সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বাংলাদেশের রাজনীতি - হেফাজতে ইসলাম, জামায়াতে ইসলাম এবং আমাদের শিক্ষাগ্রহণ

জুন ৭, ২০১৩ :

(RTNN.com এর প্রধান প্রতিবেদক খোমেনী ইহসানের এই পোস্টের উত্তরে লিখছি :https://www.facebook.com/khomenee/posts/547603045298400 )

১. ৬৯ এর থেকে বর্তমান পরিস্থিতি আলাদা নয় কিনা ?
যোগ করি : তাহরির স্কোয়ারের থেকে পরিস্থিতি আলাদা নয় কিনা ?

অনেকাংশে মিল আছে। কিন্তু ৪০ বছর আগের সিস্টেমে ৪০ বছর পরের স্বৈরশাসককে উল্টে দেবার চেষ্টা করলে তা সফল হবে না। পরিস্থিতি আগের সাথে তুলনীয় এই অর্থে যে সেই আগের মত খেলার মাঠ তৈরী হয়েছে। তবে এই নতুন খেলোয়াড়রা (বর্তমান সরকার) ৪০ বছর আগের কৌশল বদলে প্রতিপক্ষকে দমন করার অনেক নতুন কলাকৌশল গ্রহণ করেছে। সময়ের সাথে কিন্তু তাদের প্রতিপক্ষ (ইসলামপন্থীরা) খেলার নতুন ও যুগোপযোগী কলাকৌশল রপ্ত করেনি, বরং তারা দুর্বল রয়ে গিয়েছে। সুতরাং পুরনো খেলার মাঠ তৈরী হয়েছে ভেবে act করলে লাভ হবে না, সরকার সেই পুরনো ধাঁচের action গুলোকে দমন করার কৌশল রপ্ত করেছে।

২. অনুরূপভাবে যারা তাহরির স্কোয়ার আশা করছিলো, (হেফাজতে ইসলামের সমর্থক দেশের সাধারণ ইসলামপন্থী জনগণ), তাদের এটা বোঝা উচিত ছিলো যে তাহরির স্কোয়ারের মত বিশাল জনসমাবেশ ঘটানোর মানেই এই নয় যে মোবারককে উল্টে দেয়া যাবে। নতুন হোসনি মোবারকেরা তাহরির স্কোয়ার থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছে, সুতরাং তারা প্রস্তুত, আর তাই গভীর রাতে ক্র্যাকডাউন করে প্রথম দিনেই এদের শেষ করে দিয়েছে।

৩. অবশ্যই এই আইনের অধীনে বিচারে অংশগ্রহণ করাটা জামাতের বড় ভুল। যখন তারা দেখলো যে স্কাইপ কেলেঙ্কারি প্রকাশের পরও সেই ট্রাইব্যুনাল চলছে, ঐটাই তাদের উপযুক্ত সময় ছিলো ট্রাইব্যুনাল বর্জন করার। এরপরও বিচারিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের অর্থই হলো নৈতিকতাহীন ট্রাইব্যুনালকে মেনে নেয়া।
তবে তারা যদি ঐসময় থেকে সমস্ত ডিফেন্স প্রত্যাহার করতো, তাতেও জুডিশিয়াল কিলিং ঠেকানো যেতো না। বড়জোর লোকজনের কাছে জুডিশিয়াল কিলিং কথাটা একটু বেশি প্রচার ও গ্রহণযোগ্যতা পেতো।

৪. লেখক বলেছেন : বিচারকের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়ে, গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে দিয়েছিল এদেশের জনগণ।

কিন্তু এখন আর বিচারকদের বাড়িঘর পুড়ানো সম্ভব না, এবং দেশটা শুধুমাত্র ঐটুকুর দ্বারা স্বাধীন হয়নি, এবং কখনো শুধুমাত্র এদেশের মুক্তিবাহিনী দিয়ে সম্ভবও ছিলো না; দেশ স্বাধীন হয়েছিলো আলোচনার টেবিলে, সেটা অস্বীকার করা যাবে না। সুতরাং ঐ একই পদ্ধতিতে এখন গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে ইসলামী সরকারের পত্তন সম্ভব নয়। কারণ ৭১ এ ভারতের সহায়তা ছিলো এবং যুদ্ধরত পাকিস্তান আর্মির রসদ সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছিলো, আর এখন এই হেফাজতে ইসলামের পক্ষে অনুরূপভাবে কেউ নেই। কেনো নেই তা স্পষ্ট। ঐসময় ভারত এই দেশকে নিজের স্বার্থে স্বাধীন করেছে, সেই স্বার্থ এখন তারা কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নিচ্ছে, সবাই তা দেখছে। (এত বড় শক্তি ভারতের বিপরীতে গিয়ে) হেফাজতের নেতৃত্বে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করায় সাহায্য দিতো কোন দেশ ? কিসের স্বার্থে ? কেউ না।

৫. হেফাজত ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে যায়নি, কিন্তু চরম নির্যাতিত মুসলিম জনগণ ইসলামী রাষ্ট্রের মাধ্যমে নির্যাতন থেকে উদ্ধার পাবার আশা করে বসে ছিলো। এখন তাদের মাঝে হতাশা কাজ করাটা স্বাভাবিক। তবে হেফাজতের ঘটনাটাকে আমি এদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার পক্ষে একটি বড় পদক্ষেপ বলে মনে করি। (http://nure-alam.blogspot.com/2013/05/blog-post.html)
ইসলাম প্রতিষ্ঠার বেশকিছু মডেল ইতিহাসে আছে। সময়ের সাথে সেইসব মডেলেরই কিছু পরিবর্তন ঘটবে। তবে কিছু মূলনীতি প্রতিষ্ঠিত থাকবে। এর একটি হলো, অনিসলামী চিন্তা-চেতনা ও জীবনধারায় অভ্যস্ত জনগণের উপরে ইসলামী সরকার চাপিয়ে দিলে তা স্থায়ী হবে না। মহানবী (সা.) কে গোটা মক্কার ক্ষমতা অফার করা হয়েছিলো, তিনি চাইলেই তখন ক্ষমতা গ্রহণ করে ইসলামী অনুশাসন চাপিয়ে দিতে পারতেন; কিন্তু তাঁর কর্মপদ্ধতি ভিন্ন ছিলো, তা আমরা জানি।

৬. লংমার্চের পর যখন সারাদেশের মুসলমানেরা উচ্চাশায় বুক বাঁধছে, বিজয়ের স্বপ্ন দেখছে, তখন RTNN.com এর প্রধান প্রতিবেদক খোমেনি ইহসানের লেখা পড়লাম, তখন যে ব্লগ লিখেছিলাম তাতে সম্মত হয়েছিলাম যে (http://nure-alam.blogspot.com/2013/04/blog-post.html) :

১. যার প্রশ্রয়ে ইসলামবিরোধীরা ইসলাম ও নবীর অবমাননা করলো, তার কাছেই বিচারের ধরণা দেওয়ার মানে তো স্পষ্ট : অনিষ্টকারীকেই অনিষ্টতার বিচারক মানা।
২. পরের কথা হলো, একটা গণবিরোধী, ইনসাফ ও আদলবিরোধী সংবিধানের মধ্যে "আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস" থাকা বা না থাকা তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। যেমন তামাশা বাংলাদেশের সংবিধানে বিসমিল্লাহর ব্যাপারে করা হচ্ছে।
কথা দুটি খুবই সত্য। বিসমিল্লাহ এর অর্থ হলো আল্লাহর নামে। আল্লাহর নামে সংবিধান শুরু করে যদি সংবিধানে কোরআন-হাদীসের আইন না থাকে, বরং উল্টা অনিসলামী এবং অনেক ক্ষেত্রে ইসলাম বিরোধী আইন থাকে, তবে শুরুতে আল্লাহর নাম নেয়ার কোনো অর্থ হয় না। অনেকটা বিসমিল্লাহ বলে মদ খাওয়ার মত, কিংবা মদ খাবার সময় বড় গোঁফ ভিজে গিয়ে মাকরূহ হবার মত ব্যাপার।

কিন্তু সেকথা হেফাজতে ইসলামকেই বা বোঝাবে কে, আর আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসলামপন্থীদেরই বোঝাবে কে ? বিরোধীতার মুখোমুখি হয়েছি, এবং সেটা ইসলামপন্থীর নিকট থেকেই।
এখন আমরা হেফাজতের অবস্থান সম্পর্কে জানি। তাদের শক্তির অ্যাসেসমেন্টও হয়ে গিয়েছে। এখন আশা করা যায় যে দেশের জনগণ ইসলামের দিকে আরো ঝুঁকবে, ইসলামপন্থীরা আরো কাছাকাছি হবে, এবং এভাবেই আমরা বিজয়ের দিকে এগিয়ে যাবো।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

টাকার ইতিহাস, মানি মেকানিজম ও ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মহা জুলুম

ভূমিকা: জালিমের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম  (মহররম: ইনফো সিরিজ এর শেষ পোস্ট ছিল এটা। মূল সিরিজটি পড়ে আসুন ) জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাস হলো মহররম মাস। জালিমের মুখোশ উন্মোচনের মাস মহররম। জুলুমের কূটকৌশল উন্মোচনের মাস মহররম। আধুনিক সেকুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লেজিসলেশান (সংসদ), আর্মড ফোর্সেস (আর্মি) ও জুডিশিয়ারি (আদালত) হলো এক মহা জুলুমের ছদ্মবেশী তিন যন্ত্র, যারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করে জুলুম টিকিয়ে রাখার জন্য। তারচেয়েও বড় জালিম হলো big corporations: বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, যারা তাবৎ দুনিয়াকে দাস বানিয়ে রেখেছে। আর এই দাসত্বের শৃঙ্খলে তারা আমাদেরকে আবদ্ধ করেছে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে: টাকা আমাদের শ্রমকে ধারণ করে, অথচ সেই টাকার মূল্য আপ-ডাউন করায় অন্যরা -- ব্যাংক ব্যবসায়ীরা! টাকা আমাদের শ্রমকে সঞ্চয় করার মাধ্যম, অথচ সেই টাকা আমরা প্রিন্ট করি না, প্রিন্ট করে (ব্যাংকের আড়ালে) কিছু ব্যবসায়ী! সেই টাকার মান কমে যাওয়া (বা বেড়ে যাওয়া) আমরা নির্ধারণ করি না -- নির্ধারণ করে ব্যাঙ্ক (ব্যবসায়ীরা)! ইমাম হুসাইনের (আ.) প্রতিবাদী চেতনাকে ধারণ করব, শোকাহত হ

ধর্মব্যবসা: মুসলমানদের হাতে ইসলাম ধ্বংসের অতীত-বর্তমান (১)

ভূমিকা যদিও পলিটিকাল-রিলিজিয়াস ইস্যুতে নিশ্ছিদ্র আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করে আলোচনা করার অভ্যাস আমার, কিন্তু এখানে বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরে আর্গুমেন্ট করার প্রথমতঃ ইচ্ছা নেই, দ্বিতীয়তঃ সময় ও সুযোগ নেই। আমি যা সত্য বলে জানি, তা সংক্ষেপে তুলে ধরছি। যারা আমার উপর আস্থা রাখেন তাদের জন্য এই লেখাটি সোর্স অব ইনফরমেশান, উন্মুক্ত হৃদয়ের মানুষদের জন্য সত্য অনুসন্ধানের নতুন কিছু টপিক, আর প্রেজুডিসড ধর্মান্ধ রোগগ্রস্ত অন্তরের জন্য রোগ বৃদ্ধির উছিলা। শেষ পর্যন্ত আর্গুমেন্ট ও ডায়লগের দুয়ার উন্মুক্ত রাখার পক্ষপাতী আমি, কিন্তু সেই আর্গুমেন্ট অবশ্যই সত্য উন্মোচনের নিয়তে হওয়া উচিত, নিজের দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাস ও ধ্যান ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করবার উদ্দেশ্যে নয়। মক্কা-মদীনা: মুহাম্মদ (সা.) থেকে আলে-সৌদ (৬২৯-১৯২৪) এদেশের অধিকাংশ মানুষ মক্কা-মদীনার ইতিহাস কেবল এতটুকু জানেন যে, মুহাম্মদ (সা.) মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করেন। কিন্তু প্রায় চৌদ্দশ’ বছর আগে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র থেকে আজকের রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবের ইতিহাস কম মানুষই জানেন। প

পিস টিভি, জাকির নায়েক ও এজিদ প্রসঙ্গ

সম্প্রতি গুলশান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। আমি তখন দিল্লীতে ছিলাম। দেশে ফিরে শুনি পিস টিভি ব্যান করা হয়েছে বাংলাদেশে, এবং তার আগে ইন্ডিয়াতে। আমার বাসায় টিভি নেই, এবং আমি জাকির নায়েকের লেকচার শুনিও না। কিংবা পিস টিভিতে যারা লেকচার দেন, বাংলা কিংবা ইংলিশ -- কোনোটাই শুনি না; প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া আমার ইসলামের বুঝ জাকির নায়েকসহ পিস টিভি ও তার বক্তাদেরকে ইন জেনারেল আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। Peace TV বন্ধ হওয়ায় এদেশে বিকৃত ইসলাম প্রসারের গতি কমলো -- এটাই আমার মনে হয়েছে। একইসাথে আমি এটাও মনে করি যে, যেই অভিযোগ পিস টিভিকে ব্যান করা হয়েছে, তা নিছক অজুহাত। জাকির নায়েক কখনো জঙ্গীবাদকে উস্কে দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। কিংবা পিস টিভির লেকচার শুনে শুনে ISIS জঙ্গীরা সন্ত্রাসী হয়েছে -- এটা নিতান্তই হাস্যকর কথা। ISIS এর ধর্মতাত্ত্বিক বেইজ সম্পর্কে মোটেও ধারণা নেই, এমন লোকের পক্ষেই কেবল ISIS এর জন্য জাকির নায়েককে দোষ দেয়া সম্ভব। একইসাথে আমি এ বিষয়েও সচেতন যে, পিস টিভি বন্ধ করা হয়েছে আমাদের সরকারের রেগুলার “ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ