সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইসলাম - একটি আধুনিক জীবন বিধান

"ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।"
"ইসলাম একটি আধুনিক জীবন বিধান।"
"Islam never gets old."
ইত্যাদি কথা কেবল মৌখিকভাবে প্রচার করে বেড়ানো যথেষ্ট নয়। বরং এই কথাগুলোকে গভীরভাবে বুঝতে হবে। নইলে ইসলাম আচার সর্বস্ব ধর্ম হয়ে পড়বে।

আধুনিক শব্দের অর্থ হলো যা যুগের সাথে সাথে, কালের প্রবাহে অগ্রহণযোগ্য ও অচল হয়ে পড়ে না। অনেকে এর ভুল অর্থ গ্রহণ করে (উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে) ইসলামকে "মডার্নাইজ" করার নামে ইসলামী মূলনীতি বিরুদ্ধ জিনিসের প্রবেশ ঘটান। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। আবার এ-ও গ্রহণযোগ্য নয় যে, ইসলাম প্রতিষ্ঠা ও পালনের নামে ১৪০০ বছর আগের হুবহু দৃশ্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। হুবহু বলতে পোশাক-আষাক, খাবার, যান-বাহন, আসবাব পত্র, গৃহস্থালী, ঘর-বাড়ি, সংস্কৃতি ইত্যাদিকে ১৪৪০ বছর পূর্বের আরবের ন্যায় করে ফেলা।

"কুরআন একটি জীবন্ত মুজিজা" এর অর্থ হলো, স্থান ও কালের পরীক্ষায় এটি উত্তীর্ণ হয়।
আবার "ইসলাম একটি আধুনিক জীবন বিধান" এর অর্থ হলো, স্থান ও কালের পরিবর্তনে ইসলামী মূলনীতি অগ্রহণযোগ্য ও অচল হয়ে পড়ে না। এই অর্থেই ইসলাম আধুনিক।
ইসলাম বলে না যে পৃথিবীর সকল মুসলমানকে সেই খাবার (যেমন খেজুর, রুটি ইত্যাদি) খেতে হবে, যা মহানবী (সা.) খেতেন। বরং বলে যে তুমি যা-ই খাও না কেনো, তা যেনো কুরআনে বর্ণিত হালাল রুজি দ্বারা উপার্জিত হালাল খাবার হয়।
ইসলাম বলে না যে পৃথিবীর সব মুসলমানকেই জোব্বা পরতে হবে, চামড়ার মশকে পানি খেতে হবে, যাতায়াতের জন্য উট ব্যবহার করতে হবে। বরং বলে যে, তুমি যেই পোশাকই পরিধান করো না কেনো, তা যেন হয় কুরানিক গাইডলাইন অনুসৃত শালীন পোষাক, তোমার পানীয় যেন নেশা সৃষ্টিকারী না হয়, তোমার যাতায়াতের বাহন যা-ই হোক না কেনো, তোমার যাতায়াত যেনো আল্লাহর ভূমিতে আল্লাহর উদ্দেশ্যেই হয়।
ইসলাম বলে না যে সব মানুষের মুখের ভাষা হতে হবে আরবী। বরং সকল ভাষা-ই আল্লাহর, এবং যে ভাষাতেই তুমি কথা বলো না কেনো, তোমার কথা যেনো হয় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।

অর্থাৎ, ইসলাম হলো (মূলতঃ) কিছু নীতির সমষ্টি। যেনো একটা বাড়ির নকশা। সে বাড়ি কাঠেরও হতে পারে, কংক্রিটেরও হতে পারে, হতে পারে টিনের কিংবা ছনের।
এইরূপে ইসলামকে বুঝতে হবে। খেজুর, মধু, মেসওয়াক, জোব্বা, পাগড়ি, তলোয়ার কিংবা বসার ভঙ্গি, দাঁড়ানোর ভঙ্গি, ডান হাতে খাওয়া / বাম হাতে খাওয়া, মুচকি হাসি / দাঁত বের করে হাসি, কান্নার ভঙ্গি, শোক প্রকাশের ভঙ্গি, দাড়ির দৈর্ঘ্য / মেহেদী দিয়ে দাড়ি রাঙানো -- ইত্যাদিকে ইসলাম মনে করলে তা আচারসর্বস্ব অগ্রহণযোগ্য ধর্মগুলোর মত হয়ে যাবে। ইসলাম হলো কিছু মূলনীতির সমষ্টি। যেনো একটি বাড়ির নকশা। অতঃপর সেই বাড়ি হোক কাঠের, কংক্রীটের কিংবা টিনের।

আমাদের অনেকেই জন্মসূত্রে মুসলমান হওয়া এবং "লোকে করে, দেখাদেখি আমিও করি" এইভাবে ইসলাম পালন করে আসায় ইসলামের মূলনীতি থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছি। এবং অনেকেই বিস্মৃত হয়েছে যে ইসলাম খেজুর-মধু-দাড়ি-জোব্বা-পাগড়ি নয়, ইসলাম হলো এগুলোর পেছনের মূলনীতিসমূহ।
এখন, আমাদের এই ভুলগুলো দেখতে, তারপর বুঝতে, এবং অতঃপর তা গ্রহণ করতে (বেশিরভাগেরই) সময় প্রয়োজন। আমি বার্তা পৌঁছে দিয়ে সেই সময়ের দৈর্ঘ্য তাদেরকেই নির্ধারণ করতে দিতে চাই।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

টাকার ইতিহাস, মানি মেকানিজম ও ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মহা জুলুম

ভূমিকা: জালিমের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম  (মহররম: ইনফো সিরিজ এর শেষ পোস্ট ছিল এটা। মূল সিরিজটি পড়ে আসুন ) জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাস হলো মহররম মাস। জালিমের মুখোশ উন্মোচনের মাস মহররম। জুলুমের কূটকৌশল উন্মোচনের মাস মহররম। আধুনিক সেকুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লেজিসলেশান (সংসদ), আর্মড ফোর্সেস (আর্মি) ও জুডিশিয়ারি (আদালত) হলো এক মহা জুলুমের ছদ্মবেশী তিন যন্ত্র, যারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করে জুলুম টিকিয়ে রাখার জন্য। তারচেয়েও বড় জালিম হলো big corporations: বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, যারা তাবৎ দুনিয়াকে দাস বানিয়ে রেখেছে। আর এই দাসত্বের শৃঙ্খলে তারা আমাদেরকে আবদ্ধ করেছে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে: টাকা আমাদের শ্রমকে ধারণ করে, অথচ সেই টাকার মূল্য আপ-ডাউন করায় অন্যরা -- ব্যাংক ব্যবসায়ীরা! টাকা আমাদের শ্রমকে সঞ্চয় করার মাধ্যম, অথচ সেই টাকা আমরা প্রিন্ট করি না, প্রিন্ট করে (ব্যাংকের আড়ালে) কিছু ব্যবসায়ী! সেই টাকার মান কমে যাওয়া (বা বেড়ে যাওয়া) আমরা নির্ধারণ করি না -- নির্ধারণ করে ব্যাঙ্ক (ব্যবসায়ীরা)! ইমাম হুসাইনের (আ.) প্রতিবাদী চেতনাকে ধারণ করব, শোকাহত হ

ধর্মব্যবসা: মুসলমানদের হাতে ইসলাম ধ্বংসের অতীত-বর্তমান (১)

ভূমিকা যদিও পলিটিকাল-রিলিজিয়াস ইস্যুতে নিশ্ছিদ্র আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করে আলোচনা করার অভ্যাস আমার, কিন্তু এখানে বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরে আর্গুমেন্ট করার প্রথমতঃ ইচ্ছা নেই, দ্বিতীয়তঃ সময় ও সুযোগ নেই। আমি যা সত্য বলে জানি, তা সংক্ষেপে তুলে ধরছি। যারা আমার উপর আস্থা রাখেন তাদের জন্য এই লেখাটি সোর্স অব ইনফরমেশান, উন্মুক্ত হৃদয়ের মানুষদের জন্য সত্য অনুসন্ধানের নতুন কিছু টপিক, আর প্রেজুডিসড ধর্মান্ধ রোগগ্রস্ত অন্তরের জন্য রোগ বৃদ্ধির উছিলা। শেষ পর্যন্ত আর্গুমেন্ট ও ডায়লগের দুয়ার উন্মুক্ত রাখার পক্ষপাতী আমি, কিন্তু সেই আর্গুমেন্ট অবশ্যই সত্য উন্মোচনের নিয়তে হওয়া উচিত, নিজের দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাস ও ধ্যান ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করবার উদ্দেশ্যে নয়। মক্কা-মদীনা: মুহাম্মদ (সা.) থেকে আলে-সৌদ (৬২৯-১৯২৪) এদেশের অধিকাংশ মানুষ মক্কা-মদীনার ইতিহাস কেবল এতটুকু জানেন যে, মুহাম্মদ (সা.) মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করেন। কিন্তু প্রায় চৌদ্দশ’ বছর আগে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র থেকে আজকের রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবের ইতিহাস কম মানুষই জানেন। প

পিস টিভি, জাকির নায়েক ও এজিদ প্রসঙ্গ

সম্প্রতি গুলশান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। আমি তখন দিল্লীতে ছিলাম। দেশে ফিরে শুনি পিস টিভি ব্যান করা হয়েছে বাংলাদেশে, এবং তার আগে ইন্ডিয়াতে। আমার বাসায় টিভি নেই, এবং আমি জাকির নায়েকের লেকচার শুনিও না। কিংবা পিস টিভিতে যারা লেকচার দেন, বাংলা কিংবা ইংলিশ -- কোনোটাই শুনি না; প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া আমার ইসলামের বুঝ জাকির নায়েকসহ পিস টিভি ও তার বক্তাদেরকে ইন জেনারেল আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। Peace TV বন্ধ হওয়ায় এদেশে বিকৃত ইসলাম প্রসারের গতি কমলো -- এটাই আমার মনে হয়েছে। একইসাথে আমি এটাও মনে করি যে, যেই অভিযোগ পিস টিভিকে ব্যান করা হয়েছে, তা নিছক অজুহাত। জাকির নায়েক কখনো জঙ্গীবাদকে উস্কে দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। কিংবা পিস টিভির লেকচার শুনে শুনে ISIS জঙ্গীরা সন্ত্রাসী হয়েছে -- এটা নিতান্তই হাস্যকর কথা। ISIS এর ধর্মতাত্ত্বিক বেইজ সম্পর্কে মোটেও ধারণা নেই, এমন লোকের পক্ষেই কেবল ISIS এর জন্য জাকির নায়েককে দোষ দেয়া সম্ভব। একইসাথে আমি এ বিষয়েও সচেতন যে, পিস টিভি বন্ধ করা হয়েছে আমাদের সরকারের রেগুলার “ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ