সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

Ramadan Post

রমজান মাসের আর ৫ দিন বাকি। খোদাপ্রেম-খোদাভীতি বৃদ্ধি ও আত্মশুদ্ধির মাস। তবে একইসাথে জ্ঞানার্জনও জরুরি। সেজন্যে পুরো কোরআন ৩০ দিনে বুঝে পড়াসহ আরো বিভিন্ন আত্ম-উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা প্রত্যেকেরই করা উচিত। আর আপনার জন্য কোন কোন বিষয় জরুরি, কিভাবে পরিকল্পনা করা উচিত, তা আপনিই ভালো বুঝবেন। তবে যেমনই হোক না কেন, পরিকল্পনা যেন থাকে; রমজান মাস শুরু হবার আগেই।
এটা নিজের কাছেই স্বীকার করা উচিত যে, জীবনের এতগুলো বছর পার হয়ে গেছে, অথচ আল্লাহর বাণী বুঝে পড়া হয়নি আমাদের বেশিরভাগ মুসলমানেরই। অবশ্য মেজরিটি মুসলমান যে কুরআন পরিত্যাগ করবে, সেকথা কুরআনেই আছে (সূরা:২৫, আয়াত:৩০)।
আমার ব্যক্তিগত অধ্যয়ন ও পর্যবেক্ষণে দেখেছি যে, ধর্মের প্রাইমারি লেভেলের শিক্ষা অর্জন না করে ইউনিভার্সিটি লেভেলের বিষয় নিয়ে নাড়াচাড়া ও মাতামাতি করাটা আমাদের মধ্যে মহামারী আকার ধারণ করেছে। এমতাবস্থায় আমভাবে (general) কথা বলার ক্ষেত্রে বেসিক মৌলিক বিষয়ের আলোচনাই বেশি বেশি হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। যেমন, আল্লাহর মনোনীত ব্যক্তিদের সম্পর্কে নিচের সংক্ষিপ্ত আলোচনাটা দেখুন।
………………………………
ধর্মীয় বিষয়ে যাদের অনুসণ করা হয়, তারা এক দৃষ্টিকোণ থেকে দুই প্রকার:
১. আল্লাহর মনোনীত ব্যক্তি
২. সাধারণ মানুষ যাদেরকে অনুসরণ করে, তারা
এই দ্বিতীয় ক্যাটেগরিতে আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তি থাকতেও পারেন, না-ও পারেন। যেমন, কেউ হয়ত একইসাথে "আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত" ব্যক্তিকেও অনুসরণ করে, আবার নিজের পছন্দমতো আরো কাউকে অনুসরণ করে!
এখন দেখুন, আল্লাহর মনোনীত ব্যক্তিগণের কমন বৈশিষ্ট্য কী। আল্লাহপাক যাদেরকে "অনুসরণযোগ্য" করেছেন, তাদের মাঝে কাউকে এমন পাবেন না যে, তরুণ বয়স পর্যন্ত অনেক পাপাচার করেছে, পরে হঠাৎ করে ভালো হয়ে গিয়ে ইসলাম প্রচার শুরু করেছে! বরং তারা জন্ম থেকেই নিষ্পাপ জীবন যাপন করেছেন (নবী, রাসুল, ইমাম…)।
প্রশ্ন হলো, আমরা সাধারণ মানুষ যারা গুনাহগার, তাদের সামনে যদি এমন ব্যক্তিকে ইনস্পিরেশান হিসেবে আনা হতো, যে আমাদের মতই কমবেশি গুনাহ করেছে জীবনে, তারপর হঠাৎ করে ইসলাম কবুল করে খুব ভালো মানুষ হয়ে গিয়েছে --
তাহলে বোধহয় বেশি ভালো হতো? আমরা বোধহয় অনুপ্রেরণা পেতাম যে, ওমুক ডাকাত যদি পরে সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে ভালো হয়ে যেতে পারে, আমিও তাহলে ছোট-বড় গুনাহ ত্যাগ করে ভালো হতে পারব!
কিন্তু আল্লাহপাক এমন মানুষদেরকে আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস করেননি, "অনুসরণযোগ্য" করেননি। তিনি কেবল তাঁদেরকেই অনুসরণযোগ্য করেছেন, যারা একদম শুরু থেকে পুতঃপবিত্র জীবন যাপন করে এসেছে।
অতএব, সেই নিষ্পাপ ব্যক্তিগণকেই আমরা অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে গ্রহণ করব ও অনুসরণ করব, এটাই আল্লাহর ইচ্ছা। আর যদি এমন ব্যক্তিকে অনুপ্রেরণার উৎস বানাই, যে আগে সন্ত্রাসী ছিল, মানুষ খুন করে বেড়াত, নানা পাপাচারে লিপ্ত ছিল, পরে হঠাৎ কুরআন শুনে ইসলাম কবুল করে ভালো হয়ে গেল --
তাহলে সেটা আমাদের নিজেদের পছন্দ করা "অনুসরণযোগ্য" ব্যক্তি, আল্লাহর পছন্দ করা নয়। কেননা, সাধারণ মানুষের অনুসরণের জন্য আল্লাহপাক সেসব ব্যক্তিকেই পছন্দ করেন (মনোনীত করেছেন), যারা শিশুকাল থেকেই বিশুদ্ধ জীবন যাপন করেছে।
(তা সত্ত্বেও বহু মানুষ এধরণের "পাপাচারী থেকে মুসলিম"-কে অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করেন। যে যেমন, তার পীরও তেমন: like attracts like!)
আমি আপনাদের সামনে একটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে একটি মূলনীতি উপস্থাপন করলাম। অতঃপর এটি আপনার কাছে ব্যক্তিগতভাবে গ্রহণযোগ্য হলে ধর্মজগতে ও মুসলমানদের ইতিহাসে তা প্রয়োগ করে দেখতে পারেন।
………………………………
#Ramadan_post 1



ধর্মীয় আলোচনা মানুষের মুখের উপর ছুঁড়ে দিলেই হয় না। বরং শ্রোতা/ পাঠকের বোঝার উপযোগী করে বলতে হয়, এবং তারচেয়েও বড় কথা, পাঠকের জীবনের সাথে তা সম্পর্কিত হতে হয়। যেমন, এখন যদি কুরআনের আয়াত রহিত হওয়া-না হওয়া সংক্রান্ত আলোচনা করা হয়, খুব কম পাঠকই এতে আগ্রহ বোধ করবেন। অথচ এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এমনকি নামাজের আগেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অপরদিকে, সামনে রমজান মাস আসছে, এখন যদি তারাবি নামাজ নিয়ে কোনো আলোচনা করা হয়, তাতে অধিকাংশ পাঠক খুবই আগ্রহ বোধ করবে, এবং পক্ষ-বিপক্ষ তর্কে মেতে উঠবে; অথচ যদিও তারাবি নামাজ গুরুত্বের বিচারে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বের।
এমতাবস্থায় এমন পাঠক সমাজের জন্য ধর্মীয় কথা লেখা খুবই কঠিন কাজ। যারা অগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মেতে আছে, এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বারবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও তাতে কাজ হচ্ছে না। বরং অনেক ক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের আলোচনা করা হলে উল্টা দোষারোপ করছে যে: "আপনি ফেতনা ছড়াচ্ছেন।"
তবু কল্যাণকামনা থেকে কথা বলা উচিত, এবং নিন্দাবাক্যকে ব্যক্তিগতভাবে গ্রহণ করা উচিত নয়। উচ্চতর ও খাঁটি জ্ঞানই কেবল মানুষকে এই দৃষ্টিভঙ্গি দান করতে পারে।
যাহোক, আজকের আলোচনাও সংক্ষিপ্ত। আলোচনার বিষয়: "ডিভাইন অথরিটি" (divine authority - ঐশী অথরিটি বা কর্তৃত্ব)।
……………………………………………………
বিধানদাতা কে? উত্তর: আল্লাহ। অথবা সেইসাথে আল্লাহপাক যাকে "ডিভাইন অথরিটি" দান করেন, তিনি। যেমন, নবী-রাসুল। আমরা জানি, রাসুল (সা.) ইসলামের বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করেছেন নিজে থেকে। কেন? কারণ তিনি ডিভাইন অথরিটিপ্রাপ্ত। কিন্তু আপনি-আমি যদি বিভিন্ন আইন বা আচার-অনুষ্ঠান তৈরী করি, তারপর সেটাকে "ইসলামের অংশ" দাবী করি, তাহলে কি সেটা বৈধ হবে?
না। কেননা, ডিভাইন অথরিটির দিক থেকে মানুষ দুই প্রকার:
১. (আল্লাহর পক্ষ থেকে) ডিভাইন অথরিটিপ্রাপ্ত,
২. ডিভাইন অথরিটি নেই, এমন সাধারণ মানুষ।
এই দৃষ্টিকোণ থেকে মুহাম্মদ (সা.) ১ম ক্যাটেগরিতে। আর আপনি-আমি ২য় ক্যাটেগরিতে।
এই ডিভাইন অথরিটি ঠিক যেন রাজার আঙটির মত। যেই আঙটি দিয়ে বিভিন্ন চিঠিতে ছাপ দিলে সেটা "রাজা কর্তৃক সার্টিফাইড" হয়ে যায়। তখন সেই কাগজটা(বা আইনটা) ঐ রাজ্যের মানুষদের জন্য বৈধ হয়ে যায়। কিংবা-- রাজা ভ্রমণে বের হলে তখন রাজপুত্রের হাতে আঙটি দিয়ে যায়, তখন রাজপুত্র রাষ্ট্রীয় কাগজপত্রে "সিলমোহর" করতে পারে। কেন পারে? কারণ তার কাছে "রাজকীয় সিল" আছে।
ঠিক তেমনি আল্লাহ তায়ালা "ঐশী সিল" দিয়েছেন মুহাম্মদ (সা.)-কে। যার ফলে তিনি হালাল-হারাম ঘোষণা করেন, আইন প্রণয়ন করেন, ইসলামের সংযোজন-বিয়োজন করতে পারেন। কিংবা, রাসুল (সা.) যদি আল্লাহপাকের ইচ্ছাক্রমে আর কাউকে "ঐশী সিল এর অধিকারী" ঘোষণা করে যান, তবে তিনিও একইভাবে ইসলামের সংযোজন-বিয়োজন করতে পারবেন। কিন্তু --
কিন্তু সেই ডিভাইন অথরিটি না থাকলে কারো অধিকার নেই ইসলামে নতুন কিছু চালু করা (বিদআত), কিংবা ইসলামের কিছু বাদ দেবার। তা সেই ব্যক্তি যত বড় হুজুর, পীর, আলেম-দরবেশ, তাবেঈ, তাবে তাবেঈ কিংবা সাহাবীই হোন না কেন।
শেষকথা: ডিভাইন অথরিটির দিক থেকে মানুষ দুই প্রকার- হয় ঐশী অথরিটি প্রাপ্ত, নাহয় ঐশী অথরিটি বিহীন। কেবলমাত্র ঐশী অথরিটি প্রাপ্ত ব্যক্তিরাই অধিকার রাখেন ইসলামে সংযোজন-বিয়োজন করার। (তাঁদের এই সংযোজন-বিয়োজন আল্লাহরই ইচ্ছায়, তাঁরই অনুমতিক্রমে।)
………………………………………………………
এখন যদি এই ভিন্ন দৃষ্টিকোণের আলোকে উপস্থাপিত মূলনীতি আপনার বিচারবুদ্ধির কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে আপনি তা মুসলমানদের ইতিহাসে প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। রাসুল (সা.) এর সময়ে চালু থাকা বিভিন্ন বিধান যেমন মুসলমানেরা রহিত করে ফেলেছে, তেমনি নতুন উদ্ভাবন (বিদআত) প্রবেশ করিয়েছে। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে এই দুইটারই উদাহরণ আছে; আছে একেবারে ঘুম ভাঙে যে ফজরের আজান শুনে, তাতেই (সংযোজন ও বিয়োজন-- উভয়ই)। এবং আরো অনেকই আছে। প্রয়োজন শুধু ইতিহাসের নির্মোহ বিশ্লেষণ ও সেজন্যে মৌলিক বিষয়ে উপযুক্ত দৃষ্টিকোণ।
#Ramadan_post 2

বৈধ নেতৃত্ব দুই প্রকার:
১. হয় আপনি আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত, অথবা
২. জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত।
মুহাম্মদ (সা.) এর পর থেকে আজ পর্যন্ত যুগে যুগে যারা মুসলমাদেরকে শাসন করেছে, তাদের কয়জন উপরের বৈধ নেতৃত্বের শর্ত পূরণ করেছে/ করে? তা আপনার বিবেচনার বিষয়। আমি এ সংক্রান্ত মূলনীতিকে আপনাদের বিবেক ও বিচারবুদ্ধির কাছে পেশ করছি।
জনগণ যখন কাউকে সিলেক্ট করে, তখন সে তাদের জন্য বৈধ নেতা হয়ে যায়। যেমন, একদল সন্ত্রাসী যদি আরেক সন্ত্রাসীকে নেতা নির্বাচিত করে, তাহলে সেটা তাদের জন্য বৈধ। অর্থাৎ, একদল মানুষ, তারা ভালো হোক, খারাপ হোক, বাঙালি হোক, অবাঙালি হোক -- যে-ই হোক না কেন, তারা যদি কাউকে তাদের নেতা হিসেবে নির্বাচিত করে, তাহলে সেই নেতৃত্ব বৈধ।
এটাতো খুবই স্বাভাবিক কথা যে, আমি যাকে নেতা হতে বলিনি, সে ছলে-বলে-কৌশলে যদি আমার ঘাড়ে চেপে বসে, তবে সেটা বৈধ নেতৃত্ব হয় কিভাবে? এমনকি আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত নবীও কোনোরূপ অধিকার প্রয়োগ করতেন না অমুসলিমদের উপর, কেননা, তারা মুহাম্মদ (সা.)-কে মেনে নেয়নি। অথচ গোটা মানবজাতির উপর নেতৃত্ব-কর্তৃত্বের জন্য নবীর চেয়ে উত্তম আর কে হতে পারে? কিন্তু সেই নবীও কারো উপর জোর খাটাননি --
শুধুমাত্র যারা নিজে থেকে তাঁকে নবী হিসেবে মেনে নিয়েছে, তাদের উপর তিনি কর্তৃত্ব প্রয়োগ করেছেন (নবী হিসেবে)।
অতএব, যেকোনো নেতৃত্বের প্রাথমিক শর্ত হচ্ছে, জনগণ নিজে থেকে গিয়ে তাকে মেনে নিবে। এমনকি আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তি হলেও, তিনি নেতৃত্ব/ কর্তৃত্ব প্রয়োগের আগে অপেক্ষা করেন জনগণ কর্তৃক তাঁকে মেনে নেয়ার। জনগণ নিজে থেকে মেনে নিলে কেবল তখনই তিনি কর্তৃত্ব প্রয়োগ করেন।
.................................................................................
মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্রে মুহাম্মদ (সা.) কেবল তাঁদের উপরেই নেতৃত্ব প্রয়োগ করেছিলেন, যারা তাঁকে --
১. নবী হিসেবে মেনে নিয়েছিলো (আর যেকোনো নবী তাঁর উম্মতের উপর সার্বিক নেতৃত্বের অধিকারী হন)
২. নবী না মানলেও রাষ্ট্রনেতা হিসেবে মেনে নিয়েছিলো (অতএব, রাষ্ট্রনেতা হিসেবে নির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে সেইসব ইহুদি-খ্রিষ্টানদের উপর তিনি কর্তৃত্বের অধিকারী হয়েছিলেন)।
কিন্তু জোর করে কর্তৃত্ব চাপিয়ে দেননি। অতএব, "জনগণ কর্তৃক স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেতাকে মেনে নেয়া" -- এটা বৈধ নেতৃত্বের পূর্বশর্ত। এখন সেই নেতা আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত হতেও পারে, না-ও পারে।
মুহাম্মদ (সা.) কে গান গেয়ে স্বাগত জানিয়ে মদীনাবাসী নেতা হিসেবে বরণ করে নিয়েছিল। একইসাথে তিনি আল্লাহ কর্তৃক মনোনীতও ছিলেন।
আজকে আমরা বাংলাদেশীরাও আমাদের নেতা নির্বাচন করছি, যুগযুগ ধরে করে এসেছি। কিন্তু তারা আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত নন। তবুও বৈধ নেতা, যদি সঠিকভাবে নির্বাচন হয়ে থাকে।
....................................................................................
এখন এই মূলনীতি আপনি ব্যক্তিগতভাবে গ্রহণ করলে এটাকে মুহাম্মদ (সা.) এর পর থেকে শুরু করে বিগত ১৪০০ বছরে মুসলমানদেরকে যারা শাসন করেছে, তাদের উপর প্রয়োগ করে দেখতে পারেন যে:
১. প্রথমে জনগণ তাদেরকে নেতা হিসেবে আহবান করেছিল কিনা,
২. আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত ছিল কিনা।
আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত হোক বা না হোক, ১ নাম্বার শর্ত কিন্তু পূরণ হতে হবেই।

#Ramadan_post 3
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) কথাটার সাথে অনেকেই পরিচিত। সফটওয়্যার এঞ্জিনিয়াররা এমন কিছু বিশেষ প্রোগ্রাম তৈরী করেন, যেই প্রোগ্রাম নিজে থেকেই বিভিন্ন বিষয় শিখতে পারে। তখন সেই প্রোগ্রামকে আমরা বলি, আর্টিফিশিয়ালি ইন্টেলিজেন্ট সফটওয়্যার বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সফটওয়্যার। (সম্প্রতি বাংলাদেশে এধরণের একটা রোবট নেয়া হয়েছিল, অনেকের হয়ত মনে আছে।)

তো, এইযে একটা মেশিন (অর্থাৎ, কম্পিউটার) নিজে থেকে একটা বিষয় শিখতেছে, এটাকে আমরা বলছি: মেশিন লার্নিং ( ML)। এই মেশিন লার্নিঙের কথা এখানে বলার একটা বিশেষ কারণ আছে। কারণটা হলো, একটা মেশিনকে (বা কম্পিউটার প্রোগ্রামকে) তখন আমরা দেখি একটা শিশুর মত করে: যাকে সাদাকে সাদা শিখালে সাদা-ই বলবে, কিংবা সাদাকে কালো শিখালে কালো-ই বলবে।
আবার, আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে, এই মেশিনটাকে আমরা ছেড়ে দিব (যেমনটা একটা ছোট বাচ্চাকে যদি জঙ্গলে একা ছেড়ে দেই যে, নিজে থেকে শিখুক), নাকি তাকে বিভিন্ন জিনিস শিখাবো (যেমনটা বাচ্চাদেরকে শিখানো হয়: এটা বাতি, এটা পাখি, এটা মানুষ, বিড়াল…)।

অর্থাৎ, মানুষের জ্ঞান অর্জন বা লার্নিং এর যতগুলো দিক (aspect) আছে, সেগুলো আমাদেরকে বিবেচনায় নিতে হয়, মেশিনকে শিখানোর জন্য। যেমন ধরেন, একটা বাচ্চাকে যদি শুধু ১টা বিড়াল দেখিয়ে বলা হয়, এটা বিড়াল। তারপর একটা তুলতুলে কুকুরছানা দেখানো হয়, সে কিন্তু ঐটাকেও বিড়াল বলে ভুল করতে পারে। কিংবা ভিন্নধরণের কোনো বিড়াল দেখলে সেটাকে বিড়াল হিসেবে না-ও চিনতে পারে।
এক্ষেত্রে কী ঘটেছে? এক্ষেত্রে তাকে যথেষ্ট শিখানোর আগেই এক্সাম নেয়া হয়েছে।

আবার, যদি তাকে পৃথিবীর প্রত্যেকটা বিড়ালের ছবি দেখিয়ে বলা হয় যে, এটা বিড়াল। তারপর যদি আমরা তার এক্সাম নেই, অর্থাৎ টেস্ট করে দেখি যে, সে বিড়াল চিনতে পারে কিনা --
এবং একটা বিড়ালের ছবি এনে দেখাই --
তার ব্রেইন আসলে তখন বিশেষ কিছুই করবে না -- কারণ সব বিড়ালের ছবিইতো সে আগে দেখেছে, তাই সে ঐ ছবির সাথে হুবহু ম্যাচিং করে বলবে: এটা বিড়াল।
এক্ষেত্রে কী সমস্যা করলাম আমরা? এক্ষেত্রে আমরা বাচ্চাটাকে বেশি পড়া মুখস্থ করিয়েছি, যার ফলে তার নিজস্ব আক্বল বা বুদ্ধিমত্তা খাটানোর আর সুযোগ পায়নি সে, এবং এখনও পাচ্ছে না। ফলস্বরূপ সে একটা কপি-পেস্ট মেশিনে পরিণত হয়েছে।
…………………………………………………………………
উপরের দুইটা উদাহরণে দুটো চরম পরিস্থিতি (extreme ends) দেখানো হয়েছে। প্রথমটায় কম ট্রেনিং, আর দ্বিতীয়টায় অতিরিক্ত ট্রেনিং দেয়া হয়েছে। মেশিন লার্নিং (ML) এ এই বিষয়টাকে বলা হয় আন্ডারফিট ও ওভারফিট। আর কম্পিউটার সায়েন্স জগতে এই বিষয়গুলো এমনি এমনি আসেনি, বরং মানুষের ব্রেইন বাস্তবে কিভাবে কাজ করে, তা থেকে এসেছে।

তো, ট্রেনিঙের শুরুতে একটা মানুষ আন্ডারফিট থাকে। তারপর যত ট্রেনিং হতে থাকে, তত তার ব্রেইনের যোগ্যতা বাড়তে থাকে। তারপর একটা নির্দিষ্ট মাত্রার পর আরো ট্রেনিং দেয়া হতে থাকলে ব্রেইনের নিজস্ব যোগ্যতা কমতে থাকে, এবং কপি-পেস্ট মেশিনে পরিণত হয়। তখন দুইটা বিষয়ের মধ্যে তুলনামূলক যাচাই বাছাই করে ব্রেইন খাটিয়ে একটা সিদ্ধান্ত দেয়া -- এই যোগ্যতা তার একেবারেই কমে যায়। তার ব্রেইন শুধু চেষ্টা করে হাজার হাজার তথ্য, যা সে ব্রেইনে স্টোর করে রেখেছে, সেই মুখস্থ জিনিসের ভিতরে রেডি উত্তর খুঁজতে এবং কপি-পেস্ট করে উত্তর দিয়ে দিতে। এভাবে তার নিজস্ব যাচাই বাছাই বিচার বিশ্লেষণের ক্ষমতা কমে যায়।

রমজান মাসের পোস্টে এই বিষয়টা আলোচনা করার উদ্দেশ্য হলো: আপনি কতটুকু পড়বেন? তা নির্ধারণ করা। এটা যেকোনো পড়াশুনার বিষয়েই সত্য, ধর্মীয় পড়াশুনার ক্ষেত্রেও। ৬ হাজার হাদীস মুখস্থ করলে সম্ভবতঃ আপনি কপি পেস্ট মেশিনে পরিণত হবেন: নিজস্ব যাচাই বাছাই বিচার বিশ্লেষণের ক্ষমতা কমে যাবে এবং যেকোনো প্রশ্নের উত্তরে বারবার বুখারী খুলে বসবেন।
বিপরীতক্রমে, যদি মাত্র দুই চারটা হাদীস জানেন, আর সেটুকু দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই জগতের সব বিষয়ের সমাধান করার চেষ্টা করেন, তাহলে বিড়ালকে কুকুর মনে করবেন। কিংবা মুনাফিককে সাহাবী মনে করে সম্মান শ্রদ্ধা করবেন, প্রচার প্রচারণা করবেন।

আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বারবার বলেছেন, "অতঃপর, তোমরা কি বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করবে না?"
অর্থাৎ, আমাদের নিজেদের যাচাই-বাছাই, বিচার-বিশ্লেষণের যোগ্যতা থাকতে হবে। নিজে নিজে ব্রেইন খাটিয়ে নিরপেক্ষভাবে যাচাই বাছাই বিচার বিশ্লেষণ করে সত্য উদঘাটন করতে হবে:
পরম স্রষ্টা আছেন কি?
হিন্দুধর্ম, খ্রিষ্টধর্ম, ইসলামধর্ম ইত্যাদি কোনো ধর্ম কি সঠিক? শুধু কি একটিই সঠিক হতে হবে? হলে কি হয় ১০০% সঠিক নাহয় শূন্য -- এভাবে হতে হবে?
শিয়ারা সঠিক, নাকি সুন্নিরা সঠিক? নাকি উভয়ে সঠিক? উভয়ে কি একইসাথে সঠিক হওয়া সম্ভব? নাকি কমবেশি সঠিক-ভুলের মিশ্রণ? আমার কি কোনো একটিকে অবশ্যই শতভাগ অনুসরণ করতে হবে? যদি তাদের মাঝে কিছু ভুল পাই, তা সত্ত্বেও?

ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর তিন ধরণের মানুষের কাছে পাবেন:
১. ওভারফিট: নিজস্ব যাচাইয়ের ক্ষমতাবিহীন, কপি-পেস্ট মেশিন, যেকোনো ইস্যুতে "বিশাল ধর্মীয় জ্ঞানভাণ্ডার" থেকে কপি-পেস্ট উত্তর দিচ্ছে। অথচ এই বিশাল ধর্মীয় জ্ঞানভাণ্ডারের পরস্পরবিরোধী বিষয় থাকলে তার সমাধান করে না ও করতে পারে না।

২. আন্ডারফিট: যে ব্যক্তি মাত্র দুই একটা জিনিস (বা আয়াত/হাদীস) পড়ে/ শিখে ভুলভাল উত্তর দিচ্ছে। কিংবা বাপ-দাদার ধর্ম/ মাযহাব সঠিক প্রমাণের গোঁড়ামি থেকে উপরোক্ত ওভারফিট লোকদের কাছ থেকে কিছু কপি-পেস্ট ধর্মীয় জ্ঞান/ রেফারেন্স নিয়ে আসছে।

৩. প্রপার ফিট: যে ব্যক্তি আন্ডারফিটও নয়, ওভারফিটও নয়। যে ব্যক্তি জানে যে শত শত ধর্মীয় বই পড়ার চেয়ে মৌলিক তত্ত্বের জ্ঞানার্জন ও অতঃপর সেই তত্ত্ব (সূত্র) ধর্মীয় জ্ঞানভাণ্ডারে প্রয়োগ করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত ও সত্য তুলে আনা -- এটাই সর্বোত্তম পদ্ধতি।

প্রশ্ন হলো, আপনি উপরের ৩ ক্যাটেগরির মাঝে কোন কাটোগরিতে আছেন? কোন ক্যাটেগরিতে থাকতে/ যেতে চান? এই রমজানে?

#Ramadan_post 5

পোস্ট আর্কাইভ লিঙ্ক: https://www.facebook.com/masud.alam.nure/posts/1538496349607164

রমজান মাস, ২০১৪। একদিন মেজাপু আমার রুমে এসে বলল, মাসুদ, দেখোতো সূরা বাকারার ১৮৭ নাম্বার আয়াতে রাত পর্যন্ত রোজা করতে বলা হয়েছে, সন্ধ্যায় নয়। আমি ল্যাপটপেই কাজ করছিলাম, সাথে সাথে কুরআন ওপেন করে দেখি যে তাইতো, "সুম্মা আতিম্মুস সিয়ামা ইলাল লাইল" - "অতঃপর রাত পর্যন্ত রোজা পূর্ণ করো।" আরবিতে গুরুবিশ শামস মানে সূর্যাস্ত, কিন্তু সে শব্দটা এখানে ব্যবহার না করে লাইল বা রাত বলা হয়েছে, তারমানে সূর্যাস্তের পর আকাশের লালিমাটা (শাফাক্ব) চলে গিয়ে আকাশ অন্ধকার হয়ে গেলে তখন ইফতার করা যাবে।

আমি আরো কিছুক্ষণ বিষয়টা নিয়ে পড়াশুনা করলাম। তারপর সেদিন থেকেই সঠিক সময়ে (রাতে) ইফতার করতে শুরু করলাম। আমি আর মেজাপু। বাসার বাকিরা বরাবরের মতই সন্ধ্যায় ইফতার করছে। তারাও আমাদেরকে বলে না তোমাদের রোজা হচ্ছে না, আমরাও তাদেরকে বলি না যে আপনাদের রোজা হচ্ছে না। আমার কাছে সত্যটা উন্মোচিত হয়েছে, তার উপর একীন হয়েছে, অতএব, এটা না মানলে আমার বরং গুনাহ হবে: সন্ধ্যায় ইফতার করলে আমার রোজা ভেঙে যাবে, কাজা করতে হবে সেটা।
কিন্তু ইফতারের এই সঠিক সময়ের ব্যাপারে সত্যটা যাদের কাছে উন্মোচিত হয়নি, এ ব্যাপারে যাদের একীন (দৃঢ় নিশ্চয়তা) হয়নি, তাদের জন্য গুনাহ হবে না, তাদের রোজা কবুল হবে ইনশাআল্লাহ।

এই একই দৃষ্টিভঙ্গি আমরা বাসার সকলেই পরস্পরের প্রতি পোষণ করি ও করেছি। যেকারণে এই বিষয় নিয়ে আমাদের বাসায় কোনো তুলকালাম বাঁধেনি, পরস্পরকে কাফির, মুরতাদ, বাতিল, খারেজি ইত্যাদি ট্যাগিং দেয়ার ঘটনাও ঘটেনি। বরং প্রতিদিন সূর্যাস্তের একটু আগ দিয়ে আমি আর মেজাপু ডাইনিং টেবিল সাজিয়েছি, ইফতার রেডি করেছি। তারপর সেখানে আর সবাই ইফতার করেছে, আমার এক কাজিনও ছিল তখন, সে-ও। তারপর সবার ইফতার করা শেষ হলে আমি আর মেজাপু ইফতার করেছি, ততক্ষণে মাগরিব পড়ে নিয়েছি।

এরপর আরো একটা বছর ঘুরে ২০১৫ সালে আবার রমজান মাস এসেছে। ততদিনে বাসার বাকি সবাই নিজের মত করে বিষয়টা বিয়ে চিন্তা করেছে, পড়াশুনা করেছে। সত্য উদঘাটন ও ব্যক্তিগতভাবে গ্রহণ করে নেয়া -- এই কাজে ব্যক্তিভেদে সময় কমবেশি লাগতে পারে। যেই সত্যে আমার দুই ঘন্টায় একীন সৃষ্টি হয়েছে, কারো সেটাতে দুই বছরও লাগতে পারে! ততদিন হয়ত সে সত্য মানতে গিয়ে নিজের সাথে যুদ্ধ করেছে, পরিবারের সাথে যুদ্ধ করেছে, এবং শেষমেষ "এত বড় বড় আলেমরা কি ভুল বুঝেছিলেন? সমাজ ও পরিবার কী বলবে, বাপ-দাদার ধর্ম/ মাযহাব থেকে ভিন্ন কিছু করছি" -- এইসব পিছুটান থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। অথবা হয়ত সত্যটা সে বুঝেছে দুই মিনিটেই, কিন্তু ধর্মের ব্যাপারে এতটা গুরুত্ব দেয় না বলে সন্ধ্যায়ই ইফতার করেছে!

তো, তখন ২০১৫ সালে আমরা সবাই-ই রাতে ইফতার করছি, কিন্তু আমাদের কাজিনটি সন্ধ্যায় ইফতার করে তখনও। আমরা তখন তার জন্য ইফতার রেডি করি সবাই মিলে। আজান দিলে সে ইফতার করে। আর আমরা ইফতার করি তার আরও ২৫-৩০ মিনিট পর, আকাশ অন্ধকার হলে। কিন্তু সেই কাজিনের ভাইটি তখন এই নিয়ে আমাদের সাথে, মূলতঃ আমার সাথেই তুমুল বিতর্ক করে। সে বাসায় এলে আমি তার জন্যে ইফতার রেডি করে আনি, সামনে এনে দেই, সে খায় আর আমার সাথে তীব্র বাকযুদ্ধ করে। আমিও যুক্তির ময়দানে অ্যাকাডেমিক ডিবেইট করি। তারপর আমার সময় হলে আমি ইফতার করি।

তারপর ২০১৬ সাল, সেই ছেলে এখন সঠিক সময়েই ইফতার করে, রাতে। আমরা একসাথে ইফতার করি, আর নতুন নতুন বিষয়ে অ্যাকাডেমিক ডিবেইট করি। কিন্তু কেউ কাউকে মুরতাদ, কাফির, বাতিল ইত্যাদি বলি না। আমরা ছোটবেলা থেকে ফ্রেন্ড, কাজিন। বিতর্কের পর্ব শেষ হলে দুইজন একসাথে খাই, ঘুমাই, বন্ধুসুলভ গল্প করি…।

এমন আরো অনেক গল্প আছে। তবে এমনটা আমাদের পরিবারে ও কাজিনদের সাথে হতে পেরেছে এই কারণে যে: we are one family. আমরা সবাই এক পরিবার, আত্মীয়। কিন্তু অপর মুসলমানের সাথে যদি আমার এমন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান না হয়, তার মানে কী? তার মানে আমি মুখে ভাই বললেও আসলে আমার হৃদয় তাকে ভাই হিসেবে দেখে না, দেশে শত্রু হিসেবে।
আমি বাংলাদেশে এমন পরিবারের কথাও জানি, যেখানে ছেলে রাতে ইফতার করার এই সত্য মেনে নিয়েছে, এমনি করে যাকিছু যুক্তিসঙ্গত ও সত্য পেয়েছে, তা মেনে নিয়েছে বলে বাপ তাকে খুন করার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে।
আরো এক পরিবারের কথা জানি, যেখানে ছেলে তাবলিগে যায় না কেন, এই কারণে বাপ তাকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে (যেটা ইসলামী আইন অনুযায়ী কোনো বৈধ দলিল-ই নয়), এবং শুধু তা-ই না, ছেলের মা কোনো কারণে বাড়ি থেকে বের হলে ছেলেকে তালা মেরে রেখে যায়, পাছে স্বামী তার সন্তানকে মেরে না ফেলে!

আবার আমি আমার পরিবারের কথাও জানি। যেখানে প্রত্যেকের নামাজ, রোজা, ধর্মচিন্তা, জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি -- সব স্বকীয়, স্বাধীন, ভিন্ন ভিন্ন; আবার পথ চলতে চলতে কখনো কখনো খুব মিল, একদম এক! এটা অহঙ্কার করার জন্যে নয়, তবে এই গল্পটা শুধু এজন্যই বলছি যে, এমনও যে হওয়া সম্ভব, তা মানুষ জানুক।

আমি মনে করি, আমরা গোটা মানবজাতি one big family. আমাদের পরস্পরের মতপার্থক্য ও ভিন্নতা খোদার ইচ্ছারই বহিঃপ্রকাশ। যেখানে একই মায়ের রান্না খেয়ে পাঁচ ভাই পাঁচরকম কথা বলে, সেখানে কোটি কোটি মুসলমানের ক্ষেত্রে কিভাবে এটা আশা করেন যে, সবার নামাজ, রোজা, ওজু, জোরে আমিন বলা, "সহীহ হাদীস", তাফসিরের বুঝ, তারাবির নামাজ, চাঁদ বিতর্কের সমাধান -- সব এক হবে?

আফসোস! ভাইয়েরা! আমরা প্রত্যেকেই মানুষ, কিন্তু খোদার সৃষ্টি "মানুষ" জিনিসটাই চিনলাম না। খোদার সৃষ্টিবৈচিত্র গাছপালা পশুপাখিতে দেখলাম, অথচ আপন সত্ত্বায় অনুভব করলাম না। আমার পাশের মানুষটি যদি সবকিছুতে হুবহু আমার মতই হতে হবে -- তাহলে খোদাতায়ালা এত ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও বেড়ে ওঠার পরিবেশ কেন দিলেন? কেন আমাদের পরিবারগুলোর পরিবেশ ভিন্ন ভিন্ন হলো?
…………………………………
ফুলের বাগানে কতরকম ফুল। কেউবা কলি, কেউবা ফুটতে শুরু করেছি, কেউবা প্রস্ফূটিত হয়েছি। কারো সুঘ্রাণ বেশি, কারোবা কম। শুধু এটুকু জানবেন যে, ফুলের কলিকে জোর করে চাপ দিয়ে ফুটানো যায় না। লা ইকরাহা ফিদদ্বীন -- জোর জবরদস্তি করে ধর্ম চাপিয়ে দিলেই কলি থেকে ফুল ফোটে না। বরং কলিটা নষ্ট হয়ে যায়! একথা লিখতে গিয়ে আমি অশ্রুসজল হয়ে পড়ছি, কিন্তু প্রিয় ভাই! ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে আমরা কত সুন্দর সুন্দর ফুলের কলিকে নষ্ট করে ফেলেছি! কত মানুষ আজ খোদার সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত, শান্তি ও ভালোবাসা তথা হৃদয়ের জগতের সুধা থেকে বঞ্চিত, কত মানুষ আজ রুক্ষ, কঠোর, হিংস্র, বেদনার্ত, মৃতপ্রায়, ব্যথিত...। শুধু আমাদের ভুলে, আমাদের ভুলে।

আমার জীবনের ব্যাপ্তি খুব ছোট, তবু আমি খুব কাছ থেকে এমন অনেক সুন্দর ফুলের কলিকে নষ্ট হয়ে যেতে দেখেছি। অথচ জোর করে কলি ফুটানো নয়, বরং হৃদয়ে আধ্যাত্মিক শক্তি ধারণ করে ফুলগাছের গোড়ায় নিঃস্বার্থ ভালোবাসার জল ঢাললে --
তখন দীর্ঘদিনের শীত কেটে গিয়ে বসন্ত হাজির হয়। খোদাতায়ালা যখন সেই গল্প লেখেন, তখন মুগ্ধ হয়ে দেখতে হয় শুধু!

আমি তেমন একটি গল্প দেখেছি, এখনও মুগ্ধ হয়ে দেখছি। সেই গল্পের শুরুটা আমার বইয়ে লিখেওছি, তবে সে গল্প আরেকদিন হবে।


#Ramadan_post 7

পোস্ট আর্কাইভ লিঙ্ক: https://www.facebook.com/masud.alam.nure/posts/1538496349607164

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

টাকার ইতিহাস, মানি মেকানিজম ও ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মহা জুলুম

ভূমিকা: জালিমের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম  (মহররম: ইনফো সিরিজ এর শেষ পোস্ট ছিল এটা। মূল সিরিজটি পড়ে আসুন ) জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাস হলো মহররম মাস। জালিমের মুখোশ উন্মোচনের মাস মহররম। জুলুমের কূটকৌশল উন্মোচনের মাস মহররম। আধুনিক সেকুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লেজিসলেশান (সংসদ), আর্মড ফোর্সেস (আর্মি) ও জুডিশিয়ারি (আদালত) হলো এক মহা জুলুমের ছদ্মবেশী তিন যন্ত্র, যারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করে জুলুম টিকিয়ে রাখার জন্য। তারচেয়েও বড় জালিম হলো big corporations: বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, যারা তাবৎ দুনিয়াকে দাস বানিয়ে রেখেছে। আর এই দাসত্বের শৃঙ্খলে তারা আমাদেরকে আবদ্ধ করেছে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে: টাকা আমাদের শ্রমকে ধারণ করে, অথচ সেই টাকার মূল্য আপ-ডাউন করায় অন্যরা -- ব্যাংক ব্যবসায়ীরা! টাকা আমাদের শ্রমকে সঞ্চয় করার মাধ্যম, অথচ সেই টাকা আমরা প্রিন্ট করি না, প্রিন্ট করে (ব্যাংকের আড়ালে) কিছু ব্যবসায়ী! সেই টাকার মান কমে যাওয়া (বা বেড়ে যাওয়া) আমরা নির্ধারণ করি না -- নির্ধারণ করে ব্যাঙ্ক (ব্যবসায়ীরা)! ইমাম হুসাইনের (আ.) প্রতিবাদী চেতনাকে ধারণ করব, শোকাহত হ

ধর্মব্যবসা: মুসলমানদের হাতে ইসলাম ধ্বংসের অতীত-বর্তমান (১)

ভূমিকা যদিও পলিটিকাল-রিলিজিয়াস ইস্যুতে নিশ্ছিদ্র আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করে আলোচনা করার অভ্যাস আমার, কিন্তু এখানে বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরে আর্গুমেন্ট করার প্রথমতঃ ইচ্ছা নেই, দ্বিতীয়তঃ সময় ও সুযোগ নেই। আমি যা সত্য বলে জানি, তা সংক্ষেপে তুলে ধরছি। যারা আমার উপর আস্থা রাখেন তাদের জন্য এই লেখাটি সোর্স অব ইনফরমেশান, উন্মুক্ত হৃদয়ের মানুষদের জন্য সত্য অনুসন্ধানের নতুন কিছু টপিক, আর প্রেজুডিসড ধর্মান্ধ রোগগ্রস্ত অন্তরের জন্য রোগ বৃদ্ধির উছিলা। শেষ পর্যন্ত আর্গুমেন্ট ও ডায়লগের দুয়ার উন্মুক্ত রাখার পক্ষপাতী আমি, কিন্তু সেই আর্গুমেন্ট অবশ্যই সত্য উন্মোচনের নিয়তে হওয়া উচিত, নিজের দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাস ও ধ্যান ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করবার উদ্দেশ্যে নয়। মক্কা-মদীনা: মুহাম্মদ (সা.) থেকে আলে-সৌদ (৬২৯-১৯২৪) এদেশের অধিকাংশ মানুষ মক্কা-মদীনার ইতিহাস কেবল এতটুকু জানেন যে, মুহাম্মদ (সা.) মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করেন। কিন্তু প্রায় চৌদ্দশ’ বছর আগে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র থেকে আজকের রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবের ইতিহাস কম মানুষই জানেন। প

পিস টিভি, জাকির নায়েক ও এজিদ প্রসঙ্গ

সম্প্রতি গুলশান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। আমি তখন দিল্লীতে ছিলাম। দেশে ফিরে শুনি পিস টিভি ব্যান করা হয়েছে বাংলাদেশে, এবং তার আগে ইন্ডিয়াতে। আমার বাসায় টিভি নেই, এবং আমি জাকির নায়েকের লেকচার শুনিও না। কিংবা পিস টিভিতে যারা লেকচার দেন, বাংলা কিংবা ইংলিশ -- কোনোটাই শুনি না; প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া আমার ইসলামের বুঝ জাকির নায়েকসহ পিস টিভি ও তার বক্তাদেরকে ইন জেনারেল আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। Peace TV বন্ধ হওয়ায় এদেশে বিকৃত ইসলাম প্রসারের গতি কমলো -- এটাই আমার মনে হয়েছে। একইসাথে আমি এটাও মনে করি যে, যেই অভিযোগ পিস টিভিকে ব্যান করা হয়েছে, তা নিছক অজুহাত। জাকির নায়েক কখনো জঙ্গীবাদকে উস্কে দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। কিংবা পিস টিভির লেকচার শুনে শুনে ISIS জঙ্গীরা সন্ত্রাসী হয়েছে -- এটা নিতান্তই হাস্যকর কথা। ISIS এর ধর্মতাত্ত্বিক বেইজ সম্পর্কে মোটেও ধারণা নেই, এমন লোকের পক্ষেই কেবল ISIS এর জন্য জাকির নায়েককে দোষ দেয়া সম্ভব। একইসাথে আমি এ বিষয়েও সচেতন যে, পিস টিভি বন্ধ করা হয়েছে আমাদের সরকারের রেগুলার “ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ