সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আন্তর্জাতিক রাজনীতি - সিরিয়া এবং তথাকথিত মুজাহিদীন গ্রুপ

সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৩ :
অবশেষে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হ্যাগেলের কথায় প্রকাশ পেলো যে সিরিয়া আক্রমণের মূল উদ্দেশ্য আর কিছু নয়, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের শক্তিকে দুর্বল করা।

অনেকেই ইরানকে আমেরিকার গোপন বন্ধু, কিংবা সৌদি আরবের মত অপরাপর মুনাফিক শাসিত আরব রাষ্ট্রের কাতারে ফেলে থাকেন। সাম্প্রতিককালে ফেইসবুকে "হঠাৎ জেগে ওঠা" এক ঝাঁক ইসলামপন্থী লেখকের বেশিরভাগের কথাবার্তা-ই এমন দেখছি। মুসলমানদের দ্বারাই বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়া বা করানোর কারণে অনেকটা বাধ্য হয়েই গত ২৯ অগাস্ট একটি নোট লিখেছিলাম মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে। সেখানে লিখেছিলাম যে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যুহ ভেদ করার জন্যই সিরিয়ায় আক্রমণের তোড়জোড় চলছে। ঐ একই উদ্দেশ্য নিয়েই ইরানের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয় হয় হামলা, নয়তো তাঁবেদার সরকার নিশ্চিত করেছে আমেরিকা।

(যদিও লেখার কারণে ব্যক্তি আক্রমণের শিকার হয়েছি, তবুও) সন্তুষ্টি এই যে হয়তো কিছু মানুষকে সত্য জানাতে পেরেছি।
দুঃখজনকভাবে, এমনকি একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষককে এটা শেয়ার করতে দেখেছি যে :
"যদিও এটা সত্য যে আমেরিকা রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগসহ বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধাপরাধ করেছে ও সমর্থন করেছে, এর অর্থ এই নয় যে সিরিয়া সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে তার কোনো ভূমিকা রাখা উচিত নয়। এবং এর অর্থ এ-ও নয় যে আমরা আসাদ সরকার ও রাশিয়া, ইরান, লেবাননে তাদের সহায়তাকারীদের উপেক্ষা করবো।" অর্থাৎ তিনি বুঝাতে চাইছেন যে সিরিয়ার উপর আমেরিকার এই হামলা সমর্থন করা উচিত, শুধুমাত্র আসাদের (কথিত) হত্যাযজ্ঞ ঠেকানোর জন্যেই।

শিয়া-সুন্নি বিরোধ থেকে অযৌক্তিক শিয়া বিদ্বেষ, এবং তা থেকে ইরান বিদ্বেষ, অতঃপর কেবলমাত্র ইরানের বিরোধিতা করার জন্যেই অবশেষে সিরিয়ায় মার্কিন হামলাকে সমর্থন করা। কোনো বিবেকসম্পন্ন মুসলমান কি মুসলিম রাষ্ট্রে মার্কিন হামলা সমর্থন করতে পারে ? শুধুমাত্র এইজন্যে যে তাতে মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া শক্তি ইরানকে দুর্বল করা যাবে ? আমি বিস্মিত !

নোট : (সিরিয়ায় সম্ভাব্য মার্কিন হামলা, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি এবং ইরান)http://goo.gl/EQc7WZ
রেডিও তেহরানের নিউজ : http://goo.gl/8zAJgA
রয়টার্সের নিউজ : http://goo.gl/vwfueK
ইসরায়েল ন্যাশনাল নিউজ.কম : http://goo.gl/Isc0tH

প্রসঙ্গত, বহু বছর থেকে ফেইসবুক ব্যবহার করছি, এবং বাংলা ব্লগিংও করছি অনেক আগে থেকেই। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি : ফেইসবুকে হঠাৎ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা একঝাঁক ইসলামপন্থী লেখক, যারা বিভিন্ন সমসাময়িক বিষয়ে নোট, স্ট্যাটাস ইত্যাদি লিখে হাজার হাজার কিংবা শ'য়ে শ'য়ে ফলোয়ার যোগাড় করেছেন, তাদের ইসলামের প্রতি আবেগ, খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করার অদম্য ইচ্ছা এবং বাতিলের বিরুদ্ধে তীব্র সব বাক্যবাণে মুগ্ধ হয়ে যুক্তিকে দূরে ঠেলে দেবেন না। আমি বলছি না যে তাদের সকলেই অসৎ নিয়তের অধিকারী, বরং আমি তা মনেও করি না, কিন্তু বাংলাদেশীদের ফেইসবুক প্রাঙ্গন হঠাৎই একঝাঁক "খিলাফাহ-পন্থীর" তীব্র-সুতীক্ষ্ম বাক্যবাণে ভেসে যাচ্ছে -- এমতাবস্থায় সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। অনেকে না জেনে বিভ্রান্ত হয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন, অনেকে আবার জেনে শুনে ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।

ইসলামের প্রতি তীব্র আবেগ, গণতন্ত্রের তীব্র বিরোধীতা এবং খিলাফাহ নিয়ে উচ্চকিত কণ্ঠস্বরের বক্তব্য শোনার সময় সতর্ক থাকুন।
এই কথাগুলো লিখতে আমার মোটেও ভালো লাগছে না, কিন্তু যখন মুসলমানরাই বিভ্রান্ত হচ্ছে মুসলমানদের দ্বারা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে, তখন সতর্ক করা কর্তব্য।

সিরিয়ার সেক্যুলার ও খিলাফাহ পন্থী সকল বিদ্রোহী গ্রুপই আমেরিকা নিয়ন্ত্রিত, আমেরিকা দ্বারা প্রকাশ্যে ও গোপনে সমর্থিত। (সিনেটরদের সভায় মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পূর্ণ বক্তব্যটি পড়ুন / শুনুন।)
ইসলাম বা খিলাফাহ-র কথা বলছে বলেই আন-নূসরার সমর্থনে চলে যাবেন না। কারণ এই আন-নূসরা এবং আমেরিকা ও তাদের সেক্যুলার বিদ্রোহী গ্রুপ FSA একই উদ্দেশ্যে কাজ করছে : আসাদ সরকারের পতন। সৎ নিয়তের কোনো ইসলামী গ্রুপ আমেরিকা কিংবা আমেরিকা সমর্থিত সেক্যুলার গ্রুপের সাথে একত্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে একই কাজ করতে পারে না।

নাকি আমেরিকা সমর্থিত সেক্যুলার গ্রুপ "ফ্রি সিরিয়ান আর্মি" (FSA) এইজন্য যুদ্ধ করছে যে আসাদ সরকারের পতন হলে যুদ্ধের ফসল আন-নূসরা ঘরে তুলবে, তারা সেখানে খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করবে ?
আমেরিকা কি FSA কে এইজন্য সাহায্য-সহযোগীতা দিচ্ছে যে আসাদ সরকারের পতন হলে আন-নূসরা তার ফসল ঘরে তুলবে, সিরিয়ায় খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করবে ?

আমেরিকা কবে থেকে ইসলামী খিলাফতের জন্য এত দরদী হয়ে গেলো ?

স্বচ্ছ বিবেকবান মানুষ, তা সে যত নিম্ন বুদ্ধিমত্তারই হোক না কেনো, সত্যকে চিনতে পারার জন্য এতটুকুই তার যথেষ্ট।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

টাকার ইতিহাস, মানি মেকানিজম ও ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মহা জুলুম

ভূমিকা: জালিমের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম  (মহররম: ইনফো সিরিজ এর শেষ পোস্ট ছিল এটা। মূল সিরিজটি পড়ে আসুন ) জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাস হলো মহররম মাস। জালিমের মুখোশ উন্মোচনের মাস মহররম। জুলুমের কূটকৌশল উন্মোচনের মাস মহররম। আধুনিক সেকুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লেজিসলেশান (সংসদ), আর্মড ফোর্সেস (আর্মি) ও জুডিশিয়ারি (আদালত) হলো এক মহা জুলুমের ছদ্মবেশী তিন যন্ত্র, যারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করে জুলুম টিকিয়ে রাখার জন্য। তারচেয়েও বড় জালিম হলো big corporations: বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, যারা তাবৎ দুনিয়াকে দাস বানিয়ে রেখেছে। আর এই দাসত্বের শৃঙ্খলে তারা আমাদেরকে আবদ্ধ করেছে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে: টাকা আমাদের শ্রমকে ধারণ করে, অথচ সেই টাকার মূল্য আপ-ডাউন করায় অন্যরা -- ব্যাংক ব্যবসায়ীরা! টাকা আমাদের শ্রমকে সঞ্চয় করার মাধ্যম, অথচ সেই টাকা আমরা প্রিন্ট করি না, প্রিন্ট করে (ব্যাংকের আড়ালে) কিছু ব্যবসায়ী! সেই টাকার মান কমে যাওয়া (বা বেড়ে যাওয়া) আমরা নির্ধারণ করি না -- নির্ধারণ করে ব্যাঙ্ক (ব্যবসায়ীরা)! ইমাম হুসাইনের (আ.) প্রতিবাদী চেতনাকে ধারণ করব, শোকাহত হ

ধর্মব্যবসা: মুসলমানদের হাতে ইসলাম ধ্বংসের অতীত-বর্তমান (১)

ভূমিকা যদিও পলিটিকাল-রিলিজিয়াস ইস্যুতে নিশ্ছিদ্র আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করে আলোচনা করার অভ্যাস আমার, কিন্তু এখানে বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরে আর্গুমেন্ট করার প্রথমতঃ ইচ্ছা নেই, দ্বিতীয়তঃ সময় ও সুযোগ নেই। আমি যা সত্য বলে জানি, তা সংক্ষেপে তুলে ধরছি। যারা আমার উপর আস্থা রাখেন তাদের জন্য এই লেখাটি সোর্স অব ইনফরমেশান, উন্মুক্ত হৃদয়ের মানুষদের জন্য সত্য অনুসন্ধানের নতুন কিছু টপিক, আর প্রেজুডিসড ধর্মান্ধ রোগগ্রস্ত অন্তরের জন্য রোগ বৃদ্ধির উছিলা। শেষ পর্যন্ত আর্গুমেন্ট ও ডায়লগের দুয়ার উন্মুক্ত রাখার পক্ষপাতী আমি, কিন্তু সেই আর্গুমেন্ট অবশ্যই সত্য উন্মোচনের নিয়তে হওয়া উচিত, নিজের দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাস ও ধ্যান ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করবার উদ্দেশ্যে নয়। মক্কা-মদীনা: মুহাম্মদ (সা.) থেকে আলে-সৌদ (৬২৯-১৯২৪) এদেশের অধিকাংশ মানুষ মক্কা-মদীনার ইতিহাস কেবল এতটুকু জানেন যে, মুহাম্মদ (সা.) মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করেন। কিন্তু প্রায় চৌদ্দশ’ বছর আগে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র থেকে আজকের রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবের ইতিহাস কম মানুষই জানেন। প

পিস টিভি, জাকির নায়েক ও এজিদ প্রসঙ্গ

সম্প্রতি গুলশান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। আমি তখন দিল্লীতে ছিলাম। দেশে ফিরে শুনি পিস টিভি ব্যান করা হয়েছে বাংলাদেশে, এবং তার আগে ইন্ডিয়াতে। আমার বাসায় টিভি নেই, এবং আমি জাকির নায়েকের লেকচার শুনিও না। কিংবা পিস টিভিতে যারা লেকচার দেন, বাংলা কিংবা ইংলিশ -- কোনোটাই শুনি না; প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া আমার ইসলামের বুঝ জাকির নায়েকসহ পিস টিভি ও তার বক্তাদেরকে ইন জেনারেল আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। Peace TV বন্ধ হওয়ায় এদেশে বিকৃত ইসলাম প্রসারের গতি কমলো -- এটাই আমার মনে হয়েছে। একইসাথে আমি এটাও মনে করি যে, যেই অভিযোগ পিস টিভিকে ব্যান করা হয়েছে, তা নিছক অজুহাত। জাকির নায়েক কখনো জঙ্গীবাদকে উস্কে দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। কিংবা পিস টিভির লেকচার শুনে শুনে ISIS জঙ্গীরা সন্ত্রাসী হয়েছে -- এটা নিতান্তই হাস্যকর কথা। ISIS এর ধর্মতাত্ত্বিক বেইজ সম্পর্কে মোটেও ধারণা নেই, এমন লোকের পক্ষেই কেবল ISIS এর জন্য জাকির নায়েককে দোষ দেয়া সম্ভব। একইসাথে আমি এ বিষয়েও সচেতন যে, পিস টিভি বন্ধ করা হয়েছে আমাদের সরকারের রেগুলার “ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ