ডিসেম্বর ২৫, ২০১৩ :
খ্রিষ্টানদের বড়দিনে (Christmas) কিংবা এমনকি হিন্দুদের বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে মুসলমানেরা শুভেচ্ছা জানাতে পারে কি ?
এক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে বলা প্রয়োজন।
এক. "শুভেচ্ছা" অর্থ কী ?
দুই. কেউ কেউ যে বলেন এক্ষেত্রে শুভেচ্ছা জানানো হলে শিরক করা হয়, সেক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো "শিরক" কী (http://goo.gl/FCVgyH) ?
প্রথমত, শুভেচ্ছা অর্থ হলো শুভ ইচ্ছা। শুভেচ্ছা জানানোর অর্থই হলো "আপনার মঙ্গল হোক", এই কামনা করা। একজন মুসলমান যখন কাউকে শুভেচ্ছা জানায়, তখণ আসলে সে ঐ ব্যক্তির মঙ্গল কামনা করে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে।
দ্বিতীয়ত, কোনো অমুসলিমের জন্য মঙ্গল কামনা করা যায় কি ?
অবশ্যই যায় ! "ইসলামের প্রকৃত সত্য তার কাছে উন্মোচিত হোক", মুসলমানের পক্ষ থেকে এর চেয়ে বেশি মঙ্গল কামনা আর কী হতে পারে একজন অমুসলিমের জন্য !
সুতরাং আমরা যখন কোনো অমুসলিমকে শুভেচ্ছা জানাই, তখন "শুভেচ্ছা" শব্দটির আড়ালে আমরা আল্লাহর কাছে ঐ ব্যক্তির জন্য এই প্রার্থনা করি যে, ইসলামের সত্য যেনো তার কাছে দ্রুতই উন্মোচিত হয়, এবং সে যেনো মুসলমান হয়ে যায়।
একজন মুসলিম যখন অমুসলিমকে শুভেচ্ছা জানায়, তখন তার নিয়ত এটাই থাকে। তার নিয়ত এটা থাকে না যে, হে আল্লাহ, ওর আরো টাকাপয়সা হোক, দুনিয়ায় সে বেশি আরাম আয়েশ করুক কিন্তু সারাজীবন হিন্দু / ত্রিত্ববাদী খ্রিষ্টানই থাকুক এবং যার ফলস্বরূপ মৃত্যুর পর জাহান্নামে পুড়ে মরুক। এটা "শুভ ইচ্ছা" বা মঙ্গল কামনা নয়। এটা হলো অভিশাপ দেয়া, অমঙ্গল কামনা করা।
সুতরাং, আমরা যদি কোনো বিধর্মীকে শুভেচ্ছা জানাই, তবে এতে কোনো দোষ নেই, বরং আমরা আরো তার হেদায়াত কামনা করছি। সুতরাং, কাউকে শুভেচ্ছা জানালে আমরা কার্যতঃ আল্লাহর কাছে তার হেদায়াত ও পরকালের মুক্তি প্রার্থনা করি।
তৃতীয়ত, আমরা তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানোর সময় মুখে কী বলবো ?
এক্ষেত্রে আমাদের অন্তরের নিয়ত কিন্তু খুবই সৎ, আর আল্লাহ তায়ালা নিয়তের উপর ভিত্তি করে বিচার করবেন। কিন্তু মুখে আমরা কী বলবো, এটিও গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, ২৫শে ডিসেম্বরে আমরা কোনো খ্রিষ্টানকে একথা বলতে পারি না যে : "২৫শে ডিসেম্বরে আল্লাহর (ইশ্বরের) পুত্র ঈসার (যীশু) জন্ম হয়েছিলো মা মারইয়ামের (মেরির) গর্ভে; তিনি মানব জাতির পাপ মোচনের জন্য ক্রুশে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন, এই মহান ব্যক্তির জন্মোৎসব পালন করো তোমরা, তোমাদের এই ধর্মীয় উৎসবে জানাই অসংখ্য শুভেচ্ছা।"
নিশ্চিতই আমরা এমন কথা বলতে পারবো না। কারণ তাদের ঐ কল্পকাহিনীগুলো অসত্য এবং শিরক। আমাদের জন্য মুখে শিরকী কথা বলা কিংবা অসত্য কথা বলা বৈধ নয়। সুতরাং এভাবে বলা যাবে না। এক্ষেত্রে যদিও নিয়তই প্রধান, তবুও মুখে কী বলবো, সেক্ষেত্রে কৌশল অবলম্বন করা উচিত। যেমন, বড়দিনে কোনো খ্রিষ্টান ব্যক্তির সাথে দেখা হলে বলতে পারি : "শুভেচ্ছা আপনার প্রতি, ভালো আছেন ?" কিংবা "আপনার জীবন মঙ্গলময় হোক।" কিংবা "May you be blessed with the best of blessings." ইত্যাদি।
কোনো খ্রিষ্টানকে "ক্রিসমাস ডে"-তে শুভেচ্ছা জানালে শিরক করা হয় কি ?
এক. আপনি যদি "বিশ্বাস" করেন যে এই দিনে "আল্লাহর পুত্র" ঈসা (আ.) এর জন্ম হয়েছিলো, যাঁকে খ্রিষ্টানরা Jesus Christ বলে থাকে, তবে আপনি বড়দিনে খ্রিষ্টানদেরকে শুভেচ্ছা জানান বা না-ই জানান, মুখে স্বীকার করেন কি না-ই করেন, আপনি শিরক এর গুনাহ করছেন।
দুই. কোনো মুসলমান যদি একথা বিশ্বাস না করে, তবুও মুখে বলে যে "এই দিনে আল্লাহর পুত্র যীশুর জন্ম হয়েছিলো, তাই এই দিনে তোমাদের জানাই শুভেচ্ছা", তবে সে কার্যতঃ শিরক করছে না, কিন্তু মুখে শিরকী কথা বলে ভয়ানক পাপ করছে নিঃসন্দেহে। আল্লাহর তার বিচার কিভাবে করবেন সেটা আল্লাহর-ই হাতে। কিন্তু যেহেতু আমরা অন্তর্যামী নই, সুতরাং কোনো মুসলমান বিশ্বাস না করা সত্ত্বেও যদি মুখে এই কথা উচ্চারণ করে, তাকে আমরা মুশরিক ও ইসলামত্যাগী গণ্য করবো, তাকে আর মুসলমান বলবো না।
কিন্তু আমি কাউকে এমনটা বলতে দেখিনি, এবং আমার জানামতে ২৫শে ডিসেম্বরে খ্রিষ্টানদের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে কোনো মুসলমান এসব কথা বলে না। সুতরাং, যে নিজমুখে শিরকের ঘোষণা দেয়নি, তার মুখে কেবল "শুভ বড়দিন" কিংবা এজাতীয় কোনো কথার উচ্চারণ থেকে শিরক টেনে এনে তাকে মুশরিক বলাটা বড় ধরণের অন্যায়। ইসলামপ্রিয় মানুষের জন্য কথায় কথায় অপরকে কাফির-মুশরিক-মুরতাদ বলার বদ অভ্যাস ত্যাগ করা অতি জরুরী।
বরং অমুসলিমদের বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব হলো তাদের সাথে আমাদের দেখা-সাক্ষাত ও কথাবার্তা বলার একটি সুযোগ। এসময়ে আমরা তাদেরকে উপহার সামগ্রী দিয়ে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে পারি, মুসলিম জাতির সৌহার্দ্যের প্রকাশ ঘটাতে পারি, এবং সর্বোপরি তাদেরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তাদের জন্য মঙ্গল কামনা করে তাদের কাছে ইসলাম পৌঁছে দেবার একটি ক্ষেত্র তৈরী করতে পারি।
অমুসলমিদের ধর্মীয় উৎসব আমাদের জন্য একটি সুযোগ। তাদের কাছাকাছি হবার সুযোগ, তাদের সাথে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সুযোগ, এবং সর্বোপরি ইসলামের প্রসার ঘটানোর একটি সুযোগ। এসব দিনগুলোতে আমাদের উচিত সাধ্যমতো উপহার সামগ্রী নিয়ে তাদের সাথে দেখা সাক্ষাত করা এবং মুসলিম জাতির প্রতি তাদের অন্তরে ভালোবাসা সৃষ্টি করা।
অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবগুলো তাই আমাদের জন্য হতে পারে তাদের হৃদয় জয় করার এক চমৎকার সুযোগ।
নূরে আলম,
ডিসেম্বর ২৫, ২০১৩।
খ্রিষ্টানদের বড়দিনে (Christmas) কিংবা এমনকি হিন্দুদের বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে মুসলমানেরা শুভেচ্ছা জানাতে পারে কি ?
এক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে বলা প্রয়োজন।
এক. "শুভেচ্ছা" অর্থ কী ?
দুই. কেউ কেউ যে বলেন এক্ষেত্রে শুভেচ্ছা জানানো হলে শিরক করা হয়, সেক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো "শিরক" কী (http://goo.gl/FCVgyH) ?
প্রথমত, শুভেচ্ছা অর্থ হলো শুভ ইচ্ছা। শুভেচ্ছা জানানোর অর্থই হলো "আপনার মঙ্গল হোক", এই কামনা করা। একজন মুসলমান যখন কাউকে শুভেচ্ছা জানায়, তখণ আসলে সে ঐ ব্যক্তির মঙ্গল কামনা করে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে।
দ্বিতীয়ত, কোনো অমুসলিমের জন্য মঙ্গল কামনা করা যায় কি ?
অবশ্যই যায় ! "ইসলামের প্রকৃত সত্য তার কাছে উন্মোচিত হোক", মুসলমানের পক্ষ থেকে এর চেয়ে বেশি মঙ্গল কামনা আর কী হতে পারে একজন অমুসলিমের জন্য !
সুতরাং আমরা যখন কোনো অমুসলিমকে শুভেচ্ছা জানাই, তখন "শুভেচ্ছা" শব্দটির আড়ালে আমরা আল্লাহর কাছে ঐ ব্যক্তির জন্য এই প্রার্থনা করি যে, ইসলামের সত্য যেনো তার কাছে দ্রুতই উন্মোচিত হয়, এবং সে যেনো মুসলমান হয়ে যায়।
একজন মুসলিম যখন অমুসলিমকে শুভেচ্ছা জানায়, তখন তার নিয়ত এটাই থাকে। তার নিয়ত এটা থাকে না যে, হে আল্লাহ, ওর আরো টাকাপয়সা হোক, দুনিয়ায় সে বেশি আরাম আয়েশ করুক কিন্তু সারাজীবন হিন্দু / ত্রিত্ববাদী খ্রিষ্টানই থাকুক এবং যার ফলস্বরূপ মৃত্যুর পর জাহান্নামে পুড়ে মরুক। এটা "শুভ ইচ্ছা" বা মঙ্গল কামনা নয়। এটা হলো অভিশাপ দেয়া, অমঙ্গল কামনা করা।
সুতরাং, আমরা যদি কোনো বিধর্মীকে শুভেচ্ছা জানাই, তবে এতে কোনো দোষ নেই, বরং আমরা আরো তার হেদায়াত কামনা করছি। সুতরাং, কাউকে শুভেচ্ছা জানালে আমরা কার্যতঃ আল্লাহর কাছে তার হেদায়াত ও পরকালের মুক্তি প্রার্থনা করি।
তৃতীয়ত, আমরা তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানোর সময় মুখে কী বলবো ?
এক্ষেত্রে আমাদের অন্তরের নিয়ত কিন্তু খুবই সৎ, আর আল্লাহ তায়ালা নিয়তের উপর ভিত্তি করে বিচার করবেন। কিন্তু মুখে আমরা কী বলবো, এটিও গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, ২৫শে ডিসেম্বরে আমরা কোনো খ্রিষ্টানকে একথা বলতে পারি না যে : "২৫শে ডিসেম্বরে আল্লাহর (ইশ্বরের) পুত্র ঈসার (যীশু) জন্ম হয়েছিলো মা মারইয়ামের (মেরির) গর্ভে; তিনি মানব জাতির পাপ মোচনের জন্য ক্রুশে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন, এই মহান ব্যক্তির জন্মোৎসব পালন করো তোমরা, তোমাদের এই ধর্মীয় উৎসবে জানাই অসংখ্য শুভেচ্ছা।"
নিশ্চিতই আমরা এমন কথা বলতে পারবো না। কারণ তাদের ঐ কল্পকাহিনীগুলো অসত্য এবং শিরক। আমাদের জন্য মুখে শিরকী কথা বলা কিংবা অসত্য কথা বলা বৈধ নয়। সুতরাং এভাবে বলা যাবে না। এক্ষেত্রে যদিও নিয়তই প্রধান, তবুও মুখে কী বলবো, সেক্ষেত্রে কৌশল অবলম্বন করা উচিত। যেমন, বড়দিনে কোনো খ্রিষ্টান ব্যক্তির সাথে দেখা হলে বলতে পারি : "শুভেচ্ছা আপনার প্রতি, ভালো আছেন ?" কিংবা "আপনার জীবন মঙ্গলময় হোক।" কিংবা "May you be blessed with the best of blessings." ইত্যাদি।
কোনো খ্রিষ্টানকে "ক্রিসমাস ডে"-তে শুভেচ্ছা জানালে শিরক করা হয় কি ?
এক. আপনি যদি "বিশ্বাস" করেন যে এই দিনে "আল্লাহর পুত্র" ঈসা (আ.) এর জন্ম হয়েছিলো, যাঁকে খ্রিষ্টানরা Jesus Christ বলে থাকে, তবে আপনি বড়দিনে খ্রিষ্টানদেরকে শুভেচ্ছা জানান বা না-ই জানান, মুখে স্বীকার করেন কি না-ই করেন, আপনি শিরক এর গুনাহ করছেন।
দুই. কোনো মুসলমান যদি একথা বিশ্বাস না করে, তবুও মুখে বলে যে "এই দিনে আল্লাহর পুত্র যীশুর জন্ম হয়েছিলো, তাই এই দিনে তোমাদের জানাই শুভেচ্ছা", তবে সে কার্যতঃ শিরক করছে না, কিন্তু মুখে শিরকী কথা বলে ভয়ানক পাপ করছে নিঃসন্দেহে। আল্লাহর তার বিচার কিভাবে করবেন সেটা আল্লাহর-ই হাতে। কিন্তু যেহেতু আমরা অন্তর্যামী নই, সুতরাং কোনো মুসলমান বিশ্বাস না করা সত্ত্বেও যদি মুখে এই কথা উচ্চারণ করে, তাকে আমরা মুশরিক ও ইসলামত্যাগী গণ্য করবো, তাকে আর মুসলমান বলবো না।
কিন্তু আমি কাউকে এমনটা বলতে দেখিনি, এবং আমার জানামতে ২৫শে ডিসেম্বরে খ্রিষ্টানদের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে কোনো মুসলমান এসব কথা বলে না। সুতরাং, যে নিজমুখে শিরকের ঘোষণা দেয়নি, তার মুখে কেবল "শুভ বড়দিন" কিংবা এজাতীয় কোনো কথার উচ্চারণ থেকে শিরক টেনে এনে তাকে মুশরিক বলাটা বড় ধরণের অন্যায়। ইসলামপ্রিয় মানুষের জন্য কথায় কথায় অপরকে কাফির-মুশরিক-মুরতাদ বলার বদ অভ্যাস ত্যাগ করা অতি জরুরী।
বরং অমুসলিমদের বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব হলো তাদের সাথে আমাদের দেখা-সাক্ষাত ও কথাবার্তা বলার একটি সুযোগ। এসময়ে আমরা তাদেরকে উপহার সামগ্রী দিয়ে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে পারি, মুসলিম জাতির সৌহার্দ্যের প্রকাশ ঘটাতে পারি, এবং সর্বোপরি তাদেরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তাদের জন্য মঙ্গল কামনা করে তাদের কাছে ইসলাম পৌঁছে দেবার একটি ক্ষেত্র তৈরী করতে পারি।
অমুসলমিদের ধর্মীয় উৎসব আমাদের জন্য একটি সুযোগ। তাদের কাছাকাছি হবার সুযোগ, তাদের সাথে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সুযোগ, এবং সর্বোপরি ইসলামের প্রসার ঘটানোর একটি সুযোগ। এসব দিনগুলোতে আমাদের উচিত সাধ্যমতো উপহার সামগ্রী নিয়ে তাদের সাথে দেখা সাক্ষাত করা এবং মুসলিম জাতির প্রতি তাদের অন্তরে ভালোবাসা সৃষ্টি করা।
অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবগুলো তাই আমাদের জন্য হতে পারে তাদের হৃদয় জয় করার এক চমৎকার সুযোগ।
নূরে আলম,
ডিসেম্বর ২৫, ২০১৩।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন