সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বর্তমান সময়ের ইসলাম সংক্রান্ত সমস্যার উপর সংক্ষিপ্ত আলোকপাত -- ১০. প্রতিবাদ করার কি কেউ নেই?

এতসব সমস্যা দেখা ও বোঝা সত্ত্বেও অনেকে প্রতিবাদ করছেন না। যেহেতু এটা ইসলামের ব্যাপার, সেহেতু ইসলামের পতাকা বহনের সেই জ্ঞানগত যোগ্যতা ও আল্লাহ কর্তৃক আধ্যাত্মিকভাবে আদিষ্ট না হওয়া পর্যন্ত কারোরই উচিত না ইসলামের পতাকা বহন করা। তবে ভুল-ত্রুটি থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য সঠিক পদ্ধতিতে ইসলামের জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। এতে নিজেকেও রক্ষা করা যায়, নিজের পরিবারকেও রক্ষা করা যায়।

তবে আশার কথা হলো, ইন্টারনেটের যুগে বাস করছি আমরা। এখানে মানুষের প্রাইভেসি বলে আর কিছু থাকছে না। তেমনি দলীয় প্রাইভেসি বলেও আর কিছু থাকছে না। অতি সম্প্রতি দেখছি যে শিবির ত্যাগী কিছু ছেলের হাত দিয়ে ফেইসবুকে "inner dirty secrets” বের হয়ে আসছে। মানুষের অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশান যত বাড়বে, ততই এটা ব্যাপকহারে ঘটতে থাকবে। তখন বিশুদ্ধ হওয়া ও নিজেদের সংস্কার করা ছাড়া উপায় থাকবে না। ইন্টারনেট হলো পরবর্তী বিপ্লবের হাতিয়ার। এর সম্ভাবনা ও আশঙ্কা, উভয়ই অনেক। যেমন :
. ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন দল / মতের ভুল-ভ্রান্তিগুলো জানতে পারবে।
. ইন্টারনেটের মাধ্যমেই আবার বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণার দল / মতের প্রচার-প্রসার ঘটবে।

. ইন্টারনেটের মাধ্যমেই মানুষ সঠিক পদ্ধতিতে জ্ঞানচর্চা সম্পর্কে জানতে পারবে, এবং প্রকৃত ইসলামের সাথে পরিচিত হতে পারবে। কারণ এতদিনের চুপ করে থাকা মানুষেরা, যারা পত্র-পত্রিকা ম্যাগাজিন ইত্যাদি কোনো প্ল্যাটফর্মেই জানা সত্ত্বেও প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে পারছিলেন না, তারা এই information highway তে সঠিক information গুলো put করবেন। এবং ইসলামের সেই সঠিক বিষয়গুলো ইন্টারনেটে ভেসে বেড়াবে অনন্তকাল, আর কখন কোনো এক সম্ভাবনাময় বিপ্লবী ব্যক্তি সেই জ্ঞানের সংস্পর্শে এসে সত্যিকারের সংস্কার সাধন করবেন, তা কে জানে? অতএব, এটা খুবই আশার কথা। ইন্টারনেটের জগতে আর চাইলেই মানুষকে সংকীর্ণ সিলেবাসের মধ্যে কিংবা কুরআন-হাদীসের সংকীর্ণ বা বিকৃত ব্যাখ্যার মধ্যে ধরে রাখা সম্ভব হবে না। ইন্টারনেটের জগতে সকল ধরণের মতের সংস্পর্শে মানুষ আসবেই, এবং আসছেও। অর্থাৎ, একটি রিসার্চ যে প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয় আরকি। ইন্টারনেটের কারণে এখন মানুষ পড়ছে, শুনছে, জানছে এবং নিজের বিচারবুদ্ধি দিয়ে যাচাই করছে। ফলস্বরূপ, in the long run তারাই টিকে থাকবে, তাদেরই গণভিত্তি তৈরী হবে ও দৃঢ় হবে, যারা প্রকৃত সত্যের সাথে আছে। এতদিন ধরে ধর্মীয় রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠা না করলেও, জ্ঞানগত বিপ্লব থেকে দূরে থাকলেও ইন্টারনেটের জগতে জ্ঞানের মুখোমুখি হয়ে পড়ছে বিভিন্ন দল-মতের লোকেরা। আর সত্যিকারের জ্ঞানগত ভিত্তি না থাকলে তখন তারা টিকে থাকতে পারবে না। অর্থাৎ, একটি জ্ঞানগত বিপ্লব imminent (অত্যাসন্ন)। এবং সেটা এই ইন্টারনেটের মাধ্যমেই হবে। ইন্টারনেট একটি নতুন প্রযুক্তি। আর খুব দ্রুতই তা সব মানুষের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। Data collection, data aggregation ইত্যাদি করে যাচ্ছে গুগল ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সংস্থা। ডাটা মাইনিং, বিগ ডাটা, ইত্যাদি নিয়ে যেসব কাজ হচ্ছে, কে বলতে পারে যে সেটা ইসলামের সাহায্যে কাজে আসবে না? প্রতিনিয়ত ইসলামের বিষয়ে অসংখ্য সার্চ হয় গুগলে। কে বলতে পারে যে এই সার্চের মাধ্যমে সঠিক তথ্য কারো হাতে পৌঁছাবে না? কারণ ইসলামের শত্রুরা যেমন কাজ করে যাচ্ছে ইন্টারনেটে, তেমনি ইসলামের সম্পর্কে কমপ্লিট আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর মানুষেরাও কাজ করে যাচ্ছেন ইন্টারনেটে, তেমনি কাজ করে যাচ্ছেন জামায়াত-শিবিরের মত দলগুলো। না চাইতেও সবাই যেনো এক জ্ঞানগত যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। এবং এই জ্ঞানগত যুদ্ধ দিনদিন প্রকট আকার ধারণ করবে। তখন সত্যের বিজয় হবেই। আমি এ ব্যাপারে খুবই আশাবাদী।

পরবর্তী পোস্ট : প্রতিবাদ করার কি কেউ নেই?

আলোচিত বিষয়সমূহ



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

টাকার ইতিহাস, মানি মেকানিজম ও ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মহা জুলুম

ভূমিকা: জালিমের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম  (মহররম: ইনফো সিরিজ এর শেষ পোস্ট ছিল এটা। মূল সিরিজটি পড়ে আসুন ) জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাস হলো মহররম মাস। জালিমের মুখোশ উন্মোচনের মাস মহররম। জুলুমের কূটকৌশল উন্মোচনের মাস মহররম। আধুনিক সেকুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লেজিসলেশান (সংসদ), আর্মড ফোর্সেস (আর্মি) ও জুডিশিয়ারি (আদালত) হলো এক মহা জুলুমের ছদ্মবেশী তিন যন্ত্র, যারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করে জুলুম টিকিয়ে রাখার জন্য। তারচেয়েও বড় জালিম হলো big corporations: বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, যারা তাবৎ দুনিয়াকে দাস বানিয়ে রেখেছে। আর এই দাসত্বের শৃঙ্খলে তারা আমাদেরকে আবদ্ধ করেছে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে: টাকা আমাদের শ্রমকে ধারণ করে, অথচ সেই টাকার মূল্য আপ-ডাউন করায় অন্যরা -- ব্যাংক ব্যবসায়ীরা! টাকা আমাদের শ্রমকে সঞ্চয় করার মাধ্যম, অথচ সেই টাকা আমরা প্রিন্ট করি না, প্রিন্ট করে (ব্যাংকের আড়ালে) কিছু ব্যবসায়ী! সেই টাকার মান কমে যাওয়া (বা বেড়ে যাওয়া) আমরা নির্ধারণ করি না -- নির্ধারণ করে ব্যাঙ্ক (ব্যবসায়ীরা)! ইমাম হুসাইনের (আ.) প্রতিবাদী চেতনাকে ধারণ করব, শোকাহত হ

ধর্মব্যবসা: মুসলমানদের হাতে ইসলাম ধ্বংসের অতীত-বর্তমান (১)

ভূমিকা যদিও পলিটিকাল-রিলিজিয়াস ইস্যুতে নিশ্ছিদ্র আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করে আলোচনা করার অভ্যাস আমার, কিন্তু এখানে বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরে আর্গুমেন্ট করার প্রথমতঃ ইচ্ছা নেই, দ্বিতীয়তঃ সময় ও সুযোগ নেই। আমি যা সত্য বলে জানি, তা সংক্ষেপে তুলে ধরছি। যারা আমার উপর আস্থা রাখেন তাদের জন্য এই লেখাটি সোর্স অব ইনফরমেশান, উন্মুক্ত হৃদয়ের মানুষদের জন্য সত্য অনুসন্ধানের নতুন কিছু টপিক, আর প্রেজুডিসড ধর্মান্ধ রোগগ্রস্ত অন্তরের জন্য রোগ বৃদ্ধির উছিলা। শেষ পর্যন্ত আর্গুমেন্ট ও ডায়লগের দুয়ার উন্মুক্ত রাখার পক্ষপাতী আমি, কিন্তু সেই আর্গুমেন্ট অবশ্যই সত্য উন্মোচনের নিয়তে হওয়া উচিত, নিজের দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাস ও ধ্যান ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করবার উদ্দেশ্যে নয়। মক্কা-মদীনা: মুহাম্মদ (সা.) থেকে আলে-সৌদ (৬২৯-১৯২৪) এদেশের অধিকাংশ মানুষ মক্কা-মদীনার ইতিহাস কেবল এতটুকু জানেন যে, মুহাম্মদ (সা.) মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করেন। কিন্তু প্রায় চৌদ্দশ’ বছর আগে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র থেকে আজকের রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবের ইতিহাস কম মানুষই জানেন। প

পিস টিভি, জাকির নায়েক ও এজিদ প্রসঙ্গ

সম্প্রতি গুলশান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। আমি তখন দিল্লীতে ছিলাম। দেশে ফিরে শুনি পিস টিভি ব্যান করা হয়েছে বাংলাদেশে, এবং তার আগে ইন্ডিয়াতে। আমার বাসায় টিভি নেই, এবং আমি জাকির নায়েকের লেকচার শুনিও না। কিংবা পিস টিভিতে যারা লেকচার দেন, বাংলা কিংবা ইংলিশ -- কোনোটাই শুনি না; প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া আমার ইসলামের বুঝ জাকির নায়েকসহ পিস টিভি ও তার বক্তাদেরকে ইন জেনারেল আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। Peace TV বন্ধ হওয়ায় এদেশে বিকৃত ইসলাম প্রসারের গতি কমলো -- এটাই আমার মনে হয়েছে। একইসাথে আমি এটাও মনে করি যে, যেই অভিযোগ পিস টিভিকে ব্যান করা হয়েছে, তা নিছক অজুহাত। জাকির নায়েক কখনো জঙ্গীবাদকে উস্কে দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। কিংবা পিস টিভির লেকচার শুনে শুনে ISIS জঙ্গীরা সন্ত্রাসী হয়েছে -- এটা নিতান্তই হাস্যকর কথা। ISIS এর ধর্মতাত্ত্বিক বেইজ সম্পর্কে মোটেও ধারণা নেই, এমন লোকের পক্ষেই কেবল ISIS এর জন্য জাকির নায়েককে দোষ দেয়া সম্ভব। একইসাথে আমি এ বিষয়েও সচেতন যে, পিস টিভি বন্ধ করা হয়েছে আমাদের সরকারের রেগুলার “ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ