সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বাংলাদেশের রাজনীতি - মাহমুদুর রহমান

জুলাই ৩০, ২০১৩ :
প্রধানমন্ত্রী তার ছেলের জন্মদিনে খুশীমনে পোলাও রান্না করছেন -- এই ছবি এবং তা নিয়ে অম্ল-মধুর আলোচনায় মুখর ইন্টারনেট।
অথচ আরেক মা, মাহমুদা বেগমের কথা কারও মনে আছে ? এই রোজার মাসেও তাঁর একমাত্র সন্তান মাহমুদুর রহমানকে জেলে আটকে রেখে নিয়ত নির্যাতন করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী তো অনেক জাঁকজমক সহকারে পরিবার-পরিজন নিয়েই ঈদ পালন করবেন, সেটার ছবিও হয়তো আমরা সজীব ওয়াজেদ জয় এর ফেসবুকে দেখবো; যারা বলছেন যে প্রধানমন্ত্রী বাইরে প্রধানমন্ত্রী, কিন্তু ঘরে তিনি একজন মা, এই ছবিতে তাই রাজনীতি টেনে আনা ঠিক হবে না, তারা কি চিন্তা করেছেন, একমাত্র সন্তানকে জেলে রেখে মাহমুদা বেগমের ঈদ কেমন হবে ?

হয়তো এখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে সুস্বাদু সব ইফতার তৈরী করছেন তার ছেলে জয় এর জন্য, আর হয়তো মাহমুদা বেগম এক বাকসো ইফতার নিয়ে কাশিমপুর কারাগারের গেইট থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ফিরে আসছেন -- নিজ হাতে তৈরী ইফতার হয়তো আর সন্তানের মুখে তুলে দেয়া হলো না।


এপ্রিল ১১, ২০১৩ :
::মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে সরকার নিজের পতন ত্বরান্বিত করলো।::

সরকার বড় ধরণের ভুল করে যাচ্ছে একের পর এক। কয়েকটা বিষয় তারা বুঝতে পারে নাই :
১. একটা পত্রিকার সম্পাদককে গ্রেফতার করলেই পত্রিকার রিপোর্টের বিষয়বস্তু ও ধরণ বদলে যায় না। পত্রিকা যতদিন প্রকাশিত হবে, আমার দেশ তার আগের ভূমিকাতেই থাকবে - তেমন সাংবাদিক পরিবার তৈরী করেছেন মাহমুদুর রহমান।

২. ইনফরমেশন হাইওয়েতে এখন সবাই-ই যুক্ত। এই সময়ে গোয়েবলসীয় কায়দায় এক মিথ্যাকে ১০০ বার বলে সত্যে পরিণত করা যাবে না। একারণেই ৮-১০ টা টিভি চ্যানেল ও তার চেয়েও বেশি পত্রিকা ও অনলাইন মিডিয়ার ক্রমাগত প্রোপাগাণ্ডার মাধ্যমে সরকার যে মিথ্যা প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলো, একা একটি পত্রিকা আমার দেশ তাদের সবার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে এবং জয়ী হয়েছে।
৩. হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে যেই কোটি মানুষের ইসলামী গণজাগরণ শুরু হয়েছে, আন্দোলনের সূচনাকারী মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের মাধ্যমে সেটা বন্ধ করা যাবে না, বরং তা আরো দৃঢ় হবে এবং আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে সফলতা লাভ করবে ইনশাআল্লাহ।
৪. হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবীতে সমর্থন জানিয়েছে দল-মত নির্বিশেষে দেশের সাধারণ ইসলামপ্রিয় জনগণ। চার বছরব্যাপী অত্যাচার-নির্যাতনের স্টিম রোলার চালানো আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে অনেক আগেই, এবং তারা প্রশাসনিক শক্তি সর্বস্ব একটি দলে পরিণত হয়েছে। ১৩ দফা দাবী মেনে নিয়ে গণমানুষের আবেগ এবং মন দু্টোই জয় করতে পারতো আওয়ামী লীগ। কিন্তু নাস্তিক গুরুদেরকে খুশি করতে আওয়ামী সরকার তাদের ইতিহাসের আরেকটি চরম ভুল করতে যাচ্ছে : ইসলামী গণজোয়ারের স্রোতের বিপরীতে গুটিকয়েক নাস্তিকের পক্ষে শুধুমাত্র প্রসাশনিক শক্তি নিয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃত গণজোয়ারের বিপরীতে যেয়ে সাধারণ জনগণের প্রকাশ্য শত্রুতে পরিণত হতে চাইবে না আমেরিকা কিংবা ইন্ডিয়া - সুতরাং অবস্থা বেগতিক দেখলে তারা আওয়ামী সরকারের প্রতি তাদের সকল সহযোগীতা-সমর্থন তুলে নেবে, এবং প্রয়োজনে উল্টো সরকার পতন ত্বরান্বিত করবে।
৫. রাজনৈতিক দল হিসেবে এবং অন্ততপক্ষে এই মেয়াদের জন্য ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সুযোগ ছিলো হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবী মেনে নেয়া। তা মেনে না নিয়ে উল্টো নির্যাতনের স্টিম রোলার চালানো শুরু করলে ক্ষুধার্ত বাঘের সওয়ারীর পরিণতি বরণ করতে হবে : ক্ষুধার্ত বাঘ তার সওয়ারীকে পিঠের 'পর থেকে নামিয়ে এনে তার ক্ষুধা মিটাবে।

http://goo.gl/X8TFO

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

টাকার ইতিহাস, মানি মেকানিজম ও ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মহা জুলুম

ভূমিকা: জালিমের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম  (মহররম: ইনফো সিরিজ এর শেষ পোস্ট ছিল এটা। মূল সিরিজটি পড়ে আসুন ) জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাস হলো মহররম মাস। জালিমের মুখোশ উন্মোচনের মাস মহররম। জুলুমের কূটকৌশল উন্মোচনের মাস মহররম। আধুনিক সেকুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লেজিসলেশান (সংসদ), আর্মড ফোর্সেস (আর্মি) ও জুডিশিয়ারি (আদালত) হলো এক মহা জুলুমের ছদ্মবেশী তিন যন্ত্র, যারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করে জুলুম টিকিয়ে রাখার জন্য। তারচেয়েও বড় জালিম হলো big corporations: বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, যারা তাবৎ দুনিয়াকে দাস বানিয়ে রেখেছে। আর এই দাসত্বের শৃঙ্খলে তারা আমাদেরকে আবদ্ধ করেছে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে: টাকা আমাদের শ্রমকে ধারণ করে, অথচ সেই টাকার মূল্য আপ-ডাউন করায় অন্যরা -- ব্যাংক ব্যবসায়ীরা! টাকা আমাদের শ্রমকে সঞ্চয় করার মাধ্যম, অথচ সেই টাকা আমরা প্রিন্ট করি না, প্রিন্ট করে (ব্যাংকের আড়ালে) কিছু ব্যবসায়ী! সেই টাকার মান কমে যাওয়া (বা বেড়ে যাওয়া) আমরা নির্ধারণ করি না -- নির্ধারণ করে ব্যাঙ্ক (ব্যবসায়ীরা)! ইমাম হুসাইনের (আ.) প্রতিবাদী চেতনাকে ধারণ করব, শোকাহত হ

ধর্মব্যবসা: মুসলমানদের হাতে ইসলাম ধ্বংসের অতীত-বর্তমান (১)

ভূমিকা যদিও পলিটিকাল-রিলিজিয়াস ইস্যুতে নিশ্ছিদ্র আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করে আলোচনা করার অভ্যাস আমার, কিন্তু এখানে বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরে আর্গুমেন্ট করার প্রথমতঃ ইচ্ছা নেই, দ্বিতীয়তঃ সময় ও সুযোগ নেই। আমি যা সত্য বলে জানি, তা সংক্ষেপে তুলে ধরছি। যারা আমার উপর আস্থা রাখেন তাদের জন্য এই লেখাটি সোর্স অব ইনফরমেশান, উন্মুক্ত হৃদয়ের মানুষদের জন্য সত্য অনুসন্ধানের নতুন কিছু টপিক, আর প্রেজুডিসড ধর্মান্ধ রোগগ্রস্ত অন্তরের জন্য রোগ বৃদ্ধির উছিলা। শেষ পর্যন্ত আর্গুমেন্ট ও ডায়লগের দুয়ার উন্মুক্ত রাখার পক্ষপাতী আমি, কিন্তু সেই আর্গুমেন্ট অবশ্যই সত্য উন্মোচনের নিয়তে হওয়া উচিত, নিজের দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাস ও ধ্যান ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করবার উদ্দেশ্যে নয়। মক্কা-মদীনা: মুহাম্মদ (সা.) থেকে আলে-সৌদ (৬২৯-১৯২৪) এদেশের অধিকাংশ মানুষ মক্কা-মদীনার ইতিহাস কেবল এতটুকু জানেন যে, মুহাম্মদ (সা.) মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করেন। কিন্তু প্রায় চৌদ্দশ’ বছর আগে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র থেকে আজকের রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবের ইতিহাস কম মানুষই জানেন। প

পিস টিভি, জাকির নায়েক ও এজিদ প্রসঙ্গ

সম্প্রতি গুলশান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। আমি তখন দিল্লীতে ছিলাম। দেশে ফিরে শুনি পিস টিভি ব্যান করা হয়েছে বাংলাদেশে, এবং তার আগে ইন্ডিয়াতে। আমার বাসায় টিভি নেই, এবং আমি জাকির নায়েকের লেকচার শুনিও না। কিংবা পিস টিভিতে যারা লেকচার দেন, বাংলা কিংবা ইংলিশ -- কোনোটাই শুনি না; প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া আমার ইসলামের বুঝ জাকির নায়েকসহ পিস টিভি ও তার বক্তাদেরকে ইন জেনারেল আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। Peace TV বন্ধ হওয়ায় এদেশে বিকৃত ইসলাম প্রসারের গতি কমলো -- এটাই আমার মনে হয়েছে। একইসাথে আমি এটাও মনে করি যে, যেই অভিযোগ পিস টিভিকে ব্যান করা হয়েছে, তা নিছক অজুহাত। জাকির নায়েক কখনো জঙ্গীবাদকে উস্কে দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। কিংবা পিস টিভির লেকচার শুনে শুনে ISIS জঙ্গীরা সন্ত্রাসী হয়েছে -- এটা নিতান্তই হাস্যকর কথা। ISIS এর ধর্মতাত্ত্বিক বেইজ সম্পর্কে মোটেও ধারণা নেই, এমন লোকের পক্ষেই কেবল ISIS এর জন্য জাকির নায়েককে দোষ দেয়া সম্ভব। একইসাথে আমি এ বিষয়েও সচেতন যে, পিস টিভি বন্ধ করা হয়েছে আমাদের সরকারের রেগুলার “ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ