই কারবালা!"
আরো দুইরকম মুসলমানকে চিনিয়ে দিয়ে গেছে:
এক. কুরআন-চোর মুসলমান, কেননা তারা (৪২:২৩ আয়াতে দাবীকৃত) কুরআনের মূল্য পরিশোধ করেনি, রাসুলের (সা.) নিকটাত্মীয়কে ভালোবাসেনি, বরং উল্টা তাঁর আহলে বাইতের প্রতি অন্তরে বিদ্বেষ পোষণ করেছেন,
দুই. কুরআনের মূল্য পরিশোধকারী মুসলমান, যারা মনে করে যে, রাসুলের (সা.) নিকটাত্মীয়কে, তাঁর আহলে বাইতকে ভালোবেসে কোনোদিনই শোধ করা যাবে না, তবু তারা কুরআনের বিনিময় দেবার চেষ্টা করে যায়!
পশু চুরি করে কুরবানি দিলে কি তা কবুল হয়? তাহলে কুরআনের মূল্য পরিশোধ না করা এসব মুসলমান কিভাবে আশা করে যে, তাদের কুরআনের হেফজ, কুরআনের তাফসির আর কুরআনভিত্তিক আমলসমূহ কবুল হবে?
কারবালা আমাদের মানদণ্ড। এই মানদণ্ড থেকে আমরা সরে আসবো না। এবং আমরা এটা ভুলেও যাবো না। যতই এজিদীরা আশুরার দিনের মহা মহা সব ঘটনার কিচ্ছা বানিয়ে আনুক না কেন।
কারবালার কষ্টিপাথরে যাচাই করে মুসলমান চিনে নিন। মানুষ চিনে নিন।
..................................................................................................
#মহররম_পোস্ট - ১০


**এজিদের কুকর্মকে আড়াল করতে বিষাদসিন্ধুকে আক্রমণের ফ্যালাসি**


৬১ হিজরির ১০ই মহররম কারবালার ময়দানে রাসুলের (সা.) নাতি ইমাম হুসাইনসহ (আ.) তাঁর নিকটজনদেরকে শহীদ করা হয়। নরপিশাচ এজিদের বাহিনী এই কর্ম সম্পাদন করে। সেসময় থেকেই মুসলিম জাতি সুস্পষ্ট দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়: এজিদী মুসলমান ও হুসাইনী মুসলমান। ইসলাম দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়: এজিদী ইসলাম ও হুসাইনী ইসলাম। গোটা মানব জাতি দুইভাগে ভাগ হয়ে যায়: জালিম ও মজলুম।
এজিদ নিজহাতে হত্যা না করলেও জোর-জবরদস্তি ও জুলুমের নির্দেশদাতা হিসেবে হত্যাকাণ্ডের মূল দায়ভার তারই। একথা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। তারিখে তাবারী, ইবনে কাসিরসহ সুন্নি, শিয়া ও সেকুলার নানান সূত্রে কারবালার ময়দানের ঘটনা ও এজিদের দায় প্রমাণিত।
এবং হাজার বছর ধরেই শিয়া-সুন্নি, হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে মানবতাবাদী সকল মানুষ হুসাইনের শোকে চোখের জল ফেলেছে; এজিদ, তার বাহিনী ও তার সমর্থকদের দিয়েছে অভিশাপ।
পাশাপাশি হাজার বছর ধরেই এজিদপন্থীরা কারবালার ঘটনাকে ধামাচাপা দেবার জন্য নানারকম প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে। আজও চালিয়ে যাচ্ছে। মহররম মাস আসলেই তারা শিয়া বিদ্বেষ, এজিদের মহানুভবতা, বিষাদ সিন্ধু উপন্যাসকে আক্রমণ, ইরানীদেরকে হুসাইন-প্রেমের সাথে জড়িত করে ইরানী জাতিকে মৌখিক আক্রমণ -- ইত্যাদি নানান ফ্যালাসি করে থাকে।
বিষাদ সিন্ধুর প্রসঙ্গ একটু পরেই বলছি। তার আগে বলি, ফেইসবুকে দেখলাম মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল কর্তৃক অনুদিত একটি লেখা ভেসে বেড়াচ্ছে। সেই লেখায় দাবী করা হয়েছে যে:
শিয়ারা এত হুসাইন হুসাইন করে, এর কারণ হলো হুসাইনের ইরানী স্ত্রীর বংশে আগত বাকী ৯ জনকেসহ মোট ১২ জনকে তারা ইমাম মানে। তারা হযরত আলীর বাকি দশ ছেলেকে নিয়ে মাতামাতি করে না, কেননা তাদের স্ত্রীগণ ইরানী ছিল না, ইত্যাদি।
অথচ দেখুন, ইরানীরা শিয়া হয়েছে মাত্র ৫০০ বছর আগে, সাফাভি শাসনের সময়ে। তার আগে কি পৃথিবীতে শিয়া ছিল না? বরং শিয়া-সুন্নি বিভক্তি তো রাসুল (সা.) এর মৃত্যুর পর থেকেই চলে আসছে। এবং সেটা তৎকালীন আরবদের মাঝে ছিল। সেইযুগের আরবদের মাঝেই কেউ ছিল শিয়া, কেউ ছিল সুন্নী। এবং শিয়ারা সকলেই বিশেষভাবে ইমাম হুসাইনকে মর্যাদা দিয়ে আসছে সেই রাসুলের (সা.) যুগ থেকে! কেননা, রাসুল (সা.) বলেছেন: "হুসাইন আমা থেকে, আমি হুসাইন থেকে।"
তাঁকে জান্নাতের যুবকদের সর্দারও ঘোষণা করে গেছেন।
ইমাম হুসাইনের (আ.) শান ও মান বর্ণনা করতে গেলে আলাদা গ্রন্থ রচনা করতে হবে -- কিন্তু -- একটা জিনিস লক্ষ্য করুন --
৫০০ বছর আগে যখন ইরানীরা শিয়া ধারায় কনভার্ট হয়, তার আগে এজিদপন্থীরা কি এমন যুক্তি দিতো? নিশ্চয়ই না! তখন কি তারা বলত যে: "শিয়ারা এত হায় হোসেন হায় হোসেন করে, কারণ হুসাইনের স্ত্রী ছিল ইরানী!" নিশ্চয়ই না!
অর্থাৎ, যখন ইরানী শিয়াদের অস্তিত্বই ছিল না, বরং পৃথিবীতে শুধু আরব শিয়া ছিল, এবং আরব শিয়ারা প্রতিবছর হায় হোসেন হায় হোসেন মাতম করত -- তখন নিশ্চয়ই তারা এই যুক্তি দিত না।
তার মানে কি তখন এজিদী ইসলামের ধারক-বাহক-প্রচারকেরা থেমে থাকত? কখনোই না। তখনও তারা অপযুক্তি দিত। ভিন্ন কোনো অপযুক্তি দিত।
যেমন দেখুন, ১৮৯০ সালে কারবালার ঘটনা অবলম্বনে প্রকাশিত হয় মীর মশাররফ হোসেনের "বিষাদ সিন্ধু" নামক উপন্যাস। এখন বাংলাভাষী এজিদীরা (including আবদুস শহীদ নাসিম) যুক্তি দেয়: "বিষাদ সিন্ধু কোনো ইতিহাস গ্রন্থ নয়, বরং এটি একটি ইতিহাসের বিকৃতি, মহান এজিদের (!) নামে মিথ্যাচার, ইত্যাদি।"
তো, ১৮৯০ সালের আগেও তো শিয়া ছিল! শিয়া বলব না -- হুসাইনপ্রেমী ছিল! তখন তারা এজিদের কুকর্ম ঢাকতে নিশ্চয়ই অন্য কোনো অপযুক্তি দিত!
৬১ হিজরীতে কারবালায় ইমাম হুসাইন (আ.) শহীদ হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত হায় হোসেন মাতম জারি আছে, ছিল, এবং থাকবে ইনশাআল্লাহ।
কালের পরিক্রমায় কারবালার ১০০০ বছর পর যখন ইরানীরা শিয়া হয়েছে, তখন এজিদীরা "হুসাইনপ্রেমী = শিয়া = ইরানী" এরকমটা মানুষের সামনে উপস্থাপন করে অপযুক্তি দিয়েছে: "হুসাইনের স্ত্রী ইরানী ছিল, তাই তারা হুসাইনকে ভালোবাসে, এজন্য হায় হোসেন হায় হোসেন করে।"
কালের পরিক্রমায় কারবালার ১৩০০ বছর পর যখন বিষাদসিন্ধু রচিত হয়েছে, তখন আবার এজিদীরা হাজির হয়েছে নতুন অপযুক্তি নিয়ে: "বিষাদসিন্ধু একটি ইতিহাস বিকৃতকারী উপন্যাস, আসলে এজিদ দোষী নয়, এজিদ মহান (!) খলিফা ও ইমাম (!), ইত্যাদি।"
কালের পরিক্রমায় যদি ভবিষ্যতে আমেরিকার মানুষজন মুসলিম হয়, আহলে বাইতকে আঁকড়ে ধরে, হুসাইনপ্রেমী হয়, মজলুমের সমর্থক হয় -- কে জানে -- হয়ত এইসব এজিদী ইসলামের ধারক-বাহক-প্রচারকেরা তখন নতুন কাহিনী বানাবে: "হুসাইনের চোখের রঙ ছিল বাদামী, আর আমেরিকানদের চোখের রঙও বাদামী, তাই তারা হুসাইনকে বেশি পছন্দ করে, এত হুসাইন হুসাইন করে।"
মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এধরণের নির্লজ্জ মিথ্যাচারই করা হয়ে থাকে।
..............................................................................
ইমাম হুসাইন (আ.) এর সাথে শিয়া-সুন্নির কোনো সম্পর্ক নাই।
ইমাম ছিলেন মজলুম (নির্যাতিত), এজিদ ছিলো জালেম (অত্যাচারী)।
পৃথিবীর জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হৃদয়বান মানুষ হুসাইনের সমর্থক,
আর নির্দয়-নিষ্ঠুর মানুষেরা এজিদের সমর্থক। সে তারা যতই নামাজ পড়ে কপালে টোক ফেলে দিক না কেন।
ইমাম হুসাইন (আ.) এর শোকের সাথে ইরানীদের কোনো সম্পর্ক নাই।
সম্পর্ক নাই বিষাদ সিন্ধুর।
বরং হাজার বছরের অসংখ্য ইসলামী ও সেকুলার ইতিহাসগ্রন্থ দ্বারা হুসাইনের (আ.) মাজলুমিয়াত প্রমাণিত। প্রমাণিত যে, এজিদ ছিল কুলাঙ্গার এক জালিম, ফাসিক ও কাফির। এবং ইমাম হুসাইনের (আ.) হত্যাকারী (আদেশ দানকারী)।
বিষাদ সিন্ধু রচিত হয়েছে সেইসব সত্য ইতিহাসের উপর নির্ভর করে।
ইরানীরা শিয়া হয়েছে সেইসব সত্য ইতিহাস, হাদীস, কুরআনের আয়াত ও যুক্তির উপর ভিত্তি করে।
ইরানীদের ভুলত্রুটিকে আক্রমণ করে, কিংবা বিষাদ সিন্ধুর সাহিত্যিক বাড়াবাড়িকে আক্রমণ করে কখনোই কারবালার ঐতিহাসিক সত্যকে ধামাচাপা দেওয়া যাবে না।
কারবালা এক ঐতিহাসিক সত্য। কারবালা আমাদের মানদণ্ড। কারবালাকে অবলম্বনকারী সাহিত্যিক ভুল করতে পারে, কারবালাকে আঁকড়ে ধরা ইরানিরা শোক প্রকাশ করতে গিয়ে ভুল করতে পারে, হুসাইনের (আ.) প্রেমিক আমি ভুল করতে পারি -- কিন্তু --
কিন্তু ইতিহাস মিথ্যা নয় যে, এজিদ-ই ইমাম হুসাইনের (আ.) হত্যার জন্য দায়ী। এবং ইমাম হুসাইন (আ.) ছিলেন মজলুম।
এই সত্য আমরা ভুলবোও না, ভুলে যেতে দেবও না। কারবালা আমাদের মানদণ্ড, এবং আমরা এটা জিন্দা রাখবো, ইনশাআল্লাহ।
..............................................................................
#মহররম_পোস্ট - ১১

**১০ই মহররম আনন্দের দিন: একটি জবাব**

 
১০ই মহররমে নাকি ইসলামের ইতিহাসের ২০/৩০টি আনন্দের ঘটনা ঘটেছে। এজিদীপন্থীদের ফেইসবুকে এই তালিকা কপি-পেস্ট আকারে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
প্রথমতঃ, যেসব ঘটনার লিস্ট দেয়া হয়েছে, সেগুলি যে ১০ই মহররমেই ঘটেছে, তার কোনো অকাট্য প্রমাণ নেই।
দ্বিতীয়তঃ, এগুলির ১০ই মহররমে ঘটা যদি এতই গুরুত্বপূর্ণ হতো, ১০ই মহররমের যদি এতই আনন্দ, তাহলে আল্লাহপাক ১০ই মহররম তারিখটা কোথাও উল্লেখ করেননি কেন?
এ থেকেই বোঝা যায় যে, ১০ই মহররম আল্লাহর দৃষ্টিতে মুমিনের জন্য বিশেষ আনন্দের দিন নয়। বরং এই দিনকে আনন্দের দিন বানানোর জন্য হুসাইনবিরোধিরা কুরান-হাদীস থেকে সকল ভালো ঘটনাকে একত্র করে ১০ই মহররমের নামে চালিয়ে দিয়েছে।
কুরআন মাজীদের একটি লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, বিভিন্ন ঘটনাকে আল্লাহপাক উল্লেখ করেছেন, কিন্তু সেগুলির দিন/মাস উল্লেখ করেননি। অর্থাৎ, ঘটনার উপরে আলোকপাত করেছেন, যেন মানুষ ঘটনাটি থেকে শিক্ষা অর্জন করে। ঘটনাটার নিজস্ব ওজন/তাৎপর্য/গুরুত্ব নিয়ে যেন মানুষ চিন্তাভাবনা করে, তা সেই ঘটনা ১০ তারিখ কি ২০ তারিখেই ঘটুক, কিংবা মহররমেই ঘটুক কি রমজানেই ঘটুক।
ওহাবীরা বলে, ১০ই মহররমে আল্লাহপাক মূসা (আ.)-কে ফেরাউনের হাত থেকে উদ্ধার করেন, ইব্রাহীম (আ.)-কে উদ্ধার করেন নমরুদের আগুন থেকে, ইত্যাদি। আচ্ছা, ওহাবীদের কেউ কি বলতে পারবে যে, এটা যদি ১০ই মহররমে না হয়ে অন্য কোনো দিনে হতো, তাহলে আল্লাহর কুদরত কমে যেত? ওহাবীদের কেউ কি দাবী করতে পারবে যে, ১০ই মহররমে না হয়ে অন্যদিনে ইব্রাহীম (আ.) ও মূসা (আ.) কে উদ্ধার করা হলে সেটা তখন আর মহান কোনো ঘটনা হতো না, বরং তুচ্ছ ঘটনা হিসেবে পরিগণিত হতো?
কখনোই না। বরং যেই দিনেই ঘটুক না কেন, ১০ই মহররমেই ঘটুক কি ১০ই রমজানেই ঘটুক -- ঘটনাগুলির তাৎপর্যের বাড়তি কমতি হতো না।
অতএব, যারা এইসব ২০/৩০ টি ঘটনার লিস্ট কপি-পেস্ট করে বেড়াচ্ছেন, তাদেরকে বলব, আসুন, ১০ই মহররম তারিখটা বাদ দিয়ে প্রতিটা individual ঘটনা নিয়ে আলোচনা করি। আপনারা ঐ ২০/৩০টা "আনন্দের ঘটনা" নিয়ে আসেন, ওগুলোর তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করি। একইসাথে কারবালার ঘটনাও নিয়ে আসেন। সেটার তাৎপর্য নিয়েও আলোচনা করি। তারপর তুলনামূলক আলোচনা করে সিদ্ধান্তে আসি: উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য কোনটা গুরুত্বপূর্ণ? দেখি, কোনটা নিরপেক্ষ সাধারণ মানুষের হৃদয়ে দাগ কেটে যায়?
১০ই মহররম তারিখটা নিয়ে টানাটানি না করে প্রতিটা ঘটনা নিয়ে আলোচনা করুন তো দেখি? দেখি কোনটা যুগ যুগ ধরে, হাজার বছর ধরে মানব হৃদয়ে দাগ কেটে যাবার মত ঘটনা?
হ্যাঁ, আপনারা যেসব ইতিহাসকে ১০ই মহররমে ঘটেছে বলে চালিয়ে দিতে চাচ্ছেন, সেগুলি ১০ই মহররমে ঘটুক বা না ঘটুক, সেসবের নিজস্ব গুরুত্ব ও তাৎপর্য আছে। একইভাবে কারবালার ঘটনারও নিজস্ব তাৎপর্য আছে। কোনোটাই অস্বীকার করতে পারবেন না।
আফসোস! আপনাদেরকে সারাবছরের কোনোদিন দেখি না, ঐসব ২০/৩০টি "আনন্দের ঘটনার" গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করতে। কেবল যখন মানুষ হুসাইনের শোকে কাঁদে, সেইদিনই আপনাদের কাছে ঐসব ঘটনা মহা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, এবং হুসাইনপ্রেমীদেরকে এসে বলতে শুরু করেন: 'কেঁদো না, বরং আনন্দ করো (!?)।"
এতই যখন ঐসব ঘটনার গুরুত্ব, ওগুলির এত আনন্দ, তো আপনারা কেন ঐসব ঘটনা নিয়ে আলোচনা সভা সমাবেশ সেমিনার আনন্দ মিছিল করেন না? করুন! আপনাদের বাধা দিয়েছে কে? জুলুমের রাম রাজত্ব তো আপনারাই করছেন! আমাদের বাকীদেরকে নীরবে চোখের পানি ফেলতে দিন! কেননা আমরা পারি না, আমরা এই দিনে আনন্দিত হতে পারি না, কেননা তৃষ্ণার্ত পবিত্র ঠোঁট রক্তে ভেসে যাবার দৃশ্য আমাদের চোখে ভাসে। আমাদের কষ্ট আর সকল আনন্দকে ছাপিয়ে যায়।
আপনাদের হয়ত তা হয় না। অতএব, আপনারা আনন্দ মিছিল করুন! "আনন্দ আলোচনা" সেমিনার করুন!
আল্লাহ দেখুক, উম্মতে মোহাম্মদী কী করছে।
করুন! যান!
আর আমরাতো আপনাদেরকে ইমামও মানি না যে, আপনাদের ফতোয়া অনুযায়ী আনন্দ করব!
আমরা রাসুলের ক্বুরবা আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসার প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ: কুরআনের মূল্য পরিশোধ (৪২:২৩) আমরা করবই, আমরা চোখের জল ফেলবই।
আসল কথা, আপনাদের কাছে ঐসব ২০/৩০টা ঘটনারও কোনো মূল্য নেই, মূল্য নেই রাসুলের (সা.) নাতির শাহাদাতেরও। যেহেতু রাসুল (সা.) ও তাঁর বংশের প্রতি গোপন বিদ্বেষে আপনাদের হৃদয় পরিপূর্ণ, সেহেতু হুসাইনের (আ.) শোকে ক্রন্দনরত মানুষকে কারবালা ভুলিয়ে দিতে আপনারা ঐসব ঘটনাকে মহা আনন্দের দিন হিসেবে প্রচার করে বেড়াচ্ছেন।
..................................................................................................
কারবালার ৭২ জনকে মোকাবিলা করতে এজিদকে সৈন্য জড়ো করতে হয়েছিল কয়েক হাজার।
তেমনি এক কারবালাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য এজিদী আলেমদের জড়ো করতে হয়েছে ২০/৩০ টা ঘটনা। তবুও চাপা দিয়ে রাখতে পারছে না কারবালাকে। এক "ইয়া হুসাইন" আওয়াজে ওগুলো সব ভেসে যাবে, ভেসে যাচ্ছে, ভেসে গিয়েছে। ওদের হাজার বছরের অপপ্রচার, আলে সৌদের পেট্রোডলারের আশীর্বাদে বিগত ত্রিশ বছরে তা আরো বেড়েছে, কিন্তু প্রতিবছর কারবালায় যে লক্ষ লক্ষ লোক সমাগম হয়, সেই স্রোত কি একটিবারের জন্যও থেমেছে?
এমনকি অমুসলিমরাও হুসাইনের (আ.) শোকে কাঁদে। তোদের এজিদকে কয়জন রাদিয়াল্লাহু বলে? কয়জন অমুসলিম ভালোবাসে? তোরা বুঝিস না, তোরা পরাজিত? "হায় হোসেন" মাতম তোদের নৈতিক কবর রচনা করেছে?
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ, ওয়া আলে মুহাম্মাদ।
..................................................................................................
#মহররম_পোস্ট - ১২

**ইমাম হুসাইনকে (আ.) হত্যা ছাড়াও আরো যে দুইটি মহাপাপের কারণে ইয়াজিদ কাফির ও জাহান্নামী** 

কারবালার খলনায়ক ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়াকে নিরপরাধ প্রমাণের জন্য রাজতন্ত্রের ধ্বজাধারীরা উঠেপড়ে লেগেছে। তারা কখনো জাল হাদিস বানিয়ে ইয়াজিদকে জান্নাতি প্রমাণ করার চেষ্টা করছে; কখন সাহাবার মর্যাদা দিচ্ছে আবার কখনো ইমাম হুসাইনকে হত্যায় ইয়াজিদ জড়িত ছিল না বলে দাবি করছে। যদিও তাদের দাবিগুলো ভিত্তিহীন; তারপরও হালুয়া-রুটি ও খ্যাতির লোভে তারা এ কাজটি করে যাচ্ছে। তাদের অপপ্রচারে কিছু লোক বিভ্রান্ত হলেও সত্যসন্ধানিরা তাদের মুখোশ খুলে দিচ্ছে।
তিন বছর নয় মাসের অবৈধ শাসনামলে অন্তত: তিনটি মহাপাপ ও অপরাধযজ্ঞের জন্য ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে কুখ্যাত ও ঘৃণিত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছে। এই তিনটি মহাপাপের মধ্যে প্রথমটি হল-
৬১ হিজরিতে কারবালায় বিশ্বনবী (সা.)এর প্রিয় নাতী হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)ও তাঁর ছয় মাসের শিশুপুত্র হযরত আলী আসগরসহ নবী (দরুদ) বংশের ১৮ জন সদস্যকে নৃশংসভাবে পিপাসার্ত অবস্থায় শহীদ করা। কারবালায় ইমামের আরো অর্ধশতাধিক সঙ্গীও বীরের মত লড়াই করে শহীদ হয়েছিলেন।
ইমাম শিবিরের জন্য কয়েকদিন ধরে পানি সরবরাহ নিষিদ্ধকারী ইয়াজিদ বাহিনী ইমাম হুসাইন (আ.)এর পবিত্র লাশসহ নবী-পরিবারের সদস্যদের লাশের ওপর ঘোড়া ছুটিয়ে লাশগুলো দলিত-মথিত করেছিল এবং তাঁদের মস্তক ছিন্ন করে বর্শার আগায় বিদ্ধ করেছিল। তারা কারবালায় ইমাম শিবিরের তাঁবুগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে লুটপাট চালিয়েছিল। এ ছাড়াও নবী-বংশের নারী ও শিশুদেরকেও টেনে হিঁচড়ে শিকল পরিয়ে বন্দী অবস্থায় কুফার গভর্নরের দরবারে ও দামেস্কে ইয়াজিদের দরবারে নিয়ে গিয়েছিল খোদাদ্রোহী ইয়াজিদ বাহিনী।
ইয়াজিদের দ্বিতীয় মহাপাপ
কারবালার হৃদয়বিদারক এবং মহাবিয়োগান্তক ঘটনার খবর শুনে মদীনাবাসী ইয়াজিদের চরিত্র ও প্রকৃতি সম্পর্কে তদন্ত চালায়। তারা এ লক্ষ্যে দামেস্কে একটি তদন্ত-টিম পাঠায়। তদন্ত-টিম তাকে ইসলামী মূল্যবোধ-শূন্য ও একজন নৈতিক চরিত্রহীন ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখতে পায়। ইমাম হুসাইন (আ.) এবং তাঁর মহান বিপ্লব ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের সহযোগিতা করতে না পারার জন্য মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে গণ-অনুশোচনা ক্রমেই জোরদার হতে থাকে।
এ অবস্থায় মদীনাবাসী তাদের শহর থেকে ইয়াজিদের নিযুক্ত গভর্নরকে বের করে দেয় এবং ইয়াজিদের অনৈসলামী শাসনকে বৈধ শাসন হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করে। ফলে মহাপাপিষ্ঠ ইয়াজিদ সিরিয়া থেকে কুখ্যাত মুসলিম বিন উকবার নেতৃত্বে ১০ হাজার সেনা পাঠায়।
উকবা মদীনার উত্তর-পূর্ব দিকে হাররা অঞ্চলে মদীনার প্রতিরোধকামীদের ওপর হামলা চালায়। অস্ত্রে সুসজ্জিত উমাইয়ারা বিপুল সংখ্যক মুজাহিদকে হত্যার পর শহরের ভেতরেও প্রতিরোধকামীদের ওপর নৃশংস হামলা চালিয়ে তাদের শহীদ করে। এমনকি যারা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ(সা.)’র পবিত্র মসজিদে ও তাঁর পবিত্র মাজার বা রওজায় আশ্রয় নিয়েছিল তাদেরকেও নির্মমভাবে শহীদ করেছিল ইয়াজিদের পাষণ্ড সেনারা। বিশ্বনবী (সা.)’র বহু সাহাবীসহ ৭০০ জন গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ব শহীদ হয় তাদের হামলায়। ইয়াজিদের সেনারা মদীনায় অন্তত ১০ হাজার মানুষকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করে। এরপর উকবার নির্দেশে তার নেতৃত্বাধীন ইয়াজিদের সেনারা তিন দিন ধরে মদীনা লুটতরাজ চালায় এবং নারীদের সম্ভ্রমহানি করে। তারা মদিনার মসজিদে নববীকে ঘোড়ার আস্তাবল বানায় এবং ঘোড়ার মলমূত্রে অবমাননা করা হয় মুসলিম বিশ্বের পবিত্রতম এই স্থানের। এরপর এই অভিশপ্ত সেনাদল মক্কার দিকে যায় এবং এমনকি পবিত্র কাবা ঘরেও হামলা চালিয়ে তা ধ্বংস করে।
মদীনায় নারীদের ওপর ইয়াজিদ-সেনাদের গণ-ধর্ষণের পরিণতিতে এক হাজারেরও বেশি অবৈধ সন্তান জন্ম নিয়েছিল এবং তাদের বাবা কে ছিল তা শনাক্ত করার কোনো উপায় ছিল না। ইতিহাসে এদেরকে ‘হাররা বিদ্রোহের সন্তান’বলে উল্লেখ করা হতো। হাররার যুদ্ধ বা হাররার গণহত্যা নামে পরিচিত এই ঘটনা বহু বছর ধরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মধ্যে স্মরণ করা হয়েছে।
ইয়াজিদের তৃতীয় মহাপাপ
আশুরা বিপ্লবের তিন বছর পর পাষণ্ড ইয়াজিদের সেনারা পবিত্র মক্কার কাবা ঘর অবরোধ করে। তারা জ্বলন্ত ন্যাপথালিনযুক্ত অগ্নি-গোলা নিক্ষেপ করে কাবা ঘর জ্বালিয়ে দেয়। ফলে মক্কার বিশিষ্ট সাহাবীদের কাছে ইয়াজিদের খোদাদ্রোহী চরিত্রের বিষয়টি আবারও স্পষ্ট হয়। পবিত্র কাবাঘরে হামলার পরই খবর আসে যে কুখ্যাত জালিম ও কাফির ইয়াজিদ মারা গেছে।
যারা ইয়াজিদকে ভালো মানুষ বানানোর ভয়ঙ্কর প্রচারণায় নেমেছেন তারা একটিবার চিন্তা করে দেখবেন, ইয়াজিদ ভালো মানুষ হলে কি ইমাম হুসাইন (আ.) এ কথা বলতেন যে, ইয়াজিদের মত অসৎ লোক যদি মুসলমানদের (স্বীকৃত) নেতা হয় তাহলে ইসলাম চির-বিদায় নেবে? ইয়াজিদ ভালো মানুষ হলে মক্কা ও মদিনার বিখ্যাত সাহাবিরা তাকে সমর্থন করতেন, কিন্তু তারা তা করেননি বলেই মক্কা ও মদিনায় যুদ্ধ চাপিয়ে দেয় ইয়াজিদ।
ইয়াজিদের ওপর লানত
মহাপাপী ইয়াজিদকে প্রখ্যাত মুসলিম মনীষীগণ কাফির, ফাসিক, জালিম, নালায়েক ও মালাউন বলে লানত দিয়েছেন। আল্লামা আলুসি লিখেছেন, খবিসটি (ইয়াজিদ) নবী (সা.)-কে রাসূল বা নবী বলেই বিশ্বাস করতো না, অর্থাৎ সে কাফির ছিল। মক্কা ও মদিনার জনগণের সঙ্গে এবং নবীর (সা.) পরিবারের সঙ্গে সে যা করেছে তাতে প্রমাণিত হয় যে সে কাফির ছিল। (তাফসিরে রুহুল মাআনি)
ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি বলেছেন, “কেবল কোনো বেদাআতির পক্ষেই ইয়াজিদকে ভালবাসা ও তাকে সম্মানিত করা সম্ভব। ইয়াজিদের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য এমনই যে তার ভক্তরাও ঈমানহীন হতে বাধ্য।”
দ্বিতীয় ওমর নামে খ্যাত উমাইয়া শাসক ওমর ইবনে আবদুল আজিজের সামনে একদিন এক ব্যক্তি ইয়াজিদকে আমিরুল মুমিনিন (মুমিনদের নেতা) বলে উল্লেখ করায় তিনি ওই লোকটির ওপর চাবুকের বিশটি আঘাত হানার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ( ইমাম হাজার আসকালানির তাহজিব আত্বতাহজিব, খণ্ড-৬, পৃ-৩১৩)
অন্যদিকে, ইমাম সুয়ুতি তার তারিখুল খোলাফা বইয়ে লিখেছেন: আপনাকে (ইমাম হুসাইন-আ.) শহীদ করা হয়েছে এবং আপনার মস্তক প্লেটে করে নেয়া হয়েছে ইবনে জিয়াদের কাছে। আল্লাহর লানত বা অভিশাপ বর্ষিত হোক যে আপনাকে হত্যা করেছে এবং অভিশাপ বর্ষিত হোক ইবনে জিয়াদ ও ইয়াজিদের ওপর। (পৃ-১৬৫)
ইয়াজিদ সম্পর্কে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলকে তার ছেলে আবদুল্লাহ ইয়াজিদের ওপর অভিশাপ দেয়ার যুক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান: পবিত্র কুরআনের সুরা মুহাম্মাদের ২২ ও ২৩ নম্বর আয়াতের আলোকে ইয়াজিদকে অভিশাপ দেয়া বৈধ। এই আয়াতে বলা হয়েছে: ‘ক্ষমতা লাভ করলে, সম্ভবত: তোমরা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তা বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতিই আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, অতঃপর তাদেরকে বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করেন।’
ইয়াজিদের চেয়ে বড় অনর্থ বা নৈরাজ্য পৃথিবীতে আর কে সৃষ্টি করেছিল? (ইমাম আলুসির তাফসির গ্রন্থ রুহুল মাআনি। খণ্ড-৯, সুরা মুহাম্মাদ-২২-২৩)
(copied from Ashraf Rahman vai)
..................................................................................................
#মহররম_পোস্ট - ১৩

 **হিজরি নববর্ষ উদযাপন প্রসঙ্গে**


আল্লাহর রাসুল (সা.) কোনোধরণের নববর্ষ পালন করেছেন বলে জানা যায় না।
মুহাম্মদ (সা.) এর যুগে এভাবে সংখ্যা দিয়ে বছর গণনা করা হতো না। সেসময় কোনো বড় ঘটনাকে ধরে সেটার অত বছর আগে বা পরে, এভাবে বলা হত। আবরাহার হস্তিবাহিনীর কাবা ধ্বংস করতে আসাটা সেসময়ে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল। একারণে তারপর থেকে "হস্তির বছরের…" সাথে সংখ্যা যোগ করে মানুষ এক এক বছরের কথা বুঝাত।
নবীজির(সা.) জীবদ্দশায়ও এমনটিই ঘটেছে। তবে মুসলমানেরা তখন নবীজির (সা.) জীবনের বিভিন্ন ঘটনা দিয়ে এক একটি বছরকে উল্লেখ করত।
(যেমন আমাদের দেশে বয়স্ক মানুষদের দেখবেন "দুর্ভিক্ষের বছর", বা "যুদ্ধের বছরের" অত বছর পরে ওমুকের জন্ম, এইভাবে বলেন, '৭৪ বা '৭১ বলেন না।)
হযরত ওমর হিজরি সাল চালু করেন, মুহাম্মদ (সা.) এর হিজরতের বছর থেকে গণনা শুরু করে। তবে প্রথম মাস হিসেবে আরবের ঐতিহ্য অনুযায়ী মহররমকেই নির্বাচন করা হয়।
তখনও "হিজরি নববর্ষ উদযাপন" বলে কোনো ইভেন্ট মুসলমানদের মধ্যে ছিল না, অন্ততঃ প্রথম চার খলিফার সময়ে তো নয়ই।
পরবর্তীতে মুসলিম উম্মাহর নিকট মহররম শোকের মাসে পরিণত হয়, কেননা এ মাসেই কারবালার প্রান্তরে ইমাম হুসাইন (আ.) কে এজিদের বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে। ইমাম হুসাইন (আ.) ছিলেন নবীজি মুহাম্মদ (সা.) এর নাতি, এবং তিনি জান্নাতের যুবকদের সর্দার। আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে তিনি বিশেষ মর্যাদাপ্রাপ্ত, এবং মুহাম্মদ (সা.) এর গাদীরে খুমের আদেশ অনুযায়ী তাঁর অনুসরণ মুসলমানদের কর্তব্য। ইমাম হুসাইন (আ.) যুদ্ধ করতে যাননি, মাত্র ৭২ জন সঙ্গী সাথী নিয়ে তিনি চলে যাচ্ছিলেন, কিন্তু এজিদী বাহিনী তাঁর পথরোধ করে এবং পানি বন্ধ করে দিয়ে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় সঙ্গী সাথীসহ ইমামকে হত্যা করেন।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনা মুসলিম ইতিহাস ও সাহিত্যে, এবং সর্বোপরি মুসলিম উম্মাহর ব্যথাতুর হৃদয়ে বেঁচে আছে।
কিন্তু ইদানিং দেখি পয়লা মহহরম অনেকে "শুভ হিজরি নববর্ষ" কথাটি বলেন। এমন শোকের মাসে কিভাবে একজন মুসলিম একথা বলতে পারেন? হুসাইনের (আ.) জন্য তার অশ্রু না ঝরুক, কিন্তু এমন নির্লজ্জ বেয়াদবি করা কেন?
কুরআন, আহলে বাইত ও আল্লাহর রাসুলের (সা.) শত্রু এজিদ যখন মুসলিমদের শাসক হয়ে বসেছিল, তারপর থেকে আজ পর্যন্ত তার ইসলাম বিকৃতির প্রচেষ্টা চলে আসছে। সে নিজে জাহান্নামে গিয়েছে, কিন্তু যুগে যুগে দরবারি আলেম ও ধর্মব্যবসায়ীদের হাত দিয়ে সে মানুষের হৃদয় থেকে মহররমের শোক মোছার চেষ্টা করেছে। তারই অংশ হিসেবে আলে সৌদের পেট্রোডলারের আশীর্বাদে এদেশে "মাদানী" হুজুররা "মহররমের ১০১ টি আনন্দের ঘটনা" প্রচার করছে। ফেইসবুকে তালিকা করে শেয়ার হচ্ছে তথ্য প্রমাণবিহীন উদ্ভট যত কাহিনী।
হায়, জন্মদিনের দিনে কোনো সন্তানের চোখের সামনে যদি তার পিতাকে হত্যা করা হয়, সে কি আর কখনো নিজের জন্মোৎসব পালন করতে পারে? মহররম মাসে পৃথিবী সৃষ্টি কেন, আর যত আনন্দের ঘটনাই ঘটুক না কেন, কারবালার শোক কিভাবে তাতে চাপা পড়তে পারে?
হ্যাঁ, মানবজাতির ইতিহাস ঘাঁটলে ৩৬৫ দিনেই কমপক্ষে ১টা করে আনন্দের ঘটনা ও ১ টা করে দুঃখের ঘটনা পাওয়া যাবে। কেবল পার্থক্য এই যে, কার কাছে কোনটার গুরুত্ব বেশি। রাসুলকে (সা.) যে ভালোবাসে, সে কিভাবে রাসুলের (সা.) নাতির শাহাদাত দিবসে আনন্দ করতে পারে? যেই নাতি ছিলেন রাসুলের (সা.) কলিজার টুকরা? জান্নাতের যুবকদের সর্দার? নিষ্পাপ, পবিত্র আহলে বাইত? হেদায়েতের আলো?
প্রতি মহররমে কেবল অশ্রুপাতই যথেষ্ট নয়, ইয়াজিদি প্রচারণার বিপরীতে আমাদেরকে সত্য কথাগুলি বলতে হবে। নতুবা জাকির নায়েক যেমন ইয়াজিদকে সাহাবী বানিয়ে দিয়েছেন, তেমনি করে এরা মহররমকে নাচগানের মাসে পরিণত করবে। মুসলিম উম্মাহকে তার শেকড় ভুলিয়ে দেবে।
অতএব, প্রত্যেকের নিজস্ব পরিসরে সাধ্যানুযায়ী মহররমের শিক্ষাকে জাগ্রত করার চেষ্টা করতে হবে। এই উপলক্ষ্যে ইমাম হুসাইন (আ.) এর পরিচিতি, সেই সূত্রে ইমামগণের পরিচিতি, আহলে বাইতের পরিচিতি, গাদীরে খুমের ইতিহাস, ইত্যাদি প্রাসঙ্গিক বিষয়াদি জনসম্মুখে তুলে ধরতে হবে। মনে রাখবেন, পেট্রোডলার শক্তিশালী হতো, যদি তা সত্যের পক্ষে ব্যয় হতো। কিন্তু মিথ্যার পক্ষ নেয়ায় তারা দুর্বল হয়ে গেছে। ইন্টারনেট, পিস টিভিসহ তাদের হাজারো প্রচারযন্ত্রের কোটি কোটি টাকার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে যাবে, যখন আপনার অশ্রুসিক্ত হৃদয় ইমাম হুসাইনের সত্য বর্ণনা করবে। কেননা সেই কথা তখন আল্লাহর সাহায্য ও শক্তি লাভ করবে।
আসসালামু আলা ইবাদিল্লাহিস সলিহিন।
..................................................................................................
#মহররম_পোস্ট - ১৪

**শরীর রক্তাক্ত করে শোক প্রকাশ করা হারাম**


মহররম মাস আসলেই দেখা যায়, কিছু মানুষ খালিগায়ে নিজেদের শরীর ছুরি/চাকু/তলোয়ার দিয়ে রক্তাক্ত করছে। এমনকি কোলের বাচ্চার উপরেও চালাচ্ছে এই জুলুম। জিজ্ঞাসা করলে বলবে, তারা ইমাম হুসাইনের (আ.) জন্য শোক প্রকাশ করছে।
এইসকল সীমালঙ্ঘনকারীরা নিজেদেরকে শিয়া দাবী করে থাকে।
প্রশ্ন হলো, তাদের ইমাম কি এটা শিক্ষা দিয়েছেন? ইমাম আলীর (আ.) শাহাদাত হয়েছিল তলোয়ারের আঘাতে। সেই শোকে কি তাঁর পুত্র ইমাম হাসান (আ.) ও ইমাম হুসাইন (আ.) নিজেদের শরীর রক্তাক্ত করেছেন?
না।
ইমাম হুসাইনের (আ.) কারবালায় শাহাদাতের ঘটনা স্মরণ করে কি তাঁর পুত্র ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.) শরীর রক্তাক্ত করেছেন?
না।
তাঁর বংশধারায় আগত বাকী ইমামগণের কেউ-ই কি শরীর রক্তাক্ত করেছেন?
না।
তাঁরা কান্নাকাটি করেছেন, নামাজ-রোজা করেছেন।
তো, তারা নিজেদেরকে ইমামের অনুসারী দাবী করে, অথচ ইমামের চেয়ে আগ বাড়িয়ে কাজ করে? এরা কি প্রকৃতই ইমামের অনুসারী?
কেউ যদি ইমাম তথা নেতার সামনে সামনে চলে, তাহলে সেটাকে কি নেতার অনুসরণ বলে, নাকি নিজের খেয়ালখুশী-প্রবৃত্তির অনুসরণ বলে?
এতই যখন ইমামের প্রতি প্রেম, তো যাও না, ইরাকে যাও, সিরিয়ায় যাও -- উনাদের বিভিন্নজনের পবিত্র মাজারশরীফকে ISIS এর হাত থেকে রক্ষা করতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ো?
তাতো করবে না।
যেখানে মুসলমানদের ২৪ ঘন্টায় কয়েক ঘন্টা পরপরই নামাজ পড়তে হয়, এবং রক্ত ঝরলে ওজু-ই থাকে না, সেখানে এরকম রক্তারক্তি করে তারপর তারা নামাজ পড়ে কিভাবে?
আমার প্রশ্ন, এই লোকগুলো কি আদৌ নামাজ পড়ে? রোজা রাখে?
নাকি বছরে একদিন রাস্তায় ক্যামেরার সামনে লোক দেখানোর জন্য এসব করে?
রক্ত যখন ঝারাবেই, বাসায় ঝরাও?
রাস্তায় কেন?
এগুলো যে সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতা এবং চরমপন্থা, এগুলো যে সেইসব লোকদের পথভ্রষ্টতার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়, যারা এজিদকে নির্দোষ বানানোর অপচেষ্টা করে --
একথা আমাদের সুস্পষ্ট বোঝা দরকার।
যারা এজিদকে রাদিয়াল্লাহু আনহু বলে, যারা জাহান্নামী এজিদ ও মুয়াবিয়াকে নির্দোষ-মহান করে উপস্থাপন করে, তারা কি ইমাম হুসাইন (আ.) কিংবা তাঁর বংশকে ইমাম মানে?
না।
একইভাবে যারা এভাবে নিয়ম করে শোক প্রকাশের নামে শরীর রক্তাক্ত করে, তারাই কি ইমাম হুসাইন (আ.)-কে মানে? অনুসরণ করে? তাঁর বংশকে অনুসরণ করে?
না।
যদি করতই, তবে এভাবে শরীর রক্তাক্ত করা ও মাসুম বাচ্চাদেরকে রক্তাক্ত করার মত হারাম কর্ম করত না শোক প্রকাশের নামে; কেননা, ইমাম হুসাইনের (আ.) শোকে তাঁর বংশধর ইমামগণ কখনো এমনটা করেননি, এটা তাঁদের সুন্নাত নয়।
মুখে ইমাম হুসাইনকে (আ.) স্বীকার করা আর কাজে-কর্মে সত্যিকার অর্থে ইমামের অনুসরণ করা -- দুটো ভিন্ন জিনিস।
ইতিহাসে কবে থেকে কারবালার তরে শোক প্রকাশের নামে এই শরীর রক্তাক্ত করার রীতি চালু হয়েছিল?
অনুসন্ধান করলে হয়ত দেখা যাবে, এজিদপন্থীদের ভাড়াটে লোকেরা এসব রীতি চালু করেছে, যেন এর মাধ্যমে প্রকৃত হুসাইনপ্রেমীদেরকে সাধারণ মানুষের কাছে অগ্রহণযোগ্য করে তোলা যায়।
..................................................................................................
#মহররম_পোস্ট - ১৫


**জালিমের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম**


জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাস হলো মহররম মাস।
জালিমের মুখোশ উন্মোচনের মাস মহররম।
জুলুমের কূটকৌশল উন্মোচনের মাস মহররম।
আধুনিক সেকুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লেজিসলেশান (সংসদ), আর্মড ফোর্সেস (আর্মি) ও জুডিশিয়ারি (আদালত) হলো এক মহা জুলুমের ছদ্মবেশী তিন যন্ত্র, যারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করে জুলুম টিকিয়ে রাখার জন্য।
তারচেয়েও বড় জালিম হলো big corporations: বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, যারা তাবৎ দুনিয়াকে দাস বানিয়ে রেখেছে।
আর এই দাসত্বের শৃঙ্খলে তারা আমাদেরকে আবদ্ধ করেছে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে:
টাকা আমাদের শ্রমকে ধারণ করে, অথচ সেই টাকার মূল্য আপ-ডাউন করায় অন্যরা -- ব্যাংক ব্যবসায়ীরা!
টাকা আমাদের শ্রমকে সঞ্চয় করার মাধ্যম,
অথচ সেই টাকা আমরা প্রিন্ট করি না, প্রিন্ট করে (ব্যাংকের আড়ালে) কিছু ব্যবসায়ী! সেই টাকার মান কমে যাওয়া (বা বেড়ে যাওয়া) আমরা নির্ধারণ করি না -- নির্ধারণ করে ব্যাঙ্ক (ব্যবসায়ীরা)!
ইমাম হুসাইনের (আ.) প্রতিবাদী চেতনাকে ধারণ করব, শোকাহত হব কারবালার স্মরণে, অভিশাপ দেব জালিম এজিদকে ও এজিদের অপকৌশলের মুখোশ উন্মোচন করব, অথচ --
অথচ যামানার এজিদদের চিনব না, আধুনিক যুগের জুলুমের মুখোশ উন্মোচন করব না, তাদের জুলুমের অ্যাপারেটাসগুলিকে চিনব না --
তবে জালিমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী চেতনা কেবল হৃদয়ের ভিতরেই র'য়ে যাবে, কার্যকর রূপ ধারণ করতে পারবে না। এবং যামানার ইমামের (আ.) আগমণের ক্ষেত্রও প্রস্তুত হবে না।
তাই মহররমে কেবল আবেগাপ্লুত ও শোকার্ত হওয়াই যথেষ্ট নয়, বরং আধুনিক যুগের সকল নিপীড়নমূলক ব্যবস্থার মুখোশ উন্মোচন করতে হবে, এবং সেজন্যে দীর্ঘ বুদ্ধিবৃত্তিক সাধনার প্রস্তুতি নিতে হবে।
আর বর্তমান বিশ্বের অর্থব্যবস্থা হলো একালের সকল জুলুমের গোড়া। এটার সম্যক ধারণা অর্জন তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
"Who controls the money, controls the world."
আধুনিক অর্থব্যবস্থা, কাগজের নোট, নোটের মূল্য নির্ধারণ, গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড, কাগজের নোটের মূল্য কেন বছর বছর কমে, এর সুবিধা কারা পায়, মুদ্রাস্ফীতি কী, অর্থনৈতিক মন্দা কী, ব্যাঙ্কের behind the scene কাজ কী, ইত্যাদি বিষয়ে ছোট ছোট লেখা কিংবা অডিও/ভিডিও পোস্ট করার ইচ্ছা আছে, এই মহররমেই, ইনশাআল্লাহ।
যাদের আগ্রহ আছে, এই পোস্টের উপরে ডানদিকের কোনায় options এ গিয়ে turn on notifications for this post সিলেক্ট করতে পারেন, বা এখানে একটা কমেন্ট রেখে যেতে পারেন। এই সংক্রান্ত পোস্ট/অডিও/ভিডিওর লিঙ্ক এখানে কমেন্টে যুক্ত করব ইনশাআল্লাহ।
..................................................................................................
#মহররম_পোস্ট - ১৬

**কেবল মদের নেশাই কি হারাম? যে নেশা কারবালাকে ভুলিয়ে দেয়, রমজান মাসের মর্যাদাকে ভুলিয়ে দেয়, সে নেশা কি হারাম নয়?**


**কেবল মদের নেশাই কি হারাম? যে নেশা কারবালাকে ভুলিয়ে দেয়, রমজান মাসের মর্যাদাকে ভুলিয়ে দেয়, সে নেশা কি হারাম নয়?**
২০১৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ চলছে। বাংলাদেশ টাইম রাত দুটো আড়াইটার দিকে খেলা হতো মেবি। এলাকায় এলাকায় তরুণ ছেলেরা প্রজেক্টর ভাড়া করে সবাই মিলে খেলা দেখার আয়োজন করেছে। গভীর রাতে ছেলেরা বাসা থেকে বের হচ্ছে। না, কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে নয়। শুধুই খেলা দেখতে।
২০১৬, আজকে, এখন। সবাই টিভি / কম্পিউটারে উত্তেজনাসহকারে বসে আছে, বাংলাদেশ vs ইংল্যান্ড ক্রিকেট দেখছে। প্রথমদিন বাংলাদেশ হেরেছে, আজকে জিতেছে, দুইদিন বাদে ১২ তারিখ চরম উত্তেজনার একটা ফাইনাল খেলা হবে। কেবল তরুণরা না, বয়স্করাও ব্যস্ত। না, খারাপ কিছুতে না, ভদ্র খেলা ক্রিকেট নিয়ে। এই যে বিনোদনটা তারা করছে, খারাপ কিছু দেখেও সময়টা কাটাতে পারত। কিন্তু তা না করে সুস্থ বিনোদন ক্রিকেট খেলা দেখছে।
তবু ক্রিকেট নিয়ে এই মাতামাতির বিরোধিতা করি কেন, সেটা আমার পরিচিতজনদেরকে বিরক্ত, হতাশ বা দুঃখিত করে। :/ কিন্তু আমি নিরুপায়!
ক্রিকেট / ফুটবল এগুলোর বেশি উদাহরণ বা ইতিহাস উল্লেখ করতে পারব না, কারণ জানা নেই। তবে --
২০১৪ সালের জুলাইয়ে যখন গভীর রাতে সবই বিশ্বকাপ ফুটবল দেখছে, তখন কিন্তু রমজান মাস চলছে। এই গভীর রাত্রিতে যেখানে ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ার কথা, সেখানে সবাই বিশ্বকাপ ফুটবল দেখছে। যদিও রমজানের এক রাত্রির ইবাদত হাজার বছরের ইবাদতের চেয়ে উত্তম, কিন্তু তাতে কী! রমজান মাসের জন্য আমরা অপেক্ষা করেছি মাত্র ১১ মাস, আর বিশ্বকাপ ফুটবলের জন্য অপেক্ষা করেছি চার বছর!
আমি দেখলাম, এমনকি যে মানুষটাকে আমি চিনি যে ঘরে-বাহিরে যেখানেই থাকুন তাহাজ্জুদ মিস করেন না পারতপক্ষে, তিনিও খেলা দেখছেন গভীর রাতে। রমজান মাসে! কারণ একদিকে ইসলামচর্চা যেমন ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি ফুটবল/ক্রিকেটের "নির্দোষ" নেশাও বৃদ্ধি পেয়েছে। যেহেতু এই খেলা হারাম নয়, বরং একটি সুস্থ বিনোদন, তাই এটার নেশা থামানোর ব্যাপারে ভিতর থেকে কোনো প্রতিরোধ আসেনি।
একটা জাতির তরুণ সমাজ রমজান মাসের পবিত্রতা ও ভাব গাম্ভীর্য নষ্ট করে এতদূর পৌঁছিয়েছে যে তারা গভীর রাতে এলাকায় বড় পর্দায় ফুটবল খেলা দেখে চিৎকার করবে, এটা নিয়ে পরদিন সারাদিন আলাপ করবে, এক দলের সাপোর্টার আরেক দলের সাপোর্টারকে কটাক্ষ করবে, ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেবে, আরো কত কী!
আর হ্যাঁ, তখনই, সেই রমজান মাসে গাজায় হামলা শুরু করলো ইসরায়েল। অন্য সময় যেই তরুণদের দেখেছি ইসরাইলী বর্বরতার বিরুদ্ধে ফেইসবুকে লিখতে, তখন তাদেরকে দেখলাম সব ভুলে বিশ্বকাপ নিয়ে মেতেছে।
আর আজকে? আজকে সবাই বাংলাদেশ ক্রিকেট, মাশরাফি ইত্যাদি আবেগে ভেসে যাচ্ছে, অথচ এখন মহররম মাস। পরশুদিন ১০ই মহররম, আশুরা। কারবালার ময়দানে ইমাম হোসেন (আ.) এর শাহাদাত দিবস। কিন্তু ক্রিকেট নিয়ে সবার এই মাতামাতি মহররমের মর্যাদা ও পরিবেশ নষ্ট করে দিচ্ছে। মহররম মাসে বাংলাদেশী মুসলমানেরা খুশিতে বাঁশি বাজাচ্ছে, স্ট্যাটাস দিচ্ছে, আরো বহুত কিছুই করছে।
অথচ এমনটাই কি হওয়া উচিত নয় যে, রমজান মাস আসলে আর সবকিছুর ঊর্ধ্বে সেটার মর্যাদা দেয়া হবে। যথাযথ পবিত্রতা ও ভাব গাম্ভীর্যের সাথে রোজা পালন হবে?
এটাই কি হওয়া উচিত নয় যে, আর যত কাজই থাকুক, আজান পড়লে আর সব কাজ রেখে নামাজ পড়তে উঠতে হবে?
এটাই কি হওয়া উচিত নয় যে, মজলুম ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইলী বর্বরতা শুরু হলে সেটাই হবে সবার চিন্তার বিষয়, খেলা নয়?
আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, ক্রিকেট / ফুটবল নিয়ে মাতামাতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তা রমজান মাসের তাৎপর্য-মর্যাদাকে override করতে সক্ষম হয়েছে। ফুটবল বিশ্বকাপ উত্তেজনা বৃদ্ধি করছে এতটাই বেশি যে, ঐ সময়ে ইসরাইলী হত্যাযজ্ঞ আমাদেরকে নাড়া দিচ্ছে না। বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম নিয়ে মাতামাতি, গর্ব ইত্যাদি এতই বেড়ে গিয়েছে যে, মহররম মাসে তরুণ ছেলেরা নিজেকে কারবালার সৈনিক হবার চেয়ে ক্রিকেটের খেলোয়াড় বা দর্শক হিসেবে দেখতেই বেশি পছন্দ করছে।
আমরা কেউ কেউ মনে করছি, এই "নির্দোষ" খেলা ক্রিকেটকে এমন নেশার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যে, তরুণ হৃদয়ে তা সর্বাধিক গুরুত্বের স্থান দখল করে নিয়েছে (নামাজ, রোজা, আশুরা -- সবকিছুর ঊর্ধ্বে)। এবং এটা মুসলিম জাতির জন্য অশনি সংকেত। তরুণ সমাজই প্রাণ, তারাই রক্ত। তারা যখন ফিলিস্তিনে ইসরাইলী বিমান হামলা ভুলে যেতে পারে বিশ্বকাপ ফুটবলের জন্য, তখন মজলুম গাজাবাসীর আর্তির জবাব দেয়ার আর কেউ থাকে না।
এই মহররম মাসে আজকে কারবালায় ইমাম হোসেন (আ.) পানি চাইলে আমরা "প্রাউড" বাংলাদেশি তরুণেরা পানি নিয়ে এগিয়ে যেতাম, নাকি মাশরাফির খেলা নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম, সেই ভাবনা ব্যথিত করে।
(পোস্টটি গতবছর লেখা: https://www.facebook.com/masud.alam.nure/posts/996727563784048 )
..................................................................................................
#মহররম_পোস্ট - ১৭

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

টাকার ইতিহাস, মানি মেকানিজম ও ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মহা জুলুম

ভূমিকা: জালিমের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম  (মহররম: ইনফো সিরিজ এর শেষ পোস্ট ছিল এটা। মূল সিরিজটি পড়ে আসুন ) জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাস হলো মহররম মাস। জালিমের মুখোশ উন্মোচনের মাস মহররম। জুলুমের কূটকৌশল উন্মোচনের মাস মহররম। আধুনিক সেকুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লেজিসলেশান (সংসদ), আর্মড ফোর্সেস (আর্মি) ও জুডিশিয়ারি (আদালত) হলো এক মহা জুলুমের ছদ্মবেশী তিন যন্ত্র, যারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করে জুলুম টিকিয়ে রাখার জন্য। তারচেয়েও বড় জালিম হলো big corporations: বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, যারা তাবৎ দুনিয়াকে দাস বানিয়ে রেখেছে। আর এই দাসত্বের শৃঙ্খলে তারা আমাদেরকে আবদ্ধ করেছে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে: টাকা আমাদের শ্রমকে ধারণ করে, অথচ সেই টাকার মূল্য আপ-ডাউন করায় অন্যরা -- ব্যাংক ব্যবসায়ীরা! টাকা আমাদের শ্রমকে সঞ্চয় করার মাধ্যম, অথচ সেই টাকা আমরা প্রিন্ট করি না, প্রিন্ট করে (ব্যাংকের আড়ালে) কিছু ব্যবসায়ী! সেই টাকার মান কমে যাওয়া (বা বেড়ে যাওয়া) আমরা নির্ধারণ করি না -- নির্ধারণ করে ব্যাঙ্ক (ব্যবসায়ীরা)! ইমাম হুসাইনের (আ.) প্রতিবাদী চেতনাকে ধারণ করব, শোকাহত হ

ধর্মব্যবসা: মুসলমানদের হাতে ইসলাম ধ্বংসের অতীত-বর্তমান (১)

ভূমিকা যদিও পলিটিকাল-রিলিজিয়াস ইস্যুতে নিশ্ছিদ্র আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করে আলোচনা করার অভ্যাস আমার, কিন্তু এখানে বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরে আর্গুমেন্ট করার প্রথমতঃ ইচ্ছা নেই, দ্বিতীয়তঃ সময় ও সুযোগ নেই। আমি যা সত্য বলে জানি, তা সংক্ষেপে তুলে ধরছি। যারা আমার উপর আস্থা রাখেন তাদের জন্য এই লেখাটি সোর্স অব ইনফরমেশান, উন্মুক্ত হৃদয়ের মানুষদের জন্য সত্য অনুসন্ধানের নতুন কিছু টপিক, আর প্রেজুডিসড ধর্মান্ধ রোগগ্রস্ত অন্তরের জন্য রোগ বৃদ্ধির উছিলা। শেষ পর্যন্ত আর্গুমেন্ট ও ডায়লগের দুয়ার উন্মুক্ত রাখার পক্ষপাতী আমি, কিন্তু সেই আর্গুমেন্ট অবশ্যই সত্য উন্মোচনের নিয়তে হওয়া উচিত, নিজের দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাস ও ধ্যান ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করবার উদ্দেশ্যে নয়। মক্কা-মদীনা: মুহাম্মদ (সা.) থেকে আলে-সৌদ (৬২৯-১৯২৪) এদেশের অধিকাংশ মানুষ মক্কা-মদীনার ইতিহাস কেবল এতটুকু জানেন যে, মুহাম্মদ (সা.) মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করেন। কিন্তু প্রায় চৌদ্দশ’ বছর আগে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র থেকে আজকের রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবের ইতিহাস কম মানুষই জানেন। প

পিস টিভি, জাকির নায়েক ও এজিদ প্রসঙ্গ

সম্প্রতি গুলশান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। আমি তখন দিল্লীতে ছিলাম। দেশে ফিরে শুনি পিস টিভি ব্যান করা হয়েছে বাংলাদেশে, এবং তার আগে ইন্ডিয়াতে। আমার বাসায় টিভি নেই, এবং আমি জাকির নায়েকের লেকচার শুনিও না। কিংবা পিস টিভিতে যারা লেকচার দেন, বাংলা কিংবা ইংলিশ -- কোনোটাই শুনি না; প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া আমার ইসলামের বুঝ জাকির নায়েকসহ পিস টিভি ও তার বক্তাদেরকে ইন জেনারেল আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। Peace TV বন্ধ হওয়ায় এদেশে বিকৃত ইসলাম প্রসারের গতি কমলো -- এটাই আমার মনে হয়েছে। একইসাথে আমি এটাও মনে করি যে, যেই অভিযোগ পিস টিভিকে ব্যান করা হয়েছে, তা নিছক অজুহাত। জাকির নায়েক কখনো জঙ্গীবাদকে উস্কে দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। কিংবা পিস টিভির লেকচার শুনে শুনে ISIS জঙ্গীরা সন্ত্রাসী হয়েছে -- এটা নিতান্তই হাস্যকর কথা। ISIS এর ধর্মতাত্ত্বিক বেইজ সম্পর্কে মোটেও ধারণা নেই, এমন লোকের পক্ষেই কেবল ISIS এর জন্য জাকির নায়েককে দোষ দেয়া সম্ভব। একইসাথে আমি এ বিষয়েও সচেতন যে, পিস টিভি বন্ধ করা হয়েছে আমাদের সরকারের রেগুলার “ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ