এই মানব সন্তান কোনো সন্ত্রাসীর গুলিতে মরেনি।
সন্তান জন্ম দিয়ে তাকে ট্রাঙ্কের ভিতরে আটকে রেখে মেরে ফেলেছে মা, বয়ফ্রেন্ড নিরুদ্দেশ।
বাঙালি মুসলমানেরা তাদের সমাজে বিয়েকে কঠিন করে দিয়েছে, ফলস্বরূপ যেনা-ব্যাভিচার সহজ হয়ে গিয়েছে। ১৬ কোটি মুসলমানের দেশে প্রতিবেলায় একটা না, আট-দশটা মসজিদ থেকে পরপর আজান শোনা যায়। তারপর টুপি মাথায় দিয়ে বাপেরা মসজিদে যায়, মায়েরা ঘরে জায়নামাজে বসে সন্তানের উচ্চ ক্যারিয়ারের জন্য দোয়া করতে থাকে, আর তাদের সন্তানেরাই পাশের রুমে কিংবা মেসে, কিংবা ভার্সিটির হলে কিংবা কোনো ফ্ল্যাটে গুনাহ করতে থাকে। আর তাদের বাপ-মায়েরা তসবিহ টিপতে থাকে…। এই বাপ-মায়েরা বেহেশতে যাবে না তো কারা যাবে? খেরেস্তান-নাস্তেকরা?
৯৫% নাস্তিকদের দেশে থাকতেছি কয়েক বছর। এসব দেশে বিয়ে আর লিভ টুগেদার এর খুব একটা পার্থক্য নেই সামাজিকভাবে। একদিনে পরিচয় হয়, হুট করে পরদিন বিছানায়, দুইদিন পর কেউ কাউকে চেনে না -- নতুন কারো সন্ধান করছে, এমনটা অহরহ হয়। এখানে আমরা স্টুডেন্ট ডর্মিটরিতে থাকি, পাশের রুমের বিদেশী ছেলেরা নিত্য নতুন বান্ধবী নিয়ে আসে, তাদের 'সুখচিৎকারের' (!) শব্দ শোনা যায়, রাস্তায় বের হলে ছেলমেয়ে জড়াজড়ি চুম্বনে ব্যস্ত দেখা যায়, সামার এলে গায়ে কাপড় থাকেই না… আরো অনেক কিছু, বর্ণনা দেয়া ঠিক হবে না।
উপরের বর্ণনা পড়ে যদি তওবা তওবা করে থাকেন, তাহলে জেনে রাখেন যে, এই দৃশ্য বাংলাদেশেও হবে। আসলে হচ্ছে অলরেডি, কিন্তু এদেশে এরা নাস্তিক বলে ডর্মিটরিতে কনডম ডিসপেন্সার মেশিন বসিয়েছে বলে ব্যাপারটা খুব খোলাখুলি, আর 'ধার্মিক মুসলমানদের' দেশ বলে কনডম কেনাগুলি লুকিয়ে লুকিয়ে ঘটছে, কিংবা কখনো কেনার সুযোগের অভাবে বাচ্চা এসে গেলে পিল খেয়ে অ্যাবরশন, কিংবা বাচ্চা বড় হয়ে গেলে অপারেশান করে গুনে গুনে বাচ্চার দুইটা হাত, দুইটা পা, মাথা, গলা, ইত্যাদি কেটে কেটে বের করা --
কিংবা জাবির এই ঘটনার মত সুস্থ সন্তান জন্ম দিয়ে নিজহাতে নাড়ি কেটে ট্রাঙ্কের মধ্যে আটকে মেরে ফেলা।
………………………………………………
এস্তোনিয়ার যে দৃশ্যের বর্ণনা দিলাম, তা বাংলাদেশে প্রতিদিন ঘটছে, কেবল লুকোছাপা করে; কিন্তু পশ্চিমের মত এমন খোলাখুলিভাবেও বাংলাদেশে একদিন এসব হবে। কেন হবে, ঠিক কিভাবে হবে, সেই প্রসেসটা জানেন?
জানেন না। কারণ অর্থনীতিও জানেন না, ইসলামী অর্থনীতি তো দূরের কথা। এইসব মডার্ন 'ক্যারিয়ার' এর জন্য মানুষের স্বাভাবিক ভালোবাসার ও যৌনজীবনকে বাধাগ্রস্থ করা -- যা আপনারা বাঙ্গাল মুসলমানেরা করে চলেছেন, তার হাত ধরেই পশ্চিমের এই দৃশ্যগুলো ইমপোর্ট হবে। 'মডার্ন ক্যারিয়ার' ব্যাপারটা পশ্চিমা ইকোনমিক মডেলের একটা অংশ। তাদের ইকোনমিক মডেল ইমপোর্ট করবেন, অথচ লাইফস্টাইল আর কালচার ইমপোর্ট হবে না, তা কি হয়?
ফেব্রুয়ারিতে দেশে ছিলাম। এক স্নেহভাজন জুনিয়র ভাই এসেছিল বাসায়, অনেক আলাপ হবে কথা হবে, কিন্তু হঠাৎ মাঝরাতে তাকে বেরিয়ে যেতে হলো: তার মামা, বছর পঁচিশ হবে হয়ত, সে সুইসাইড করেছে। কেন? কিভাবে? সেসব ব্যাখ্যা দিতে গেলে খেই হারিয়ে ফেলবেন।
যতদিন না পশ্চিমা ইকোনমিক মডেল থেকে সরে না আসবেন, ততদিন তাদের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন থেকে মুক্তি মিলবে না: বরং আপনি নিজেই তাদের কালচার ইমপোর্ট করবেন, করছেন। ততদিন বিবাহ-বহির্ভুত যৌন সম্পর্ক, অ্যাবরশন, ধর্ষণ, পর্নোগ্রাফি -- ইত্যাদি বেড়েই চলবে। তবে এসবের দিকে আপনাদের নজর দেয়ার প্রয়োজন নেই। আপনি কেবল জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটির ঐ মেয়েটি কত পাপী ও নিষ্ঠুর, তাই বর্ণনা করুন, মুখ ফিরিয়ে 'ছিঃ' বলুন এবং … আজান শোনা যাচ্ছে না? জায়নামাজ বিছিয়ে তসবিহ টিপতে বসুন। আমার এখানে অবশ্য আজান শোনা যায় না, অন্যকিছু শোনা যায়। সেকথা বলে হুমায়ুন আজাদ হতে চাই না।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন