সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হিপোক্রেসি ও ডাবল-স্ট্যান্ডার্ড

মার্চ, ২০১৯। নিউজিল্যান্ডে মুসলিমবিদ্বেষী সন্ত্রাসী কর্তৃক অর্ধশত মুসলিমকে গুলি করে হত্যা।
প্রতিক্রিয়া: বিশ্ব মুসলিম শোকাহত।

হজ্জ্ব মওসুম, ১৯৮৭। ইজরাইলবিরোধী শ্লোগান দেয়ার 'অপরাধে' সৌদি পুলিশ কর্তৃক চার শতাধিক হাজীকে সরাসরি গুলি করে হত্যা। রক্তাক্ত পবিত্র কাবা প্রাঙ্গন।
প্রতিক্রিয়া: বিশ্ব মুসলিম নীরব। কারণ ওদেরকে 'শিয়া' ট্যাগ দিয়েছে সৌদি সরকার, আর শিয়া তো মারা যেতেই পারে!

৫ই মে, ২০১৩। বাংলাদেশের শাপলা চত্বরে লাইট নিভিয়ে মিডিয়া বন্ধ করে অগুনতি মাদ্রাসা ছাত্র হত্যা, লাশ গুম।
প্রতিক্রিয়া: বহু বাঙালি মুসলমান নীরব; কারণ ওদেরকে 'জামাত-শিবির-হেফাজত' ট্যাগ দিয়ে দিয়েছে সরকার, আর "একটা দুইটা শিবির ধরে", "ধইরা ধইরা জবাই করে", "সকাল-বিকাল নাস্তা" তো করা যেতেই পারে!

অক্টোবর, ২০১৬। ইয়েমেনী হুথিরা মক্কাকে উদ্দেশ্য করে মিসাইল ছুঁড়েছে, সৌদি আরবের মিথ্যা দাবী; হুথি 'বিদ্রোহী'দের প্রতি নিন্দা জানিয়ে "প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা" নিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের। অথচ এই ইয়েমেনীদেরকে এমনকি জানাজার নামাজে বম্বিং করেও হত্যা করে আসছে সৌদি সরকার ২০১৫ সাল থেকে, এবিষয়ে আজ পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নীরব।

এরকম আরো ঘটনা আছে, যাতে মেজরিটি মুসলমানের ডাবল-স্ট্যান্ডার্ড হিপোক্রেসি প্রমাণিত হয়। সেসবের লিস্ট দিয়ে লেখা বড় করতে চাই না।

এখন, যখন আমি মেজরিটি মুসলমানের এই ডাবল-স্ট্যান্ডার্ড ও হিপোক্রেসি দেখতে পাচ্ছি, তখন মেজরিটি মুসলিমের প্রতি কি আমি সেই দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ করব, যেটা পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি আজকে মুসলমানেরা দেখাচ্ছে, ওদের হিপোক্রেসি ও ডাবল-স্ট্যান্ডার্ডের কারণে?

দেখুন, ক্রাইস্টচার্চে হামলাকারীর মত সন্ত্রাসীরা সকল মুসলমানদের বিরুদ্ধে যে 'বিদ্বেষ' চর্চা করেছে;
অনুরূপ বিদ্বেষ বহু মুসলিম চর্চা করছে 'শিয়াদের' বিরুদ্ধে;
বহু বাঙালি মুসলিম চর্চা করছে 'হেফাজত' ও 'জামাত-শিবির' এর বিরুদ্ধে;
বহু বাঙালি মুসলিম তাবলিগী ভাই চর্চা করেছে একে অপরের বিরুদ্ধে (সাম্প্রতিক সাদপন্থী আর বিরোধী গ্রুপের দ্বন্দ্ব)।

দেখুন, উপরের সবগুলো কেইস একই রোগ; যা মেজরিটির মধ্যে যখন থাকে, তখন সেটাকে 'শাস্তিযোগ্য অপরাধ' হিসেবে না দেখে "সংস্কার ও শুদ্ধ করতে হবে, এমন একটি মহামারী রোগ" হিসেবে দেখতে হয়। এবং তাদেরকে ভালোবেসে শুদ্ধ করার পথে অগ্রসর হতে হয়; যা আমাদের নবীর শিক্ষা।

অতএব, সেই শিক্ষা আমি মুসলিমবিদ্বেষী 'হোয়াইট সুপ্রিমিস্ট'দের ক্ষেত্রেও যেমন প্রয়োগ করব, তেমনি প্রয়োগ করব শিয়াবিদ্বেষী 'সহীহ আক্বিদা' ওয়াহাবী মুসলিমদের ক্ষেত্রেও, প্রয়োগ করব জামাত-শিবির-হেফাজত বিদ্বেষী বাঙালি মুসলমানের ক্ষেত্রেও, এবং আলে সৌদের পদলেহী জামাত-শিবিরের ক্ষেত্রেও।

আমি জানি এদের সবাই-ই ডাবল-স্ট্যান্ডার্ড হিপোক্রিট; এবং সুযোগ পেলেই অন্যের উপর জুলুম করতে ছাড়ে না, কিন্তু নিজে চিপায় পড়লে মায়াকান্না কাঁদে --
কিন্তু এরচেয়েও বেশি জঘন্য মানুষকে ভালোবেসে বদলে দেয়াই আমার নবীর শিক্ষা, আর আমি সেই পথেই চলতে চাই।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

টাকার ইতিহাস, মানি মেকানিজম ও ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মহা জুলুম

ভূমিকা: জালিমের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম  (মহররম: ইনফো সিরিজ এর শেষ পোস্ট ছিল এটা। মূল সিরিজটি পড়ে আসুন ) জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাস হলো মহররম মাস। জালিমের মুখোশ উন্মোচনের মাস মহররম। জুলুমের কূটকৌশল উন্মোচনের মাস মহররম। আধুনিক সেকুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লেজিসলেশান (সংসদ), আর্মড ফোর্সেস (আর্মি) ও জুডিশিয়ারি (আদালত) হলো এক মহা জুলুমের ছদ্মবেশী তিন যন্ত্র, যারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করে জুলুম টিকিয়ে রাখার জন্য। তারচেয়েও বড় জালিম হলো big corporations: বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, যারা তাবৎ দুনিয়াকে দাস বানিয়ে রেখেছে। আর এই দাসত্বের শৃঙ্খলে তারা আমাদেরকে আবদ্ধ করেছে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে: টাকা আমাদের শ্রমকে ধারণ করে, অথচ সেই টাকার মূল্য আপ-ডাউন করায় অন্যরা -- ব্যাংক ব্যবসায়ীরা! টাকা আমাদের শ্রমকে সঞ্চয় করার মাধ্যম, অথচ সেই টাকা আমরা প্রিন্ট করি না, প্রিন্ট করে (ব্যাংকের আড়ালে) কিছু ব্যবসায়ী! সেই টাকার মান কমে যাওয়া (বা বেড়ে যাওয়া) আমরা নির্ধারণ করি না -- নির্ধারণ করে ব্যাঙ্ক (ব্যবসায়ীরা)! ইমাম হুসাইনের (আ.) প্রতিবাদী চেতনাকে ধারণ করব, শোকাহত হ

ধর্মব্যবসা: মুসলমানদের হাতে ইসলাম ধ্বংসের অতীত-বর্তমান (১)

ভূমিকা যদিও পলিটিকাল-রিলিজিয়াস ইস্যুতে নিশ্ছিদ্র আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করে আলোচনা করার অভ্যাস আমার, কিন্তু এখানে বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরে আর্গুমেন্ট করার প্রথমতঃ ইচ্ছা নেই, দ্বিতীয়তঃ সময় ও সুযোগ নেই। আমি যা সত্য বলে জানি, তা সংক্ষেপে তুলে ধরছি। যারা আমার উপর আস্থা রাখেন তাদের জন্য এই লেখাটি সোর্স অব ইনফরমেশান, উন্মুক্ত হৃদয়ের মানুষদের জন্য সত্য অনুসন্ধানের নতুন কিছু টপিক, আর প্রেজুডিসড ধর্মান্ধ রোগগ্রস্ত অন্তরের জন্য রোগ বৃদ্ধির উছিলা। শেষ পর্যন্ত আর্গুমেন্ট ও ডায়লগের দুয়ার উন্মুক্ত রাখার পক্ষপাতী আমি, কিন্তু সেই আর্গুমেন্ট অবশ্যই সত্য উন্মোচনের নিয়তে হওয়া উচিত, নিজের দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাস ও ধ্যান ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করবার উদ্দেশ্যে নয়। মক্কা-মদীনা: মুহাম্মদ (সা.) থেকে আলে-সৌদ (৬২৯-১৯২৪) এদেশের অধিকাংশ মানুষ মক্কা-মদীনার ইতিহাস কেবল এতটুকু জানেন যে, মুহাম্মদ (সা.) মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করেন। কিন্তু প্রায় চৌদ্দশ’ বছর আগে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র থেকে আজকের রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবের ইতিহাস কম মানুষই জানেন। প

পিস টিভি, জাকির নায়েক ও এজিদ প্রসঙ্গ

সম্প্রতি গুলশান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। আমি তখন দিল্লীতে ছিলাম। দেশে ফিরে শুনি পিস টিভি ব্যান করা হয়েছে বাংলাদেশে, এবং তার আগে ইন্ডিয়াতে। আমার বাসায় টিভি নেই, এবং আমি জাকির নায়েকের লেকচার শুনিও না। কিংবা পিস টিভিতে যারা লেকচার দেন, বাংলা কিংবা ইংলিশ -- কোনোটাই শুনি না; প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া আমার ইসলামের বুঝ জাকির নায়েকসহ পিস টিভি ও তার বক্তাদেরকে ইন জেনারেল আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। Peace TV বন্ধ হওয়ায় এদেশে বিকৃত ইসলাম প্রসারের গতি কমলো -- এটাই আমার মনে হয়েছে। একইসাথে আমি এটাও মনে করি যে, যেই অভিযোগ পিস টিভিকে ব্যান করা হয়েছে, তা নিছক অজুহাত। জাকির নায়েক কখনো জঙ্গীবাদকে উস্কে দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। কিংবা পিস টিভির লেকচার শুনে শুনে ISIS জঙ্গীরা সন্ত্রাসী হয়েছে -- এটা নিতান্তই হাস্যকর কথা। ISIS এর ধর্মতাত্ত্বিক বেইজ সম্পর্কে মোটেও ধারণা নেই, এমন লোকের পক্ষেই কেবল ISIS এর জন্য জাকির নায়েককে দোষ দেয়া সম্ভব। একইসাথে আমি এ বিষয়েও সচেতন যে, পিস টিভি বন্ধ করা হয়েছে আমাদের সরকারের রেগুলার “ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ