সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইসলাম - বিবিধ

অগাস্ট ১৭, ২০১৪ :
১. মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতি নিয়ে ফেইসবুকে প্রেজুডিসড কিন্তু নিতান্তই গণ্ড মূর্খ মানুষদের আস্ফালন দেখছি অনেকদিন থেকে। এদের অনেকেই দু-চারটি পলিটিকাল-ডিপ্লোম্যাটিক টার্ম ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্য ও আরব বিশ্বের ভুরাজনৈতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পরিস্থিতি নিয়ে দু-চার কলম লিখে পলিটিকাল অ্যানালিস্ট সেজে বসতে চায়। এর মাধ্যমে ফেইসবুক স্টার হওয়া যায়, আর নিজের ধর্মীয়-রাজনৈতিক অন্ধত্ব ও প্রেজুডিসকে আরো পাকাপোক্ত করা যায়। অথচ এদের না আছে রাজনীতির জ্ঞান, না বোঝে সমরকৌশল বা ভূরাজনীতি, আর না বোঝে ইসলামের কিছু। এসব মানুষদের মূল সমস্যা হিসেবে আমি একটা জিনিসই দেখছি। সেটা হলো ইসলামের স্পিরিচুয়ালিটি বিবর্জিত দুনিয়াবী ইন্টারপ্রিটেশান, এবং ধর্মীয়, গোত্রীয়, দলীয় ও জাতিগত প্রেজুডিস।

২. গত বছরের শেষদিকে সিরিয়া ক্রাইসিস চরমে উঠলে ফেইসবুক-ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক মানুষ মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতি নিয়ে জীবনে প্রথমবারের মত চিন্তা করলো। মানুষ সহজেই একটা পক্ষ নিতে চায়। অথচ মধ্যপ্রাচ্যের ধর্মীয়-রাজনৈতিক পরিস্থিতি যতটা জটিল ও দুর্বোধ্য, এতটা বিশ্বের আর কোথাও বোধকরি নেই, আর তার উপযুক্ত অ্যানালিসিসও ফেইসবুকের বাংলা জগতে নেই। এটা সত্য যে, মধ্যপ্রাচ্যের প্রকৃত পরিস্থিতি বুঝতে হলে এর ইরান-কেন্দ্রিক স্বচ্ছ বিশ্লেষণ অপরিহার্য; আর ইরান বিশ্বের আর দশটা দেশের মত নয়, ১৯৭৯ সালের পর থেকে ইরানের সাথে ইসলাম শব্দটা জড়িয়ে গেছে, যা কিনা সুন্নি মুসলমানদের কাছে শিয়া, শিয়া ইসলাম, ইত্যাদি হয়ে ধরা দিয়েছে। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নানা বিষয়ে ইরানের "নিয়ত" বুঝতে হলে তাই সেখানের আলেমসমাজকে বিশ্লেষণ করতে হবে, এবং ইসলাম, বিশেষত শিয়া ইসলাম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা লাভ করতে হবে। বর্তমান দুনিয়ার আর কোনো দেশের পলিটিকাল অ্যানালিসিসের জন্য ধর্মের এত গভীরে প্রবেশ করতে হয় না। তো, যা বলছিলাম। মানুষ সহজেই একটা পক্ষ নিতে চায়। সুতরাং ইরান কিংবা শিয়া বিষয়ে খুব দ্রুত একটা পক্ষ নেবার চেষ্টা করেছে অনেকেই। প্রতিদিনই আমার ব্যক্তিগত ব্লগে গুগল সার্চ থেকে ভিজিটর আসে, এবং সেখানে এজাতীয় কথা সার্চ করা হয় : শিয়ারা কি মুসলমান, খোমেনী, শিয়া, ইরান আমেরিকা গোপন বন্ধু... ইত্যাদি।
ফেইসবুকে এবং অন্যান্য সাইটে আমেরিকা-ইসরাইলের অ্যাকটিভ-প্যাসিভ এজেন্টদের লেখা শিয়া ইসলাম ও ইরান সম্পর্কে পড়ে এদের অধিকাংশই বিভ্রান্ত হয়, তবে সহজেই একটা পক্ষ নিতে পারে।

৩. সেসময় বন্ধুমহলের জন্যই মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি কিছুটা বিশ্লেষণ করে সঠিক ধারণাটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি ব্লগ লিখে। সেই সূত্রেই ইমাম খোমেইনীর (র.) জীবনী ও ইরানের ইসলামী বিপ্লবের ইতিহাস নিয়েও সংক্ষেপে লিখেছি, এবং শিয়া-সুন্নি ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন ও উভয় পক্ষের জবাবও সংগ্রহ করে পোস্ট করেছি। আহমদ দীদাতের ইরান অভিজ্ঞতাটিও অনুবাদ করেছিলাম। ফেইসবুকে শিয়া ও ইরানপন্থী কারো কারো আমার এসব লেখা ঘটনাক্রমে চোখে পড়লে তাদের সূত্রে এই সার্কেলটাকেও মোটামুটি দেখতে পেলাম যে, এদেরও অস্তিত্ব আছে। এখানে এক নতুন অভিজ্ঞতা হলো। সেটা বলছি।

৪. ইমাম খোমেইনী (র.) একজন মহান আধ্যাত্মিক সাধক ছিলেন, তবে দুনিয়ার বেশিরভাগ মানুষ তাঁকে চিনেছে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের নেতা হিসেবে।
নিঃসন্দেহে আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও এর পরে আহলে বাইতের নিষ্পাপ ইমামগণের অনুসরণই ইসলামের বিশুদ্ধতম, সর্বোৎকৃষ্ট ও প্রকৃত পথ, এবং ইমাম খোমেইনী(র.) এই পথেরই একজন পথিক ছিলেন। কিন্তু শিয়া ও ইরানপন্থীদের অনেককেই দেখলাম যে, তারা "সঠিক পথে থাকার অহঙ্কারে" আক্রান্ত; এবং এই রোগ প্রথমে উল্লিখিত প্রেজুডিসড মুসলমানদের রোগের চেয়েও ভয়ঙ্কর। কারণ এরা ইসলামের সঠিক পথটি জানতে পেরেছে, কিন্তু প্রেজুডিস থেকে মুক্ত হতে পারেনি। আর প্রেজুডিসড হার্ট বেহেশত পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না : যেকোনো প্রেজুডিস, অহংকার, ঔদ্ধত্যই হলো আল্লাহদ্রোহীতা। আর আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও আহলে বাইতের অনুসরণে নিজের জীবন পরিচালনা করার চেয়ে "আমি যে আহলে বাইতের অনুসারী", "আমি সঠিক, তোমরা ভুল", ইত্যাদি ঢাকঢোল পিটানোতেই তারা ব্যস্ত।
আর কিছু মানুষকে দেখলাম তারা ইরানপন্থী এই কারণে যে, ইরান নামক রাষ্ট্রটি দুনিয়ার বুকে একটি "শক্তিশালী বিজয়ী ইসলামী রাষ্ট্র"। অর্থাৎ, ইসলামের দুনিয়াবী ইন্টারপ্রিটেশান এদেরকে গ্রাস করেছে। এই ইরানই যদি এখন আমেরিকা-ইসরায়েলের মোকাবিলায় দুর্বল থাকতো, বাংলাদেশের মত সমস্যাজর্জরিত রাষ্ট্র হতো, এইসব ইরানপন্থীকে তখন আর খুঁজে পাওয়া যেতো না।
তারা ইমাম খোমেইনীর সম্পর্কে জেনেছে, কিন্তু সেই জানা এমন যে, বিরোধী পক্ষের সাথে বিতর্কে গালিগালাজ করবে, কিংবা অশিষ্ট ভাষা ব্যবহার করে তাদেরকে আক্রমণ করবে। মুহাম্মাদ (সা.) সম্পর্কে অনেকের জানা এইরূপ। তারা মুহাম্মদী দ্বীনের অনুসারী, তারা অনুসারী শ্রেষ্ঠ মানব মুহাম্মাদের (সা.), কিন্তু এই মুহাম্মাদের (সা.) আনীত দ্বীনের পক্ষে তর্ক বিতর্ক করার সময় তারা মুহাম্মাদেরই (সা.) শিক্ষার বিরুদ্ধাচরণ করে।

৫. সত্যকে উন্মোচন করার প্রয়োজন হয় না কখনোই, কারণ সত্য কখনোই গুপ্ত থাকে না, ছিলো না। বরং মানুষের অন্তরই হলো সেই জিনিস, যা অহঙ্কারের পর্দায় আবৃত থাকার কারণে সত্যকে দেখতে পায় না। একারণে আত্মশুদ্ধির প্রচেষ্টা ছাড়া ইসলামে পরিপূর্ণ দাখিল হওয়া সম্ভব নয়, সম্ভব নয় স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করা। আত্মশুদ্ধির প্রচেষ্টা ছাড়া ইসলামের যেকোনো চর্চাই তখন হয়ে পড়ে দুনিয়াতে সীমাবদ্ধ কর্মকাণ্ড, যা এই সৃষ্টিজগতের উর্ধ্বে উঠে আল্লাহর আরশ পর্যন্ত পৌঁছায় না। ইসলাম নিয়ে সারাদিন মেতে থাকা মানুষের অন্তরে যদি জান্নাতের কল্পনা না থাকে, আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের চেষ্টা ও আকাঙ্খা না থাকে, তবে কোন যুক্তিতে তাকে দেয়া হবে খোদায়ী সান্নিধ্য? তখন তার সকল ইসলামী কর্মকাণ্ড হবে দুনিয়ার জীবনের জন্য, আল্লাহর জন্যে নয়। আর "গায়রুল্লাহর" জন্যে মানুষ যেসব কাজ করে, তা আল্লাহর কাছে সঞ্চিত থাকে না। কেবল আল্লাহর জন্যে মানুষ যেটুকু করে, সেটুকুই আল্লাহর কাছে সঞ্চিত থাকে, এবং পরকালে অতটুকুই হবে তার অর্জন। বাকি সকল কর্মকাণ্ড, এমনকি যদিও তা বাহ্যত ইসলামিক হয়, তা দুনিয়ার সাথেই ধ্বংস হয়ে যাবে। একারণে মানুষের প্রতিটা কথা ও কর্মের নিয়ত চিন্তা করে দেখা উচিত যে, তা কি আল্লাহর জন্য, নাকি গায়রুল্লাহর জন্য। এবং শয়তান যেনো আমাদের এ ব্যাপারে প্রতারিত না করে।
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।


জুন ১৯, ২০১৪ :
কুরআনের সুস্পষ্ট বিষয়কে কেন্দ্র করে হাদিস বা ফিকাহ নিয়ে মতামত তৈরী করা ঠিক নয়।

নভেম্বর ২৬, ২০১৩ :
গণতান্ত্রিক-অগণতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক উপায়-অগণতান্ত্রিক উপায়, সাংবিধানিক-অসাংবিধানিক -- কথায় কথায় এইসব শব্দ ব্যবহার করে "গণতন্ত্রের" দোহাই দেয়া আপাতঃ দৃষ্টিতে ভয়ংকর মনে না হলেও এর grave consequence আছে। এতে "ইসলাম" এর পরিবর্তে এক অসংজ্ঞায়তি "গণতন্ত্রকে" মানুষ নিজের অজান্তেই স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে গ্রহণ করে ফেলে, যা অনেকের কাছে ধর্মের পর্যায়ে পৌঁছেছে।

"গণতান্ত্রিক ইসলাম" কিংবা "পলিটিক্যাল ইসলাম" এর সমর্থকেরা বলে থাকেন যে, গণতন্ত্র বলা হোক বা যা-ই বলা হোক, কার্যতঃ আল্লাহর বিধান মেনে চলাই মূল কথা।
না ! লেবেল এর গুরুত্ব আছে। লেবেল এর খুবই গুরুত্ব আছে। ইসলামপন্থীদের মুখেও যখন স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে "ইসলামিক-অনিসলামিক" শোনা না গিয়ে বরং শোনা যায় "গণতান্ত্রিক-অগণতান্ত্রিক", তখন অসংখ্য মানুষের মনে ইমপ্লিসিটলি স্ট্যান্ডার্ড হয়ে ওঠে গণতন্ত্র -- অ্যাবসলিউট কুরআনের স্থান দখল করে নেয় vague গণতন্ত্র।

এই গণতন্ত্রের দোহাই দেয়ার grave consequence আছে।

নভেম্বর ১৭, ২০১৩ :
হায়, দুঃখ হয় তাদের জন্য, যারা অকাট্য কুরআন বাদ দিয়ে বিভিন্ন দ্বীনি সূত্রের বিভ্রান্তিতে জড়িয়ে পড়েছে। ১০ই মহররম, অর্থাৎ আশুরার মর্মান্তিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুসলিমদের স্বাভাবিক শোক প্রকাশের বিরোধিতা করে সৌদি এজেন্ট ও তাদের দ্বারা বিভ্রান্তির শিকার মুসলমানেরা কত রকম কথাই না বলে যাচ্ছে ! শোক করা যাবে না, ক্রন্দন করা যাবে না, বুক চাপড়ানো, মাথা চাপড়ানো যাবে না, আরো কত কী ! অথচ কুরআন পড়ে কি তারা দেখেছি, সন্তানের শোকে নবী ইয়াকুব (আ.) এর কী অবস্থা হয়েছিলো ? আল্লাহ তো তাঁকে তিরস্কার করেননি!
আর এসব সৌদি এজেন্টরা শোক করার সংবিধান খুঁজতে ও হাদীসের নাম দিয়ে তা তৈরী করতে বসেছে। যেন কারো প্রিয়জন মারা গেলে তারা দুঃখ পাবার আগে, কান্না করার আগে ঐসব বিভ্রান্তিকর সত্য-মিথ্যা হাদীসের ভিড়ে কিছু জিনিস খুঁজে নিয়ে বলতে পারে : "শোক করা নিষেধ ! ক্রন্দন করা, বুক চাপড়ানো নিষেধ !"

দুঃখজনক। অন্ধ বিদ্বেষ থেকে বিচারবুদ্ধি ও স্বাভাবিক বিবেককে কতটা আচ্ছন্ন করে ফেলেছে তারা !

নভেম্বর ১৫, ২০১৩ :
কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনা যে দিনেই ঘটুক না কেনো, ঘটনাটি নিজে কতখানি তাৎপর্যপূর্ণ, সেটিই বিবেচ্য বিষয়। সেটা ১০ই মহররমেই হোক কি বছরের অন্য যেকোনো দিনেই হোক না কেনো।
দূর্ভাগ্যজনকভাবে, ইসলাম বিকৃতির সৌদি এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী দেশীয় এজেন্ট ও তাতে পতিত বিভ্রান্ত কিছু মুসলিম কারবালার ঘটনাকে ম্লান করার জন্য, খাটো করার জন্য, এবং কেউ কেউ গোটা ঘটনাটিকেই "গুম" করে দেবার জন্য ১০ই মহররম, অর্থাৎ আশুরায় ইসলামের ইতিহাসের কী কী গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট ঘটেছিল তার ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে। এমনকি কেউ কেউ তো আশুরার দিনটিকে আনন্দের দিন হিসেবে প্রচার করার চেষ্টা করছে। যদিও তারা যেসব ঘটনার উল্লেখ করছে, তার অকাট্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে তারা ব্যর্থ, এবং অনেক ক্ষেত্রে কিছু ঘটনা মিথ্যা তৈরী করা হয়েছে।

১০ই মহররমে ঘটেছে বলে যেসব ঘটনা এই সৌদি এজেন্টরা উল্লেখ করছে, সেগুলোসহ আরো অসংখ্য ঘটনা ১০ই মহররমে ঘটে থাকলেও তা কারবালার প্রান্তরে ইমাম হুসাইন (রা.) এর আত্মত্যাগের শিক্ষাকে ম্লান করে না, এবং ম্লান করে না সেই বিয়োগান্তক ঘটনার শোককে।

১০ই মহররমে সংঘটিত অন্যান্য ঘটনার ব্যাপক প্রচারণা চালালেও কারবালার প্রান্তরে জাহান্নামী ইয়াজিদ ও তার বাহিনীর বর্বরতার শিকার হয়ে ইমাম হুসাইন (রা.) ও তাঁর সঙ্গীগণের আত্মত্যাগের ঘটনা মুসলমানদের মাঝে যে শোকের সৃষ্টি করে, তা নিঃসন্দেহে অন্যান্য সকল ঘটনাকে ছাপিয়ে যায়। কারবালার এই শোক যে শিক্ষা বয়ে আনে তা হলো প্রকৃত শত্রুকে শনাক্ত করা, শত্রুর মুখোশ উন্মোচন করা এবং সত্যের পথে আপোষহীন থাকা। এই শোককে শক্তিতে পরিণত করা এবং ইমাম হুসাইন (রা.) এর এই আত্মত্যাগের ঘটনার তাৎপর্য বিশ্লেষণ করে তা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করাই হোক মুসলিম জাতির সঙ্কটকালীন সাহায্য।

অক্টোবর ১৫, ২০১৩ :
শিয়া মাজহাব সম্পর্কে ইখওয়ানুল মুসলিমিনের দৃষ্টিভঙ্গি।
(শিয়া-সুন্নি বিভেদের বিষয়টি যাদেরকে ট্রাবল করছে, তাদের জন্য আর্টিকেলটি আগ্রহোদ্দীপক হবে বলে মনে করি।)

"ইখওয়ান মনে করে শিয়াদেরকে রাফেজি বা ধর্ম থেকে বিচ্যুত ও বেদাতি বলা একটি সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি যা কেবল উত্তেজনা ও বিভেদ বাড়ায়। এ ধরনের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে শিয়া মাজহাবের বিরুদ্ধে বন্যার মত বহু বই প্রকাশ করা হয়েছে যেগুলো মিথ্যা, বিভ্রান্তি ও অতিরঞ্জনে ভরপুর। শিয়াদের বিরোধী নানা অপবাদ ও বক্তব্যে ভরপুর এইসব বইয়ের সব কথাকেই বেশির ভাগ সুন্নি মুসলমান ধ্রুব সত্য ও অনস্বীকার্য বলে মনে করেন। কিন্তু বাস্তবতা হল এইসব মন্তব্য বা ধারণা হয় বিদ্বেষ-প্রসূত বা অজ্ঞতা-প্রসূত অথবা প্রতারিত ব্যক্তির কিংবা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য সুবিধাবাদীদের সুবিধা লাভের প্রচেষ্টার অংশ যারা নিজের ধর্মকে বিক্রি করছেন রাজা-বাদশাহ বা শাসকদেরকে খুশি করার জন্য। আরো নিকৃষ্ট ব্যাপার হল- এরা কখনও কখনও কাফির এবং ইহুদি-খ্রিস্টানদেরকে শিয়াদের চেয়ে ভালো মনে করেন!"
.....

অক্টোবর ৩, ২০১৩ :
যে বলে যে ধর্ম এবং রাজনীতি দুটো আলাদা জিনিস, সে হয় বোকা, নয়তো বড় শয়তান।

বোকা লোকটি না বোঝে ইসলাম, আর না বোঝে রাজনীতি। আর শয়তানটি হলো সেক্যুলার সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল। ধর্মকে কিছু আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ করার মাধ্যমে এরা নীতিহীন অসভ্য সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

অক্টোবর ৩, ২০১৩ :
"The wire will win, when it tears our spirit.
Yes, yes, the wire is hurting us. It is around our neck.
But it is God, not Graziani and not him, who decides what becomes of us.
What is the will of wire, compared to the will of God ?

They have 8 million bayonets, we have one that matters."

-- Omar Mukhtar.

সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৩ :
বিনয় ও শালীনতা ইসলামের অন্যতম মৌলিক শিক্ষা। অনেক "ইসলামপন্থীকেই" দেখি ইসলামের পক্ষে লিখতে / বলতে গিয়ে কিংবা ইসলাম বিরোধী শক্তির বিরোধিতা করতে গিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন, এমনকি কোনো মুসলমানের সাথে দ্বন্দ হলে তাকেও। বিনয়, শালীনতা ও মার্জিত কথাকে পরিহার করে তাঁরা কীভাবে ইসলামের সেবা করেন ? মুসলিমের অন্যতম গুণগুলির বিপরীতে গিয়ে কী করে তাঁরা খাঁটি মুসলিম তৈরী করার সাধনা করেন ?

আমাদের নবীজি জীবিত থাকলে কি এই ব্যক্তিগণ নবীজির সামনে গিয়ে একথা বলতো যে :
"ইয়া রাসূলুল্লাহ ! আমি ওমুক নাস্তিককে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেছি এবং ওমুক মুসলমানের সাথে ইসলামের কিছু বিষয়ে দ্বন্দের কারণে তার সাথেও অশোভন, অমার্জিত ও অশালীন ভাষায় কথা বলেছি।" ??

নবীজির সামনে যা করার সাহস পেতেন না, যা করতেন না, ইসলামের পথে নবীজির অনুপস্থিতিতেও তা করবেন না। এতে কখনোই সাফল্য লাভ করবেন না। বরং সমস্ত কর্ম ব্যর্থ হয়ে যাবে।

সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৩ :
Do not ever feel weak if you have dedicated your life for truth.
Because you are fighting for truth, and you are fighting with truth.
And by definition, truth is the mightiest cause and weapon of 'em all.

Those who fight for the establishment of falsehood, they can never win. Because they fight for falsehood, and they fight with falsehood.
And by definition, falsehood is the weakest cause and weapon of 'em all.

"And say: "Truth has (now) arrived, and Falsehood perished: for Falsehood is (by its nature) bound to perish."" (Surah Al Isra, 17:81)

শিরোনামহীন শাহবাগে যাওয়ার পর থেকে আর ওদের গান শোনাই হয় না। একদমই না। একেবারেই মন উঠে গিয়েছে। অথচ ব্লগ লেখার সময় শিরোনামহীনের গান শুনতে কী ভালো লাগতো !
একইভাবে বিপাশা হায়াত, চঞ্চল চৌধুরি এবং মিডিয়া জগতের আরো অনেকে।
অ্যাপারেন্টলি, এইসব মানুষ দল-মত-রাজনীতি-ধর্ম নির্বিশেষ সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে থাকে। কিন্তু ধর্মের অবস্থান যে মানুষের আর সবকিছুর উপরে, শাহবাগের মত এইসব ইস্যুতে তা নতুন করে স্মরণ হয়।

শাহবাগ ইস্যুতে ভাই-বোনে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, দুই-তিন যুগের বন্ধুত্ব শেষ হয়ে গিয়েছে, বাবা-মা-সন্তানে দূরত্ব তৈরী হয়েছে।

স্যামুয়েল হান্টিংটন তার Who Are We? বইয়ে বলেছেন যে আমেরিকানদের পরিচয় হওয়া উচিত অ্যামেরিকান এবং ক্রিশ্চিয়ান। অর্থাৎ ন্যাশনালিজম এবং রিলিজিয়ন। অন্তত এই জিনিসটা সঠিক বলেছেন : রিলিজিয়ন।
ধর্মের উর্ধ্বে মুসলমানদের আর কোনো পরিচয় থাকতে পারে না। পৃথিবীর সব মুসলমান প্রথমে এক জাতি। তারপর বাঙালি, বাংলাদেশী, ইরাকি, ইরানি, আফাগানি, পাকিস্তানি। কিন্তু ধর্ম সবার উর্ধ্বে। এই বিষয়ে ভুল করা চলবে না। ধর্মের উপরে আর কোনো আইডেন্টিটিকে প্রাধান্য দিলেই শাহবাগিদের মত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে হবে।

বিশ্বজুড়ে সেক্যুলারিজমের পতন হচ্ছে। মানব সভ্যতার ইতিহাসে ধর্ম সবসময়ই বিশ্বকে, রাষ্ট্রকে, জাতিকে শাসন করেছে; সংস্কৃতিকে গড়েছে, নিয়ন্ত্রণ করেছে। ১৬৪৮ এর ওয়েস্টফালিয়া ট্রিটির পর থেকে যে সেক্যুলারিজমের ব্যাপক প্রচার-প্রসার, সেই সেক্যুলারিজম সারা বিশ্বে দখল নেবার আগেই ধর্ম ফিরতে শুরু করেছে। তিউনিসিয়া, মিশর, ইয়েমন, লিবিয়া ইত্যাদি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বাংলাদেশে হেফাজতের উত্থানও একই সূত্রে গাঁথা। সারা বিশ্ব যেই একটি গন্তব্যে এগিয়ে যাচ্ছে, তার জন্য ছোটো-বড় অনেকগুলো ফোর্স কাজ করছে। এই হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-ও তেমনই একটি ফোর্স। এমনকি ইন্টারনেটে যারা ইসলাম নিয়ে ভালো-মন্দ লিখে যাচ্ছেন, তারাও।

এখন আমাদেরকে যার যার scope এর ভিতরে সর্বোচ্চ ভালো কাজগুলো চালিয়ে যেতে হবে। সেইসাথে এটা ভুললে চলবে না যে, আমাদের এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিচ্ছিন্ন কাজগুলোকেই একদিন মহান এক ব্যক্তি এসে এক সুতায় গেঁথে আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত করবেন।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

টাকার ইতিহাস, মানি মেকানিজম ও ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মহা জুলুম

ভূমিকা: জালিমের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম  (মহররম: ইনফো সিরিজ এর শেষ পোস্ট ছিল এটা। মূল সিরিজটি পড়ে আসুন ) জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাস হলো মহররম মাস। জালিমের মুখোশ উন্মোচনের মাস মহররম। জুলুমের কূটকৌশল উন্মোচনের মাস মহররম। আধুনিক সেকুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লেজিসলেশান (সংসদ), আর্মড ফোর্সেস (আর্মি) ও জুডিশিয়ারি (আদালত) হলো এক মহা জুলুমের ছদ্মবেশী তিন যন্ত্র, যারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করে জুলুম টিকিয়ে রাখার জন্য। তারচেয়েও বড় জালিম হলো big corporations: বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, যারা তাবৎ দুনিয়াকে দাস বানিয়ে রেখেছে। আর এই দাসত্বের শৃঙ্খলে তারা আমাদেরকে আবদ্ধ করেছে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে: টাকা আমাদের শ্রমকে ধারণ করে, অথচ সেই টাকার মূল্য আপ-ডাউন করায় অন্যরা -- ব্যাংক ব্যবসায়ীরা! টাকা আমাদের শ্রমকে সঞ্চয় করার মাধ্যম, অথচ সেই টাকা আমরা প্রিন্ট করি না, প্রিন্ট করে (ব্যাংকের আড়ালে) কিছু ব্যবসায়ী! সেই টাকার মান কমে যাওয়া (বা বেড়ে যাওয়া) আমরা নির্ধারণ করি না -- নির্ধারণ করে ব্যাঙ্ক (ব্যবসায়ীরা)! ইমাম হুসাইনের (আ.) প্রতিবাদী চেতনাকে ধারণ করব, শোকাহত হ

ধর্মব্যবসা: মুসলমানদের হাতে ইসলাম ধ্বংসের অতীত-বর্তমান (১)

ভূমিকা যদিও পলিটিকাল-রিলিজিয়াস ইস্যুতে নিশ্ছিদ্র আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করে আলোচনা করার অভ্যাস আমার, কিন্তু এখানে বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরে আর্গুমেন্ট করার প্রথমতঃ ইচ্ছা নেই, দ্বিতীয়তঃ সময় ও সুযোগ নেই। আমি যা সত্য বলে জানি, তা সংক্ষেপে তুলে ধরছি। যারা আমার উপর আস্থা রাখেন তাদের জন্য এই লেখাটি সোর্স অব ইনফরমেশান, উন্মুক্ত হৃদয়ের মানুষদের জন্য সত্য অনুসন্ধানের নতুন কিছু টপিক, আর প্রেজুডিসড ধর্মান্ধ রোগগ্রস্ত অন্তরের জন্য রোগ বৃদ্ধির উছিলা। শেষ পর্যন্ত আর্গুমেন্ট ও ডায়লগের দুয়ার উন্মুক্ত রাখার পক্ষপাতী আমি, কিন্তু সেই আর্গুমেন্ট অবশ্যই সত্য উন্মোচনের নিয়তে হওয়া উচিত, নিজের দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাস ও ধ্যান ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করবার উদ্দেশ্যে নয়। মক্কা-মদীনা: মুহাম্মদ (সা.) থেকে আলে-সৌদ (৬২৯-১৯২৪) এদেশের অধিকাংশ মানুষ মক্কা-মদীনার ইতিহাস কেবল এতটুকু জানেন যে, মুহাম্মদ (সা.) মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করেন। কিন্তু প্রায় চৌদ্দশ’ বছর আগে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র থেকে আজকের রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবের ইতিহাস কম মানুষই জানেন। প

পিস টিভি, জাকির নায়েক ও এজিদ প্রসঙ্গ

সম্প্রতি গুলশান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। আমি তখন দিল্লীতে ছিলাম। দেশে ফিরে শুনি পিস টিভি ব্যান করা হয়েছে বাংলাদেশে, এবং তার আগে ইন্ডিয়াতে। আমার বাসায় টিভি নেই, এবং আমি জাকির নায়েকের লেকচার শুনিও না। কিংবা পিস টিভিতে যারা লেকচার দেন, বাংলা কিংবা ইংলিশ -- কোনোটাই শুনি না; প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া আমার ইসলামের বুঝ জাকির নায়েকসহ পিস টিভি ও তার বক্তাদেরকে ইন জেনারেল আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। Peace TV বন্ধ হওয়ায় এদেশে বিকৃত ইসলাম প্রসারের গতি কমলো -- এটাই আমার মনে হয়েছে। একইসাথে আমি এটাও মনে করি যে, যেই অভিযোগ পিস টিভিকে ব্যান করা হয়েছে, তা নিছক অজুহাত। জাকির নায়েক কখনো জঙ্গীবাদকে উস্কে দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। কিংবা পিস টিভির লেকচার শুনে শুনে ISIS জঙ্গীরা সন্ত্রাসী হয়েছে -- এটা নিতান্তই হাস্যকর কথা। ISIS এর ধর্মতাত্ত্বিক বেইজ সম্পর্কে মোটেও ধারণা নেই, এমন লোকের পক্ষেই কেবল ISIS এর জন্য জাকির নায়েককে দোষ দেয়া সম্ভব। একইসাথে আমি এ বিষয়েও সচেতন যে, পিস টিভি বন্ধ করা হয়েছে আমাদের সরকারের রেগুলার “ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ