সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বর্তমান সময়ের ইসলাম সংক্রান্ত সমস্যার উপর সংক্ষিপ্ত আলোকপাত -- ১২. পরিশিষ্ট – ২ : Levels of guidance

মানুষের দুনিয়ার জীবনটা হলো উৎস থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা এক অবস্থা। দুনিয়ার যাত্রা শেষ হলে সে আবার তার উৎসের কাছে ফিরে যাবে। দুনিয়ার এই জার্নিটা যেনো আমরা সঠিকভাবে পার করতে পারি, সেজন্যে আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন স্তরের গাইডেন্স দান করেছেন। একটা দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টাকে এভাবে দেখা যেতে পারে :
মৌলিক / সর্বজনীন স্তরের গাইডেন্স : এই গাইডেন্স সকল মানুষের মাঝে সহজাত। যে কেউ এই গাইডেন্সকে অনুসরণ করবে ও সৎকর্ম করবে, পরকালে সে মুক্তি পাবে, তার কোনো ভয় থাকবে না (:৬২)। আর সর্বজনীন এই গাইডেন্স হলো তাওহীদ ও আখিরাতের অনুভুতি, এবং বিবেক ও বিচারবুদ্ধি। কোনো মানুষ ইসলামের সাথে পরিচিত না হলেও সে যদি শুধু এই চারটি অনুভুতিকে যথাযথভাবে অনুসরণ করে পথ চলে, তবে সেটাই তাকে পরকালে উৎরে দেবে। এটা আল্লাহরই ওয়াদা। তাওহীদ ও আখিরাতের অনুভূতি এবং বিবেক ও বিচারবুদ্ধি – এই চারটি বিষয় যে সকল মানুষের মাঝে সর্বজনীন, সহজাত – কুরআনে সেকথার প্রমাণও বিদ্যমান।


[বিবেক [৭৫:(নফসে লাওয়ামা), ৯১:(তাক্বওয়া)], বিচারবুদ্ধি (আক্বল ৮:২২), স্রষ্টার ব্যাপারে স্পিরিচুয়াল ইনস্পিরেশান (৪১:৫৩)]


কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাঁর অসীম দয়ার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে মানুষের এই যাত্রাকে সহজ করতে আরো তিনটি স্তরের গাইডেন্স দান করেছেন। পরবর্তী এই তিনটি স্তরের মাঝে যে ব্যক্তি যত বেশি স্তরে পৌঁছতে পারবে, তার সিরাতুল মুস্তাকিমে চলা ততই সহজ হবে। আর এই তিনটি স্তর হলো :
. ঐশী কিতাব (আমাদের জন্য কুরআন মজীদ)
. রিসালাত (আমাদের জন্য মুহাম্মদ (সা.))
. ইমামত (ইমাম আলী (.) হতে ইমাম মাহদী (.) পর্যন্ত ১২ ইমাম)


কোনো ধর্মেরই অনুসারী নয়, এমন ব্যক্তি গাইডেন্স এর মৌলিক স্তরে রয়েছে।
ইসলাম, খ্রিষ্ট ধর্ম ও ইহুদী ধর্মের অনুসারীরা পরবর্তী তিনটি স্তরের মাঝে দুটি স্তরের গাইডেন্স পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছে :
ঐশী কিতাব (ইহুদিদের তওরাত, খ্রিষ্টানদের ইঞ্জিল, মুসলমানদের কুরআন)
ও রিসালাত (ইহুদিদের মূসা (.), খ্রিষ্টানদের ঈসা (.), মুসলমানদের মুহাম্মদ (সা.))

আর সর্বশেষ স্তরের গাইডেন্স, ইমামত পর্যন্ত যারা পৌঁছাতে পেরেছে, মুসলমানদের মাঝে তারা শিয়া বা আহলে বাইতের অনুসারী বলে পরিচিত।

প্রথম থেকে পড়ুন:

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

টাকার ইতিহাস, মানি মেকানিজম ও ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মহা জুলুম

ভূমিকা: জালিমের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম  (মহররম: ইনফো সিরিজ এর শেষ পোস্ট ছিল এটা। মূল সিরিজটি পড়ে আসুন ) জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাস হলো মহররম মাস। জালিমের মুখোশ উন্মোচনের মাস মহররম। জুলুমের কূটকৌশল উন্মোচনের মাস মহররম। আধুনিক সেকুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লেজিসলেশান (সংসদ), আর্মড ফোর্সেস (আর্মি) ও জুডিশিয়ারি (আদালত) হলো এক মহা জুলুমের ছদ্মবেশী তিন যন্ত্র, যারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করে জুলুম টিকিয়ে রাখার জন্য। তারচেয়েও বড় জালিম হলো big corporations: বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, যারা তাবৎ দুনিয়াকে দাস বানিয়ে রেখেছে। আর এই দাসত্বের শৃঙ্খলে তারা আমাদেরকে আবদ্ধ করেছে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে: টাকা আমাদের শ্রমকে ধারণ করে, অথচ সেই টাকার মূল্য আপ-ডাউন করায় অন্যরা -- ব্যাংক ব্যবসায়ীরা! টাকা আমাদের শ্রমকে সঞ্চয় করার মাধ্যম, অথচ সেই টাকা আমরা প্রিন্ট করি না, প্রিন্ট করে (ব্যাংকের আড়ালে) কিছু ব্যবসায়ী! সেই টাকার মান কমে যাওয়া (বা বেড়ে যাওয়া) আমরা নির্ধারণ করি না -- নির্ধারণ করে ব্যাঙ্ক (ব্যবসায়ীরা)! ইমাম হুসাইনের (আ.) প্রতিবাদী চেতনাকে ধারণ করব, শোকাহত হ

ধর্মব্যবসা: মুসলমানদের হাতে ইসলাম ধ্বংসের অতীত-বর্তমান (১)

ভূমিকা যদিও পলিটিকাল-রিলিজিয়াস ইস্যুতে নিশ্ছিদ্র আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করে আলোচনা করার অভ্যাস আমার, কিন্তু এখানে বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরে আর্গুমেন্ট করার প্রথমতঃ ইচ্ছা নেই, দ্বিতীয়তঃ সময় ও সুযোগ নেই। আমি যা সত্য বলে জানি, তা সংক্ষেপে তুলে ধরছি। যারা আমার উপর আস্থা রাখেন তাদের জন্য এই লেখাটি সোর্স অব ইনফরমেশান, উন্মুক্ত হৃদয়ের মানুষদের জন্য সত্য অনুসন্ধানের নতুন কিছু টপিক, আর প্রেজুডিসড ধর্মান্ধ রোগগ্রস্ত অন্তরের জন্য রোগ বৃদ্ধির উছিলা। শেষ পর্যন্ত আর্গুমেন্ট ও ডায়লগের দুয়ার উন্মুক্ত রাখার পক্ষপাতী আমি, কিন্তু সেই আর্গুমেন্ট অবশ্যই সত্য উন্মোচনের নিয়তে হওয়া উচিত, নিজের দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাস ও ধ্যান ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করবার উদ্দেশ্যে নয়। মক্কা-মদীনা: মুহাম্মদ (সা.) থেকে আলে-সৌদ (৬২৯-১৯২৪) এদেশের অধিকাংশ মানুষ মক্কা-মদীনার ইতিহাস কেবল এতটুকু জানেন যে, মুহাম্মদ (সা.) মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করেন। কিন্তু প্রায় চৌদ্দশ’ বছর আগে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র থেকে আজকের রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবের ইতিহাস কম মানুষই জানেন। প

পিস টিভি, জাকির নায়েক ও এজিদ প্রসঙ্গ

সম্প্রতি গুলশান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। আমি তখন দিল্লীতে ছিলাম। দেশে ফিরে শুনি পিস টিভি ব্যান করা হয়েছে বাংলাদেশে, এবং তার আগে ইন্ডিয়াতে। আমার বাসায় টিভি নেই, এবং আমি জাকির নায়েকের লেকচার শুনিও না। কিংবা পিস টিভিতে যারা লেকচার দেন, বাংলা কিংবা ইংলিশ -- কোনোটাই শুনি না; প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া আমার ইসলামের বুঝ জাকির নায়েকসহ পিস টিভি ও তার বক্তাদেরকে ইন জেনারেল আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। Peace TV বন্ধ হওয়ায় এদেশে বিকৃত ইসলাম প্রসারের গতি কমলো -- এটাই আমার মনে হয়েছে। একইসাথে আমি এটাও মনে করি যে, যেই অভিযোগ পিস টিভিকে ব্যান করা হয়েছে, তা নিছক অজুহাত। জাকির নায়েক কখনো জঙ্গীবাদকে উস্কে দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। কিংবা পিস টিভির লেকচার শুনে শুনে ISIS জঙ্গীরা সন্ত্রাসী হয়েছে -- এটা নিতান্তই হাস্যকর কথা। ISIS এর ধর্মতাত্ত্বিক বেইজ সম্পর্কে মোটেও ধারণা নেই, এমন লোকের পক্ষেই কেবল ISIS এর জন্য জাকির নায়েককে দোষ দেয়া সম্ভব। একইসাথে আমি এ বিষয়েও সচেতন যে, পিস টিভি বন্ধ করা হয়েছে আমাদের সরকারের রেগুলার “ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ